Ajker Patrika

সুরা ইয়াসিনে বর্ণিত ইন্তাকিয়া জনপদের বিস্ময়কর ঘটনা

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ১২
সুরা ইয়াসিন। ছবি: সংগৃহীত
সুরা ইয়াসিন। ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহ তাআলা কোরআনের বিভিন্ন স্থানে পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠী ও তাদের ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন এই দৃষ্টান্ত দেখে আল্লাহর প্রতি ইমান আনে এবং সঠিক পথে ফিরে আসে। সুরা ইয়াসিনে তেমনই এক জনপদের কথা এসেছে, যার নাম ছিল ‘ইন্তাকিয়া।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর উদ্ধৃতিতে ইবনে কাসির (রহ.) এই জনপদের কথাই উল্লেখ করেছেন।

ইন্তাকিয়া জনপদ ও তিন রাসুলের আগমন

ইন্তাকিয়া জনপদের অধিবাসীদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তাআলা প্রথমে দুজন রাসুল প্রেরণ করেন, কিন্তু তারা সেই রাসুলদের মিথ্যাবাদী বলে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর আল্লাহ তাদের ওপর রহম করে তৃতীয় আরেকজনকে রাসুল হিসেবে পাঠান। এই জনপদের অধিবাসীরা তিনজন রাসুলকেই অস্বীকার করে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘আমি তাদের নিকট দুজন রাসুল প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর ওরা তাদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। তখন আমি তাদের শক্তিশালী করলাম তৃতীয় আরেকজনের মাধ্যমে।’ (সুরা ইয়াসিন: ১৪)। তাফসিরে ইবনে কাসির (রহ.)-এর বর্ণনামতে, সেই রাসুল তিনজনের নাম ছিল সাদেক, সদুক ও শালুম। অন্য এক বর্ণনায় তাদের নাম শামউন, ইউহান্না ও বুলিস বলা হয়েছে।

হাবিবের ইমান ও শাহাদাত

জনপদবাসী যখন তিন রাসুলকে অস্বীকার করে তাদের হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন এক সাধারণ মুমিন ব্যক্তি রাসুলদের প্রতি সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে দ্রুত সম্প্রদায়ের মধ্যে উপস্থিত হন। তিনি জনপদবাসীদের রাসুলদের অনুসরণ করার উপদেশ দেন এবং নিজেই ঘোষণা দেন, ‘আমি তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম, তোমরা শুনে রাখো।’ (সুরা ইয়াসিন: ২৫)

তাফসিরে ইবনে কাসিরে এই ইমানদার ব্যক্তির নাম ‘হাবিব’ বলা হয়েছে। তিনি পেশায় ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি এবং কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি সত্তরেরও বেশি বছর ধরে মূর্তিপূজা করে আসছিলেন। পাঠানো রাসুলগণ ঘটনাক্রমে তার সঙ্গেই প্রথম সাক্ষাতের পর তাকে এক আল্লাহর ওপর ইমান আনার দাওয়াত দেন। হাবিব তাদের কাছে তার রোগমুক্তির জন্য দোয়া করতে বললে, রাসুলগণ বলেন—‘তাদের রব সর্বশক্তিমান এবং তিনি তাকে সুস্থ করে দেবেন।’ হাবিব ইমান আনার পর সম্পূর্ণ নিরাময় লাভ করেন। এতে তার ইমান আরও দৃঢ় হয়।

যখন রাসুলদের বিরুদ্ধে শহরবাসীর বিক্ষোভের সংবাদ তিনি পেলেন, তখন তিনি ছুটে এলেন এবং সম্প্রদায়ের সামনে ইমান ঘোষণা করলেন। ফলে জনপদবাসী তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, তাকে লাথি মেরে মেরে শহীদ করে দেওয়া হয়। বেদম প্রহারের সময়ও তিনি—‘হে আমার পালনকর্তা, আমার সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করুন’ বলে যাচ্ছিলেন। এভাবে হাবিব বীরত্বের সঙ্গে আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যান।

ধ্বংসাত্মক পরিণাম

ইন্তাকিয়া জনপদের অধিবাসীদের এই ধৃষ্টতার কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর কঠিন শাস্তি প্রেরণ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের ওপর আকাশ থেকে কোনো বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং আমি (বাহিনী) অবতরণকারীও না। প্রকৃতপক্ষে এ ছিল এক ভয়ংকর শব্দ। অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।’ (সুরা ইয়াসিন: ২৮-২৯)।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলা হজরত জিবরাইল (আ.)-কে পাঠালেন। তিনি ইন্তাকিয়া শহরের দরজার দুই বাহু ধরে এমন কঠোর ও বিকট আওয়াজ করলেন, যার ফলে সবার দেহ থেকে প্রাণ বেরিয়ে যায় এবং সবাই নিথর হয়ে পড়ে।

এই কাহিনি থেকে মুমিনদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে—আল্লাহর পথে দৃঢ় ইমান ও ধৈর্যের জন্য রয়েছে মহৎ পুরস্কার, আর আল্লাহর রাসুলদের প্রত্যাখ্যান ও মুমিনদের ওপর জুলুমের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।

লেখক: মুস্তাফিজ গাজী, আলেম প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

থার্টি ফার্স্ট নাইট: উল্লাস নয়, তওবাই হোক নতুন বছরের অঙ্গীকার

শায়খ আহমাদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহর দেওয়া জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। যে সম্পদ যত বেশি মূল্যবান, তার ব্যবহার-প্রক্রিয়াও তত বেশি সুপরিকল্পিত হওয়া প্রয়োজন। সময় বহমান স্রোতের মতো, যাকে কখনো বেঁধে রাখা যায় না। তাই জীবনের এই মূল্যবান সময়গুলো অবহেলায় নষ্ট করা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হলো, মানুষের জীবন ও সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির পথেই ব্যয় হওয়া উচিত। পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা আমাদের এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের সময়গুলোকে এমন সব আচার-অনুষ্ঠান ও বিজাতীয় উৎসবে খরচ করছি, যার ভেতর না আছে দুনিয়ার কল্যাণ, না আছে পরকালের মুক্তি। তেমনই একটি অনর্থক ও শরিয়ত বিবর্জিত উৎসবের নাম ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’।

থার্টি ফার্স্ট নাইটের গোড়ার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এর সঙ্গে পৌত্তলিকতা ও কুসংস্কারের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। প্রাচীন পারস্যের সম্রাট জামশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে এবং পরবর্তী সময়ে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে নববর্ষের প্রচলন করেন। মূলত এটি ইংরেজি নববর্ষ নয়, খ্রিষ্টীয় বা গ্রেগরিয়ান নববর্ষ, যা পোপ গ্রেগরির নামানুসারে প্রবর্তিত। প্রাচীনকালে পারস্যের প্রকৃতি পূজারিরা বিশ্বাস করত, বছরের প্রথম দিন আনন্দ-ফুর্তিতে কাটালে সারা বছর ভালো থাকা যাবে। সেই কুসংস্কার আজও আধুনিক সমাজের তথাকথিত বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মধ্যে গেঁথে আছে। অথচ বছরের প্রথম দিন উল্লাস করলে সারা বছর ভালো যাবে—এর চেয়ে অযৌক্তিক ও হাস্যকর বিশ্বাস আর কী হতে পারে!

ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো উৎসব পালন করতে হলে কোরআন-সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের আমলের প্রামাণ্যতা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা যায়, নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সপক্ষে ইসলামে কোনো দলিল নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য রাখবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ)। কোনো জাগতিক কাজ তখনই বৈধ হয়, যখন তা শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করে না এবং সৃষ্টির হক নষ্ট করে না। কিন্তু থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপনে এই দুটি শর্তই চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়। এটি একদিকে যেমন বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ, অন্যদিকে এর মাধ্যমে নাগরিক শান্তি ও মানুষের অধিকার ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন করা হয়।

এই উৎসবের সামাজিক ও নৈতিক ক্ষতির দিকগুলো অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রথমত, এতে বিপুল অর্থের অপচয় হয়। যে রাতে আতশবাজি, ফানুস ও ডিজে পার্টির নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়, সেই হাড়কাঁপানো শীতের রাতেই দেশের লাখো গরিব মানুষ এক টুকরো গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট পায়। অপচয়কারীকে পবিত্র কোরআনে শয়তানের ভাই হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত বিকট শব্দে আতশবাজি ও সাউন্ডবক্স ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয় ঘটে। শহরের ফ্ল্যাটে থাকা বৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থ রোগীরা এই শব্দদূষণে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়ে। এমনকি পটকার শব্দে শিশুর মৃত্যু কিংবা ফানুসের আগুনে দগ্ধ হওয়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও প্রতিবছর আমাদের দেখতে হয়।

তদুপরি এই বিজাতীয় সংস্কৃতি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এক ভোগবাদী ও নৈতিকতাহীন পথে ঠেলে দিচ্ছে। মাদক, গান-বাজনা এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটছে, যা ইসলামের সুমহান দর্শনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। ইসলাম আমাদের ত্যাগের উৎসব শিখিয়েছে, যেখানে ভোগের চেয়ে অপরের কল্যাণ ও গরিবের হক বেশি গুরুত্ব পায়। অথচ থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো উৎসবে আত্মকেন্দ্রিক ভোগবাদ ছাড়া আর কিছুই নেই। আমাদের নিজস্ব সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থাকতে কেন আমরা অন্যের দেউলিয়া সংস্কৃতির দ্বারস্থ হচ্ছি, সেটি আজ এক বড় প্রশ্ন।

প্রকৃতপক্ষে নতুন বছর আসা মানেই নতুনের আগমন নয়, বরং জীবন থেকে একটি বছরের পাতা ঝরে যাওয়া। জীবনের বরফ প্রতিনিয়ত গলে যাচ্ছে। আমরা কি একবারও ভাবি, কবরের দিকে আমাদের পা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল! একজন ফাঁসির আসামির কাছে যেমন প্রতিটি সূর্যোদয় মৃত্যুর নিকটবর্তী হওয়ার সংকেত, আমাদের জীবনও ঠিক তেমনি ফুরিয়ে আসছে। তাই থার্টি ফার্স্ট নাইটের রাতে নেশা ও উন্মাদনায় মত্ত না হয়ে বিগত জীবনের গুনাহের জন্য তওবা করা এবং আগামীর জন্য নেক পরিকল্পনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সন্তান, পরিবার ও সমাজকে এই ভ্রান্ত সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করা আমাদের ইমানি ও নাগরিক দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা আমাদের বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিহার করে ইসলামি জীবনাদর্শ গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন।

জুমার মিম্বর থেকে গ্রন্থনা: সাব্বির জাদিদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে ইসলাম যা বলে

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কোনো মুসলমানের জানাজায় অংশগ্রহণ ও তাকে কবরস্থ করা সমাজের মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব। পাশাপাশি এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে সওয়াব। এ ছাড়া এটি এক মুমিনের ওপর অন্য মুমিনের অধিকার।

জানাজা ও দাফনকার্যে অংশগ্রহণের লাভ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (আল্লাহর প্রতি) বিশ্বাস রেখে এবং নেকির আশা রেখে কোনো মুসলমানের জানাজার সঙ্গে যাবে এবং তার জানাজার নামাজ আদায় করবে এবং দাফন করা পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকবে, সে দুই কিরাত (পরিমাপের একক) সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে। এক কিরাত উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ আদায় করে মৃতকে সমাধিস্থ করার আগেই ফিরে আসবে, সে এক কিরাত সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে।’ (রিয়াদুস সালেহিন: ৯৩৫)

আমাদের সমাজে সাধারণত জানাজার নামাজ ও দাফন প্রক্রিয়ায় পুরুষদেরই দেখা যায় দেখা যায় অংশগ্রহণ করতে। তবে নারীদের জন্য জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ বিষয়ে ইসলামবিষয়ক গবেষকদের মত হলো, নারীদের জন্য জানাজার নামাজ আদায় করা মৌলিকভাবে নিষিদ্ধ নয়। চাইলে তারাও জানাজায় শরিক হতে পারবে। এতে জানাজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে জানাজায় অংশগ্রহণের বিষয়ে নারীদেরকে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে থাকে।

জানাজার স্থানে যদি পর্দার খেলাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিংবা নারীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে সেখানে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ইসলাম দেয় না। জানাজার নামাজ যেহেতু নারীদের জন্য আবশ্যক নয়, তাই এতে অংশ নিতে গিয়ে কোনো ফরজ বিধান লঙ্ঘন করা বিধান সম্মত নয়। কেননা, ইসলামের বিধান মতে—জানাজার নামাজ আদায়, মৃতদেহ বহন এবং দাফন সংক্রান্ত সামগ্রিক দায়িত্ব মূলত পুরুষদের ওপরই ন্যস্ত।

এ ছাড়া শরিয়তবিরোধী কোনো পরিস্থিতির আশঙ্কা থাকার কারণে অনেক আলেম নারীদের জানাজায় অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করে থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য যে সুসংবাদ দিয়েছেন নবীজি (সা.)

আবরার নাঈম 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দুনিয়ার সফরের শেষ গন্তব্য মৃত্যু। মৃত্যু এক অপ্রিয় সত্য, যা সুনিশ্চিত অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)

জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া। অর্থাৎ কোনো মুসলমান মারা গেলে মহল্লার অল্পসংখ্যক লোক জানাজার নামাজ আদায় করলে বাকিরা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। এ ছাড়া একজন মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের পাঁচটি হক আছে। এর মধ্যে মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশ নেওয়াও একটি হক।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমানের অধিকার অন্য মুসলমানের ওপর পাঁচটি: সালামের জবাব দেওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাজার সঙ্গে যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়া।’ (রিয়াদুস সলেহিন: ৯০০)

কোনো মুসলমানের জানাজায় অংশগ্রহণ ও তাকে কবরস্থ করা সমাজের মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব। পাশাপাশি এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে সওয়াব। যদিও সবার অংশগ্রহণ জরুরি নয়। তাই বলে এমন সওয়াবের কাজ থেকে পিছিয়ে থাকা কখনোই সমীচীন নয়।

জানাজা ও দাফনকার্যে অংশগ্রহণের লাভ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (আল্লাহর প্রতি) বিশ্বাস রেখে এবং নেকির আশা রেখে কোনো মুসলমানের জানাজার সঙ্গে যাবে এবং তার জানাজার নামাজ আদায় করবে এবং দাফন করা পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকবে, সে দুই কিরাত (পরিমাপের একক) সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে। এক কিরাত উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ আদায় করে মৃতকে সমাধিস্থ করার আগেই ফিরে আসবে, সে এক কিরাত সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে।’ (রিয়াদুস সলেহিন: ৯৩৫)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লাশ দেখে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আমলের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় বিলাপ কিংবা উচ্চ স্বরে কান্নাকাটি মৃত ব্যক্তির কোনো উপকারে আসে না; বরং তাঁর জন্য মাগফিরাতের দোয়া এবং তাঁর ভালো গুণগুলো স্মরণ করাই প্রকৃত কল্যাণকর।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০)

কারও মৃত্যুর পর তাঁর পাশে উপস্থিত হলে লাশ দেখার সময় দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হজরত উম্মে সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রোগী কিংবা মৃতের কাছে উপস্থিত হলে ভালো কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বলবে, ফেরেশতারা তার ওপর আমিন বলবেন।’

এই অবস্থায় এই দোয়া পড়া সুন্নত—‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়া লাহু ওয়া আকিবনি মিনহু উকবান হাসানাহ।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ও তাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদান দাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৭)

পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী নবীগণ নিজেদের এবং সমস্ত মুমিনের জন্য যেভাবে দোয়া করেছেন, তা আমাদের জন্য বড় শিক্ষা।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া—‘রব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ইমানদারকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

হজরত নুহ (আ.)-এর দোয়া—‘রব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও-ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও; আর যে ইমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে এবং সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’ (সুরা নুহ: ২৮)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত