Ajker Patrika

আমরা জঙ্গি কার্ড খেলব: জুলাই আন্দোলনে হাসিনা–ইনুর ফোনালাপ শুনলেন ট্রাইব্যুনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনু। ফাইল ছবি
শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনু। ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে আন্দোলনকারীদের নিয়ে জঙ্গি কার্ড খেলার পরামর্শ দিয়েছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ওই সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি স্কুলে দিতে বলছি যে, তোমরা ছাত্ররা সব ঘরে ফেরো। গার্ডিয়ানদেরকে বলছি, এখানে কিন্তু জঙ্গি হামলা হয়েছে। এটা আমাকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বলেছে। এটা জঙ্গি হামলা দিয়ে দিব পত্রিকায়।’

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের অডিওতে এসব কথা বলতে শোনা যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেওয়ার পর ওই অডিও ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়। ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জোহা। তিনি এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।

জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালকে পাঁচটি অডিও দেন জোহা। এর মধ্যে চারটি শোনানো হয়; যেখানে দুটি অডিও শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর। আর অন্য দুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি এ এস এম মাকসুদ কামাল ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথোপকথনের।

ট্রাইব্যুনালের আজকের এই বিচারিক কার্যক্রম বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথন নিচে তুলে ধরা হলো–

হাসানুল হক ইনু: হ্যালো জি স্লামালাইকুম। আমি ইনু বলছিলাম। হ্যালো...

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ বলেন।

হাসানুল হক ইনু: জি, না আমি পরিস্থিতি অনুযায়ী একটু উদ্বেগের ভিতরে ছিলাম। তো আমি মনে করি যে সিদ্ধান্তটা খুব সঠিক হয়েছে আরকি। তো আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম যে কারফিউটা একটু কঠোর কারফিউ আরকি। তবে সারা ঢাকা শহরে যদি মাইক নামায়ে দিত, প্রশাসন থেকে কারফিউতে কি করা উচিত না...তাহলে একটু সুবিধা হতো মনে হয়।

শেখ হাসিনা: আমি হোম মিনিস্টারকে বলছি এখনি, সব জায়গায় মাইকিং করার জন্য...চারজন আহত...জেলায় জেলায় ডিসি অফিস...

হাসানুল হক ইনু: হ্যাঁ, ওইগুলা সব পেয়েছি আমি, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, আওয়ামী লীগের বাড়ি, আওয়ামী লীগ অফিস, এইগুলার প্রত্যেকের লিস্ট আমি পেয়েছি...

শেখ হাসিনা: আমি এখন ঢাকায় আসব।

হাসানুল হক ইনু: আচ্ছা তো এখন আমার কথা হচ্ছে যে কারফিউটা মানে এমন হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট করবে, গুলি হবে না। সেটা আপনার আমার ভিতরে, গুলি নাই। কিন্তু সেনাবাহিনীর ভাবটা এমন হবে, কঠোর মানে কঠোর একেবারে। তো সেই জন্য...

শেখ হাসিনা: আজকে আমি, সত্যি কথা বলতে কি, বলি আপনাকে। আমি...কমিটি আছে তো...মিটিং করছিলাম, করার আগেই আমি দিছি...তিন বাহিনীর প্রধানের সাথে বসছিলাম...

হাসানুল হক ইনু: ওটা দেখছি

শেখ হাসিনা: বললাম যে সিচুয়েশনটা একটু ভালো হচ্ছে। তাহলে আস্তে আস্তে আর্মি যেসব জেলা শান্ত আছে, ওইখান থেকে উঠায় ফেলো। আর এইখানে আস্তে আস্তে গ্র্যাজুয়ালি তুলে ফেলো। এই ডিসিশনটা দিয়ে দিছি।

হাসানুল হক ইনু: আচ্ছা।

শেখ হাসিনা: মানুষ একটু ইয়ে থাকুক। ওমা, ওইখানে বসা অবস্থায় শুনলাম যে, শুরু হয়ে গেছে।

হাসানুল হক ইনু: ওতো টার্গেটেড। উপজেলা লেভেলেরও ইউএনও অফিস ভাঙচুর করছে...

শেখ হাসিনা: ...পরিণাম শুনলাম তখন আমি বললাম যে ঠিক আছে...তোমরা বলো কী করবা...কারফিউটা আগায় দিচ্ছে আরকি, পয়েন্টগুলো যেগুলো ওদের কতগুলো জায়গা ওরা সিলেক্ট করছে, যেখানে হামলা করবে...তার প্রটেকশন দিবে। আর...র‍্যাব-পুলিশ টহল দিবে আর সেনাবাহিনীর অবশিষ্টর মধ্যে...যেখানে যেখানে প্রয়োজন হয়, তোমরা টহল দিবা। যেটা বলছ ওইটা ঠিক...ওই প্রেশারটা থাকতে হবে।

হাসানুল হক ইনু: প্রেশারটা থাকতে হবে, মানে প্রেশারটা থাকতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, যেটা কালকে আলাপ করছিলাম যে আপনার পার্টি নেটওয়ার্কে আমাদের পার্টি নেটওয়ার্কে...রেডি করা যে কারফিউ উঠে গেলে এক লাখ লোক ঢাকা দখল করব আমরা। বসব।

শেখ হাসিনা:... ওরা জেলায় আসবে, আমাদেরও জেলা থেকে লোক আসতে চাচ্ছে...বলছি ঠিক আছে আসেন।

হাসানুল হক ইনু: হ্যাঁ এটা আনা দরকার আমি মনে করি, এটা কারেক্ট।

শেখ হাসিনা: না, আসুক...

হাসানুল হক ইনু: আমি কালকে বলছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে শহীদ মিনার, শাহবাগ চত্বর, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে, প্রেসক্লাবের সামনে, পল্টনে...

শেখ হাসিনা:...আমাদের নিয়ে নিতে হবে

হাসানুল হক ইনু: এটা আমরা নিব, আমরা বসব এইখানে এবং কারফিউ যেদিন রিলাক্স হবে, সেদিনই মিছিলের নগরী হয়ে যাবে একেবারে এবং কিছুই না, শান্তি চাই, শান্তি চাই, ছাত্ররা বাড়ি যাও, ফেরত যাও, ফেরত যাও, সন্ত্রাস দমন করো...

শেখ হাসিনা: আচ্ছা আমি এটা স্কুলে দিতে বলছি যে তোমরা ছাত্ররা সব ঘরে ফেরো। গার্ডিয়ানদেরকে বলছি, এইখানে কিন্তু জঙ্গি হামলা হইছে।

হাসানুল হক ইনু: হ্যাঁ, রাইট রাইট।

শেখ হাসিনা: না, এইটা আমাকে...বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইয়ে পাইছি। তারা এইটাকে জঙ্গি হামলা হিসেবে কনসিডার মানে বলতেছে।

হাসানুল হক ইনু: হ্যাঁ, জাঙ্গি হামলাই হইছে...এই কার্ডটা খেলব আমরা এখন।

শেখ হাসিনা: না কার্ড খেলা না, এটা আমি আগে করি নাই, কিন্তু আমাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে মেসেজটা দিছে যে এটা জঙ্গি হামলা...

হাসানুল হক ইনু: জঙ্গি সন্ত্রাসের মোকাবিলা করছে এখন সরকার।

শেখ হাসিনা: ...তারা আমাকে এইটাই বলছে যে এইটা জঙ্গি হামলা...দিয়ে দিব পেপারে।

হাসানুল হক ইনু: আচ্ছা, এইটা একটা ব্যাপার, আরেকটা হচ্ছে যে, দুইটা ভাগ, একটা হচ্ছে ছাত্রদের কোটা আন্দোলনকারী, একটা হচ্ছে উৎখাতকারী। উৎখাতকারীরা জঙ্গি সন্ত্রাসী হামলায় চলে গিয়েছে। কোটা সংস্কারকারীর ব্যাপারে আপনার আমার সরকারের যা যা আছি, সমবেদনা আছে। উৎখাতকারীকে আমি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। কোনো ছাত্র যদি উৎখাতকারীর সঙ্গে জড়িত হয়, সেই দায়িত্ব আমি নিব না।

শেখ হাসিনা: ...এটা আপনারা বলেন, এটা আপনারা বলেন না কেন?

হাসানুল হক ইনু: আমি তো বলব...

শেখ হাসিনা: আরে আমি তো শো, আপনারা বললে তখন মনে করবে যে অন্যান্য অ্যাঙ্গেল থেকে বলা হইছে।

হাসানুল হক ইনু: আমি তো অবশ্যই বলব...

শেখ হাসিনা: বাকি দেখতেছি না, কমিউনিস্ট পার্টি তারা এখন শেষ হয়ে গেছে...

হাসানুল হক ইনু: তো দেখি আমি ওদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি।

শেখ হাসিনা:...কি জানি উনার নাম? সাইফুল হক নাকি?

হাসানুল হক ইনু: সাইফুল সাইফুল। জোনায়েদ সাকি। জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হক। আচ্ছা আমি জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হকের সঙ্গে একটু লিয়াজোঁ করি।

শেখ হাসিনা: তোমরা কোথায় নিচ্ছ দেশটাকে? ওদের মধ্যে যে সমর্থন দিচ্ছ তা এখন দেখো পুরা জঙ্গি হামলা হচ্ছে।

হাসানুল হক ইনু: আরেকটা পয়েন্ট কি খেয়াল করছেন আপনি যে, আনু মুহাম্মদরা সরি শিক্ষকেরা যারা সমর্থন দিছে, তারা একটা অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা করার চেষ্টা করছে। যেখানে বলতে চাচ্ছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষার্থীদের নিয়ে হেন-তেন নিয়ে হবে, ছায়া সরকার করবে এবং সংবিধান বাতিল করার জন্য একটা সংবিধান সভা করতে হবে। মানে সংবিধানই বাতিল করে দিবে...হ্যাঁ সংবিধান বাতিল চায়। আমি...ভাইকে একটু আগে বলছি যে, মাইনুল ভাই এটা খুবই অ্যালার্মিং কথা, যেখানে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি আর ম্যুরাল ভেঙে ফেলতেছে। তার মানে আমার পয়েন্টটা নিতে হবে যে, এদের অ্যাটাকটা হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের বেসিক অর্জনের ওপরে। সুতরাং তারা তো খালি সরকার বদল চাচ্ছে না, মানে কোটা আন্দোলন করে কোটা চায়নি, তারা সরকার উৎখাত করতে চাইছে। আর এক দফা আন্দোলনের মানে তারা হচ্ছে সরকারের মানে রাষ্ট্রের বেসিক সংবিধান উড়ায় দিচ্ছে চাচ্ছে। তার মানে এই জায়গায় পলিটিকসটা অ্যাটাক করতে হবে আমাকে, দাঁড় করাইতে হবে এখন।

শেখ হাসিনা: ওই যে সেভেনটি ফাইভের পর করছিল...

হাসানুল হক ইনু: এক্সাক্টলি। তো এখন আপনি কি এডজাস্ট করবেন এইটা ছোটখাটো পাঁচ-দশ মিনিটের...আরও দুই দিন এক দিন পরে?

শেখ হাসিনা: আজকের দিনটা যাক দেখি।

হাসানুল হক ইনু: আজকের দিনটা যাক, আমি প্ল্যানগুলা সাজাই, আপনাকে আমি আমার বিবেচনা যেগুলা আছে দিব আপনাকে। আর আমি বলি যে কারফিউটা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে অনেক কঠোর হবে যে, ঘর থেকে বের হলেই অ্যারেস্ট। গুলি না, মানে অ্যারেস্ট করে ভেসে আসবে মানে টেলিভিশনে যে শান্তিনিকেতন থেকে ৩০ জন অ্যারেস্ট হইছে, জেলে পাঠানো হইছে, কিন্তু জেলে পাঠাব না, থানায় রাখব, ১০ ঘণ্টা পরে ছেড়ে দিবেন আরকি। বুঝলেন না?

শেখ হাসিনা: বেশ, আচ্ছা।

হাসানুল হক ইনু: গরিব মানুষই তো। কিন্তু প্রোপাগান্ডা হবে ঘর থেকে বেরোলেই, মানে গুলি হবে, গুলি শব্দ বলব না, আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে কঠোর। কেউ ঘরের বাইরে বেরোবে না। মানে রিল্যাক্স কারফিউ না আরকি। আপনার অফিসের মানে বাসার চারপাশে একটু মানে এই মানিক মিয়া এভিনিউর এখান থেকে প্রোডাকশন বাড়ান।

শেখ হাসিনা: গণভবন, বঙ্গভবন সব আক্রমণ করবে...

হাসানুল হক ইনু: তা ঠিক আছে, আল্লাহ ভরসা। আমার কথা হচ্ছে যে, আমাদের পরে যে জনতার ঢাকা এটা প্রমাণ করার জন্য হোমওয়ার্কটাই আজকের ২৪ ঘণ্টায় করে ফেলতে হবে। এগুলো ওয়ার্ডে থেকে দুই হাজার লোক রেডি করতে হবে। এভরি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে দুই হাজার রেডি করতে হবে এবং জেলাগুলোতেও। আমি আমার যত নেটওয়ার্ক আছে, বলছি। কারফিউ উঠবে সঙ্গে সঙ্গে মিছিল বের হবে কুষ্টিয়া শহরে তিন হাজার লোকের পাঁচ হাজার লোকের, রংপুর শহরে, ময়মনসিংহ শহরে। মানে শান্তি চাই, সংঘাত চাই না। ছাত্ররা ঘরে ফেরত যাও। এই মিছিল দখল করে নিতে হবে।

শেখ হাসিনা: ঠিক আছে, আপনারা আগে বলেন যে, ছাত্ররা পরে যাও।

হাসানুল হক ইনু: আমিও বলতেছি, আমি অবশ্যই বলবে। কিন্তু আপনার পার্টিটাকে একটু চাঙা করেন।

শেখ হাসিনা: আমি স্ক্রলে দিয়ে দিছি দেখেন এখন চলে আসছে।

হাসানুল হক ইনু: আচ্ছা ঠিক আছে। ওকে, ঠিক আছে।

আরও এক কথোপকথন–

হাসানুল হক ইনু: হ্যালো জি জি স্লামালাইকুম।

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ ওয়ালাইকুমস্লাম, কী হইছে?

হাসানুল হক ইনু: ইনু বলছিলাম...না একটা কথা..আমি মনে করি যে আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে, এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আরকি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং...

শেখ হাসিনা: না রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখন আছে...

হাসানুল হক ইনু: শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই...

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ জানি, না, খালি মোল্লা না ওইখানে অনেক মাদ্রাসা।

হাসানুল হক ইনু: মাদ্রাসা আছে ওই...

শেখ হাসিনা: ...ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে...মাইকিং করতে হচ্ছে আরকি...নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না, আর্মিকে আমরা...নামাচ্ছি।

হাসানুল হক ইনু: ও আচ্ছা...

শেখ হাসিনা: না, আমি বলছি ক্যাজুয়ালটির দরকার নাই, ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে, তখন দুই পাশ দিয়ে ধরবে...মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন যে...সেনা পাঠানো হচ্ছে...আর হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বম্বিং করা হবে...র‍্যাব এর হেলিকপ্টার দিয়ে ওপর দিয়ে মারবে।

হাসানুল হক ইনু: আচ্ছা ওপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আরকি, ঠিক আছে...আমি একটা পয়েন্ট আপনাকে একটু নজরে আনার জন্য রিকোয়েস্ট করতেছি যে, কারফিউ ধরেন দুই-পাঁচ দিন যা চল্লো, চল্লো। কিন্তু কারফিউয়ের পরে যাতে আর মিছিল না নামতে পারে, সেই জন্য একটা হোমওয়ার্ক করতে। করা দরকার যে রকম আমি উত্তরা, বাড্ডা, গুলশান, যাত্রাবাড়ীতে যারা মিছিল লিড করছে, সেইগুলা চিহ্নিত। আর ছাত্রদল, বিএনপির ছেলেমেয়ে, শিবিরের...মানে ধরেন রিজভীকে অ্যারেস্ট করা বা রুহুলকে অ্যারেস্ট করা ইম্পর্টেন্ট না, ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে ওইখানে গ্রাউন্ডে যে মিছিলটা লিড করেছে। আমার কুষ্টিয়া জেলাতে এসপি সেইভাবে অলরেডি তালিকা করে ফেলছে। ওখানে কোনো সংঘর্ষ হয়নি, একটা ছররা গুলি খালি একজনের পায়ে লাগছে, উনি ম্যানেজ করছেন। উনি অলরেডি কম্পিউটারে ছবি দেখে দেখে ছেলেগুলার তালিকা করতেছেন। তা আমি বললাম যে ছেলেগুলাকে আজকে রাত্রের ভিতরে পিকআপ করে নাও।

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ শিউর।

হাসানুল হক ইনু: যাতে মিছিলটা লিড না করতে পারে। তা আমি ঢাকা শহরের জন্য বলছি যে আপনার গোয়েন্দারা নিশ্চয়ই তালিকা করতে পারবে যে উত্তরায় কারা।

শেখ হাসিনা: ...খালি গোয়েন্দারটা না, লোকাল লিডারদেরও করা উচিত।

হাসানুল হক ইনু: লোকাল লিডার ওইখানে এমপি খসরু আছে এবং হাসান হাবিব আছে। আমার কালকের যে রিপোর্ট হাসান হাবিব কিন্তু রাগ করে খসরুর ওপরে ছেড়ে দিছে যে এমপি সাহেব মোকাবিলা করুক...

শেখ হাসিনা: খসরু তো পারবে না, খসরু তো লোকাল না। হাসান তো লোকাল। ওদের তো লোকজন আছে।

হাসানুল হক ইনু: লোকাল না তো, হ্যাঁ রাইট। হাসান হাবিব নামেনি, আর এইখানে ওয়াকিলও সামলাইতে পারেনি। ও দুই লাইনে পা দিয়ে চলে। তো আমার কথা হচ্ছে যে, একটু লোকাল লিডারদের সাহায্যে তালিকাটা করে নিয়ে আজকের রাতের ভিতরে সব কাস্টডিতে নিতে পারেন। তাহলে কোন জায়গায় আর মোহাম্মদপুরে একটা পাঁয়তারা ছিল কালকে। আপনি রাত ১২টায় গিয়ে খুব ভালো করছেন। আজকে কিন্তু গণভবন ঘেরাও করত। মোহাম্মদপুরে ওইখান থেকে রেডি হচ্ছিল কালকে, মানে এইটা, সুতরাং...

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ, এইটা কয়েক দিন ধরে করতেছে।

হাসানুল হক ইনু: ডিসিশনটা খুবই কারেক্ট হইছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা: থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ...আমরা হলো রণক্ষেত্রের সাথী।

হাসানুল হক ইনু: রণক্ষেত্রের সাথী। তা আপনি একটু দয়া করে...এই পিকআপটা করতে বলেন...

শেখ হাসিনা: না, এইটা বলা আছে, বলতেছি, বলতেছি।

হাসানুল হক ইনু: ওইটা একটু হোমওয়ার্ক করতে বলেন, করে অ্যারেস্ট করে ফেলতে বলেন আজকে। মানে সবই অ্যারেস্ট করে ফেললে আর মিছিল করার লোক থাকবে না।

শেখ হাসিনা: লিসেন, দাঁড়ান, দাঁড়ান। অ্যারেস্ট করে...

হাসানুল হক ইনু: আরেকটা রিকোয়েস্ট আমার, ইন্টারনেট মনে হয় চালু করতে পারেন। এটা আমাদেরই কাজে লাগবে।

শেখ হাসিনা: কি যে চালু করব সব তো পোড়াই দিছে। ডাটা সেন্টারও পোড়ায় দিছে। ই পোড়ায় দিছে, এখন ওই নতুন তার কিনে জোড়া লাগাতে হবে।

হাসানুল হক ইনু: ...আমি যে কথাটা বলার চেষ্টা...আমি একাত্তরে রাত ৮টার সময় যাব একা কথা বলব। আমি বলব যে সরকারের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীর কোনো বিরোধ নেই। সরকারের সঙ্গে বিরোধ হচ্ছে নাশকতাকারী বিএনপি-জামায়াতের।

শেখ হাসিনা: না, ওইটা তো বলা হয়েছে। ওইটা আমি নিজেও বলছি...

হাসানুল হক ইনু:...এই জিনিসটা প্রোপাগান্ডায় আনতে হবে, যদি ইন্টারনেট থাকে, গণমাধ্যম দিয়ে আমরা পুরা নিউজে ফ্লাড করে দিলাম...

শেখ হাসিনা: ইন্টারনেট পাব কোথায়? ইন্টারনেট পোড়ায় দিছে। জীবনে...আমি তো আর আনব না, যদি অন্য সরকার আসে তাহলে আনবে... আমি দিছি ইন্টারনেট, ওরা পোড়াইতে থাকুক, ওইটা চলতে হবে...

হাসানুল হক ইনু: অন্য সরকার বাংলাদেশে আসবে না।

শেখ হাসিনা: আসুক, না আমি আর পারব না...যাচ্ছি এখন

হাসানুল হক ইনু: না না... যাওয়ার দরকার নাই।

শেখ হাসিনা: জামায়াত শায়েস্তা করে থুয়ে যেতে হবে। আপনার যেখানে যেখানে লোক আছে, তালিকাগুলি আপনারা করান, আমরাও করাচ্ছি।

হাসানুল হক ইনু:...আপনি এই...জামায়াত-শিবিরের মেরুদণ্ডটা আবার ভেঙে দেন ঢাকা শহরে।

শেখ হাসিনা: একেবারে...

হাসানুল হক ইনু:...এক্সপোজ হইছে আরকি, একটু দেখেন। আর বাদবাকি আমাকে যেটা বলবেন, আমি ইনশাআল্লাহ করব, কোনো অসুবিধা নেই।

শেখ হাসিনা: না ওই তালিকাগুলি একটু করায় ফালান...এই সুতায় যা পারেন, শিবির যে কয়টা আছে, যা আছে সব বের করেন...

হাসানুল হক ইনু: বুচ্ছি আমি বুচ্ছি।

শেখ হাসিনা: ঠিকাছে আচ্ছা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করেও মুখে দুর্গন্ধের কারণ, পরিত্রাণের উপায়

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

রাজশাহী খাদ্য অফিস: ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ কর্মকর্তা বহাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত