Ajker Patrika

অস্থায়ী পশুর হাট

ছোট ও মাঝারি গরুতে ক্রেতার আগ্রহ বেশি

  • ঈদের ছুটি শুরুর আগেই জমেছে রাজধানীর হাট।
  • বড় আকারের গরুর চাহিদা কম থাকায় হতাশা।
  • আজ ও আগামীকাল ক্রেতা আরও বাড়ার আশা।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ০৯: ৪৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দর-কষাকষি শেষে মুখে হাসি। গরুর গলায় বাঁধা রশির প্রান্ত ধরার হাতবদল। গরু নিয়ে বাড়ির পথ ধরা। এমন দৃশ্য গতকাল বুধবার বারবার চোখে পড়েছে রাজধানীর অস্থায়ী ও স্থায়ী পশুর হাটগুলোয়। দাম গতবারের চেয়ে বেশি না কম, এ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও ব্যাপারীদের অপেক্ষা কেটে ঈদের ছুটি শুরুর আগেই জমেছে কোরবানির পশুর হাটগুলো।

রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোয় দুই-তিন দিন আগে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল উঠলেও ক্রেতার দেখা ছিল না। অলস সময়ই কেটেছে ব্যাপারী ও তাঁদের সঙ্গের লোকদের। তবে গতকাল সকাল থেকেই দৃশ্য বদলে যায়। বাড়ে ক্রেতা সমাগম। আজ বৃহস্পতিবার ও কাল শুক্রবার ক্রেতা আরও বাড়বে বলে আশা হাটসংশ্লিষ্টদের।

এবারও চাহিদা বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর। বড় গরু দেখতে উৎসাহী দর্শনার্থীরা ভিড় করলেও কেনার আগ্রহ নিয়ে গেছেন দু-একজন। ব্যাপারীরা বলছেন, বড় আকারের গরুতে কৃষকের খরচ বেশি, কিন্তু লাভ কম। কিন্তু ছোট ও মাঝারি গরুতে লাভ বেশি। বিক্রিও হয় বেশি।

পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি মাঠের অস্থায়ী পশুর হাটে কুষ্টিয়া থেকে বড় আকারের ২০টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী কিসমত আলী। গতকাল দুপুর পর্যন্ত একটিও বিক্রি হয়নি। আলাপকালে হতাশা নিয়ে বললেন, ভবিষ্যতে ঢাকায় আর বড় গরু আর আনবেন না। একটি গরুর পেছনে অনেক খরচ হলেও যে দাম বলছেন, তাতে খরচই উঠবে না।

একই হাটে গরু নিয়ে আসা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার চাপাইগাজী গ্রামের ফরিদ উদ্দিন অবশ্য আছেন ফুরফুরে মেজাজে। বললেন, ছোট ১৮টি গরু এনেছিলেন, একটি বিক্রি করেছেন। ছোট গরুর চাহিদা থাকায় তিনি খুশি। তিন মণের বেশি মাংস হবে এমন গরুর দাম চাইছেন এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। ক্রেতা ৯৫ হাজার টাকা বলছেন। ছয় মণের বেশি মাংস হবে এমন একটি গরু ২ লাখ ২০ হাজারেই ছেড়ে দেবেন।

রহমতগঞ্জ মাঠে গরু কিনতে কামরাঙ্গীরচর থেকে আসা হাসিবুর রহমান বলেন, এবার দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে। তবে পছন্দ হলে গরু কিনেই ফিরবেন। একই মত আরও কয়েকজন ক্রেতার। তাঁরা দর-কষাকষি করছিলেন। কিন্তু ক্রেতা-বিক্রেতার দামের বেশি ব্যবধান হাসি ফোটাচ্ছিল না কারও মুখে।

রহমতগঞ্জ হাটে কয়েকটি গোলাপি ও কালো রঙের মহিষও উঠেছে। অবশ্য এই হাটের বড় আকর্ষণ মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের সাদা গরু। হাট পরিচালনাকারীরা জানান, মিরকাদিমের গরু ঈদের দু-এক দিন আগে ওঠে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় অল্প সময়েই বিক্রি হয়ে যায়।

দুপুরে শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘ ক্লাব মাঠের অস্থায়ী পশুর হাটে দাম গতবারের মতো বলে জানালেন কমলাপুরের বাসিন্দা তাহমীদ। তিনি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন। বললেন, গত বছরও প্রায় একই দামে একই আকারের একটি গরু কিনেছিলেন।

ওই হাটে পাবনা থেকে ১৯টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী হামিদুল হক। তিনি বলেন, দাম কম-বেশি যা-ই হোক, কিছু লাভ থাকলেই ছেড়ে দেবেন। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি এলে সমস্যা হচ্ছে। রাস্তাঘাটে কাদা। এমন পরিবেশে গরু কয়েক দিন থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

শাহজাহানপুর হাট পরিচালনাকারীদের একজন আশরাফুল ইসলাম জানান, তাঁদের হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকে বিক্রি পুরোদমে শুরু হয়েছে।

দুপুরে শাহজাহানপুর হাট পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, গরুর এমন একটা স্বাভাবিক দাম থাকুক, যেখানে কৃষক বা খামারি লাভবান হন এবং ক্রেতাও লাভবান হন। গরুর দাম যদি খুব কমে যায়, তখন কৃষক বা খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আবার দাম বেড়ে গেলে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গতকাল রাজধানীর প্রতিটি পশুর হাটেই ব্যাংকের অস্থায়ী এটিএম বুথ খোলা হয়েছে। সেখানে টাকা তোলা ছাড়াও জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। হাটে রয়েছে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন।

যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ মাঠের অস্থায়ী পশুর হাটের গরু কলেজ মাঠ ছাড়িয়ে প্রতিবারের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের খালি জায়গা, পাশের সরু সড়কসহ আশপাশের সব সড়কে বিস্তৃত হয়েছে। ওই হাটের ‘সাদা বাবু’ নামের গরুটি সবার নজর কেড়েছে। বিশালদেহী গরুটির রং সাদা হওয়ায় এই নাম বলে জানান মালিক বাবুল মাতব্বর। ২৭ মণ ওজনের গরুটি গত রোববার আনা হয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে। দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। এক ক্রেতা আট লাখ টাকা দাম বলেছেন। উৎসাহী শিশু-কিশোরেরা গরুটির সঙ্গে সেলফি তুলছিল। ওই হাটে প্রচুর গরু উঠেছে।

হাটের ইজারাদার তারিকুল ইসলাম জানান, এই হাটে ৬০টি সিসি ক্যামেরা, জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন, তিনটি ব্যাংকের বুথসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় পৌঁছেছে ওসমান হাদির মরদেহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহ ঢাকায় পৌঁছেছে। তাঁর মরদেহ বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাটটি আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করে। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। গতকাল সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতার আশঙ্কায় বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের জন্য দূতাবাসের সতর্কবার্তা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির জানাজাকে কেন্দ্র করে আগামীকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকাজুড়ে ব্যাপক জনসমাগম ও তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকার এবং বড় ধরনের জনসমাবেশ এড়িয়ে চলার অনুরোধ জানিয়ে একটি সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

মার্কিন দূতাবাসের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ‘গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তরুণ নেতা শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তাঁর জানাজা আগামীকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জোহরের নামাজের পর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানাজা উপলক্ষে ওই এলাকা এবং সমগ্র ঢাকাজুড়ে অত্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হতে পারে।’

সম্ভাব্য এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য দূতাবাস কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে—নাগরিকদের যেকোনো বড় জনসমাবেশ বা বিক্ষোভ এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে আয়োজিত সমাবেশও যেকোনো সময় সংঘাতপূর্ণ বা সহিংস হয়ে উঠতে পারে। জনসমাবেশের আশপাশে চলাচলের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং স্থানীয় পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪২
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় একজন সাবেক সাংবাদিক হিসেবে তিনি ‘লজ্জিত’ বলে জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি এই কথা বলেন।

শফিকুল আলমের ইংরেজিতে শেয়ার করা পোস্টের বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘গত রাতে, ডেইলি স্টার আর প্রথম আলোর সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে যখন সাহায্যের আকুল আবেদন জানানো ফোন পাচ্ছিলাম, তখন তাঁদের গলা কান্নায় বুজে আসছিল। বন্ধুরা আমার, আপনাদের কাছে আমি বড় অপরাধী; আমি আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারলাম না।’

তিনি বলেন, ‘যাঁদের জানানো প্রয়োজন, তাঁদের সবাইকে বারবার ফোন করেছি যাতে দ্রুত সাহায্যের ব্যবস্থা করা যায়, কিন্তু কোনো সাহায্যই শেষ পর্যন্ত সময়মতো এসে পৌঁছাল না। ভোর পাঁচটায় যখন ঘুমাতে গেলাম, তখন শুধু এটুকুই জেনেছি যে—ডেইলি স্টারের (ভবনের) ভেতরে আটকে পড়া সব সাংবাদিক উদ্ধার পেয়েছেন, তাঁরা নিরাপদ। তবে ততক্ষণে এই দুই পত্রিকা অফিস দেশের সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে অন্যতম এক বর্বরোচিত হামলা আর অগ্নিকাণ্ডের ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’

প্রেস সচিব লিখেন, ‘কী বলে যে আপনাদের সান্ত্বনা দেব, আমার জানা নেই। একজন সাবেক সাংবাদিক হিসেবে শুধু এটুকুই বলতে পারি—আমি লজ্জিত। আমার কেবলই মনে হচ্ছে, যদি বড় একটা কবর খুঁড়ে নিজেকে লজ্জায় সেখানে পুতে দিতে পারতাম!’

এর আগে, গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। সরেজমিন দেখা গেছে, আগুনে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর ভবন দুটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতার ধারাবাহিকতায় নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে: আসক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সহিংসতার ধারাবাহিকতায় নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে: আসক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস ও সহিংসতার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এই অবস্থায় দেশের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি আজ সর্বমহলের। নির্মম হামলায় তরুণ রাজনীতিবিদ শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদকে কেন্দ্র করে গতকাল রাত থেকে দেশে যে পরিকল্পিত মব সন্ত্রাস ও সহিংসতার ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ও ভয়াবহ। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাসমূহের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর মব তৈরি করে হেনস্তা করার ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভয়ংকর বার্তা বহন করে। একই সঙ্গে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবনে হামলা, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ির ধ্বংসাবশেষে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, রাজশাহী ও খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের নামে জমায়েত এবং চট্টগ্রামে ভারতীয় উপহাইকমিশনের সামনে রাতের বেলা অবস্থান—সব মিলিয়ে একটি সুপরিকল্পিত অস্থিরতা সৃষ্টির চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একই ধারাবাহিকতায় একজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতেও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে।

আসক মনে করে, সংবাদমাধ্যম, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপর এ ধরনের সমন্বিত হামলা দেশে উগ্র ও সহিংস চিন্তার বিপজ্জনক বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়। ছায়ানট দীর্ঘদিন ধরে শিল্প-সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার কেন্দ্র হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত; সেই প্রতিষ্ঠানে হামলা প্রমাণ করে যে, অসহিষ্ণুতা ও উগ্রতার একটি অপ্রত্যাশিত ক্ষেত্র ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী কেন সময়মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি, তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

আসক আরও মনে করে, সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার বিশেষত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা রক্ষায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যে সীমাবদ্ধতাগুলো প্রকাশ পাচ্ছে, তা দুঃখজনক।

আসক অবিলম্বে হাদির মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠ‍ু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তসহ মব সন্ত্রাসে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা, সংবাদমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ নিরাপত্তা এবং জুলাই আন্দোলনের তরুণদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যথায় এই ধারাবাহিক সহিংসতা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিসর এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী সংকট হিসেবে থেকে যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত