Ajker Patrika

৩ হাজার কোটি টাকার কীটনাশকের বাজার বহুজাতিক কোম্পানির হাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩: ১৫
৩ হাজার কোটি টাকার কীটনাশকের বাজার বহুজাতিক কোম্পানির হাতে

দেশে কীটনাশকের বাজার প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে মাত্র ৭০০ কোটি টাকার বাজারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশীয় ছয় শতাধিক কোম্পানির হাতে। বাকি ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বাজারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দুটি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। এ হিসাবে কীটনাশকের বাজারের ৮২ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে এ দুই প্রতিষ্ঠান।

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএম) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আলোচকেরা এ তথ্য তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, কীটনাশক কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু সরকারি আইনি কাঠামোর কারণে এই খাতের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সুযোগ নিচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। আর কোণঠাসা হয়ে পড়ছে দেশীয় প্রায় সাড়ে ছয় শ কীটনাশক উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান।

বিএএম ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে কীটনাশকের বাজার রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে দুটি বহুজাতিক কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বাজার। আর দেশীয় সাড়ে ছয় শ কোম্পানি মিলে মাত্র ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করছে। এই হিসেবে কীটনাশক বাজারের ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। 

সংবাদ সম্মেলনে বিএএমের আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কীটনাশক উৎপাদনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আজ কঠিন প্রতিবন্ধকতার মুখে। এ জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ২০১০ সালের পুরোনো একটি প্রজ্ঞাপন এবং পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি কমিটির (পিটিএসি) অসংগতিপূর্ণ শর্ত। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে কীটনাশক-সংক্রান্ত সর্বশেষ যে আইন প্রণীত হয়, সেখানে দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। আইন, বিচার এবং সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সুপারিশেও দেশীয় কৃষিশিল্পের বিকাশের স্বার্থে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানির জন্য উৎস উন্মুক্ত করার সুপারিশ উল্লেখ রয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০১৫ সাল থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পিটিএসি দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য একাধিক বিদেশি সোর্স (প্রতিষ্ঠান) পছন্দের সুযোগ রুদ্ধ করে রেখেছে। তারা শর্ত দিয়ে উল্লেখ করেছে, কীটনাশক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির তারিখ হইতে ২ বছরের মধ্যে নিবন্ধিত কীটনাশক উৎপাদনকারী বা সোর্স পরিবর্তনের আবেদন করা যাবে না।’

অন্যদিকে বিদেশি কোম্পানি বাড়তি সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করছে জানিয়ে কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কীটনাশক ব্যবসার জন্য এ দেশে নিয়োজিত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এ নিয়ম ঠিক উল্টো। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত তাদের প্ল্যান্ট থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান যাতে প্রতিযোগিতামূলক দামে সংগ্রহ করতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে মূল্য যাচাই-বাছাই করে একাধিক সোর্সের কাছ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে। কিন্তু দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে বলা হয়েছে, তারা শুধু একটি নির্দিষ্ট বিদেশি সোর্সের (কোম্পানি) কাছ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানি করতে পারবে। এভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো প্রতি পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। বৈষম্যমূলক ওই শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশীয় কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। এই শর্তের কারণে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় বাজারের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। এসব করা হয়েছে শুধু একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো।’

রহমান পেস্টিসাইড অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু জাহাঙ্গীর খান বলেন, ‘আমরা কাঁচামাল সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা রকম সমস্যায় পড়ি। মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি পত্র নিতে গেলেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একটা ফাইল মাসের পর মাস টেবিলে ঘুরতে থাকে। আমদানি করা কন্টেইনারের ডেমারেজ দিতে দিতে তত দিনে আমাদের জীবন শেষ। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানি যারা কোটি কোটি টাকার কাঁচামাল আনে, তাদের এনওসি লাগে না। এতে ব্যবসায়ীর লস, কৃষকের লস। ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্টিলাইজারেরা আনতেছে, তাদের কোনো সমস্যা নেই। কাঁচামাল সংগ্রহের সোর্স উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এনওসি সহজীকরণ করতে হবে। কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য উৎপাদনের পর আমদানিকারকের কাছে বিক্রির সুযোগ থাকতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত