অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
মা-বাবা পৃথিবীর এমন দুজন মানুষ, যাঁরা সন্তানের প্রথম আশ্রয় ও বিশ্বাসের জায়গা। পরিবারে অন্য যত অভিভাবকই থাকুক না কেন, কেউই মা-বাবার জায়গা নিতে পারেন না। সার্বিক দিক বিবেচনায় তাই সন্তানের মানসিক বিকাশে মা-বাবা দুজনেরই ভূমিকা অপরিসীম।
সে জন্যই মা-বাবার পারস্পরিক সম্পর্ক সন্তানের জীবনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব ব্যক্তিগত। কিন্তু মা-বাবার ভূমিকা যৌথ। এখন মা-বাবার দাম্পত্য জীবনে যদি বনিবনা না থাকে, তাহলে তাঁরা সন্তানের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। ফলে সন্তানের সঙ্গে তাঁদের মানসিক যোগাযোগ কমে যায়।
শিশুর বিভিন্ন বয়সে প্রভাব
প্রথম ছয় মাস
মা-বাবার দাম্পত্য জীবনের প্রভাব প্রাপ্তবয়স্ক হলেও সন্তানের থেকে যায়। বিভিন্ন বয়সে শিশুর চাহিদা বিভিন্ন রকম। যেমন প্রথম ছয় মাস শিশুর যত্ন প্রয়োজন হয় অস্তিত্ব রক্ষায়। এই সময় যদি নির্দিষ্ট যত্ন না করা হয়, ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে ড্রাগ অ্যাডিকশনের প্রবণতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। মা সন্তানকে বেশি যত্ন করেন। এই সময় বাবা শুধু নয়, পুরো পরিবারের খেয়াল রাখা দরকার মা যাতে সুস্থ, হাসিখুশি ও শান্তিতে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর কান্নায় বিরক্ত হয়ে অনেক বাবা আলাদা ঘুমাচ্ছেন। এটা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর, যা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
৬ থেকে ১৮ মাস
এই সময় শিশুকে যদি ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে তার কর্মতৎপরতার জায়গাটা চমৎকার থাকবে। সে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন তার সম্পর্কগুলোকে সে নিরাপদ ভাববে। আমরা বলি অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল। এই সময় দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপোড়েন মাকে অস্থির করে তুললে সন্তান ভবিষ্যতে আন্তসম্পর্কের ক্ষেত্রে অনিরাপদ বোধ করতে পারে। তাদের মধ্যে কেউ শুধু দুশ্চিন্তা করেই ক্ষান্ত হবে। কেউ কেউ নিজেকে ভবিষ্যতে অনিরাপদ ভাববে, কেউ কেউ নিজেদের একেবারে গুটিয়ে রাখবে, আর কেউ প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক
হয়ে পড়বে।
১৮ মাস থেকে ৩ বছর
শিশুর বয়স ১৮ মাস থেকে তিন বছর হলে তার চিন্তা করার শক্তি তৈরি হয়। তিন থেকে ছয় বছর হলো শিশুর নিজস্ব বোধ তৈরি হওয়ার সময়। এই সময় শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে ভবিষ্যতে নিজে ভেবে নতুন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধায় পড়বে।
এ ছাড়া ৬ থেকে ১২ বছর শিশুর কার্যক্ষমতা তৈরির সময়। পরবর্তী ১২ থেকে ১৯ বছর শিশুর শৈশবে শেখা বিষয় আত্মস্থ করার সময়। এ সময় সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার মানসিক যোগাযোগ না থাকলে কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়। এটি শিশুকে বিভিন্নভাবে অনিরাপদ করে তুলতে পারে।
মা-বাবার দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ থাকলে সন্তানের সঙ্গে তাঁদের কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়। কারণ সন্তানকে বোঝার বা বোঝানোর যোগাযোগের ভাষা তাঁরা রপ্ত করতে পারেন না। ফলে সন্তানের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা তৈরি হতে থাকে অবচেতনভাবে। এ অবস্থায় সন্তান আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়তে পারে।
প্যারেন্টিং শেখার বিকল্প নেই
সন্তান জন্ম দিলেই আদর্শ মা-বাবা হওয়া যায় না—দিন শেষে এ কথা স্বীকার করতেই হবে। প্যারেন্টিং শেখা দরকার। নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধের বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে কীভাবে প্রকাশ করতে হবে, প্যারেন্টিংয়ের সঠিক শিক্ষা মা-বাবাকে সেটা জানাবে। এতে সন্তানদেরই মঙ্গল।
যে পরিবারগুলোতে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়, সেখানে মা-বাবা নিজেদের হতাশা-ক্ষোভ দুঃখগুলো সন্তানদের সামনে এমনভাবে প্রকাশ করতে থাকেন, যেটা তাদের মধ্যে প্রচণ্ড কষ্ট তৈরি করে। কিন্তু সন্তানেরা কারও কাছে তাদের কষ্ট প্রকাশের জায়গা পায় না। এটি সন্তানদের বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচকতার দিকে ঠেলে দেয়। মূল কথা হলো, শিশুরা আশপাশে যা ঘটে তার সবই বুঝতে পারে। তারা প্রচণ্ডভাবে মা-বাবাকে খেয়াল করে। কাজেই মা-বাবা নিজেদের জীবনে যে আচরণ করেন, শিশুরা সেটাই শেখে। ফলে শিশুর সামনে কী বলা যাবে আর কী করা যাবে না, তা ভেবে ও বুঝে করতে হবে।
গবেষণা বলছে, মানুষের মিরর নিউরন ২৫ বছর পর্যন্ত তৈরি হতে থাকে। এই মিরর নিউরন দ্বারা মা-বাবার আচরণ শিশু কপি করে নিজের অজান্তে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই আচরণ ও চিন্তা কপি হতে থাকবে। একে হট পটেটো বলে। কাজেই মা-বাবাকে শিশুদের কী শেখাবেন, সে বিষয়ে সাবধান হতে হবে।
স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নিজেদের মধ্য়কার সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করলে তার সুফল নিজেদের সন্তান উপভোগ করবে সারা জীবন। তাই পারিবারিক বন্ধনের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
মা-বাবা পৃথিবীর এমন দুজন মানুষ, যাঁরা সন্তানের প্রথম আশ্রয় ও বিশ্বাসের জায়গা। পরিবারে অন্য যত অভিভাবকই থাকুক না কেন, কেউই মা-বাবার জায়গা নিতে পারেন না। সার্বিক দিক বিবেচনায় তাই সন্তানের মানসিক বিকাশে মা-বাবা দুজনেরই ভূমিকা অপরিসীম।
সে জন্যই মা-বাবার পারস্পরিক সম্পর্ক সন্তানের জীবনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব ব্যক্তিগত। কিন্তু মা-বাবার ভূমিকা যৌথ। এখন মা-বাবার দাম্পত্য জীবনে যদি বনিবনা না থাকে, তাহলে তাঁরা সন্তানের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। ফলে সন্তানের সঙ্গে তাঁদের মানসিক যোগাযোগ কমে যায়।
শিশুর বিভিন্ন বয়সে প্রভাব
প্রথম ছয় মাস
মা-বাবার দাম্পত্য জীবনের প্রভাব প্রাপ্তবয়স্ক হলেও সন্তানের থেকে যায়। বিভিন্ন বয়সে শিশুর চাহিদা বিভিন্ন রকম। যেমন প্রথম ছয় মাস শিশুর যত্ন প্রয়োজন হয় অস্তিত্ব রক্ষায়। এই সময় যদি নির্দিষ্ট যত্ন না করা হয়, ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে ড্রাগ অ্যাডিকশনের প্রবণতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। মা সন্তানকে বেশি যত্ন করেন। এই সময় বাবা শুধু নয়, পুরো পরিবারের খেয়াল রাখা দরকার মা যাতে সুস্থ, হাসিখুশি ও শান্তিতে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর কান্নায় বিরক্ত হয়ে অনেক বাবা আলাদা ঘুমাচ্ছেন। এটা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর, যা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
৬ থেকে ১৮ মাস
এই সময় শিশুকে যদি ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে তার কর্মতৎপরতার জায়গাটা চমৎকার থাকবে। সে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন তার সম্পর্কগুলোকে সে নিরাপদ ভাববে। আমরা বলি অ্যাটাচমেন্ট স্টাইল। এই সময় দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপোড়েন মাকে অস্থির করে তুললে সন্তান ভবিষ্যতে আন্তসম্পর্কের ক্ষেত্রে অনিরাপদ বোধ করতে পারে। তাদের মধ্যে কেউ শুধু দুশ্চিন্তা করেই ক্ষান্ত হবে। কেউ কেউ নিজেকে ভবিষ্যতে অনিরাপদ ভাববে, কেউ কেউ নিজেদের একেবারে গুটিয়ে রাখবে, আর কেউ প্রচণ্ড আত্মকেন্দ্রিক
হয়ে পড়বে।
১৮ মাস থেকে ৩ বছর
শিশুর বয়স ১৮ মাস থেকে তিন বছর হলে তার চিন্তা করার শক্তি তৈরি হয়। তিন থেকে ছয় বছর হলো শিশুর নিজস্ব বোধ তৈরি হওয়ার সময়। এই সময় শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে ভবিষ্যতে নিজে ভেবে নতুন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধায় পড়বে।
এ ছাড়া ৬ থেকে ১২ বছর শিশুর কার্যক্ষমতা তৈরির সময়। পরবর্তী ১২ থেকে ১৯ বছর শিশুর শৈশবে শেখা বিষয় আত্মস্থ করার সময়। এ সময় সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার মানসিক যোগাযোগ না থাকলে কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়। এটি শিশুকে বিভিন্নভাবে অনিরাপদ করে তুলতে পারে।
মা-বাবার দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ থাকলে সন্তানের সঙ্গে তাঁদের কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হয়। কারণ সন্তানকে বোঝার বা বোঝানোর যোগাযোগের ভাষা তাঁরা রপ্ত করতে পারেন না। ফলে সন্তানের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা তৈরি হতে থাকে অবচেতনভাবে। এ অবস্থায় সন্তান আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়তে পারে।
প্যারেন্টিং শেখার বিকল্প নেই
সন্তান জন্ম দিলেই আদর্শ মা-বাবা হওয়া যায় না—দিন শেষে এ কথা স্বীকার করতেই হবে। প্যারেন্টিং শেখা দরকার। নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধের বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে কীভাবে প্রকাশ করতে হবে, প্যারেন্টিংয়ের সঠিক শিক্ষা মা-বাবাকে সেটা জানাবে। এতে সন্তানদেরই মঙ্গল।
যে পরিবারগুলোতে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়, সেখানে মা-বাবা নিজেদের হতাশা-ক্ষোভ দুঃখগুলো সন্তানদের সামনে এমনভাবে প্রকাশ করতে থাকেন, যেটা তাদের মধ্যে প্রচণ্ড কষ্ট তৈরি করে। কিন্তু সন্তানেরা কারও কাছে তাদের কষ্ট প্রকাশের জায়গা পায় না। এটি সন্তানদের বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচকতার দিকে ঠেলে দেয়। মূল কথা হলো, শিশুরা আশপাশে যা ঘটে তার সবই বুঝতে পারে। তারা প্রচণ্ডভাবে মা-বাবাকে খেয়াল করে। কাজেই মা-বাবা নিজেদের জীবনে যে আচরণ করেন, শিশুরা সেটাই শেখে। ফলে শিশুর সামনে কী বলা যাবে আর কী করা যাবে না, তা ভেবে ও বুঝে করতে হবে।
গবেষণা বলছে, মানুষের মিরর নিউরন ২৫ বছর পর্যন্ত তৈরি হতে থাকে। এই মিরর নিউরন দ্বারা মা-বাবার আচরণ শিশু কপি করে নিজের অজান্তে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই আচরণ ও চিন্তা কপি হতে থাকবে। একে হট পটেটো বলে। কাজেই মা-বাবাকে শিশুদের কী শেখাবেন, সে বিষয়ে সাবধান হতে হবে।
স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নিজেদের মধ্য়কার সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করলে তার সুফল নিজেদের সন্তান উপভোগ করবে সারা জীবন। তাই পারিবারিক বন্ধনের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
আজকের পৃথিবীতে মানুষ শুধু ভ্রমণের জন্য নয়, ব্যবসা, শিক্ষা কিংবা নিরাপদ ভবিষ্যতের খোঁজে অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহী হচ্ছে। কেউ খুঁজছেন সন্তানের ভালো শিক্ষার সুযোগ, কেউবা চান ভিসার ঝামেলা ছাড়া সহজ ভ্রমণ। এ কারণেই এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট’ প্রোগ্রাম। অর্থাৎ নির্দিষ্ট
২ ঘণ্টা আগেত্বকের দাগছোপ বা খুঁত এড়াতে অনেকে নানান ধরনের প্রসাধনীতে ভরসা রাখেন। এই ব্যস্ত জীবনে এটা-ওটা বেটে ত্বকে ব্যবহারেরই-বা সময় কোথায়। তবে রাসায়নিক উপাদানে ভরা এসব প্রসাধনী ব্যবহারে সাময়িক সুবিধা পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদি ফল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। পাশাপাশি থাকতে পারে এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি।
২১ ঘণ্টা আগেকাজ শেষে বাড়ি ফিরে আলাদা করে ভাত, ডাল, তরকারি রাঁধতে মন চাইছে না? বাড়িতে মুগ ডাল আর মৌসুমি সবজি কাঁকরোল থাকলে ঝটপট রেঁধে ফেলুন মুগ ডালে কাঁকরোল। সময় বাঁচবে, খেতেও হবে সুস্বাদু। খাবারটির রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন আফরোজা খানম মুক্তা।
১ দিন আগেবর্তমান সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে থাইয়রেড, পিসিওএস, পিসিওডি, এডিএইচডি, ইটিং ডিসঅর্ডারসহ বাহারি সব রোগ। যেগুলো ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার এই যাত্রাকে আরও কঠিন করে দিয়েছে।
১ দিন আগে