Ajker Patrika

ফ্যাশনেও আছে ফিটনেসেও আছে

জীবনধারা
ফ্যাশনেও আছে ফিটনেসেও আছে

ফিটনেসের প্রধান সেনাপতি আবার দুর্দান্ত ফ্যাশন অনুষঙ্গ–একের ভেতর দুই। স্মার্ট যুগে এটি এখন আর স্বপ্ন নয়; বরং ব্যবহার না করলে আপনারই হতে পারে কিছুটা পিছিয়ে পড়ার অনুভূতি। জানাচ্ছেন আনিকা জীনাত। 

ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবে হাতঘড়ি পরার চল শুরু হয়েছিল আঠারো শতকে। নারীরাই ছিলেন তার প্রধান ক্রেতা। পুরুষেরা এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন যুদ্ধের সময়।

কথিত আছে, আঠারো শতকের শেষ দিকে, যুদ্ধের সময় পকেট থেকে বারবার ঘড়ি বের করে দেখতে বিরক্তবোধ করতেন নেপোলিয়ান বোনাপার্ট। এ ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে রণকৌশল সাজানোর জন্য একত্রে এক জায়গায় জড়ো হওয়ার জন্য বিভিন্ন ইশারা-ইঙ্গিতের সাহায্য নেওয়া হতো। ফলে শত্রুপক্ষ বুঝে ফেলবে–এই ভয় থাকত। হাতঘড়ি ব্যবহারের ফলে যুদ্ধের সময় সমন্বয় করা সহজ হয়ে যায়। সে সময় যুদ্ধের কৌশল ছিল অভিনব।

যুদ্ধক্ষেত্র পেরিয়ে হাতঘড়ি ব্যবহারের সুবিধার কথা সাধারণ মানুষের কানেও পৌঁছে যায়। সে সময় পকেটঘড়ির সঙ্গে চামড়ার বেল্ট বেঁধে হাতঘড়ি তৈরি করা হতো। পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ হাতঘড়ির উৎপাদন শুরু হয়। স্বয়ংক্রিয় হাতঘড়ি উদ্ভাবিত হয় ১৯২৩ সালে। সে সময় হাতঘড়ি পরতেন শুধু ধনীরা। ডিজিটাল ঘড়ির যুগ শুরু হয় ১৯৭২ সাল থেকে।

হাতঘড়িকে আস্ত কম্পিউটার বানানোর কাজটি করেন স্টিভ মান। তাঁকে বলা হয় ‘ফাদার অব ওয়্যারেবল কম্পিউটিং’। ২০১০ সাল থেকে ফিটনেস ট্র্যাকার ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হতে শুরু করে স্মার্টওয়াচ। অ্যাপল, ফিটবিট, হুয়াওয়ে, ফসিল, অ্যামাজফিট এখন প্রথম সারির স্মার্টওয়াচ নির্মাতা কোম্পানি। গত বছর বিক্রি হয় ২৩ মিলিয়ন স্মার্টওয়াচ।

স্মার্টওয়াচ কেন জনপ্রিয়
ফোন কল রিসিভ করা, মেসেজ পাঠানো কিংবা খবর দেখার জন্য স্মার্টওয়াচ বেশ সুবিধাজনক। তবে এসব তো ফোনেই করা সম্ভব। তাহলে একই কাজে দাম দিয়ে স্মার্টওয়াচ কেন কিনছে মানুষ–এমন প্রশ্ন আসতেই পারে।

স্মার্টফোনেরই ছোট্ট সংস্করণ হলে স্মার্টওয়াচ বাজার পেত না। স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিরা এই ঘড়িকে ফিটনেস ট্র্যাকার হিসেবে ব্যবহার করেন বলেই আলাদা পরিচিতি তৈরি করে নিয়েছে স্মার্টওয়াচ। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মাপতে, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) দেখতে ও ব্যায়ামের সময় কত ক্যালরি খরচ হলো তা দেখতে স্মার্টওয়াচের বিকল্প নেই। এ তথ্যগুলো একেবারে সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়। নেওয়া যায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ফলে ফিট থাকা হয়ে ওঠে সহজ।

অ্যাপলের সর্বশেষ স্মার্টওয়াচ সিরিজ ৭ পরে পানির নিচে ৫০ মিটার গভীরেও যাওয়া যাবে। ফিটনেসের জন্য আলাদা অ্যাপও এনেছে অ্যাপল। অ্যাপটিতে ৫ থেকে ৪৫ মিনিটের ১১টি ওয়ার্কআউট ভিডিও দেখার সুযোগ আছে। শুধু তা-ই নয়, হাঁটার সময়, গাড়ি বা সাইকেল চালানোর সময়, বাসে করে কোথাও যাওয়ার সময় অ্যাপল ওয়াচই পথ দেখিয়ে দেবে। যদি সাইকেল চালাতে বা দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যান, তবে ‘ফল ডিটেকশন ফিচারটি’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমার্জেন্সি এসএমএস পাঠানোর অপশন দেখাবে।

স্মার্টওয়াচশিক্ষার্থী মোশারফ হোসেন দুই মাস ধরে স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করছেন। তিনি জানান, স্মার্টওয়াচ দেখতে যেমন ফ্যাশনেবল, তেমনি কাজের। ছোট্ট স্ক্রিনেই ব্লাড প্রেশার দেখা যায়। কত ধাপ হাঁটলেন তা হাত উঁচু করলেই দেখতে পারেন তিনি। পকেট থেকে ফোন বের করার প্রয়োজন পড়ে না। ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপের নোটিফিকেশনও দেখা যায়। এক চার্জেই চার-পাঁচ দিন চলে। স্মার্টওয়াচের ফাইন্ড ইয়োর ফোন ফিচার ফোন খোঁজার কাজটিও করে দেবে।

ফিচারটি অন করলে ফুল ভলিউমে রিং হতে থাকবে ফোনে। গান শুনতে স্মার্টফোনেরও প্রয়োজন হয় না এখন। ওয়াই-ফাই থাকলে গান ডাউনলোড করা যায় স্মার্টওয়াচে। সাইকেল বা গাড়ি চালানোর সময় চালকের মনোযোগে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তা নিশ্চিত করতে স্মার্টওয়াচ ভাইব্রেট করে। বিভিন্নভাবে ভাইব্রেট করে বলে না তাকিয়েই বোঝা যায় কোন দিকে মোড় নিতে হবে। কিছু স্মার্টওয়াচে সিমকার্ড থাকে। সঙ্গে মোবাইল ফোন না থাকলেও সরাসরি কলও করা যায়।

প্রযুক্তিবিষয়ক লেখক আশরাফুল ইসলাম জানান, ফোন চার্জে থাকলে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কল বা মেসেজ চোখে পড়ে না। কিন্তু একটি স্মার্টওয়াচ থাকলে কোনো নোটিফিকেশন দেখা বাদ যায় না। সব স্মার্টওয়াচেই চলে আসে। ফিটনেস ধরে রাখতেও বেশ সহায়ক এটি। অনেকক্ষণ ধরে এক জায়গায় বসে থাকলে ওঠার কথা মনে করিয়ে দেয়। কোনো জায়গার শব্দ নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলেও স্মার্টওয়াচ সেটা মনে করিয়ে দিয়ে সরে যেতে বলে নিরাপদ জায়গায়। 

  • কেনার আগে
  •  ফোনের সঙ্গে কানেক্ট করা যাবে না এমন স্মার্টওয়াচ কিনবেন না।
  •  হার্ট রেট সেন্সর ও জিপিএস সেন্সর আছে কি না, দেখে নিতে হবে।
  • এক চার্জে কত দিন চলবে, তা জেনে নিতে হবে।
  • ব্যান্ড বা স্ট্র্যাপ রিপ্লেস করার সুবিধা আছে কি না, জেনে নিন।
  • প্রয়োজনীয় অ্যাপ আছে কি না, জেনে নিতে হবে। যেমন আইওটি ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের অ্যাপ আছে কি না, তা দেখে নিতে হবে। 

দরদাম
বাজারে ২ হাজার থেকে শুরু করে ৫১ হাজার টাকার মধ্যে ব্র্যান্ডভেদে স্মার্টওয়াচ পাওয়া যায়। ভালো ব্র্যান্ডের স্মার্টওয়াচ কিনতে চাইলে খরচ একটু বেশি পড়বে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত