১৩৩১ বঙ্গাব্দের গ্রীষ্মের অবকাশ। বিশ্বভারতী বন্ধ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথও ছুটি কাটাতে কলকাতা থেকে রওনা হলেন শিলংয়ের উদ্দেশে। ইংরেজিতে সে তারিখ ২৬ এপ্রিল ১৯২৩।
সেবার তিনি শিলংয়ে ছিলেন প্রায় দুই মাস। জুনের মাঝামাঝি ফিরেছিলেন। শিলং তাঁর খুব ভালো লেগে গিয়েছিল। এতটাই ভালো লেগেছিল যে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে তিনি আবার শিলং গিয়েছিলেন। সেবার আহমেদাবাদের ধনাঢ্য অম্বা লাল সরাভাইয়ের অনুরোধ ও ব্যবস্থাপনায়। শিলংয়ে রবীন্দ্রনাথ বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছিলেন। ‘রক্তকরবী’ নাটক আর ‘যোগাযোগ’ উপন্যাস লেখার সূচনা সেখানেই। রক্তকরবী যখন লেখেন, তখন এর নাম ছিল ‘যক্ষপুরী’, যোগাযোগের নাম ‘তিন পুরুষ’। যোগাযোগ শেষ করে রবীন্দ্রনাথ আরম্ভ করেন ‘শেষের কবিতা’ লেখা। তাঁর দ্বিতীয়বার শিলং বাসের আবেশ ফিকে হওয়ার আগেই।
শিলং মানে বাঙালির নস্টালজিয়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯, ১৯২৩ ও ১৯২৭ সালে তিন দফায় ভারতের মেঘালয়ের শিলং ভ্রমণ করেন। শিলং পাহাড়ের পথে বিপরীতমুখী দুটি গাড়ির পরস্পর আকস্মিক দুর্ঘটনায় পরিচয় হয় বিলাতফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় ও লাবণ্যর। নির্জন পাহাড়ের সবুজ অরণ্যঘেরা দুর্লভ অবসরে দুজন দুজনকে দেখে মুগ্ধ হয়। যার পরিণতি দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত ভালোবাসায়। পরস্পর বিপরীতমুখী কিংবা স্বভাবে একই দুই নর-নারীর ভালোবাসার গল্প ছিল সেটি।
শিলংয়ে কবিগুরুর স্মৃতির খোঁজে শিলং ভ্রমণ করেছিলাম। সে ভ্রমণের তৃতীয় দিন মায়ের সঙ্গে হাজির হই রিলবংয়ের জিৎভূমি বাড়ির সামনে। সকালে পুলিশ বাজারের প্রখ্যাত বাঙালি রেস্টুরেন্ট সুরুচি থেকে লুচি আর সবজি দিয়ে নাশতা সেরে এদিক-সেদিক ঘুরে আসি জিৎভূমি। শিলংয়ের পুলিশ বাজারের অনেকটা কাছে এ বাড়ি। রবীন্দ্রনাথ এখানে প্রথমবার যে বাড়িতে ছিলেন, তার নাম জিৎভূম। তবে এখন সেটা আর অক্ষত নেই। তার মালিকানা বদলে গেছে। সেখানে নতুন টিনের সেমিপাকা বাড়ি আর দেয়াল উঠেছে। বাড়ির মালিক নিশ্চয়ই জানেন, এখানে একদিন রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন। সেই স্মারক তিনি পাথরে খোদাই করে রেখেছেন বটে; কিন্তু বাড়ির নাম খানিকটা বদলে গিয়ে হয়েছে জিৎভূমি।
বাগানঘেরা এ বাড়িতে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ ‘একটি ছাউনি, একটি দিন’ লেখেন। কিছু অনুবাদও করেন এখানে থেকে। শেষের কবিতায় অনেক বর্ণনা আছে এ বাড়ির। আমরা অবশ্য বাড়ির ভেতরে যেতে পারিনি সেখানে যাওয়া নিষেধ বলে।
দ্বিতীয়বার শিলংয়ে থাকার সময় যে বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন, সেটার কোনো পোশাকি নাম নেই। সেখানে তিনি ছিলেন তিন সপ্তাহের মতো। বর্তমানে এটি রবীন্দ্র আর্ট গ্যালারি। গ্যালারির সামনে আছে রবীন্দ্রনাথের পূর্ণাবয়ব ভাস্কর্য। ২০১১ সালে এ মূর্তি স্থাপিত হয়। এ ছাড়া গ্যালারির ভেতর আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খাট, বিছানা, ব্যবহার করা চেয়ার-টেবিল, ফায়ার প্লেসসহ বহু নিদর্শন। বাড়িটি এখন খানিকটা সংস্কার করে অক্ষতই রাখা হয়েছে। এর সামনে ইংরেজি ভাষায় পাথরে খোদাই করে লেখা আছে রবীন্দ্রনাথের অবস্থানের তথ্য। টিন আর কাঠের তৈরি সুন্দর এই ঘরের সামনে প্রশস্ত আঙিনা আর ছোট্ট এক টুকরো বাগান—এখনো আগের মতোই সুন্দর। গ্যালারির আঙিনা ও প্রবেশপথের দুই পাশে বড় বড় দেবদারুগাছ। সেগুলো রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক। অনেকটা দেবদারুর ছায়াময় বলা যায় পুরো গ্যালারি প্রাঙ্গণ।
শিলংয়ে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত আরেকটি বাড়ি আছে লাইতুমখারার আপল্যান্ডসে, নাম সলোমন ভিলা বা সিধলি প্যালেস। আরও কয়েক বছর আগে এ প্যালেস ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেল। সে জন্য আমরা আর সেদিকে গেলাম না। ব্রুকসাইডের দেবদারুগাছের তলায় কবিগুরুর ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে সেখান থেকে ফিরে এলাম।
প্রয়োজনীয় তথ্য
শিলং যেতে চাইলে ভিসার আবেদনে ডাউকি বর্ডার উল্লেখ করতে হবে। সেখানে যাওয়ার জন্য সেটিই সহজ মাধ্যম। সিলেটের তামাবিল বর্ডার পার হলেই ডাউকি। সেখান থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যায় শিলংয়ের। শেয়ারের ট্যাক্সির ভাড়া ৩০০ রুপি। রিজার্ভ ১ থেকে ২ হাজার রুপি। সারা দিনের জন্য ট্যাক্সি পাওয়া যাবে দেড় থেকে দুই হাজার রুপিতে। এ ছাড়া মেঘালয় ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের বাসেও ঘোরা যায় বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা।
শিলং পুলিশ বাজারে অনেক হোটেল পাবেন থাকার জন্য। হোটেলে থাকার জন্য পাসপোর্টের ফটোকপি ও ছবির প্রয়োজন হবে। এখানে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার রুপিতে রুম পাওয়া যায়। সিঙ্গেল বা ডবল রুমে চাইলে ভাড়ায় আলাদা ম্যাট নিয়ে বাড়তি লোকও থাকতে পারবেন।
কমলাপুর থেকে শিলংয়ের উদ্দেশে বিআরটিসি-শ্যামলী বাস যায়। এগুলোর মাধ্যমেও যেতে পারেন।
১৩৩১ বঙ্গাব্দের গ্রীষ্মের অবকাশ। বিশ্বভারতী বন্ধ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথও ছুটি কাটাতে কলকাতা থেকে রওনা হলেন শিলংয়ের উদ্দেশে। ইংরেজিতে সে তারিখ ২৬ এপ্রিল ১৯২৩।
সেবার তিনি শিলংয়ে ছিলেন প্রায় দুই মাস। জুনের মাঝামাঝি ফিরেছিলেন। শিলং তাঁর খুব ভালো লেগে গিয়েছিল। এতটাই ভালো লেগেছিল যে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে তিনি আবার শিলং গিয়েছিলেন। সেবার আহমেদাবাদের ধনাঢ্য অম্বা লাল সরাভাইয়ের অনুরোধ ও ব্যবস্থাপনায়। শিলংয়ে রবীন্দ্রনাথ বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছিলেন। ‘রক্তকরবী’ নাটক আর ‘যোগাযোগ’ উপন্যাস লেখার সূচনা সেখানেই। রক্তকরবী যখন লেখেন, তখন এর নাম ছিল ‘যক্ষপুরী’, যোগাযোগের নাম ‘তিন পুরুষ’। যোগাযোগ শেষ করে রবীন্দ্রনাথ আরম্ভ করেন ‘শেষের কবিতা’ লেখা। তাঁর দ্বিতীয়বার শিলং বাসের আবেশ ফিকে হওয়ার আগেই।
শিলং মানে বাঙালির নস্টালজিয়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৯, ১৯২৩ ও ১৯২৭ সালে তিন দফায় ভারতের মেঘালয়ের শিলং ভ্রমণ করেন। শিলং পাহাড়ের পথে বিপরীতমুখী দুটি গাড়ির পরস্পর আকস্মিক দুর্ঘটনায় পরিচয় হয় বিলাতফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় ও লাবণ্যর। নির্জন পাহাড়ের সবুজ অরণ্যঘেরা দুর্লভ অবসরে দুজন দুজনকে দেখে মুগ্ধ হয়। যার পরিণতি দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত ভালোবাসায়। পরস্পর বিপরীতমুখী কিংবা স্বভাবে একই দুই নর-নারীর ভালোবাসার গল্প ছিল সেটি।
শিলংয়ে কবিগুরুর স্মৃতির খোঁজে শিলং ভ্রমণ করেছিলাম। সে ভ্রমণের তৃতীয় দিন মায়ের সঙ্গে হাজির হই রিলবংয়ের জিৎভূমি বাড়ির সামনে। সকালে পুলিশ বাজারের প্রখ্যাত বাঙালি রেস্টুরেন্ট সুরুচি থেকে লুচি আর সবজি দিয়ে নাশতা সেরে এদিক-সেদিক ঘুরে আসি জিৎভূমি। শিলংয়ের পুলিশ বাজারের অনেকটা কাছে এ বাড়ি। রবীন্দ্রনাথ এখানে প্রথমবার যে বাড়িতে ছিলেন, তার নাম জিৎভূম। তবে এখন সেটা আর অক্ষত নেই। তার মালিকানা বদলে গেছে। সেখানে নতুন টিনের সেমিপাকা বাড়ি আর দেয়াল উঠেছে। বাড়ির মালিক নিশ্চয়ই জানেন, এখানে একদিন রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন। সেই স্মারক তিনি পাথরে খোদাই করে রেখেছেন বটে; কিন্তু বাড়ির নাম খানিকটা বদলে গিয়ে হয়েছে জিৎভূমি।
বাগানঘেরা এ বাড়িতে থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ ‘একটি ছাউনি, একটি দিন’ লেখেন। কিছু অনুবাদও করেন এখানে থেকে। শেষের কবিতায় অনেক বর্ণনা আছে এ বাড়ির। আমরা অবশ্য বাড়ির ভেতরে যেতে পারিনি সেখানে যাওয়া নিষেধ বলে।
দ্বিতীয়বার শিলংয়ে থাকার সময় যে বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন, সেটার কোনো পোশাকি নাম নেই। সেখানে তিনি ছিলেন তিন সপ্তাহের মতো। বর্তমানে এটি রবীন্দ্র আর্ট গ্যালারি। গ্যালারির সামনে আছে রবীন্দ্রনাথের পূর্ণাবয়ব ভাস্কর্য। ২০১১ সালে এ মূর্তি স্থাপিত হয়। এ ছাড়া গ্যালারির ভেতর আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খাট, বিছানা, ব্যবহার করা চেয়ার-টেবিল, ফায়ার প্লেসসহ বহু নিদর্শন। বাড়িটি এখন খানিকটা সংস্কার করে অক্ষতই রাখা হয়েছে। এর সামনে ইংরেজি ভাষায় পাথরে খোদাই করে লেখা আছে রবীন্দ্রনাথের অবস্থানের তথ্য। টিন আর কাঠের তৈরি সুন্দর এই ঘরের সামনে প্রশস্ত আঙিনা আর ছোট্ট এক টুকরো বাগান—এখনো আগের মতোই সুন্দর। গ্যালারির আঙিনা ও প্রবেশপথের দুই পাশে বড় বড় দেবদারুগাছ। সেগুলো রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক। অনেকটা দেবদারুর ছায়াময় বলা যায় পুরো গ্যালারি প্রাঙ্গণ।
শিলংয়ে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত আরেকটি বাড়ি আছে লাইতুমখারার আপল্যান্ডসে, নাম সলোমন ভিলা বা সিধলি প্যালেস। আরও কয়েক বছর আগে এ প্যালেস ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেল। সে জন্য আমরা আর সেদিকে গেলাম না। ব্রুকসাইডের দেবদারুগাছের তলায় কবিগুরুর ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে সেখান থেকে ফিরে এলাম।
প্রয়োজনীয় তথ্য
শিলং যেতে চাইলে ভিসার আবেদনে ডাউকি বর্ডার উল্লেখ করতে হবে। সেখানে যাওয়ার জন্য সেটিই সহজ মাধ্যম। সিলেটের তামাবিল বর্ডার পার হলেই ডাউকি। সেখান থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যায় শিলংয়ের। শেয়ারের ট্যাক্সির ভাড়া ৩০০ রুপি। রিজার্ভ ১ থেকে ২ হাজার রুপি। সারা দিনের জন্য ট্যাক্সি পাওয়া যাবে দেড় থেকে দুই হাজার রুপিতে। এ ছাড়া মেঘালয় ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের বাসেও ঘোরা যায় বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা।
শিলং পুলিশ বাজারে অনেক হোটেল পাবেন থাকার জন্য। হোটেলে থাকার জন্য পাসপোর্টের ফটোকপি ও ছবির প্রয়োজন হবে। এখানে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার রুপিতে রুম পাওয়া যায়। সিঙ্গেল বা ডবল রুমে চাইলে ভাড়ায় আলাদা ম্যাট নিয়ে বাড়তি লোকও থাকতে পারবেন।
কমলাপুর থেকে শিলংয়ের উদ্দেশে বিআরটিসি-শ্যামলী বাস যায়। এগুলোর মাধ্যমেও যেতে পারেন।
পাহাড়, সবুজ গাছপালা আর ছায়াঘেরা পথজুড়ে সাজেক যেন এক মেঘকপ্রেমিক ভূখণ্ড। এখানে ভোরের আলো ফোটার আগেই চারপাশ ঢেকে যায় নরম তুলার মতো মেঘে। পাহাড় আর মেঘের এই মিতালি দেখে যেকেউ বিমোহিত হবেন। আর পাহাড়ের সৌন্দর্য আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায় বর্ষায়। মূলত পাহাড়ে যাওয়ার আদর্শ সময় এ ঋতু।
২ ঘণ্টা আগেফ্রিজে যত দিন কোরবানির মাংস আছে, তত দিন বাড়িতে অতিথি এলে পোলাও আর মাংসের পদ তৈরি হবেই। তবে এই গরমে ভারী খাবারের পর এক গ্লাস বোরহানি পান করলে অনেকটাই স্বস্তি মিলবে।
৪ ঘণ্টা আগেধারণা করা হচ্ছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে মুসলিম ভ্রমণকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৪৫ মিলিয়ন। তখন মুসলিম পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৫ সালের ‘টপ মুসলিম-ফ্রেন্ডলি ডেস্টিনেশন অব দ্য ইয়ার’ খেতাব পেয়েছে মালয়েশিয়া।
১ দিন আগেতিব্বত অঞ্চলের খাবার হলেও মোমো এখন আমাদের দেশে পাওয়া যায়। রাস্তার মোড়ে কিংবা গলির দোকানে এখন হরেক স্বাদের মোমোর দেখা মেলে। একেবারে তিব্বতি বা নেপালি মোমো এখানে তৈরি হওয়া সম্ভব নয় উপকরণের স্বল্পতার কারণে। তাই নিজের মতো করে তৈরি করে নিতে পারেন এ খাবার।
১ দিন আগে