Ajker Patrika

কোরআনের প্রথম ওহি যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল

তাসনিফ আবীদ
কোরআনের প্রথম ওহি যেভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল

নবুওয়াতপ্রাপ্তির আগে থেকেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে কিছু অলৌকিক নিদর্শন প্রকাশ পেতে শুরু করে, যার মধ্যে সবচেয়ে সুস্পষ্ট ছিল সত্য স্বপ্ন। এই স্বপ্নগুলো এতটাই বাস্তব ছিল যে তা যেন ভোরের আলোর মতোই পরিষ্কারভাবে প্রকাশ পেত। ছয় মাস ধরে এই অবস্থা চলার পর তাঁর নির্জনতা প্রীতি বেড়ে যায়। তিনি মক্কার অদূরে হেরা গুহায় ধ্যান ও ইবাদতে সময় কাটাতে শুরু করেন। সেখানেই তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে।

৪০ বছর বয়সে, পবিত্র রমজান মাসের ২১ তারিখ রাতে, ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) মহানবীর (সা.) কাছে এলেন। তিনি মুহাম্মদকে (সা.) বললেন, ‘পড়ুন’। জবাবে নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ জিবরাইল (আ.) তাঁকে সজোরে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং আবারও বললেন, ‘পড়ুন’। জবাবে নবীজি (সা.) আবারও বললেন, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ তৃতীয়বারের মতো বুকে চাপ দিয়ে জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘পড়ুন, আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ুন, আপনার প্রতিপালক পরম সম্মানিতের নামে, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’ (সুরা আলাক: ১-৫)

এই পাঁচটি আয়াত ছিল মানবজাতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই ঐশী বার্তা নিয়ে নবীজি (সা.) ভীত ও কম্পিত হৃদয়ে ঘরে ফিরলেন। স্ত্রী খাদিজা (রা.) তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ আপনাকে কখনো অসম্মান করবেন না। আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, দরিদ্রদের সাহায্য করেন, অতিথিদের সম্মান করেন এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।’

খাদিজা (রা.) এরপর নবীজিকে (সা.) তাঁর চাচাতো ভাই ধর্মযাজক ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের কাছে নিয়ে গেলেন। সবকিছু শুনে ওয়ারাকা বুঝতে পারলেন যে তিনি সেই ফেরেশতাকে দেখেছেন, যিনি হজরত মুসার (আ.) কাছে এসেছিলেন।

এভাবেই পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াতগুলোর মাধ্যমে নবুওয়াতের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এই ঘটনাটি শুধু ইসলামের ইতিহাসেই নয়, বরং সমগ্র মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত