Ajker Patrika

প্রকৃতির প্রতি সদয় না হলে মাছও হারিয়ে যাবে: প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৩৭
রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: পিআইডি
রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: পিআইডি

প্রকৃতির প্রতি সদয় আচরণ না করলে মাছও হারিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘প্রকৃতি আমাদের প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু ধরে আনছি, পরিবেশন করছি। তার প্রতি সদয় হওয়ার চিন্তা আমাদের মাথায় আসে না। আমরা মাছের কথা বলি। কিন্তু আমাদের প্রকৃতির ওপর সদয় হওয়ার কথা চিন্তা করতে হবে।’

আজ সোমবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এত নির্দয় হচ্ছি যে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে মাছও বোধ হয় আমাদের কপাল থেকে ছুটে যাবে। দুনিয়ার বর্জ্য সব পানির মধ্যে, যা কিছু আছে তা পানির দিকে দিয়ে দিচ্ছি।’

মাছ আমাদের জন্য প্রকৃতির উপহার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কোনো কারখানাতে বানাই নাই। বানানোর জন্য শ্রমিক নিয়োগ করি নাই। এটা আল্লাহর দান, আমরা ধরে নিয়ে আসি। খাবার বেলায় উৎসাহ পাই। আরও খেতে চাই।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘নদী শাসনের কথা বলি, কথার কথা বলি হয়তো। নদী পালনের কথা বলি না। শাসন করতে চাই আমরা। শাসনের নামে তার প্রতি যত নির্দয় হওয়ার দরকার তা হই। আমরা বর্জ্য তো পানির মধ্যে দিচ্ছি। কিন্তু সেটা যে বিষ হয়ে আমাদের প্রতি আসছে, তা-ও গ্রাহ্য করেছি না। বর্জ্য ছাড়াও শরীরের যত অনিষ্টকারী জিনিস আছে, সব পানির মধ্যে ঢালছি। সে পানি আগামী দিন থাকবে কি, থাকবে না সেটারও পরোয়া করছি না। মনে হয় এটা আল্লাহর কর্তব্য, আমাদের খাওয়াতেই হবে তার। আমি যত অত্যাচার করি না কেন।’

পানির কথা ভুলে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাছ তত দিন পাব, যত দিন আমরা পানি রাখতে পারব। বাংলাদেশের প্রতি প্রকৃতি অত্যন্ত সদয়। প্রচুর পরিমাণ পানি আমাদের দিয়েছে।’

বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও জলসম্পদ মৎস্য উৎপাদনের বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ লাখ নারীসহ লাখ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু প্রকৃত মৎস্যজীবীরা অনেক সময় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা শুধু মাছের দাম বা মাছটা টাটকা কি না, সেটা দেখি, কিন্তু যারা প্রতিদিন শ্রম দিয়ে মাছ আমাদের কাছে পৌঁছে দেন, তাদের কথা ভুলে যাই। আজকের দিনটা অন্তত তাদের কথা মনে করার দিন।’

গভীর সমুদ্রের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে তার উপহার নিয়ে। এটি শুধু বেশি মাছ ধরার বিষয় নয়, বরং একটি নতুন শিল্প গড়ে তোলার সুযোগ। এ জন্য আমাদের গবেষণা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠ্যক্রমে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’

অবৈধ জাল ব্যবহার ও নির্বিচার মৎস্য আহরণকে ‘প্রকৃতির প্রতি নির্মমতা’ আখ্যা দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি ঠেকানো শুধু সরকারের কাজ নয়, বরং নাগরিক দায়িত্বও বটে। আগামী প্রজন্ম যেন এই সম্পদ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে জন্য আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।’

জলাশয় দূষণ, বালাইনাশকের ব্যবহার, তামাক চাষ, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের কথাও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে শত শত দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য ময়মনসিংহে লাইফ জিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হবে প্রকৃত মৎস্যজীবী ও জেলেদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি, বাজার সম্প্রসারণ, ভ্যালু-অ্যাডিশনের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রকৃতির অবদানকে সম্মান জানাতে শিখতে হবে, না হলে আগামী প্রজন্মের ভাগ্য সংকীর্ণ হয়ে পড়বে।’

অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে বিশেষ অবদানের জন্য নয়টি ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

এবারের মৎস্য সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে—‘অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি’। মৎস্য সপ্তাহ চলবে এক সপ্তাহব্যাপী। প্রদর্শনী, কর্মশালা ও আলোচনা সভার মাধ্যমে চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি, মাছের রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত