নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম এবং মধ্যাঞ্চল –সব অঞ্চলেই জমির খোঁজ মিলছে তাঁর; যেন দেশজুড়ে তাঁর জমিদারি। জেলায় জেলায় জমি কেনার এই অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে। নিজের, স্ত্রী-সন্তান, স্বজনদের নামে ও বেনামে কেনা হয়েছে কয়েক শ একর জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাঁচটি দেশেও তাঁর সম্পদ গড়ার অভিযোগ আছে।
রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১০ জেলায় এখন পর্যন্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। অন্য ৯টি জেলা হলো গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, বান্দরবান ও কক্সবাজার। এসব জেলায় রয়েছে জমি, খামার, রিসোর্ট। সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও আছে জমি। গতকাল সোমবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন জেলায় থাকা জমির পরিমাণ ২ হাজার ৩৮৫ বিঘা বা ৭৮৬ একর। তাঁর সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২৩ ও ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা ১৯৩টি দলিলের জমি, গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট ক্রোকের এবং বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ৩৩টি হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ১৯টি প্রতিষ্ঠানে তাঁদের নামে থাকা শেয়ার, ৩টি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত মাসের শুরুতে সপরিবার দেশ ছাড়ার আগে ওই ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা তোলা হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে।
বেনজীর আহমেদ ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিএমপির কমিশনার ছিলেন। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি নিযুক্ত হন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান।
রাজধানীতে পাঁচ ফ্ল্যাট, দুই বাড়ি
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বসুন্ধরায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পরিবারের পাঁচটি ফ্ল্যাট এবং উত্তরা ও ভাটারায় সাততলা দুটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুদক। এগুলোর মধ্যে গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটের মোট আয়তন ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট। এসব ফ্ল্যাট-বাড়ির দাম কমপক্ষে ৭৫ কোটি টাকা।
গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট গত ২৬ মে ক্রোক (জব্দ) করার নির্দেশ দেন ঢাকার একটি আদালত।
পাঁচ তারকা হোটেলে মেয়েদের শেয়ার
বেনজীরের দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচ তারকা হোটেল লো মেরিডিয়েনের দুই লাখ শেয়ার রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালে বেস্ট হোল্ডিংসের দুই লাখ শেয়ার দুই মেয়ের জন্য কেনা হয়। ওই সময় তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।
গোপালগঞ্জে রিসোর্ট, চাষের জমি
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল গ্রামে ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কও বেনজীরদের। সেখানে আছে কৃত্রিম পাহাড়, সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিংপুল, একাধিক পুকুর, কৃত্রিম ঝরনা, বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স কটেজ, বিশাল কনসার্ট হল। অভিযোগ রয়েছে, এই রিসোর্টের জন্য সংখ্যালঘুদের জমি দখল করা হয়েছে।
এ ছাড়া গোপালগঞ্জে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে প্রায় ৩০০ বিঘা চাষের জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র বলেছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এসব জমি কেনা হয়।
মাদারীপুরে স্ত্রীর নামে জমি
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সাতপাড় গ্রামে ডুমুরিয়া মৌজায় বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে বিভিন্ন দলিলে মোট ২৭৩ বিঘা জমি রয়েছে। বেনজীর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগমুহূর্তে এসব জমি কেনা হয়। এসব জমির রেজিস্ট্রি মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৬ আগস্টের মধ্যে এসব জমি কেনা হয় বলে জানা যায়।
গাজীপুরের রিসোর্টে শেয়ার
গাজীপুর সদর উপজেলায় পাঁচ তারকা হোটেলের সুবিধা থাকা আধুনিক ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টারে বেনজীরের ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বলে শোনা যায়। স্থানীয় লোকজন বলছেন, কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই আইজিপি থাকাকালে তিনি এসব শেয়ারের মালিক হয়েছেন। ১৫০ বিঘা জমির ওপর এই রিসোর্ট আম্বার গ্রুপের। অভিযোগ রয়েছে, এই রিসোর্ট বন বিভাগের ৩ দশমিক ৬৮ একর জমি দখল করেছে।
দুদকের সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বেতুয়ারটেক গ্রামে বেনজীর, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে অন্তত ৫০ বিঘা জমির তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এসব জমি কেনা হয়।
কিশোরগঞ্জে শত বিঘার খামার
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ধরেয়ার বাজার এলাকায় যৌথ মালিকানায় বেনজীর আহমেদের একটি খামার রয়েছে। এই খামারের জন্য নামে-বেনামে কয়েক শ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর ভাই মানিক হাজি এই খামার দেখাশোনা করেন। এই খামারের আরেক অংশীদার মিঠু।
সাতক্ষীরায় ইটভাটা দখল শ্যালকের
অভিযোগ উঠেছে, বেনজীর র্যাবের মহাপরিচালক থাকাকালে তাঁর দাপট দেখিয়ে শ্যালক মির্জা আনোয়ার পারভেজ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ আলীপুর গ্রামে ৪৮ বিঘা জমির ওপর আশরাফুজ্জামান হাবলু নামের এক ব্যক্তির ইটভাটা দখল করেছেন। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের শরাফপুর গ্রামে বেনজীরের শাশুড়ি লুত্ফুন নেসার নামে শতাধিক বিঘার ওপর চারটি মাছের ঘের আছে। লোকজনের ধারণা, এগুলোতে বেনজীরই বিনিয়োগ করেছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে পোলট্রি খামার
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বড় খোজাবাড়ী এলাকায় অন্তত ৫০ বিঘা জমির ওপর নর্থ পোলট্রি খামারে বেনজীরের অংশীদারত্ব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে যৌথ মালিকানা রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মিঠুর।
নীলফামারীতে পোলট্রি খামার ও কারখানা
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে ভিন্ন জগত পার্কসংলগ্ন এলাকায় নর্থ পোলট্রি খামার নামে একটি মুরগির খামার এবং মুরগির খাবার উৎপাদন কারখানার উদ্বোধনের সময়ও বেনজীর আহমেদ ও ঠিকাদার মিঠু উপস্থিত ছিলেন। এই খামার ও কারখানা অন্তত ৫০ বিঘা জমির ওপর। এখানেও তাঁদের যৌথ মালিকানা রয়েছে বলে শোনা যায়।
সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজারে সৈকত ঘেঁষে জমি
অভিযোগ রয়েছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় ১০ বছর আগে বেনজীর আহমেদ তাঁর নিজের নামে ৪ বিঘা বা ১ একর ৭৫ শতক জমি কেনেন। এ ছাড়া কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে কেনা হয়েছে ৭২ শতক জমি। এসব জমি কেনার সময় বেনজীর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন।
বান্দরবানে ২৫৭ বিঘা জমি
বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নে ও লামা উপজেলায় বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে কেনা অন্তত ২৫৭ বিঘা জমির সন্ধান পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে সুয়ালক ইউনিয়নে ৭৫ বিঘা এবং লামা উপজেলায় ১৮২ বিঘা জমি রয়েছে।
পাঁচ দেশে সম্পদের খোঁজ
বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিদেশে কোনো সম্পদ আছে কি না, সেই খোঁজ নিচ্ছে দুদক। বিদেশে তাঁর সম্পদ খুঁজতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বেনজীরের সম্পদ থাকতে পারে। মালয়েশিয়ায় আবাসন খাতে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে বলেও তথ্য পেয়েছে দুদক।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর, তাঁর স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়েদের ৯ জুন তলব করে চিঠি দিয়েছে দুদক।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, সাবেক পুলিশপ্রধান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ভয় দেখিয়ে, জোর করে জমি কিনে নেওয়ার যেসব অভিযোগ জানা যাচ্ছে, তা সত্যিই ভয়ংকর। বিবৃতিতে সাবেক পুলিশপ্রধানের অবৈধভাবে বিপুল অর্থ ও সম্পদ অর্জন এবং সেসব অর্জনে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের যে চিত্র উঠে আসছে, তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন—
উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম এবং মধ্যাঞ্চল –সব অঞ্চলেই জমির খোঁজ মিলছে তাঁর; যেন দেশজুড়ে তাঁর জমিদারি। জেলায় জেলায় জমি কেনার এই অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে। নিজের, স্ত্রী-সন্তান, স্বজনদের নামে ও বেনামে কেনা হয়েছে কয়েক শ একর জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাঁচটি দেশেও তাঁর সম্পদ গড়ার অভিযোগ আছে।
রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১০ জেলায় এখন পর্যন্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। অন্য ৯টি জেলা হলো গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, বান্দরবান ও কক্সবাজার। এসব জেলায় রয়েছে জমি, খামার, রিসোর্ট। সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও আছে জমি। গতকাল সোমবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন জেলায় থাকা জমির পরিমাণ ২ হাজার ৩৮৫ বিঘা বা ৭৮৬ একর। তাঁর সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত গত ২৩ ও ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা ১৯৩টি দলিলের জমি, গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট ক্রোকের এবং বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ৩৩টি হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে ১৯টি প্রতিষ্ঠানে তাঁদের নামে থাকা শেয়ার, ৩টি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করারও আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত মাসের শুরুতে সপরিবার দেশ ছাড়ার আগে ওই ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা তোলা হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে।
বেনজীর আহমেদ ২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিএমপির কমিশনার ছিলেন। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল আইজিপি নিযুক্ত হন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান।
রাজধানীতে পাঁচ ফ্ল্যাট, দুই বাড়ি
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বসুন্ধরায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পরিবারের পাঁচটি ফ্ল্যাট এবং উত্তরা ও ভাটারায় সাততলা দুটি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে দুদক। এগুলোর মধ্যে গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটের মোট আয়তন ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট। এসব ফ্ল্যাট-বাড়ির দাম কমপক্ষে ৭৫ কোটি টাকা।
গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট গত ২৬ মে ক্রোক (জব্দ) করার নির্দেশ দেন ঢাকার একটি আদালত।
পাঁচ তারকা হোটেলে মেয়েদের শেয়ার
বেনজীরের দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচ তারকা হোটেল লো মেরিডিয়েনের দুই লাখ শেয়ার রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালে বেস্ট হোল্ডিংসের দুই লাখ শেয়ার দুই মেয়ের জন্য কেনা হয়। ওই সময় তিনি র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।
গোপালগঞ্জে রিসোর্ট, চাষের জমি
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৈরাগীটোল গ্রামে ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কও বেনজীরদের। সেখানে আছে কৃত্রিম পাহাড়, সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিংপুল, একাধিক পুকুর, কৃত্রিম ঝরনা, বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স কটেজ, বিশাল কনসার্ট হল। অভিযোগ রয়েছে, এই রিসোর্টের জন্য সংখ্যালঘুদের জমি দখল করা হয়েছে।
এ ছাড়া গোপালগঞ্জে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে প্রায় ৩০০ বিঘা চাষের জমি রয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র বলেছে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এসব জমি কেনা হয়।
মাদারীপুরে স্ত্রীর নামে জমি
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সাতপাড় গ্রামে ডুমুরিয়া মৌজায় বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে বিভিন্ন দলিলে মোট ২৭৩ বিঘা জমি রয়েছে। বেনজীর চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার আগমুহূর্তে এসব জমি কেনা হয়। এসব জমির রেজিস্ট্রি মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৬ আগস্টের মধ্যে এসব জমি কেনা হয় বলে জানা যায়।
গাজীপুরের রিসোর্টে শেয়ার
গাজীপুর সদর উপজেলায় পাঁচ তারকা হোটেলের সুবিধা থাকা আধুনিক ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টারে বেনজীরের ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বলে শোনা যায়। স্থানীয় লোকজন বলছেন, কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই আইজিপি থাকাকালে তিনি এসব শেয়ারের মালিক হয়েছেন। ১৫০ বিঘা জমির ওপর এই রিসোর্ট আম্বার গ্রুপের। অভিযোগ রয়েছে, এই রিসোর্ট বন বিভাগের ৩ দশমিক ৬৮ একর জমি দখল করেছে।
দুদকের সূত্র জানায়, অনুসন্ধানে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বেতুয়ারটেক গ্রামে বেনজীর, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে অন্তত ৫০ বিঘা জমির তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এসব জমি কেনা হয়।
কিশোরগঞ্জে শত বিঘার খামার
জানা যায়, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ধরেয়ার বাজার এলাকায় যৌথ মালিকানায় বেনজীর আহমেদের একটি খামার রয়েছে। এই খামারের জন্য নামে-বেনামে কয়েক শ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর ভাই মানিক হাজি এই খামার দেখাশোনা করেন। এই খামারের আরেক অংশীদার মিঠু।
সাতক্ষীরায় ইটভাটা দখল শ্যালকের
অভিযোগ উঠেছে, বেনজীর র্যাবের মহাপরিচালক থাকাকালে তাঁর দাপট দেখিয়ে শ্যালক মির্জা আনোয়ার পারভেজ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ আলীপুর গ্রামে ৪৮ বিঘা জমির ওপর আশরাফুজ্জামান হাবলু নামের এক ব্যক্তির ইটভাটা দখল করেছেন। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের শরাফপুর গ্রামে বেনজীরের শাশুড়ি লুত্ফুন নেসার নামে শতাধিক বিঘার ওপর চারটি মাছের ঘের আছে। লোকজনের ধারণা, এগুলোতে বেনজীরই বিনিয়োগ করেছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে পোলট্রি খামার
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বড় খোজাবাড়ী এলাকায় অন্তত ৫০ বিঘা জমির ওপর নর্থ পোলট্রি খামারে বেনজীরের অংশীদারত্ব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে যৌথ মালিকানা রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মিঠুর।
নীলফামারীতে পোলট্রি খামার ও কারখানা
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে ভিন্ন জগত পার্কসংলগ্ন এলাকায় নর্থ পোলট্রি খামার নামে একটি মুরগির খামার এবং মুরগির খাবার উৎপাদন কারখানার উদ্বোধনের সময়ও বেনজীর আহমেদ ও ঠিকাদার মিঠু উপস্থিত ছিলেন। এই খামার ও কারখানা অন্তত ৫০ বিঘা জমির ওপর। এখানেও তাঁদের যৌথ মালিকানা রয়েছে বলে শোনা যায়।
সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজারে সৈকত ঘেঁষে জমি
অভিযোগ রয়েছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় ১০ বছর আগে বেনজীর আহমেদ তাঁর নিজের নামে ৪ বিঘা বা ১ একর ৭৫ শতক জমি কেনেন। এ ছাড়া কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে কেনা হয়েছে ৭২ শতক জমি। এসব জমি কেনার সময় বেনজীর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন।
বান্দরবানে ২৫৭ বিঘা জমি
বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নে ও লামা উপজেলায় বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে কেনা অন্তত ২৫৭ বিঘা জমির সন্ধান পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে সুয়ালক ইউনিয়নে ৭৫ বিঘা এবং লামা উপজেলায় ১৮২ বিঘা জমি রয়েছে।
পাঁচ দেশে সম্পদের খোঁজ
বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিদেশে কোনো সম্পদ আছে কি না, সেই খোঁজ নিচ্ছে দুদক। বিদেশে তাঁর সম্পদ খুঁজতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বেনজীরের সম্পদ থাকতে পারে। মালয়েশিয়ায় আবাসন খাতে তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে বলেও তথ্য পেয়েছে দুদক।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর, তাঁর স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়েদের ৯ জুন তলব করে চিঠি দিয়েছে দুদক।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, সাবেক পুলিশপ্রধান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে ভয় দেখিয়ে, জোর করে জমি কিনে নেওয়ার যেসব অভিযোগ জানা যাচ্ছে, তা সত্যিই ভয়ংকর। বিবৃতিতে সাবেক পুলিশপ্রধানের অবৈধভাবে বিপুল অর্থ ও সম্পদ অর্জন এবং সেসব অর্জনে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের যে চিত্র উঠে আসছে, তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়ুন—
ভারতীয় টিভি চ্যানেল রিপাবলিক বাংলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং বাংলাদেশে তাদের সম্প্রচার নিষিদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
১ ঘণ্টা আগেপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই হামলার পরিণতিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা ইতিমধ্যেই নাজুক একটি অঞ্চলের স্থিতিশীলতা আরও বিঘ্নিত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা
৩ ঘণ্টা আগেদূতাবাস বলছে, তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন স্থানে বৈধ ও অবৈধভাবে অবস্থান করছেন প্রায় আড়াই হাজার বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে ২০০ শিক্ষার্থী, দূতাবাসের কূটনীতিক কর্মী, তাঁদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন, চিকিৎসার জন্য সেখানে যাওয়া কিছু রোগীসহ প্রায় ৩০০ জনের নিরাপত্তা ও অন্যান্য ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
৩ ঘণ্টা আগেবিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিইসি ও ইসি সচিবের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছি। আমরা জানি, বর্তমান কমিশন এ অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। আগের কমিশন যেহেতু সংবিধান লঙ্ঘন করে ফৌজদারি অপরাধ করেছে, এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা থানায় মামলা করা হয়েছে।’
৪ ঘণ্টা আগে