Ajker Patrika

পিতা-পুত্র

সম্পাদকীয়
পিতা-পুত্র

রুশ সাহিত্যে পিতা ও পুত্র নামে অন্তত দুটো উপন্যাস আছে। একটি লিখেছেন ইভান তুর্গিয়েনেভ, অন্যটি ভেরা পানোভা। প্রথমটিতে দুই প্রজন্মের মধ্যে চিন্তার ব্যবধানই মুখ্য। দ্বিতীয়টি শিশুতোষ ভাবনার প্রতিফলন। মা নতুন বিয়ে করায় নতুন পিতার সঙ্গে একটি সাত বছরের ছেলের সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে উপন্যাসের আখ্যান।

দুটো উপন্যাসই মনকে জাগিয়ে তোলে। ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। বাংলাদেশে যদি সে রকম একটি উপন্যাস লিখতেন কেউ, তাহলে কোন আঙ্গিক বেছে নিতেন, কোন ঘটনাকে বেছে নিতেন? বেছে নেওয়ার মতো ঘটনা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে অনেক, কিন্তু আজকের পত্রিকায় ১০ জুলাই একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা নিয়ে উপন্যাস হলে মন্দ হয় না। এটাও বাবা আর ছেলের কাহিনি। তবে কাহিনিটি প্রতারণার। ছেলে নিজে প্রতারক হয়ে বাবাকেও একই পথে টেনে এনেছেন।

বাবা-ছেলে দুজনই গলাগলি করে প্রতারণা করতে শুরু করে দিয়েছেন। ফলে গল্পটি এখন বাবা-ছেলেকে নিয়ে ক্ল্যাসিক উপন্যাস না হয়ে প্রতারণামূলক গল্পের দিকে ঝুঁকে গেছে। আর সেখানেও পাওয়া যাচ্ছে রুশ সাহিত্যেরই আরেক দিকপাল নিকোলাই গোগলকে (অবশ্য তিনি ছিলেন বর্তমান ইউক্রেনের লোক)। গোগলের লেখা ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল’ হতে পারে এই বাপ-ব্যাটার কাহিনির ভাবানুবাদ। নাটকটি আমাদের দেশের মঞ্চেও দেখা গেছে। দাপটের সঙ্গে তা মঞ্চ কাঁপিয়েছে।

আমাদের দেশের বাপ-ব্যাটা মঞ্চ কাঁপাননি; বরং আরেকটু হলেই কাঁপিয়ে দিচ্ছিলেন গোটা দেশ। প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সেজে প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন ছেলে, এরপর বাবাও হয়েছেন তাঁর সঙ্গী। দুজন মিলে লোভের দরজাটা খুলে দিয়েছেন। সেই লোভের দরজাকে সরকারি কর্মকর্তারা ভেবেছেন আশার আলো। আর তাই পতঙ্গের মতো ছুটে গেছেন সেই আলোর দিকে।

এ যেন ম্যাজিক কারবার। অতিরিক্ত সচিবকে বলা হচ্ছে, ‘মালকড়ি ছাড়ো হে’, তোমাকে সচিব বানিয়ে দিচ্ছি! অতিরিক্ত মহাপরিচালককে বলা হচ্ছে, ‘ছু মন্তর ছু’, আমার পকেটে টাকা এলেই তুমি হবে মহাপরিচালক। এ রকম আরও কত-কী! আর আমাদের মহা মহা সব সরকারি কর্মকর্তার দল নিজের যোগ্যতার ওপর বিশ্বাস না রেখে টাকার থলে উজাড় করে দিচ্ছেন প্রতারক বাবা ও ছেলেকে।

ব্যস, কোটি টাকার সংস্থান হয়ে গেল তাঁদের! বোকার দল যাচাইও করে নিল না, সত্যিই এই লোক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস কি না। আর যদি সত্যিই প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হয়ে থাকেন, তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়। প্রশাসনে বদলি বা পদোন্নতি তো হয় তাঁর সারা বছরের কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে। একটা প্রক্রিয়া তো রয়েছেই। কিন্তু ভয়াবহ সত্য হলো, সেই প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা রেখে বদলি বা পদোন্নতির ওপর বুঝি ভরসা করা যায় না। তাই এমন কারও আশীর্বাদ দরকার, যার যোগাযোগ আছে ওপরমহলে। বাবা-ছেলে সরকারি কর্মকর্তাদের সেই দুর্বলতার সুযোগটাই নিয়েছেন।

বাবা-ছেলে গর্হিত অপরাধ করেছেন, সন্দেহ নেই। কড়া শাস্তিই তাঁদের প্রাপ্য। কিন্তু বদলি বা পদোন্নতিতে প্রক্রিয়ার চেয়ে তদবিরের মূল্য যদি বেশি হয়ে থাকে, তাহলে আরও কিছু প্রতারক জন্মাবে, জন্মাতেই থাকবে। তাদের রুখতে হলে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ করার বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত