ফাতিমা জাহান
গোলাপি পদ্মফুল ছুঁয়ে আচমকাই ভোমরা যেন প্রাণ ফিরে পেল। চারদিকে সুনসান নীরবতা। আর এর মধ্যে এক কলকল নদীর স্রোতের মতো ধেয়ে আসে পৌষের বাতাস, উড়িয়ে দিতে চায় সেই সুদর্শন ভোমরাকে। ভোমরার অবশ্য আজ কোথাও যাওয়ার নেই, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে পদ্মকে তাই। সে গোলাপি পদ্ম ফুটেছে রাজবাড়ির মন্দিরের সাদা দেয়ালে। লতায় পাতায়, মোটিফে, অলংকরণে ঢেকে দিতে চাইছে মন্দিরের দেয়াল। মন্দির তো অনেক দেখেছি কিন্তু এমন মন্দিরও কি জগতে আছে, যার পদ্মকে আঁকড়ে ধরে থাকে তারই প্রাণভোমরা! দিনাজপুরের রাজবাড়ি বলতে এখন আর কিছুই নেই। মন্দিরই সকল দৃষ্টি বিনিময়ের মাধ্যম। কিন্তু এমন অনন্যসাধারণ মন্দির কী করে চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে জপ করে কারও নাম দিবানিশি, সে বিস্ময় আমার আজও কাটে না।
এ জায়গাটা এখনো নীরব; হয়তোবা সব সময়ই নীরবে কথা কয় এক পুজোর সময় ছাড়া। মূল প্রবেশদ্বার এক সময় ছিল রাজবাড়ির প্রবেশদ্বার। সাদা রঙের সাধারণ তোরণ এখন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এর খানিক ভেতরে সিংহদ্বার। তোরণের মাথায় সিংহ দাঁড়িয়ে। দ্বার পেরিয়ে ভেতরে বাঁয়ে মূল মন্দির, যেখানে আমি প্রাণভোমরার দেখা পেয়েছি। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ঐশ্বর্যের ছড়াছড়ি। বিশাল তোরণ যেন রাজার প্রাসাদের চিত্র এঁকে যায়, নানা রং আর নকশা, কারুকাজ। কাঠের দরজায় সূক্ষ্ম খোদাই। ভেতরে লক্ষ্মী বধূর মতো সাদার ওপরে গোলাপি ফুল লতা পাতার মোটিফের মন্দির মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। আমি তো এই কথাই বলতে এসেছি, ‘প্রাণভোমরা এল বলে।’ সে তখনো লাজুক, নির্বাক, বিনীত। আমি সামনে যাই, রূপ দেখি। পাশ দিয়ে চলি ফিরি, সে কিছুই বলে না।
রাজবাড়ির জিউ মন্দির নির্মিত হয়েছিল আঠারো শতকে। তখন থেকেই পুজোআচ্চা হয়ে আসছে।
এখন এই পড়ন্ত বিকেলে মন্দিরের দুয়ার বন্ধ, ভেতরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিশ্রাম করছেন। আমি মন্দিরের বাইরের অংশের রূপে মুগ্ধ। মুগ্ধতা রেশ যাতে না কেটে যায়, সে জন্য মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে চললাম পাশের মণ্ডপে। মণ্ডপটি দুর্গাপূজার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মন্দিরের সমসাময়িক কালে। চারদিকে টানা বারান্দা, মাঝখানে খোলা চত্বর আর বারান্দার মাঝখানে ঠাকুরের স্থান। এখন ঠাকুর নেই, পুজোর সময় আসবেন। তখন লোক আসে দূরদূরান্ত থেকে শয়ে শয়ে।
রাজা রামনাথের রাজত্বকালে (১৭২২-১৭৬০ সালে) রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা আরম্ভ হয়। সাদা দেয়াল, হলুদ, লাল, সবুজ বর্ডার দেওয়া বারান্দার খোলা দরজা, দরজার ওপরে ফুল লতাপাতার মোটিফের নকশা অবধি ঝকঝকে আছে। কিন্তু তার পেছনে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় রাজবাড়ির একাংশ জীর্ণ শীর্ণ দশায় করুণ চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করতে পারলাম না। রাজবাড়ি নামে যাকে দেখলাম, সে এখন জঙ্গলের অজানা গল্প। বড় বড় গাছগাছালির মাঝে একতলা বা দোতলা পলেস্তারা খসে যাওয়া ভবন উঁকি দিচ্ছে।
সময়টা ছিল ষোলো শতক, জমিদার দিনারাজ ঘোষ গড়ে তুলেছিলেন এই রাজ্যপাট। তাঁর নামেই পরে রাজ্যের নামকরণ হয় দিনারাজপুর এবং ধীরে ধীরে তা হয়ে যায় দিনাজপুর। দিনাজপুর রাজ্য বরাবরই পাঠান, মুঘল ও নবাবদের আক্রমণ পরাস্ত করে জয়ীর বেশে বাংলাদেশের মাটিতে টিকে ছিল।
আরও দু শতক পরের কথা, দিনাজপুরের জমিদার তখন প্রাণ নাথ। অনেকের প্রাণের নাথ বা নাথের প্রাণ! তিনি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে গেলেন একটা প্রসাদের, একটা তরতর করে ঘটে যাওয়া মূল্যবান শতকের, আর বাংলার সর্ববৃহৎ মহলের। ১৭২২ সাল থেকে তাঁর চল্লিশ বছরের শাসনকালে দিনাজপুর রাজ্য বাংলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি ও তাঁর পুত্র রামনাথ উভয়েই বাংলায় বর্গির আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করেন।
দিনাজপুর রাজবাড়ি প্রায় সতেরো একর জায়গাজুড়ে বানানো হয়েছিল। মূল প্রাসাদের আকর্ষণ ছিল রানিমহল, আয়নামহল ও ঠাকুর বাড়িমহল। ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই বংশের বংশধরেরা রাজবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যান।
এখন ভগ্নপ্রায় মহলের সাক্ষী হয় ভগ্নহৃদয়। সন্ধ্যায় নিভু নিভু আলোয় হাতড়ে বেড়াতে থাকি দিনারাজের আয়নামহল, প্রাণনাথের রানিমহল। এক ঠাকুরবাড়ি করছে ঝকঝক। বাকিরা বাকরুদ্ধ। এরা কাঁদে, বলতে চায় ঠিক কোন কোণে জমিদারের মন দুলে উঠেছিল কারও হাসিতে বা কোথায় চলতে গিয়ে বিঁধেছিল কাঁটা রানির কোমল পায়ে।
আমার তখন সন্ধ্যা, আমার পথেয় নিভু নিভু আলো।
আমার সব খুব কাছের মনে হয়, বাঁ পাশের মহলে দুপুর বেলা গা এলিয়ে বসে থাকত কেউ, শুনত কাহারবা, আর একটু সামনের উঠোনে একবার পা পিছলে পড়ে ছিঁড়ে ফেলেছিল সে রেশমি আঙরাখা। এত স্পষ্ট, এত তীব্র এ জগৎ এখন আমার কাছে!
এ মহলের নাম আয়নামহল। প্রবেশমুখের আদল মিনারের মতো গোলাকার। তিনটে দরজা। ভেতরে বিশাল উঠোন আর উঠোনের চারধারে বর্গাকৃতির দোতলা মহল। কোনো দেয়ালে এখন আর আবরণ নেই। ইটের পাঁজর বেরিয়ে পড়েছে, দেয়ালের গা বেয়ে উঠছে আগাছা, গাছপালায় ছেয়ে গেছে আঙিনা।
অথচ এর বুকের মধ্যিখানে ছিল হাজার হাজার আয়নার এক ঘর। রাতে ঝাড়বাতি জ্বললে সে জ্যোতি ঠিকরে পড়ত দেয়ালে দেয়ালে। দোতলা থেকে জমিদার দেখতেন নৃত্যগীত। কখনো জলসা বসত নিচতলার জলসাঘরে।
আমি খুঁজে মরি মহলের আরও গভীরে, এক ভবন থেকে আরেক মজলিশে। বুকের ভেতরে এক শান্ত ডাক, ‘কত দিন পর এলে!’ আধ খাওয়া জঙ্গল পাহারা দেয় যে পাখিটি সে আমার চেনা, উড়ে উড়ে বলে যায়, ‘ওই যে দেখ সবুজ দিঘি, নাইতে গিয়ে হারিয়েছিল নূপুর আর পেছন বাড়ির খাসমহলে সে তখন অপেক্ষায় ছিল কম্পিত হৃৎস্পন্দন নিয়ে।’
সারি সারি মহল, নাম না জানা অচেনা কামরা, আর চেনা চেনা গন্ধ মিলেমিশে গল্প বলে যাচ্ছে। আয়নামহল থেকে বেরিয়ে পরের মহলকে রানিমহল ভাবতে একটুও কুণ্ঠা বোধ হয় না। দক্ষিণের জানালার ওপরের অংশের কারুকাজ যেন মায়া আরও বাড়িয়ে চলছে। কোথাও কোনো মানুষ নেই, এ যেন এক নির্জন রহস্যপুরী। যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই, যেন এক সোনার কাঠির অপেক্ষায় আছে সমস্ত রাজ্য।
একই প্রাঙ্গণে একসময় ছিল আরও কয়েকটি মন্দির, বিশ্রামাগার, পানির ট্যাংক, চিকিৎসালয়, তোষাখানা, কাছারিঘর, বাগান, কুমারের বাড়ি ইত্যাদি।
রানিমহল থেকে বলতে গেলে প্রায় অভিযান করে ঘাস, গাছ, জঙ্গলের দুর্গ ভেদ করে ভগ্নপ্রায়, ছাদ-পলেস্তারাহীন ভবন পেরিয়ে যেতে হয় রানির পুকুরে।
পরিত্যক্ত পুকুরটি মহলগুলোর পেছন দিকে সবুজ গুল্মলতা গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। পুকুরের শানবাঁধানো ঘাটে তাজা শেওলা চমৎকার রং বিলাচ্ছে। কেউ আসে না এখানে, ভেঙে যাওয়া রাজবাড়ির মতো পুকুরের মন ভাঙে। এ প্রাঙ্গণে আরও দুটো পুকুর আছে বেশ খানিকটা জায়গা পেরোলে।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মহলে মহলে তারা নেমে আসে, আরেকটু রাত বাড়লে রাজ্যের সুখের দিনের গল্প বলতে থাকে। কেউ এখানে না এলেও গল্প বলায় বিরতি নেই এদের।
গোলাপি পদ্মফুল ছুঁয়ে আচমকাই ভোমরা যেন প্রাণ ফিরে পেল। চারদিকে সুনসান নীরবতা। আর এর মধ্যে এক কলকল নদীর স্রোতের মতো ধেয়ে আসে পৌষের বাতাস, উড়িয়ে দিতে চায় সেই সুদর্শন ভোমরাকে। ভোমরার অবশ্য আজ কোথাও যাওয়ার নেই, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে পদ্মকে তাই। সে গোলাপি পদ্ম ফুটেছে রাজবাড়ির মন্দিরের সাদা দেয়ালে। লতায় পাতায়, মোটিফে, অলংকরণে ঢেকে দিতে চাইছে মন্দিরের দেয়াল। মন্দির তো অনেক দেখেছি কিন্তু এমন মন্দিরও কি জগতে আছে, যার পদ্মকে আঁকড়ে ধরে থাকে তারই প্রাণভোমরা! দিনাজপুরের রাজবাড়ি বলতে এখন আর কিছুই নেই। মন্দিরই সকল দৃষ্টি বিনিময়ের মাধ্যম। কিন্তু এমন অনন্যসাধারণ মন্দির কী করে চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে জপ করে কারও নাম দিবানিশি, সে বিস্ময় আমার আজও কাটে না।
এ জায়গাটা এখনো নীরব; হয়তোবা সব সময়ই নীরবে কথা কয় এক পুজোর সময় ছাড়া। মূল প্রবেশদ্বার এক সময় ছিল রাজবাড়ির প্রবেশদ্বার। সাদা রঙের সাধারণ তোরণ এখন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এর খানিক ভেতরে সিংহদ্বার। তোরণের মাথায় সিংহ দাঁড়িয়ে। দ্বার পেরিয়ে ভেতরে বাঁয়ে মূল মন্দির, যেখানে আমি প্রাণভোমরার দেখা পেয়েছি। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ঐশ্বর্যের ছড়াছড়ি। বিশাল তোরণ যেন রাজার প্রাসাদের চিত্র এঁকে যায়, নানা রং আর নকশা, কারুকাজ। কাঠের দরজায় সূক্ষ্ম খোদাই। ভেতরে লক্ষ্মী বধূর মতো সাদার ওপরে গোলাপি ফুল লতা পাতার মোটিফের মন্দির মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। আমি তো এই কথাই বলতে এসেছি, ‘প্রাণভোমরা এল বলে।’ সে তখনো লাজুক, নির্বাক, বিনীত। আমি সামনে যাই, রূপ দেখি। পাশ দিয়ে চলি ফিরি, সে কিছুই বলে না।
রাজবাড়ির জিউ মন্দির নির্মিত হয়েছিল আঠারো শতকে। তখন থেকেই পুজোআচ্চা হয়ে আসছে।
এখন এই পড়ন্ত বিকেলে মন্দিরের দুয়ার বন্ধ, ভেতরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিশ্রাম করছেন। আমি মন্দিরের বাইরের অংশের রূপে মুগ্ধ। মুগ্ধতা রেশ যাতে না কেটে যায়, সে জন্য মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে চললাম পাশের মণ্ডপে। মণ্ডপটি দুর্গাপূজার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মন্দিরের সমসাময়িক কালে। চারদিকে টানা বারান্দা, মাঝখানে খোলা চত্বর আর বারান্দার মাঝখানে ঠাকুরের স্থান। এখন ঠাকুর নেই, পুজোর সময় আসবেন। তখন লোক আসে দূরদূরান্ত থেকে শয়ে শয়ে।
রাজা রামনাথের রাজত্বকালে (১৭২২-১৭৬০ সালে) রাজবাড়িতে দুর্গাপূজা আরম্ভ হয়। সাদা দেয়াল, হলুদ, লাল, সবুজ বর্ডার দেওয়া বারান্দার খোলা দরজা, দরজার ওপরে ফুল লতাপাতার মোটিফের নকশা অবধি ঝকঝকে আছে। কিন্তু তার পেছনে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় রাজবাড়ির একাংশ জীর্ণ শীর্ণ দশায় করুণ চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করতে পারলাম না। রাজবাড়ি নামে যাকে দেখলাম, সে এখন জঙ্গলের অজানা গল্প। বড় বড় গাছগাছালির মাঝে একতলা বা দোতলা পলেস্তারা খসে যাওয়া ভবন উঁকি দিচ্ছে।
সময়টা ছিল ষোলো শতক, জমিদার দিনারাজ ঘোষ গড়ে তুলেছিলেন এই রাজ্যপাট। তাঁর নামেই পরে রাজ্যের নামকরণ হয় দিনারাজপুর এবং ধীরে ধীরে তা হয়ে যায় দিনাজপুর। দিনাজপুর রাজ্য বরাবরই পাঠান, মুঘল ও নবাবদের আক্রমণ পরাস্ত করে জয়ীর বেশে বাংলাদেশের মাটিতে টিকে ছিল।
আরও দু শতক পরের কথা, দিনাজপুরের জমিদার তখন প্রাণ নাথ। অনেকের প্রাণের নাথ বা নাথের প্রাণ! তিনি প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে গেলেন একটা প্রসাদের, একটা তরতর করে ঘটে যাওয়া মূল্যবান শতকের, আর বাংলার সর্ববৃহৎ মহলের। ১৭২২ সাল থেকে তাঁর চল্লিশ বছরের শাসনকালে দিনাজপুর রাজ্য বাংলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি ও তাঁর পুত্র রামনাথ উভয়েই বাংলায় বর্গির আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করেন।
দিনাজপুর রাজবাড়ি প্রায় সতেরো একর জায়গাজুড়ে বানানো হয়েছিল। মূল প্রাসাদের আকর্ষণ ছিল রানিমহল, আয়নামহল ও ঠাকুর বাড়িমহল। ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই বংশের বংশধরেরা রাজবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যান।
এখন ভগ্নপ্রায় মহলের সাক্ষী হয় ভগ্নহৃদয়। সন্ধ্যায় নিভু নিভু আলোয় হাতড়ে বেড়াতে থাকি দিনারাজের আয়নামহল, প্রাণনাথের রানিমহল। এক ঠাকুরবাড়ি করছে ঝকঝক। বাকিরা বাকরুদ্ধ। এরা কাঁদে, বলতে চায় ঠিক কোন কোণে জমিদারের মন দুলে উঠেছিল কারও হাসিতে বা কোথায় চলতে গিয়ে বিঁধেছিল কাঁটা রানির কোমল পায়ে।
আমার তখন সন্ধ্যা, আমার পথেয় নিভু নিভু আলো।
আমার সব খুব কাছের মনে হয়, বাঁ পাশের মহলে দুপুর বেলা গা এলিয়ে বসে থাকত কেউ, শুনত কাহারবা, আর একটু সামনের উঠোনে একবার পা পিছলে পড়ে ছিঁড়ে ফেলেছিল সে রেশমি আঙরাখা। এত স্পষ্ট, এত তীব্র এ জগৎ এখন আমার কাছে!
এ মহলের নাম আয়নামহল। প্রবেশমুখের আদল মিনারের মতো গোলাকার। তিনটে দরজা। ভেতরে বিশাল উঠোন আর উঠোনের চারধারে বর্গাকৃতির দোতলা মহল। কোনো দেয়ালে এখন আর আবরণ নেই। ইটের পাঁজর বেরিয়ে পড়েছে, দেয়ালের গা বেয়ে উঠছে আগাছা, গাছপালায় ছেয়ে গেছে আঙিনা।
অথচ এর বুকের মধ্যিখানে ছিল হাজার হাজার আয়নার এক ঘর। রাতে ঝাড়বাতি জ্বললে সে জ্যোতি ঠিকরে পড়ত দেয়ালে দেয়ালে। দোতলা থেকে জমিদার দেখতেন নৃত্যগীত। কখনো জলসা বসত নিচতলার জলসাঘরে।
আমি খুঁজে মরি মহলের আরও গভীরে, এক ভবন থেকে আরেক মজলিশে। বুকের ভেতরে এক শান্ত ডাক, ‘কত দিন পর এলে!’ আধ খাওয়া জঙ্গল পাহারা দেয় যে পাখিটি সে আমার চেনা, উড়ে উড়ে বলে যায়, ‘ওই যে দেখ সবুজ দিঘি, নাইতে গিয়ে হারিয়েছিল নূপুর আর পেছন বাড়ির খাসমহলে সে তখন অপেক্ষায় ছিল কম্পিত হৃৎস্পন্দন নিয়ে।’
সারি সারি মহল, নাম না জানা অচেনা কামরা, আর চেনা চেনা গন্ধ মিলেমিশে গল্প বলে যাচ্ছে। আয়নামহল থেকে বেরিয়ে পরের মহলকে রানিমহল ভাবতে একটুও কুণ্ঠা বোধ হয় না। দক্ষিণের জানালার ওপরের অংশের কারুকাজ যেন মায়া আরও বাড়িয়ে চলছে। কোথাও কোনো মানুষ নেই, এ যেন এক নির্জন রহস্যপুরী। যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই, যেন এক সোনার কাঠির অপেক্ষায় আছে সমস্ত রাজ্য।
একই প্রাঙ্গণে একসময় ছিল আরও কয়েকটি মন্দির, বিশ্রামাগার, পানির ট্যাংক, চিকিৎসালয়, তোষাখানা, কাছারিঘর, বাগান, কুমারের বাড়ি ইত্যাদি।
রানিমহল থেকে বলতে গেলে প্রায় অভিযান করে ঘাস, গাছ, জঙ্গলের দুর্গ ভেদ করে ভগ্নপ্রায়, ছাদ-পলেস্তারাহীন ভবন পেরিয়ে যেতে হয় রানির পুকুরে।
পরিত্যক্ত পুকুরটি মহলগুলোর পেছন দিকে সবুজ গুল্মলতা গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। পুকুরের শানবাঁধানো ঘাটে তাজা শেওলা চমৎকার রং বিলাচ্ছে। কেউ আসে না এখানে, ভেঙে যাওয়া রাজবাড়ির মতো পুকুরের মন ভাঙে। এ প্রাঙ্গণে আরও দুটো পুকুর আছে বেশ খানিকটা জায়গা পেরোলে।
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে মহলে মহলে তারা নেমে আসে, আরেকটু রাত বাড়লে রাজ্যের সুখের দিনের গল্প বলতে থাকে। কেউ এখানে না এলেও গল্প বলায় বিরতি নেই এদের।
শ্রাবণের শেষেই যদি থাকে রোদের এত তাপ, তাহলে আসছে শরতে কী হবে, বোঝাই যাচ্ছে। সকালে স্নান সেরে সেজেগুজে বের হয়েও নিস্তার নেই। আধা ঘণ্টার মধ্য়ে ঘেমে-নেয়ে নাজেহাল। রোদের তাপে ত্বকের অবস্থা খারাপ। ব্রণ হওয়ার প্রবণতাও এ ঋতুতে বেড়ে যায়। এ সময় ত্বক ঠান্ডা রাখতে পারলে ব্রণ ও র্যাশ হওয়ার আশঙ্কা কমে...
২ ঘণ্টা আগে‘ভাবো, ভাবা প্র্যাকটিস করো’। ঋত্বিক ঘটকের এই কথা শোনেনি, এমন মানুষ কি আছে। কোথাও না কোথাও, কোনো না কোনোভাবে এই উক্তি আমরা বহুবার শুনেছি। খুব ইতিবাচক কথা নিঃসন্দেহে। তবে এই ‘ভাবা’ বা ‘ভাবনা’ কিংবা ‘চিন্তা’ শব্দটির উল্টো দিকে আছে ‘দুর্ভাবনা’ শব্দটি।
১৪ ঘণ্টা আগেরোমকূপে ত্বক নষ্ট! সেই সঙ্গে নষ্ট শান্তি। বহু কিছু করেও বাগে আনা যাচ্ছে না সেগুলো; বরং ধীরে ধীরে সংখ্যা বেড়ে চলেছে। একটু ধৈর্য ধরে বসুন। এরও প্রতিকার আছে। ঘরোয়া উপায়ে ধীরে ধীরে পোরস বা রোমকূপ বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
১৫ ঘণ্টা আগেত্বকের বিশেষ যত্নে হোক বা না হোক, কমবেশি সবাই রোজ ত্বকে দুই বেলা ব্যবহার করেন, এমন একটি প্রসাধনী হচ্ছে ফেসওয়াশ। সাধারণত এটি খুব ভেবেচিন্তে বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না মেনে পছন্দ হলেই কিনে ফেলি। কিন্তু কাজ হয় কি না, সেদিকে অনেক সময় খেয়ালও করি না। কিন্তু নালিশ করেই যাই, অমুক ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ...
১ দিন আগে