Ajker Patrika

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় ওয়াকআউট করল কোন কোন দেশ, বাংলাদেশও কি ছিল

চলমান গাজা যুদ্ধের তীব্রতা এবং মানবিক বিপর্যয়ের কারণে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে ইসরায়েলের বিচ্ছিন্নতা আরও একবার প্রকাশ্যে এল। গতকাল শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভাষণ শুরু করতেই হল থেকে বেরিয়ে যান সেখানে উপস্থিত বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও কূটনীতিক।

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ২৫
প্রায় ফাঁকা কক্ষে বক্তৃতা করেন নেতানিয়াহু। ছবি: এক্স
প্রায় ফাঁকা কক্ষে বক্তৃতা করেন নেতানিয়াহু। ছবি: এক্স

চলমান গাজা যুদ্ধের তীব্রতা এবং মানবিক বিপর্যয়ের কারণে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে ইসরায়েলের বিচ্ছিন্নতা আরও একবার প্রকাশ্যে এল। গতকাল শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভাষণ শুরু করতেই হল থেকে বেরিয়ে যান সেখানে উপস্থিত বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও কূটনীতিক।

নজিরবিহীন কূটনৈতিক প্রতিবাদ

ঘটনাটি ছিল নজিরবিহীন কূটনৈতিক প্রতিবাদ। দেখা গেছে, জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে উপস্থিত প্রতিনিধিদের একটি বিশাল অংশ, নেতানিয়াহুর বক্তব্য চলাকালীন ওয়াকআউট করেন। ওয়াকআউটে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে ছিলেন প্রায় সমস্ত আরব ও মুসলিম দেশের প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি আফ্রিকান এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় দেশের কূটনীতিকেরাও তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ হিসেবে হল ত্যাগ করেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ৫০টির বেশি দেশের শতাধিক কূটনীতিক ওয়াকআউট করেছেন। যারা চেয়ারে বসে ছিলেন তাঁদেরও অনেককে হাততালি দিয়ে উদ্‌যাপন করতে দেখা যায়। একাধিক গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের জন্য সংরক্ষিত চেয়ারগুলোও ফাঁকা। তবে আজকের পত্রিকা এটি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।

বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে বাংলাদেশের জন্য সংরক্ষিত চেয়ার ফাঁকা দেখা যায়। ছবি: এক্স
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে বাংলাদেশের জন্য সংরক্ষিত চেয়ার ফাঁকা দেখা যায়। ছবি: এক্স

এ ছাড়া এক্স প্ল্যাটফর্মে একটি তালিকা শেয়ার করা হচ্ছে। যদিও এটি কীভাবে যাচাই করা হয়েছে সেটি পরিষ্কার নয়। আর এ ব্যাপারে কোনো দেশই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এ ঘটনা দ্ব্যর্থহীনভাবে ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে কতটা কোণঠাসা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ছাড়া, আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেতানিয়াহুর সমর্থক প্রায় নেই বললেই চলে।

উল্লেখ্য, নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানাও আছে। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এই অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। আদালতের এই পরোয়ানা আন্তর্জাতিক মহলে নেতানিয়াহুর অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।

নেতানিয়াহুর ভাষণ নিয়ে বিতর্ক

বক্তৃতায় নেতানিয়াহু দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন, ইসরায়েল গাজায় ‘কাজ শেষ করবে’ এবং যত দ্রুত সম্ভব তা করার প্রতিশ্রুতি দেন। তাঁর ভাষণের আগে ও চলাকালীন গৃহীত পদক্ষেপগুলোও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে:

১. ভাষণের আগে তিনি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন গাজা উপত্যকার চারপাশে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লাউডস্পিকার বসিয়ে ফিলিস্তিনিদের কাছে তাঁর বক্তব্য সম্প্রচার করার জন্য। এটি গাজাবাসীর প্রতি সরাসরি মানসিক চাপ সৃষ্টির একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

২. নেতানিয়াহু আরও দাবি করেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা গাজার সাধারণ জনগণের ব্যক্তিগত ফোন ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাঁর ভাষণ সরাসরি লাইভস্ট্রিমিং করেছে। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নজরদারি আইন ও ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

৩. ভাষণের মূল অংশে নেতানিয়াহু হামাস নেতাদের অবিলম্বে আত্মসমর্পণের, অস্ত্র সমর্পণ করার এবং জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান।

এক্স-এ একটি তালিকা শেয়ার করা হচ্ছে। ছবি: এক্স
এক্স-এ একটি তালিকা শেয়ার করা হচ্ছে। ছবি: এক্স

ফিলিস্তিনের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থন বৃদ্ধি

জাতিসংঘের এই অধিবেশন সপ্তাহজুড়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে জাতিসংঘে সরাসরি ভাষণ দেওয়ার জন্য ভিসা দিতে অস্বীকার করলেও সাধারণ পরিষদ বিপুল ভোটে একটি প্রস্তাব পাস করে তাঁকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখার অনুমতি দেয়। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি সুস্পষ্ট বার্তা যে তারা ফিলিস্তিনি নেতৃত্বকে উপেক্ষা করতে প্রস্তুত নন।

বৃহস্পতিবারের ভাষণে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজায় ফিলিস্তিনিদের চরম দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন এবং জোর দিয়ে বলেন, এত কষ্ট সহ্য করা সত্ত্বেও তাঁরা কখনোই নিজেদের ভূমি ছাড়বেন না। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরুর আগমুহূর্তে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো ১০টি প্রভাবশালী দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ধরনের পশ্চিমা মিত্রদের স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের দাবি এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি আন্তর্জাতিক নৈতিক সমর্থন নতুন মাত্রা দিয়েছে।

সূত্র: অ্যাক্সিওস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত