আবদুল আযীয কাসেমি
দুটি হাদিস দিয়ে লেখাটি শুরু করা যাক। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি হাসান-হুসাইনকে ভালোবাসি। যারা তাদের ভালোবাসে, তারা আমাকেও ভালোবাসে। যারা তাদের ঘৃণা করে, তারা আমাকেও ঘৃণা করে।’ (মুসনাদে বাযযার)
অন্য হাদিসে এসেছে, একবার মহানবী (সা.) স্ত্রীদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমরা হুসাইনকে কাঁদিও না।’ একদিন জিবরাইল (আ.) নবীজির কাছে এলেন। সেদিন তিনি উম্মে সালামা (রা)-এর ঘরে ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেন, ‘দরজার দিকে খেয়াল রেখো। কাউকে ঢুকতে দিয়ো না। হুসাইন কাঁদতে কাঁদতে এলেন। উম্মে সালামা (রা.) তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। হুসাইন সোজা গিয়ে নবীজির কোলে বসলেন। হজরত জিবরাইল (আ.) তাঁকে দেখে বললেন, ‘আপনার উম্মত তাকে হত্যা করবে।’ নবী (সা.) বললেন, ‘এরা মুসলমান হয়েও আমার প্রিয় হুসাইনকে হত্যা করতে পারবে?’ বললেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তিনি নবীজিকে কারবালার মাটি দেখালেন। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ শামসুদ্দিন যাহাবি এ বর্ণনাটিকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা: ৩ / ২৮৭)
হিজরি ৬১ সনের মহররম মাসে মুআবিয়া (রা.)-এর মৃত্যুর পর মুসলিম বিশ্বের খলিফা কে হবেন—এ নিয়ে মতানৈক্য শুরু হয়। মুআবিয়া (রা) জীবদ্দশায় পুত্র এজিদকে মনোনয়ন দেন। তাঁর পক্ষে অনেক সাহাবির থেকে বাইয়াত তথা আনুগত্যের শপথ নেন। তখনো কিছু সাহাবায়ে কেরাম তাঁর আনুগত্য মেনে নেননি। যোগ্যতার বিচারেও এজিদ খলিফা হওয়ার অধিকতর উপযুক্ত ছিলেন না। ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। ইরাকের কুফাবাসীর অব্যাহত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হুসাইন (রা.) কুফা অভিমুখে যাত্রা করেন। একপর্যায়ে কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতার সংবাদ পেয়ে মর্মাহত হন। হজরতের চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকেও শহীদ করে দেওয়া হয়।
অবশেষে কারবালা প্রান্তরে ক্ষমতালোভী এজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের বাহিনীর মুখোমুখি হন আহলে বাইতের ৭০ জনের নুরানি কাফেলা। যেখানে নারী-শিশুসহ সবাই ছিলেন। বর্বর এজিদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বীর বিক্রমে লড়াই করতে থাকেন হুসাইন (রা.)। একপর্যায়ে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত-শ্রান্ত-পিপাসার্ত হয়ে পড়েন। উম্মাহর কলঙ্ক শিমার ইবনে জিলজাওশানের নির্দেশে সিনান ইবনে আনাস নামের এক কুলাঙ্গার নির্দয়ভাবে হজরত হুসাইনকে হত্যা করে। সত্যের পথে অবিচল-অনমনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রিয়নবীর প্রিয় নাতি শাহাদাতের পথ বেছে নেন। তবুও অন্যায়ের কাছে এক মুহূর্তের জন্য মাথা নত করেননি। জালিম দুর্ভাগা ইবনে জিয়াদ হজরতের লাশেরও অবমাননা করে।
কারবালার ঘটনা থেকে আমাদের জন্য রয়েছে বিপুল শিক্ষার উপাদান। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর উন্নত আদর্শ হয়ে বেঁচে থাকবেন হজরত হুসাইন (রা.)। মজলুম জনগোষ্ঠীকে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য প্রাণিত করে তাঁর ত্যাগের ঘটনা। ক্ষমতার দর্প দেখিয়ে জালিম যত অগ্রসরই হোক না কেন, এক সময় তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
আজ মুসলিম বিশ্বের প্রত্যেক নবী প্রেমিক মানুষের বুকে সোনার অক্ষরে খোদিত আছে হজরত হুসাইন ও তাঁর সংগ্রামী সঙ্গীদের নাম। পক্ষান্তরে এজিদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের নাম কতই-না ঘৃণাভরে স্মরণ করা হয়! সত্যের জয় সুনিশ্চিত আর মিথ্যার পতন অনিবার্য।
লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক
দুটি হাদিস দিয়ে লেখাটি শুরু করা যাক। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি হাসান-হুসাইনকে ভালোবাসি। যারা তাদের ভালোবাসে, তারা আমাকেও ভালোবাসে। যারা তাদের ঘৃণা করে, তারা আমাকেও ঘৃণা করে।’ (মুসনাদে বাযযার)
অন্য হাদিসে এসেছে, একবার মহানবী (সা.) স্ত্রীদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমরা হুসাইনকে কাঁদিও না।’ একদিন জিবরাইল (আ.) নবীজির কাছে এলেন। সেদিন তিনি উম্মে সালামা (রা)-এর ঘরে ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেন, ‘দরজার দিকে খেয়াল রেখো। কাউকে ঢুকতে দিয়ো না। হুসাইন কাঁদতে কাঁদতে এলেন। উম্মে সালামা (রা.) তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। হুসাইন সোজা গিয়ে নবীজির কোলে বসলেন। হজরত জিবরাইল (আ.) তাঁকে দেখে বললেন, ‘আপনার উম্মত তাকে হত্যা করবে।’ নবী (সা.) বললেন, ‘এরা মুসলমান হয়েও আমার প্রিয় হুসাইনকে হত্যা করতে পারবে?’ বললেন, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তিনি নবীজিকে কারবালার মাটি দেখালেন। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেজ শামসুদ্দিন যাহাবি এ বর্ণনাটিকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা: ৩ / ২৮৭)
হিজরি ৬১ সনের মহররম মাসে মুআবিয়া (রা.)-এর মৃত্যুর পর মুসলিম বিশ্বের খলিফা কে হবেন—এ নিয়ে মতানৈক্য শুরু হয়। মুআবিয়া (রা) জীবদ্দশায় পুত্র এজিদকে মনোনয়ন দেন। তাঁর পক্ষে অনেক সাহাবির থেকে বাইয়াত তথা আনুগত্যের শপথ নেন। তখনো কিছু সাহাবায়ে কেরাম তাঁর আনুগত্য মেনে নেননি। যোগ্যতার বিচারেও এজিদ খলিফা হওয়ার অধিকতর উপযুক্ত ছিলেন না। ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। ইরাকের কুফাবাসীর অব্যাহত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হুসাইন (রা.) কুফা অভিমুখে যাত্রা করেন। একপর্যায়ে কুফাবাসীর বিশ্বাসঘাতকতার সংবাদ পেয়ে মর্মাহত হন। হজরতের চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকেও শহীদ করে দেওয়া হয়।
অবশেষে কারবালা প্রান্তরে ক্ষমতালোভী এজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের বাহিনীর মুখোমুখি হন আহলে বাইতের ৭০ জনের নুরানি কাফেলা। যেখানে নারী-শিশুসহ সবাই ছিলেন। বর্বর এজিদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বীর বিক্রমে লড়াই করতে থাকেন হুসাইন (রা.)। একপর্যায়ে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত-শ্রান্ত-পিপাসার্ত হয়ে পড়েন। উম্মাহর কলঙ্ক শিমার ইবনে জিলজাওশানের নির্দেশে সিনান ইবনে আনাস নামের এক কুলাঙ্গার নির্দয়ভাবে হজরত হুসাইনকে হত্যা করে। সত্যের পথে অবিচল-অনমনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী প্রিয়নবীর প্রিয় নাতি শাহাদাতের পথ বেছে নেন। তবুও অন্যায়ের কাছে এক মুহূর্তের জন্য মাথা নত করেননি। জালিম দুর্ভাগা ইবনে জিয়াদ হজরতের লাশেরও অবমাননা করে।
কারবালার ঘটনা থেকে আমাদের জন্য রয়েছে বিপুল শিক্ষার উপাদান। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর উন্নত আদর্শ হয়ে বেঁচে থাকবেন হজরত হুসাইন (রা.)। মজলুম জনগোষ্ঠীকে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য প্রাণিত করে তাঁর ত্যাগের ঘটনা। ক্ষমতার দর্প দেখিয়ে জালিম যত অগ্রসরই হোক না কেন, এক সময় তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়।
আজ মুসলিম বিশ্বের প্রত্যেক নবী প্রেমিক মানুষের বুকে সোনার অক্ষরে খোদিত আছে হজরত হুসাইন ও তাঁর সংগ্রামী সঙ্গীদের নাম। পক্ষান্তরে এজিদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের নাম কতই-না ঘৃণাভরে স্মরণ করা হয়! সত্যের জয় সুনিশ্চিত আর মিথ্যার পতন অনিবার্য।
লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক
ইসলামে দান-সদকা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর অসংখ্য ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সদকা কেবল দরিদ্রের প্রয়োজনই মেটায় না, বরং এটি বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে।
৪ ঘণ্টা আগেআত্মীয়তার বন্ধন আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। পারস্পরিক সম্পর্কের এ বন্ধন না থাকলে হয়তো পৃথিবীর রূপ ভিন্ন থাকত। মা তার সন্তানের প্রতি, ভাই তার ভাইয়ের প্রতি, স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার যে রূপ আমরা দেখতে পাই—তা হয়তো থাকত না। কোরআন ও হাদিসে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেজুলুম আরবি শব্দ। জুলুমের অর্থ ব্যাপক এবং অনেক বিস্তৃত। সাধারণত জুলুম অর্থ নির্যাতন, নিপীড়ন। শরিয়তের পরিভাষায় জুলুম বলা হয়—কোনো উপযুক্ত জিনিসকে উপযুক্ত স্থানে না রেখে অনুপযুক্ত স্থানে রাখা। যে জুলুম করে তাকে জালিম বলা হয়। মানুষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে একজন অন্যজনের ওপর জুলুম করে।
১৯ ঘণ্টা আগেমা-বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তাঁদের আদর-সোহাগে আমাদের জীবনের ভিত্তি রচিত হয়। তাঁদের ত্যাগ ও পরিশ্রমে গড়ে ওঠে সুন্দর ভবিষ্যৎ। তাঁদের ভরসায় আমরা শক্তি পাই এবং তাঁদের দোয়ায় জীবন সার্থক হয়। ইসলাম তাই মা-বাবাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে এবং তাঁদের প্রতি সদাচরণকে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের
১ দিন আগে