মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
ইসলামে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য যেমন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তেমনি সন্তানের প্রতিও মাতা-পিতার দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মাতা-পিতার প্রতি তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের কর্তব্য ও দায়িত্ব কার্যকর হতে শুরু করে এবং তখন থেকেই সে হক অনুযায়ী আমল করা মাতা-পিতার কর্তব্য হয়ে যায়। সন্তান জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান করা সন্তানের জন্মগত অধিকার।
শিশুর জন্মের পর তাকে মায়ের দুধ দিতে হবে। মায়ের শালদুধ শিশুর জন্য খুব উপকারী। এ দুধে স্নেহ ও শর্করার পরিমাণ থাকে কম। তবে খনিজ লবণ, লৌহ, রোগপ্রতিরোধী পদার্থ ও আমিষের পরিমাণ সাধারণ দুধের চেয়ে বেশি থাকে। মায়ের দুধ গ্রহণকারী শিশুদের অ্যালার্জি, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, মেনিনজাইটিস, অন্ত্র প্রদাহজাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক কম হয়।
রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘শিশু জন্মের পরপর মায়ের বুক থেকে যে দুধ আসে তা শিশুর জন্য অত্যন্ত সুষম, উপাদেয় ও উপকারী খাবার।’ (জামে তিরমিজি)
নবজাতক শিশু যেহেতু জন্মের পর নিজে খাদ্য সংগ্রহ করে খেতে পারে না, সেহেতু ইসলামি শরিয়ত শিশুর জন্য দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করার অনুমোদন করেছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়ানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।’ (সুরা বাকারা: ২৩৩)
মায়ের দুধ শিশুর জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নেয়ামত। শিশু জন্মগ্রহণের আগেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিশুর উপযুক্ত খাদ্য হিসেবে দুধের সৃষ্টি করেছেন। শিশুকে বুকের দুধ পান করালে একদিকে শিশু পরিমিত পরিমাণে পুষ্টি পেয়ে স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে, অপরদিকে মা ও সন্তানের মাঝে পারস্পরিক গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, যা শিশুর মাঝে তার সামাজিক জীবনেও প্রভাব বিস্তার করে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বীয় বান্দার প্রতি অতি দয়াবান। বিশেষত ছোট শিশুদের প্রতি, যারা দয়া ও অনুগ্রহের বেশি মুখাপেক্ষী। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিশুদের স্তন্য দান করা মায়ের ওপর ওয়াজিব করেছেন। কোনো অসুবিধা ছাড়া ক্রোধের বশবর্তী হয়ে বা অসন্তুষ্টির কারণে দুধ পান করানো বন্ধ করলে মারাত্মক গুনাহ হবে।
তার বিপরীতে এ ক্ষেত্রে পিতারও কর্তব্য রয়েছে। তার কর্তব্য হচ্ছে যথারীতি ভালোভাবে শিশুর মায়ের খোরপোষের ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে উভয়েই সমান দায়িত্বশীল। এ ছোট শিশুর অধিকার সম্পর্কে তাদের উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মাতা দুধ পান আর প্রতিপালনের মাধ্যমে শিশুকে সহায়তা করবে, আর পিতা খাদ্য ও পরিধেয় বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে।
নবজাতকের জন্মের পর তার উপযোগী প্রথম খাবার দুধ। একটি শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধই শ্রেষ্ঠ খাবার। একটি শিশুর সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের যেসব উপাদান প্রয়োজন, তার সবই পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সঠিক অনুপাতে মায়ের দুধে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিশুর শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সুপরিমিত উপাদানসহ মায়ের দুধ সৃষ্টি করে থাকেন। তাই কেবল মায়ের দুধেই রয়েছে শিশুর সব ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার মতো উপাদান।
ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃদুগ্ধ নবজাত শিশুর জন্মগত অধিকার। এ কারণে যে নবজাতকের মা শিশুকে দুধ পান করান, তার জন্য মাহে রমজানের রোজা পালনের বাধ্যবাধকতা পর্যন্ত শিথিল করে দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ মুসাফিরের ওপর থেকে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের অর্ধেক রহিত করে দিয়েছেন এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী ও গর্ভবতী নারী থেকে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করে দিয়েছেন।’ (জামে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে নাসায়ি)
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় অনেকবার মায়ের দুধের কথা আলোচনা করা হয়েছে। যেমন—জীবনের নিরাপত্তার চরম হুমকি থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবী হজরত মুসা (আ.)-এর মায়ের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি মুসার মায়ের কাছে নির্দেশ দিলাম যে, তুমি তাকে দুধ পান করাও।’ (সুরা কাসাস: ৭)
বুকের দুধ স্বীয় সন্তানকে পান করিয়ে মাতা পরকালীন জীবনকে সমৃদ্ধিশালী করতে পারেন। মায়ের জন্য রয়েছে প্রতি ফোঁটা দুধের বিনিময়ে উপযুক্ত সওয়াব। সুতরাং বলা যায়, সন্তানকে দুগ্ধদানের নির্দেশ প্রদান করে ইসলাম একদিকে যেমন নবজাতক সন্তানের অধিকার সংরক্ষণ করেছে, অপরদিকে মায়ের পরকালীন জীবনকে সহজতর করার ব্যবস্থা করেছে।
লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
ইসলামে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য যেমন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তেমনি সন্তানের প্রতিও মাতা-পিতার দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মাতা-পিতার প্রতি তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের কর্তব্য ও দায়িত্ব কার্যকর হতে শুরু করে এবং তখন থেকেই সে হক অনুযায়ী আমল করা মাতা-পিতার কর্তব্য হয়ে যায়। সন্তান জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান করা সন্তানের জন্মগত অধিকার।
শিশুর জন্মের পর তাকে মায়ের দুধ দিতে হবে। মায়ের শালদুধ শিশুর জন্য খুব উপকারী। এ দুধে স্নেহ ও শর্করার পরিমাণ থাকে কম। তবে খনিজ লবণ, লৌহ, রোগপ্রতিরোধী পদার্থ ও আমিষের পরিমাণ সাধারণ দুধের চেয়ে বেশি থাকে। মায়ের দুধ গ্রহণকারী শিশুদের অ্যালার্জি, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, মেনিনজাইটিস, অন্ত্র প্রদাহজাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক কম হয়।
রাসুলে করিম (সা.) বলেন, ‘শিশু জন্মের পরপর মায়ের বুক থেকে যে দুধ আসে তা শিশুর জন্য অত্যন্ত সুষম, উপাদেয় ও উপকারী খাবার।’ (জামে তিরমিজি)
নবজাতক শিশু যেহেতু জন্মের পর নিজে খাদ্য সংগ্রহ করে খেতে পারে না, সেহেতু ইসলামি শরিয়ত শিশুর জন্য দুই বছর পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করার অনুমোদন করেছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়ানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।’ (সুরা বাকারা: ২৩৩)
মায়ের দুধ শিশুর জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নেয়ামত। শিশু জন্মগ্রহণের আগেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিশুর উপযুক্ত খাদ্য হিসেবে দুধের সৃষ্টি করেছেন। শিশুকে বুকের দুধ পান করালে একদিকে শিশু পরিমিত পরিমাণে পুষ্টি পেয়ে স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে, অপরদিকে মা ও সন্তানের মাঝে পারস্পরিক গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, যা শিশুর মাঝে তার সামাজিক জীবনেও প্রভাব বিস্তার করে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বীয় বান্দার প্রতি অতি দয়াবান। বিশেষত ছোট শিশুদের প্রতি, যারা দয়া ও অনুগ্রহের বেশি মুখাপেক্ষী। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিশুদের স্তন্য দান করা মায়ের ওপর ওয়াজিব করেছেন। কোনো অসুবিধা ছাড়া ক্রোধের বশবর্তী হয়ে বা অসন্তুষ্টির কারণে দুধ পান করানো বন্ধ করলে মারাত্মক গুনাহ হবে।
তার বিপরীতে এ ক্ষেত্রে পিতারও কর্তব্য রয়েছে। তার কর্তব্য হচ্ছে যথারীতি ভালোভাবে শিশুর মায়ের খোরপোষের ব্যবস্থা করা। এ ব্যাপারে উভয়েই সমান দায়িত্বশীল। এ ছোট শিশুর অধিকার সম্পর্কে তাদের উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মাতা দুধ পান আর প্রতিপালনের মাধ্যমে শিশুকে সহায়তা করবে, আর পিতা খাদ্য ও পরিধেয় বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে।
নবজাতকের জন্মের পর তার উপযোগী প্রথম খাবার দুধ। একটি শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধই শ্রেষ্ঠ খাবার। একটি শিশুর সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের যেসব উপাদান প্রয়োজন, তার সবই পর্যাপ্ত পরিমাণে ও সঠিক অনুপাতে মায়ের দুধে বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শিশুর শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সুপরিমিত উপাদানসহ মায়ের দুধ সৃষ্টি করে থাকেন। তাই কেবল মায়ের দুধেই রয়েছে শিশুর সব ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার মতো উপাদান।
ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃদুগ্ধ নবজাত শিশুর জন্মগত অধিকার। এ কারণে যে নবজাতকের মা শিশুকে দুধ পান করান, তার জন্য মাহে রমজানের রোজা পালনের বাধ্যবাধকতা পর্যন্ত শিথিল করে দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ মুসাফিরের ওপর থেকে চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের অর্ধেক রহিত করে দিয়েছেন এবং মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী ও গর্ভবতী নারী থেকে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতাও শিথিল করে দিয়েছেন।’ (জামে তিরমিজি, সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে নাসায়ি)
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় অনেকবার মায়ের দুধের কথা আলোচনা করা হয়েছে। যেমন—জীবনের নিরাপত্তার চরম হুমকি থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নবী হজরত মুসা (আ.)-এর মায়ের কাছে প্রত্যাদেশ পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি মুসার মায়ের কাছে নির্দেশ দিলাম যে, তুমি তাকে দুধ পান করাও।’ (সুরা কাসাস: ৭)
বুকের দুধ স্বীয় সন্তানকে পান করিয়ে মাতা পরকালীন জীবনকে সমৃদ্ধিশালী করতে পারেন। মায়ের জন্য রয়েছে প্রতি ফোঁটা দুধের বিনিময়ে উপযুক্ত সওয়াব। সুতরাং বলা যায়, সন্তানকে দুগ্ধদানের নির্দেশ প্রদান করে ইসলাম একদিকে যেমন নবজাতক সন্তানের অধিকার সংরক্ষণ করেছে, অপরদিকে মায়ের পরকালীন জীবনকে সহজতর করার ব্যবস্থা করেছে।
লেখক: আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক
ইসলামে বিয়ে একদিকে যেমন জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর মাধ্যম, অন্যদিকে আত্মার প্রশান্তি, ভালোবাসা ও প্রণয়ের উৎস। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে জীবনসঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন—যাতে তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মাঝে...
৭ ঘণ্টা আগেমানবজীবনে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের আকাঙ্ক্ষা সবারই থাকে। কিন্তু কোন গুণাবলি একজন মানুষকে প্রকৃত শ্রেষ্ঠত্ব দান করে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে আমরা হাদিসে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেখতে পাই।
১৫ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআন মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ। এটি শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পথনির্দেশিকা। এই কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে একজন মুমিনের জীবনে আসে অফুরন্ত প্রশান্তি ও আত্মিক তৃপ্তি।
২ দিন আগেইসলামি ইতিহাসে জুমার দিনকে বলা হয় ‘সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন’। হাদিসে এসেছে, এ দিনেই হজরত আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছিলেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছিলেন এবং এ দিনেই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আবার কিয়ামতও সংঘটিত হবে জুমার দিনেই। তাই এ দিনের মাহাত্ম্য কেবল ইবাদতকেন্দ্রিক নয়, বরং মানবজাতির সৃষ্টিজীবনের এক...
৩ দিন আগে