Ajker Patrika

দুঃস্বপ্ন কি সত্যিই সতর্কবার্তা দেয়, গবেষকেরা কী বলছেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
দুঃস্বপ্ন আসলে সত্যিই ভবিষ্যতের ঘটনার আগাম বার্তা দেয় কি না সেটি, এক রহস্য হয়ে আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
দুঃস্বপ্ন আসলে সত্যিই ভবিষ্যতের ঘটনার আগাম বার্তা দেয় কি না সেটি, এক রহস্য হয়ে আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়ে বুক ধড়ফড় করা কিংবা অদ্ভুত ভয়ের ঘোরে ডুবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকের রয়েছে। স্বপ্নের জগৎ রহস্যে ভরা হলেও দুঃস্বপ্ন বা নাইটমেয়ার যেন তারই এক ভীতিকর দিক। অনেকে মনে করেন, দুঃস্বপ্ন ভবিষ্যৎ বিপদের আগাম সংকেত দেয়। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলছে?

দুঃস্বপ্নের সাধারণ চিত্র

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গেছে, দুঃস্বপ্নে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মৃত্যু, আঘাত, দুর্ঘটনা, তাড়া খাওয়া কিংবা প্রিয়জনকে হারানোর মতো দৃশ্য। দুঃস্বপ্নে অনেকে নিজেদের অসহায় অবস্থায় খুঁজে পান; যেমন হাত-পা বাঁধা, সাহায্যের জন্য চিৎকার করে কারও সাড়া না পাওয়া ইত্যাদি। নারীরা তুলনামূলক বেশি জানান অসুস্থতা, শারীরিক আক্রমণ ও প্রিয়জন হারানোর কথা। অন্যদিকে পুরুষেরা বেশি জানান দুর্ঘটনা বা কর্মজীবনে ব্যর্থ হওয়ার স্বপ্নের কথা। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এসব দুঃস্বপ্ন আসলে আমাদের অবচেতন মনের ভয়ের প্রতিচ্ছবি। তবে এগুলো সত্যিই ভবিষ্যতের ঘটনার আগাম বার্তা দেয় কি না সেটি, এক রহস্য হয়ে আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

সতর্কবার্তা নাকি শরীর-মন থেকে আসা সংকেত

দুঃস্বপ্ন বিষয়ে জনপ্রিয় মত হলো, এটি ভবিষ্যতের অশনিসংকেত। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে এ ধারণার তেমন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি; বরং গবেষণা বলছে, দুঃস্বপ্ন শরীর ও মনের ভেতরে চলমান নানান প্রক্রিয়ার প্রতিফলন। যেমন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দুঃস্বপ্নের প্রবণতা অনেক বেশি। হতাশা, উদ্বেগ, কিংবা পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভোগা মানুষের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখেন। এমনকি মাইগ্রেন, অ্যাজমা বা হজমজনিত সমস্যার সঙ্গেও দুঃস্বপ্নের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। অনেক সময় নতুন কোনো ওষুধ খাওয়া শুরু করলে রাতারাতি দুঃস্বপ্ন দেখার পরিমাণ বেড়ে যায়।

দুঃস্বপ্ন কেন দেখে মানুষ

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বপ্ন আসলে দিনের অভিজ্ঞতা ও আবেগ প্রক্রিয়াজাত করার অংশ। যখন আমাদের মধ্যে অস্থিরতা, ভয় বা চাপ জমে থাকে, তখন তা দুঃস্বপ্ন হিসেবে ফুটে ওঠে। এর কিছু কারণের কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা। সেগুলো হলো—

মানসিক চাপ: পরীক্ষা, চাকরি, আর্থিক টানাপোড়েন বা সম্পর্কের জটিলতাজনিত চাপ।

জীবনযাত্রা: অনিয়মিত ঘুম, রাত জাগা, শোয়ার আগে অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা ভারী খাবার খাওয়া।

শিশুদের ক্ষেত্রে: মানসিক বিকাশ ও কল্পনাশক্তির কারণে দুঃস্বপ্ন বেশি দেখা।

শারীরিক অসুস্থতা: জ্বর, ব্যথা বা শ্বাসকষ্টও স্বপ্নকে প্রভাবিত করে।

এক অর্থে দুঃস্বপ্ন হলো শরীরের ভেতর থেকে আসা একধরনের সতর্কবার্তা। কিন্তু সেটা ভবিষ্যতের নয়, বর্তমানের শারীরিক বা মানসিক অবস্থার।

কখন উদ্বেগের কারণ

মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ যদি সপ্তাহে একাধিকবার দুঃস্বপ্ন দেখছেন, একই ভয়ংকর স্বপ্ন বারবার ফিরে আসছে, সে ভয়ে ঘুমানো এড়িয়ে যাচ্ছেন বা দিনের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। এমন হলে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ বা রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। অনেক সময় শিশু বা কিশোরদের ক্ষেত্রেও দুঃস্বপ্ন মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।

দুঃস্বপ্ন কমানোর উপায়

দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পেতে জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস পরিবর্তন জরুরি—

নিয়মিত ঘুম: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জেগে ওঠার অভ্যাস করা।

ডিজিটাল ডিটক্স: শোয়ার আগে টিভি, মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার না করা।

রাতে হালকা খাবার খাওয়া: ক্যাফেইন, কোলা, ঝাল বা তেল-চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।

রিলাক্সেশন: ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা প্রার্থনা করা।

ঘরের পরিবেশ: শোয়ার ঘর অন্ধকার, ঠান্ডা ও শান্ত রাখা।

ইমেজ রিহার্সাল থেরাপি

এটি দুঃস্বপ্ন কমানোর সহজ একটি থেরাপি। এতে রোগীকে বলা হয় নিজের দুঃস্বপ্নকে নতুনভাবে কল্পনা করতে। যেমন স্বপ্নে যদি কেউ বারবার ভয়ংকরভাবে তাড়া করে, তবে রোগীকে শেখানো হয় সেই গল্পটা বদলে নিতে। তাতে হয়তো তাড়া করা মানুষটা হঠাৎ বন্ধু হয়ে উঠল, অথবা কোথাও থেকে আলো জ্বলে উঠল।

দুঃস্বপ্ন কখনোই হেলাফেলার বিষয় নয়। যদিও এটি ভবিষ্যতের কোনো ঘটনা জানান দেয় না, তবে আমাদের শরীর ও মনের ভেতরে কী ঘটছে, তার ইঙ্গিত দেয়। তাই দুঃস্বপ্নকে কুসংস্কারের চোখে না দেখে বরং এটিকে নিজের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বোঝার জানালা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। আর সমস্যা বাড়তে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সূত্র: হেলথলাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত