ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
পবিত্র কোরআন মুখস্থ করা বা ‘হিফজ’ করা ইসলামি সভ্যতার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটি কেবল একটি শিক্ষাপদ্ধতি নয়, বরং আল্লাহর নিজ হাতে তাঁর বাণী সংরক্ষণের এক অলৌকিক ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণের শুরু থেকেই তাঁর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলো—যেমন তাওরাত, জাবুর ও ইঞ্জিল—মানুষের অসতর্কতা ও বিকৃতির কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু কোরআনুল কারিমের বেলায় আল্লাহ নিজেই সংরক্ষণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমিই কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।’ (সুরা হিজর: ৯)। এই ঐশ্বরিক প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ হলো কোরআন হিফজের ধারাবাহিক ইতিহাস।
নববী যুগ থেকে শুরু
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেই কোরআন হিফজের যাত্রা শুরু হয়। যখন তিনি সাহাবিদের কাছে কোরআন তিলাওয়াত করতেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম তাৎক্ষণিকভাবে তা মুখস্থ করতেন। হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.)-এর মতো বহু সাহাবি পূর্ণ কোরআন হিফজ করেছিলেন। রাসুল (সা.) কোরআন শিক্ষা ও হিফজের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (সহিহ বুখারি: ৫০২৭)। নবীজি (সা.)-এর জীবদ্দশায় কোরআন মুখস্থকারীদের ‘হাফেজ’ উপাধি দেওয়া হয়। এই ধারাকে আরও সুসংহত করতে রাসুল (সা.) আসহাবে সুফফার সঙ্গীদের কোরআন শিক্ষা দিতেন, যা মূলত প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক কোরআন শিক্ষাকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করে।
খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগ ও সম্প্রসারণ
হজরত আবু বকর (রা.)-এর শাসনামলে ইয়ামামার যুদ্ধে অসংখ্য হাফেজ সাহাবি শহীদ হলে কোরআনের লিখিত রূপ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। হজরত ওমর (রা.)-এর পরামর্শে লিখিত কোরআন সংকলনের কাজ শুরু হয়, যা প্রমাণ করে যে কোরআনের মূল সংরক্ষণের ভিত্তি ছিল হিফজ। পরবর্তী সময়ে হজরত উসমান (রা.) পবিত্র কোরআনের মুসহাফ প্রণয়ন করে তা সব অঞ্চলে পাঠান, কিন্তু মুখস্থবিদ্যার গুরুত্ব তাতে একবিন্দুও কমেনি।
ইসলামের প্রসার ঘটলে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিটি শহরে হিফজ মাদ্রাসার বিস্তার ঘটে। বাগদাদ, দামেস্ক, কায়রো, ইস্তাম্বুলের মতো জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রগুলোতে হিফজ মাদ্রাসার প্রসার ঘটে। এর মধ্যে ৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় আজও হিফজ ও কিরাত শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশেও মুসলিম শাসনামলে ওলামায়ে কেরাম কোরআন হিফজ শিক্ষাকে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে দেন। আজও প্রতিটি মুসলিম সমাজে মক্তব ও হিফজখানা তার অস্তিত্ব বহন করছে।
আধুনিক যুগে হিফজ মাদ্রাসার গুরুত্ব
আজ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে লাখ লাখ শিশু-কিশোর কোরআন হিফজ করছে। হিফজ মাদ্রাসা কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং ইসলামের বাণীকে মানুষের হৃদয়ে জীবন্ত রাখার এক অনন্য মাধ্যম। রাসুল (সা.) হাফেজদের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন হিফজ করেছে, কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে—কোরআন তিলাওয়াত করো এবং মর্যাদা লাভ করো।’ (জামে তিরমিজি: ২৯১৪)
হিফজ মাদ্রাসা কোরআনের অলৌকিক সংরক্ষণব্যবস্থার এক জীবন্ত প্রমাণ। ইসলামের ইতিহাসের শুরু থেকে চলে আসা আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের এই ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে, ইনশা আল্লাহ।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পবিত্র কোরআন মুখস্থ করা বা ‘হিফজ’ করা ইসলামি সভ্যতার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটি কেবল একটি শিক্ষাপদ্ধতি নয়, বরং আল্লাহর নিজ হাতে তাঁর বাণী সংরক্ষণের এক অলৌকিক ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণের শুরু থেকেই তাঁর কিতাব সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলো—যেমন তাওরাত, জাবুর ও ইঞ্জিল—মানুষের অসতর্কতা ও বিকৃতির কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু কোরআনুল কারিমের বেলায় আল্লাহ নিজেই সংরক্ষণের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমিই কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই এর সংরক্ষক।’ (সুরা হিজর: ৯)। এই ঐশ্বরিক প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ হলো কোরআন হিফজের ধারাবাহিক ইতিহাস।
নববী যুগ থেকে শুরু
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেই কোরআন হিফজের যাত্রা শুরু হয়। যখন তিনি সাহাবিদের কাছে কোরআন তিলাওয়াত করতেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম তাৎক্ষণিকভাবে তা মুখস্থ করতেন। হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.)-এর মতো বহু সাহাবি পূর্ণ কোরআন হিফজ করেছিলেন। রাসুল (সা.) কোরআন শিক্ষা ও হিফজের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।’ (সহিহ বুখারি: ৫০২৭)। নবীজি (সা.)-এর জীবদ্দশায় কোরআন মুখস্থকারীদের ‘হাফেজ’ উপাধি দেওয়া হয়। এই ধারাকে আরও সুসংহত করতে রাসুল (সা.) আসহাবে সুফফার সঙ্গীদের কোরআন শিক্ষা দিতেন, যা মূলত প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক কোরআন শিক্ষাকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করে।
খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগ ও সম্প্রসারণ
হজরত আবু বকর (রা.)-এর শাসনামলে ইয়ামামার যুদ্ধে অসংখ্য হাফেজ সাহাবি শহীদ হলে কোরআনের লিখিত রূপ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। হজরত ওমর (রা.)-এর পরামর্শে লিখিত কোরআন সংকলনের কাজ শুরু হয়, যা প্রমাণ করে যে কোরআনের মূল সংরক্ষণের ভিত্তি ছিল হিফজ। পরবর্তী সময়ে হজরত উসমান (রা.) পবিত্র কোরআনের মুসহাফ প্রণয়ন করে তা সব অঞ্চলে পাঠান, কিন্তু মুখস্থবিদ্যার গুরুত্ব তাতে একবিন্দুও কমেনি।
ইসলামের প্রসার ঘটলে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিটি শহরে হিফজ মাদ্রাসার বিস্তার ঘটে। বাগদাদ, দামেস্ক, কায়রো, ইস্তাম্বুলের মতো জ্ঞান-বিজ্ঞানের কেন্দ্রগুলোতে হিফজ মাদ্রাসার প্রসার ঘটে। এর মধ্যে ৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় আজও হিফজ ও কিরাত শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ভারতীয় উপমহাদেশেও মুসলিম শাসনামলে ওলামায়ে কেরাম কোরআন হিফজ শিক্ষাকে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে দেন। আজও প্রতিটি মুসলিম সমাজে মক্তব ও হিফজখানা তার অস্তিত্ব বহন করছে।
আধুনিক যুগে হিফজ মাদ্রাসার গুরুত্ব
আজ পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে লাখ লাখ শিশু-কিশোর কোরআন হিফজ করছে। হিফজ মাদ্রাসা কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং ইসলামের বাণীকে মানুষের হৃদয়ে জীবন্ত রাখার এক অনন্য মাধ্যম। রাসুল (সা.) হাফেজদের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন হিফজ করেছে, কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে—কোরআন তিলাওয়াত করো এবং মর্যাদা লাভ করো।’ (জামে তিরমিজি: ২৯১৪)
হিফজ মাদ্রাসা কোরআনের অলৌকিক সংরক্ষণব্যবস্থার এক জীবন্ত প্রমাণ। ইসলামের ইতিহাসের শুরু থেকে চলে আসা আল্লাহর কিতাব সংরক্ষণের এই ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে, ইনশা আল্লাহ।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৩ ঘণ্টা আগেইসলামের বিচারব্যবস্থায় বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। বিচারের রায় কার্যকরে বিশ্বনবী (সা.) আপনজন-ভিন্নজন, স্বজাতি-বিজাতি এবং দেশি-বিদেশি কারও মাঝেই কোনো ধরনের ভেদাভেদকে প্রশ্রয় দিতেন না। মক্কা বিজয়ের সময় আরবের সবচেয়ে কুলীন বংশ কুরাইশ গোত্রের এক মহিলা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হন।
১০ ঘণ্টা আগেমানুষের মুখের ভাষা তার অন্তরের প্রতিচ্ছবি। একজন মুমিনের মুখের ভাষা শুধু তার ব্যক্তিগত আচরণ নয়; বরং তার ইমান, চরিত্র এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরিচায়ক। ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের প্রতিটি দিককে শুদ্ধ ও সুন্দর করার শিক্ষা দেয়। মুখের ভাষা তার অন্যতম।
২০ ঘণ্টা আগেসৌদি আরবের শহরগুলোর নামকরণের পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ভূগোল, এবং আধ্যাত্মিকতার গভীর সম্পর্ক। মক্কা ও মদিনা থেকে শুরু করে জেদ্দা এবং নিওম পর্যন্ত, এই শহরগুলোর নাম তাদের উৎপত্তি ও তাৎপর্যকে নির্দেশ করে।
১ দিন আগে