ইসলাম ডেস্ক
রিজিক হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য নির্ধারিত সব ধরনের অনুগ্রহ ও উপকরণ, যা জীবনের কল্যাণ সাধন করে। এটি শুধু অর্থ-সম্পদেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বিস্তৃতি অনেক গভীর। শস্য, ফল, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি সুস্থ দেহ, উত্তম স্ত্রী, নেক সন্তান ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ—সবকিছুই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি প্রাণীর জন্য নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন। কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। এ সত্য কোরআন ও হাদিসে বারবার উল্লিখিত হয়েছে।
নির্ধারিত রিজিক বান্দার কাছে পৌঁছাবেই
আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম হিকমত ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী প্রতিটি বান্দার রিজিক আগে থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। তিনি কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘পৃথিবীতে যত জীবজন্তু রয়েছে, তাদের রিজিক আল্লাহর ওপরই ন্যস্ত।’ (সুরা হুদ: ৬)
এক হাদিসে রাসুল (সা.) ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বলেন, ‘জেনে রেখো, সমগ্র বিশ্ব যদি একত্র হয়ে তোমাকে কিছু দিতে চায়, তাহলে তারা কেবল সেটুকুই দিতে পারবে, যা আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য নির্ধারণ করেছেন। এমনিভাবে, সমগ্র বিশ্ব যদি একত্র হয়ে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায়, তারা কেবল সেটুকুই পারবে, যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন।’ (জামে তিরমিজি: ২৫১৬)
অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো প্রাণ মৃত্যুবরণ করবে না, যতক্ষণ না সে তার নির্ধারিত রিজিক ও সময় পূর্ণ করে নেয়। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং হালাল পথে রিজিক অনুসন্ধান করো।’ (মুসতাদরাকে হাকিম: ২১৪৬)
এ হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, বান্দার জন্য আল্লাহ যে রিজিক নির্ধারণ করেছেন, তা তার কাছেই পৌঁছাবে। মানুষ যত চেষ্টা করুক বা অন্য কেউ যত কৌশল অবলম্বন করুক, তার নির্ধারিত রিজিক কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বান্দার কর্তব্য শুধু হালাল পথে চেষ্টা করা, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা এবং সন্তুষ্টচিত্তে তাঁর লিখে দেওয়া তাকদির মেনে নেওয়া।
রিজিকের প্রকারভেদ
অনেকে রিজিককে শুধু অর্থ-সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করে, যা একটি ভুল ধারণা। মানুষের যা কিছু কল্যাণ ও উপকারে আসে, তার সবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাঁর বান্দার জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য যে অনুগ্রহসমূহ দান করেন, সেগুলোই নানা প্রকারের রিজিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
ইমানের রিজিক: যে ব্যক্তি তার রবের প্রতি ইমান আনে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করে, সে প্রকৃত অর্থে মহান রিজিকের অধিকারী। এ রিজিক মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করায় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে পরম সুখ দান করে।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞার রিজিক: জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান দান। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়েছে, তাকে বাস্তবিক অর্থেই বিপুল কল্যাণ দান করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যার জন্য কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের ফিকহ (বিশুদ্ধ ও গভীর বুঝ) দান করেন।’
স্বাস্থ্য ও সুস্থতার রিজিক: ইমানের পর দুনিয়ায় এমন কোনো নিয়ামত নেই, যা সুস্থতা ও নিরাপদ দেহের সমকক্ষ হতে পারে। একজন সুস্থ মানুষ যেন পুরো দুনিয়ার মালিক।
ধন-সম্পদের রিজিক: এটি মানুষের কাছে সবচেয়ে পরিচিত রিজিক, যা দিয়ে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে এবং নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন মেটায়।
পুণ্যবতী স্ত্রীর রিজিক: একজন নেককার স্ত্রী আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক বিশেষ রিজিক। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুনিয়াতে উপকার অর্জনের অনেক সামগ্রী রয়েছে। তবে তার মধ্য থেকে পুণ্যবতী স্ত্রীর তুলনায় উত্তম আর কিছু নেই।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৩৫৩৫)
নেককার সন্তানের রিজিক: সৎ ও ধার্মিক সন্তান দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রিজিক। তারা বাবা-মায়ের চোখের শীতলতা এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সুখের উৎস হয়ে ওঠে।
মানুষের ভালোবাসা লাভের রিজিক: মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র হওয়া আল্লাহর এক মহান রিজিক। এটি কেবল বাহ্যিক জনপ্রিয়তা নয়, বরং সত্যিকারের সততা ও ইমানের প্রতিফলন।
রিজিক নির্ধারিত, অন্বেষণ অপরিহার্য
রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত—এটি একটি অনুপম সত্য, যা আমাদের বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমরা বসে থাকব। বরং নির্ধারিত রিজিক অর্জনের জন্য অন্বেষণ অপরিহার্য। মানুষ এ বিষয়ে দুটি ভুল ধারণায় বিভ্রান্ত হয়—
উদাসীনতাকে তাওয়াক্কুল মনে করা: কিছু মানুষ মনে করে, যেহেতু রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, তাই শুধু বসে থাকলেই চলবে। তারা রাসুল (সা.)-এর হাদিসকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর প্রকৃতভাবে তাওয়াক্কুল (নির্ভর) করো, তাহলে তোমরা রিজিক পাবে। যেভাবে পাখিরা রিজিক পায়। সকালবেলা খালি পেটে পাখিরা বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে তারা নীড়ে ফিরে আসে।’ তারা বুঝতে পারে না যে, হাদিসটি তাদের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দেয়। পাখিরা কখনো বসে থাকে না; বরং তারা প্রতিদিন সকালে খাদ্য সংগ্রহের জন্য বের হয়ে যায়। হাদিসের মূল শিক্ষা হলো, পরিশ্রম ও তাওয়াক্কুলকে একসঙ্গে করতে হয়।
শুধু বস্তুর ওপর নির্ভরশীলতা: অন্যদিকে যারা শুধু বস্তু বা কারণের ওপর নির্ভর করে, তারা ভুলে যায় যে প্রতিটি কারণের পেছনে একজন নিয়ামক আছেন, আর তিনি হলেন আল্লাহ তাআলা। একই ওষুধ ও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়েও একজন সুস্থ হয়ে ফিরে আসে, আর অন্যজনকে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে কবরে রাখা হয়। এটাই প্রমাণ করে যে, ফলাফল শুধু কারণের ওপর নির্ভরশীল নয়।
প্রকৃত তাওয়াক্কুল হলো ইসলামের নির্দেশিত পথ। অর্থাৎ, জ্ঞান ও বিচক্ষণতা অনুযায়ী পরিশ্রম করা, কিন্তু ফলাফলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রক হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেওয়া।
রিজিক আহরণের উপায়
রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হলেও কিছু কার্যকর উপায় অনুসরণ করলে আল্লাহ তাআলা রিজিককে প্রসারিত করতে পারেন।
পাপ ও অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা: পাপ ও অবাধ্যতা হলো রিজিককে বাধাগ্রস্ত করার প্রধান কারণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় মানুষ তার অপরাধের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০২২)। যদি কোনো ব্যক্তি পাপাচারে লিপ্ত থাকার পরও তার রিজিকে সংকীর্ণতা না আসে, তাহলে বুঝতে হবে, সে অচিরেই আল্লাহর কঠিন পাকড়াওয়ে আপতিত হবে।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা: আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা রিজিককে বাধাগ্রস্ত করে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রসারিত হোক ও আয়ু দীর্ঘ হোক, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১৩/৪৬৫)
দান-সদকা করা: সদকা হলো রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উপায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সদকাকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা আল-বাকারা: ২৭৬)
রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা কাম্য নয়
মানুষের যাপিত জীবনে রিজিক একটি অপরিহার্য উপাদান। খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা—সবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু একটি সত্য সর্বদা মনে রাখা দরকার, রিজিক মানুষের হাতে নয়, বরং এটি একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন, ‘তোমাদের রিজিক আসমানে রয়েছে এবং যা কিছু তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুত, সেটিও।’ অর্থাৎ, রিজিক ইতিমধ্যে ঠিক করা রয়েছে, সময়মতো তা পৌঁছাবে।
রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। দুশ্চিন্তায় ভোগার পরিবর্তে একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা, হালাল পথে পরিশ্রম করা ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক, জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।
রিজিক হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য নির্ধারিত সব ধরনের অনুগ্রহ ও উপকরণ, যা জীবনের কল্যাণ সাধন করে। এটি শুধু অর্থ-সম্পদেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বিস্তৃতি অনেক গভীর। শস্য, ফল, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি সুস্থ দেহ, উত্তম স্ত্রী, নেক সন্তান ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ—সবকিছুই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি প্রাণীর জন্য নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন। কোনো প্রাণীই তার নির্ধারিত রিজিক পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। এ সত্য কোরআন ও হাদিসে বারবার উল্লিখিত হয়েছে।
নির্ধারিত রিজিক বান্দার কাছে পৌঁছাবেই
আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম হিকমত ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী প্রতিটি বান্দার রিজিক আগে থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। তিনি কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘পৃথিবীতে যত জীবজন্তু রয়েছে, তাদের রিজিক আল্লাহর ওপরই ন্যস্ত।’ (সুরা হুদ: ৬)
এক হাদিসে রাসুল (সা.) ইবনে আব্বাস (রা.)-কে বলেন, ‘জেনে রেখো, সমগ্র বিশ্ব যদি একত্র হয়ে তোমাকে কিছু দিতে চায়, তাহলে তারা কেবল সেটুকুই দিতে পারবে, যা আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য নির্ধারণ করেছেন। এমনিভাবে, সমগ্র বিশ্ব যদি একত্র হয়ে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায়, তারা কেবল সেটুকুই পারবে, যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন।’ (জামে তিরমিজি: ২৫১৬)
অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো প্রাণ মৃত্যুবরণ করবে না, যতক্ষণ না সে তার নির্ধারিত রিজিক ও সময় পূর্ণ করে নেয়। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং হালাল পথে রিজিক অনুসন্ধান করো।’ (মুসতাদরাকে হাকিম: ২১৪৬)
এ হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, বান্দার জন্য আল্লাহ যে রিজিক নির্ধারণ করেছেন, তা তার কাছেই পৌঁছাবে। মানুষ যত চেষ্টা করুক বা অন্য কেউ যত কৌশল অবলম্বন করুক, তার নির্ধারিত রিজিক কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বান্দার কর্তব্য শুধু হালাল পথে চেষ্টা করা, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা এবং সন্তুষ্টচিত্তে তাঁর লিখে দেওয়া তাকদির মেনে নেওয়া।
রিজিকের প্রকারভেদ
অনেকে রিজিককে শুধু অর্থ-সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ মনে করে, যা একটি ভুল ধারণা। মানুষের যা কিছু কল্যাণ ও উপকারে আসে, তার সবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাঁর বান্দার জীবনযাত্রা সহজ করার জন্য যে অনুগ্রহসমূহ দান করেন, সেগুলোই নানা প্রকারের রিজিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
ইমানের রিজিক: যে ব্যক্তি তার রবের প্রতি ইমান আনে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করে, সে প্রকৃত অর্থে মহান রিজিকের অধিকারী। এ রিজিক মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করায় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে পরম সুখ দান করে।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞার রিজিক: জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান দান। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয়েছে, তাকে বাস্তবিক অর্থেই বিপুল কল্যাণ দান করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যার জন্য কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের ফিকহ (বিশুদ্ধ ও গভীর বুঝ) দান করেন।’
স্বাস্থ্য ও সুস্থতার রিজিক: ইমানের পর দুনিয়ায় এমন কোনো নিয়ামত নেই, যা সুস্থতা ও নিরাপদ দেহের সমকক্ষ হতে পারে। একজন সুস্থ মানুষ যেন পুরো দুনিয়ার মালিক।
ধন-সম্পদের রিজিক: এটি মানুষের কাছে সবচেয়ে পরিচিত রিজিক, যা দিয়ে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে এবং নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন মেটায়।
পুণ্যবতী স্ত্রীর রিজিক: একজন নেককার স্ত্রী আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এক বিশেষ রিজিক। এ বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুনিয়াতে উপকার অর্জনের অনেক সামগ্রী রয়েছে। তবে তার মধ্য থেকে পুণ্যবতী স্ত্রীর তুলনায় উত্তম আর কিছু নেই।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৩৫৩৫)
নেককার সন্তানের রিজিক: সৎ ও ধার্মিক সন্তান দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রিজিক। তারা বাবা-মায়ের চোখের শীতলতা এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সুখের উৎস হয়ে ওঠে।
মানুষের ভালোবাসা লাভের রিজিক: মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র হওয়া আল্লাহর এক মহান রিজিক। এটি কেবল বাহ্যিক জনপ্রিয়তা নয়, বরং সত্যিকারের সততা ও ইমানের প্রতিফলন।
রিজিক নির্ধারিত, অন্বেষণ অপরিহার্য
রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত—এটি একটি অনুপম সত্য, যা আমাদের বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আমরা বসে থাকব। বরং নির্ধারিত রিজিক অর্জনের জন্য অন্বেষণ অপরিহার্য। মানুষ এ বিষয়ে দুটি ভুল ধারণায় বিভ্রান্ত হয়—
উদাসীনতাকে তাওয়াক্কুল মনে করা: কিছু মানুষ মনে করে, যেহেতু রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, তাই শুধু বসে থাকলেই চলবে। তারা রাসুল (সা.)-এর হাদিসকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর ওপর প্রকৃতভাবে তাওয়াক্কুল (নির্ভর) করো, তাহলে তোমরা রিজিক পাবে। যেভাবে পাখিরা রিজিক পায়। সকালবেলা খালি পেটে পাখিরা বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে তারা নীড়ে ফিরে আসে।’ তারা বুঝতে পারে না যে, হাদিসটি তাদের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দেয়। পাখিরা কখনো বসে থাকে না; বরং তারা প্রতিদিন সকালে খাদ্য সংগ্রহের জন্য বের হয়ে যায়। হাদিসের মূল শিক্ষা হলো, পরিশ্রম ও তাওয়াক্কুলকে একসঙ্গে করতে হয়।
শুধু বস্তুর ওপর নির্ভরশীলতা: অন্যদিকে যারা শুধু বস্তু বা কারণের ওপর নির্ভর করে, তারা ভুলে যায় যে প্রতিটি কারণের পেছনে একজন নিয়ামক আছেন, আর তিনি হলেন আল্লাহ তাআলা। একই ওষুধ ও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়েও একজন সুস্থ হয়ে ফিরে আসে, আর অন্যজনকে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে কবরে রাখা হয়। এটাই প্রমাণ করে যে, ফলাফল শুধু কারণের ওপর নির্ভরশীল নয়।
প্রকৃত তাওয়াক্কুল হলো ইসলামের নির্দেশিত পথ। অর্থাৎ, জ্ঞান ও বিচক্ষণতা অনুযায়ী পরিশ্রম করা, কিন্তু ফলাফলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রক হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেওয়া।
রিজিক আহরণের উপায়
রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হলেও কিছু কার্যকর উপায় অনুসরণ করলে আল্লাহ তাআলা রিজিককে প্রসারিত করতে পারেন।
পাপ ও অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা: পাপ ও অবাধ্যতা হলো রিজিককে বাধাগ্রস্ত করার প্রধান কারণ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় মানুষ তার অপরাধের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০২২)। যদি কোনো ব্যক্তি পাপাচারে লিপ্ত থাকার পরও তার রিজিকে সংকীর্ণতা না আসে, তাহলে বুঝতে হবে, সে অচিরেই আল্লাহর কঠিন পাকড়াওয়ে আপতিত হবে।
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা: আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা রিজিককে বাধাগ্রস্ত করে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রসারিত হোক ও আয়ু দীর্ঘ হোক, সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১৩/৪৬৫)
দান-সদকা করা: সদকা হলো রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উপায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সদকাকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা আল-বাকারা: ২৭৬)
রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা কাম্য নয়
মানুষের যাপিত জীবনে রিজিক একটি অপরিহার্য উপাদান। খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা—সবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু একটি সত্য সর্বদা মনে রাখা দরকার, রিজিক মানুষের হাতে নয়, বরং এটি একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন, ‘তোমাদের রিজিক আসমানে রয়েছে এবং যা কিছু তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুত, সেটিও।’ অর্থাৎ, রিজিক ইতিমধ্যে ঠিক করা রয়েছে, সময়মতো তা পৌঁছাবে।
রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। দুশ্চিন্তায় ভোগার পরিবর্তে একজন মুসলিমের উচিত আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা, হালাল পথে পরিশ্রম করা ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক, জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।
বন্য প্রাণী হত্যা, বন উজাড় বা পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা মুসলমানের জন্য একটি ইমানি দায়িত্ব। প্রকৃতির প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব এবং সচেতন সংরক্ষণ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম নয়; বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণ নিশ্চিত করার পথ।
৬ মিনিট আগেঅধৈর্য মানুষকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়। মানবজীবনে ধৈর্যের চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু নেই। ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা হলো, যারা ধৈর্যশীল তাদের সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সঙ্গ থাকে।
১ ঘণ্টা আগেনবুওয়াতপ্রাপ্তির আগে থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে কিছু অলৌকিক নিদর্শন প্রকাশ পেতে শুরু করে, যার মধ্যে সবচেয়ে সুস্পষ্ট ছিল সত্য স্বপ্ন। এই স্বপ্নগুলো এতটাই বাস্তব ছিল যে তা যেন ভোরের আলোর মতোই পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পেত।
১০ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৭ ঘণ্টা আগে