Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে ইউক্রেনের তরুণী নিহতের ঘটনায় বিতর্ক তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ১৬
ছুরিকাঘাতে নিহত ইরিনা জারুতস্কা। ছবি: সংগৃহীত
ছুরিকাঘাতে নিহত ইরিনা জারুতস্কা। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লটে একটি ট্রেনে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন এক ইউক্রেনীয় শরণার্থী তরুণী। ভয়াবহ এ ঘটনার ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে অপরাধ দমনে ব্যর্থতা নিয়ে।

শার্লটে-মেকলেনবার্গ পুলিশ জানিয়েছে, গত ২২ আগস্ট রাত প্রায় ১০টার দিকে ২৩ বছর বয়সী ইরিনা জারুতস্কাকে ট্রেনে নির্দয়ভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ২০২২ সালে তিনি মা, ভাই ও বোনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরিবার ও বন্ধুরা জানিয়েছে, তিনি দ্রুত নতুন জীবনে মানিয়ে নিয়েছিলেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনে উঠে ইরিনা অভিযুক্ত ব্যক্তির সামনে বসেন। প্রায় সাড়ে চার মিনিট পর অভিযুক্ত ব্যক্তি পকেট থেকে ছুরি বের করে তাঁকে তিনবার আঘাত করেন। পুলিশি নথিতে বলা হয়েছে, আক্রমণের আগে দুজনের মধ্যে বাদানুবাদ তো দূরের কথা, কোনো ধরনের কথাও হয়নি।

অভিযুক্ত ৩৪ বছর বয়সী ডিকার্লোস ব্রাউনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম ডিগ্রির হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি অতীতেও সশস্ত্র ডাকাতি, প্রতারণা ও ভাঙচুরের দায়ে জেল খেটেছেন। তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার অভিযোগও আগে থেকে রয়েছে। আদালত তাঁকে ৬০ দিনের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

শার্লটের মেয়র ভি লাইস তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় নিহত ব্যক্তির নাম না উল্লেখ করে মূলত অভিযুক্ত ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য ও গৃহহীনতার প্রসঙ্গ তোলায় সমালোচনার মুখে পড়েন। পরে সামাজিক মাধ্যমে ইরিনা জারুতস্কার নাম প্রকাশ করে তিনি নিহত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে নগরের নিরাপত্তা নিয়ে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তবে পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি মেয়রের বক্তব্যকে ‘দায় এড়ানো’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন।

ঘটনার পর আলোচনায় উঠে এসেছে সহিংস অপরাধ দমনে ব্যর্থতা ও বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা। হোয়াইট হাউসের নীতিনির্ধারক স্টিফেন মিলারও গণমাধ্যমকে এ হত্যাকাণ্ডে পর্যাপ্ত গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।

যদিও পুলিশ বিভাগ বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে শার্লটেতে সহিংস অপরাধ ২৫ শতাংশ কমেছে। তবে ইরিনার হত্যাকাণ্ড নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়েছে।

ইউক্রেনে প্রতিদিনের বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া ইরিনা শেষপর্যন্ত সেখানেই সহিংসতার শিকার হলেন। তাঁকে স্মরণ করে এক পারিবারিক বন্ধু বলেন, ‘ওর হৃদয় ছিল সোনার মতো। সব সময় সাহায্য করত। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে যে এমন একজন মানুষকে আমরা হারালাম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভালুক ঠেকাতে জাপানে এবার সেনা মোতায়েন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাপানে ভালুক আক্রমণের ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। প্রাণহানিও ঘটছে। পরিস্থিতি প্রশমনে সরকার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবি: এএফপি
জাপানে ভালুক আক্রমণের ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। প্রাণহানিও ঘটছে। পরিস্থিতি প্রশমনে সরকার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবি: এএফপি

জাপানে হঠাৎ বেড়েছে ভালুকের আক্রমণ। দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে সরকার এবার সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে, শিকারি নিয়োগের পরিকল্পনা করছিল দেশটি, যাতে বিপজ্জনক ভালুকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, জাপানের উত্তরাঞ্চলের পার্বত্য প্রদেশ আকিতায় বেড়ে চলা ভালুক হামলার আতঙ্কে সেনা মোতায়েন করেছে দেশটির সরকার। গত সাত মাসে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

অক্টোবরের শেষ দিকে জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে জানানো হয়, তার আগের সাত মাসে অন্তত ১২ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন ভালুকের হামলায়। এরই জেরে গত বুধবার অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়েন করা হয়। কারণ, সম্প্রতি বাদামি ভালুক ও এশীয় কালো ভালুকের আক্রমণ প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। শীতনিদ্রায় যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত খাবারের সন্ধানে থাকা ভালুকগুলো এখন আরও বেপরোয়া। স্কুল, রেলস্টেশন, সুপারমার্কেট এমনকি উষ্ণ প্রস্রবণের পর্যটনকেন্দ্রের কাছেও ভালুকগুলোকে দেখা যাচ্ছে।

ভালুকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আর মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেখানে অভিজ্ঞ শিকারি খুবই কম। সরকার জানায়, বর্তমানে জাপানে ভালুকের সংখ্যা ৫৪ হাজারের বেশি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে, সেনারা ভালুকের দিকে গুলি চালাবে না।

বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও আকিতা প্রশাসনের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সেনারা খাবারসহ বাক্স ফাঁদ বসাবে, স্থানীয় শিকারিদের পরিবহনে সহায়তা করবে এবং মৃত ভালুক সরানোর কাজেও অংশ নেবে। ডেপুটি চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ফুমিতোশি সাতো সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিনই ভালুক আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করছে। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

অভিযান শুরু হয়েছে কাজুনো শহরের বনাঞ্চলে। সম্প্রতি সেখানে একাধিক ভালুক দেখা গেছে ও আহতের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, সাদা হেলমেট, নেট লঞ্চার ও ভালুক প্রতিরোধক স্প্রে হাতে সৈন্যরা একটি বাগানের পাশে ফাঁদ বসিয়েছে। বাগান মালিক তাকাহিরো ইকেদা জানান, তার প্রায় ২০০টি পাকা আপেল খেয়ে ফেলেছে ভালুক। বলেন, ‘মনটাই ভেঙে গেছে।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বলেন, সেনা মোতায়েনের লক্ষ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবন রক্ষা করা। তবে সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব জাতীয় প্রতিরক্ষা, তাই তারা সীমাহীন সহায়তা দিতে পারবে না।

আকিতা প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার। এখানেই মে মাসের পর থেকে ৫০ জনের বেশি মানুষ ভালুকের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, অন্তত ৪ জন মারা গেছেন। বেশির ভাগ হামলাই ঘটেছে আবাসিক এলাকায়। গত সপ্তাহান্তে ইউজাওয়া শহরের এক বয়স্ক নারী মাশরুম তুলতে গিয়ে ভালুকের আক্রমণে নিহত হন। অক্টোবরের শেষ দিকে আকিতা শহরে এক কৃষাণী খেতে কাজ করার সময় ভালুকের হামলায় প্রাণ হারান। মঙ্গলবার একই শহরে এক সংবাদপত্র সরবরাহকারীকে আক্রমণ করে আহত করেছে ভালুক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের গ্রামীণ অঞ্চলে জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ায় ভালুক সমস্যা আরও বেড়েছে। তারা বলেন, ভালুক বিলুপ্তপ্রায় নয়, বরং সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে শিকার কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন।

এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়—লাইসেন্সধারী শিকারি ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিয়োগে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করা হবে। তারা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়া বা মানুষের ওপর আক্রমণ করা ভালুক নিয়ন্ত্রণ করবে। একই দিন জাপান সরকার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ভালুকের আক্রমণের ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব দেয়।

সরকার বলছে, ভালুক এখন জননিরাপত্তার জন্য ‘গুরুতর হুমকি’। তাই পুলিশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ভালুক মারার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমান আইনে সৈন্যরা ভালুককে গুলি করতে পারবে না। তারা শিকারিদের সঙ্গে ফাঁদ পেতে বা মৃত ভালুক সরানোর কাজে সাহায্য করবে। আকিতার গভর্নর কেন্তা সুজুকি বলেন, মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন, তাঁরা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

দেশজুড়ে শিকারির সংখ্যা দ্রুত কমছে। অনেকেই বৃদ্ধ, আর ভালুক শিকার এখন আর জনপ্রিয় নয়। ফলে ভালুকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, আর তারা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ে বিচগাছের ফল কমে গেছে। এতে ক্ষুধার্ত ভালুকগুলো গ্রামে ও শহরে ঢুকে খাবার খুঁজছে। অন্যদিকে গ্রামীণ জনসংখ্যা কমে যাওয়াও এর একটি কারণ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার বন্দুক ব্যবহারের নিয়ম শিথিল করেছে, যাতে মানুষ সহজে আবাসিক এলাকায় ভালুককে গুলি করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্যায় ডুবতে পারে দেশ, থাইল্যান্ডজুড়ে সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্যাংককের সামান্য উত্তরে, পাঠুম থানি প্রদেশের সাম কোক জেলার চাও ফ্রায়া নদী সংলগ্ন ওয়াট সালা ডেং নিউয়া জনপদটি এখন পানিতে থইথই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা নৌকোতেই যাতায়াত করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
ব্যাংককের সামান্য উত্তরে, পাঠুম থানি প্রদেশের সাম কোক জেলার চাও ফ্রায়া নদী সংলগ্ন ওয়াট সালা ডেং নিউয়া জনপদটি এখন পানিতে থইথই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা নৌকোতেই যাতায়াত করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় কালমেগির প্রভাবে থাইল্যান্ডজুড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে থাইল্যান্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবারই সারা দেশের বিভিন্ন অংশে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আসন্ন ঝড় কালমেগির প্রভাবে আজ শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ব্যাংককসহ থাইল্যান্ডের ৬৫টি প্রদেশে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে সতর্কবার্তা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। সতর্কবার্তায় রাজধানী ব্যাংকক ছাড়াও দ্রুত বয়ে চলা চাও ফ্রায়া নদীর তীরবর্তী মধ্যাঞ্চলের ১০টি প্রদেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন বিভাগ (ডিডিপিএম) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, চাই নাট প্রদেশের চাও ফ্রায়া ব্যারেজের উজানে নদী দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার ৫০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এ পরিস্থিতি সামলাতে রয়্যাল ইরিগেশন ডিপার্টমেন্ট ব্যারেজের পানি নিঃসরণের হার ২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৭০০ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ডে করেছে। তুলনামূলকভাবে, ২০১১ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় চাও ফ্রায়া নদীতে প্রবাহের হার ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার ৭০৩ ঘনমিটার।

ফলে ব্যারেজের ভাটিতে অবস্থিত নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর পানি ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বাঁধ নেই—সেসব স্থানে প্লাবনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে ডিডিপিএম।

ব্যাংককের পাশাপাশি যেসব প্রদেশে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে, সেগুলো হলো—উথাই থানি, চাই নাট, সিং বুড়ি, আং থং, সুফান বুড়ি, আয়ুত্থয়া, লপ বুড়ি, পাঠুম থানি, সামুত প্রাকান ও ননথাবুরি। সতর্কতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিচু এলাকাগুলো, যেগুলো বাঁধবিহীন।

তবে শুধু রাজধানী ও মধ্যাঞ্চল নয়—পুরো দেশের ৬৫টি প্রদেশেই শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, দুর্বল হয়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় কালমেগি আজ শুক্রবার উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডে প্রবেশ করবে। এই সতর্কতা দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, মধ্যাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিম (আন্দামান উপকূল) অঞ্চলের কয়েকটি প্রদেশকে অন্তর্ভুক্ত করছে।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছে, কালমেগি উপকূলে আছড়ে পড়ার আগে দেশটির মধ্যাঞ্চলে ছয়টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ বিমানবন্দরগুলো হলো—বুয়ন মা থুয়ত, প্লেইকু, তুই হোয়া, চি লাই ফু ক্যাট এবং লিয়েন খুয়ং। এসব বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় শত শত ফ্লাইট বাতিল বা স্থগিত হবে বলে জানায় সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ’ কাজাখস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৯
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাসিম জোমারত তোকায়েভ। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাসিম জোমারত তোকায়েভ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মধ্য এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কাজাখস্তান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। আর এই লক্ষ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য গঠিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডে’ যোগ দিচ্ছে কাজাখস্তান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমারত তোকায়েভের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘শিগগির আমরা একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেব। এই শক্তিশালী জোটে আরও অনেক দেশ যোগ দিতে চাচ্ছে।’

কাজাখ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, বিষয়টি আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আব্রাহাম চুক্তিতে আমাদের যোগদান কাজাখস্তানের বৈদেশিক নীতির স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ধারাবাহিকতা—যা সংলাপ, পারস্পরিক সম্মান ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে।’

কাজাখস্তান ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখছে। ফলে এ উদ্যোগটি মূলত প্রতীকী পদক্ষেপ হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, বিষয়টি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কের সীমায় আটকে নেই। তিনি বলেন, ‘এটা আরও উন্নত ধরনের সম্পর্ক, যা চুক্তিতে থাকা সব দেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব তৈরি করে। এর মাধ্যমে তারা নানা অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।’

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প কাজাখ প্রেসিডেন্ট তোকায়েভসহ মধ্য এশিয়ার আরও চার দেশের নেতা—কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন রাশিয়ার প্রভাবাধীন ও বর্তমানে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকা এই অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এখানে উপস্থিত কিছু দেশও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে...আগামী কিছু সময়ের মধ্যে এসব ঘোষণা দেওয়া হবে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ফ্লোরিডায় এক ব্যবসায়ী ফোরামে বলেন, তিনি ওয়াশিংটনে ফিরছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়ার জন্য। যদিও তিনি তখন কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস প্রথম জানায়, দেশটি হলো কাজাখস্তান।

বিষয়টি নিয়ে অবগত আরেক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে কাজাখস্তানের যোগদান আব্রাহাম চুক্তিকে নতুন গতি দেবে, যা গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্থবির হয়ে আছে। ট্রাম্প এর আগেও একাধিকবার বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে যেভাবে চুক্তিটি মধ্যস্থ করেছিলেন, সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করতে চান।

এর আগে ২০২০ সালে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একই বছরের শেষে মরক্কোও চুক্তিতে যোগ দেয়। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি আরবও অবশেষে এই চুক্তিতে যোগ দেবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে রিয়াদ এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তত কোনো রূপরেখা ছাড়া এগোতে রাজি হয়নি।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ১৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউস সফর করবেন বলে জানা গেছে। মধ্য এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ, যেমন আজারবাইজান ও উজবেকিস্তান, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাদেরও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাব্য দেশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই চুক্তিটিকেই ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক নীতি সাফল্য হিসেবে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে কাজাখস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম (৬৯ দশমিক ৩), তারপরে খ্রিষ্টান (১৭ দশমিক ২ শতাংশ)। জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ কোনো ধর্ম মানে না বলে জানিয়েছে এবং ১১ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। অল্পসংখ্যক মানুষ অন্যান্য ধর্ম অনুসরণ করে এবং একটি ছোট অংশ (২ দশমিক ২৫ শতাংশ) নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইরানে ইসরায়েলি শক্তিশালী হামলার পুরো দায়িত্বে ছিলাম আমি: ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি প্রথম ধাপের হামলার দায়িত্ব ছিলেন তিনি নিজেই। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি প্রথম ধাপের হামলার দায়িত্ব ছিলেন তিনি নিজেই। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রথম ধাপের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইসরায়েল একাই হামলা চালিয়েছিল—যুক্তরাষ্ট্রের আগের এই দাবি অস্বীকার করলেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পুরো বিষয়টির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। খবর আল জাজিরার

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল প্রথমে হামলা করেছিল। সেই হামলা ছিল ভীষণ শক্তিশালী। আমি পুরোপুরি বিষয়টির দায়িত্বে ছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন ইসরায়েল প্রথম ইরানে হামলা চালায়, সেটি ছিল ইসরায়েলের জন্য দারুণ এক দিন। ওই হামলায় যত ক্ষতি হয়েছে, বাকি সব হামলা মিলেও তত হয়নি।’

এই মন্তব্যের সময় ট্রাম্প রিপাবলিকানদের আহ্বান জানান, সিনেটে আইন পাসের নিয়ম পরিবর্তন করে যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে আইন পাস করা যায়, এমন পরিবর্তন আনা হয়। তিনি যুক্তি দেন, দলকে এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক যেভাবে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বহু সাধারণ মানুষ নিহত হন। জবাবে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরায়েলের দিকে। পরে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্ত হয় এবং ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে।

যুদ্ধের প্রথম দিকেই ওয়াশিংটন জানায়, ইসরায়েল একাই এই হামলা চালিয়েছে। সেই সঙ্গে তেহরানকে সতর্ক করা হয় যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও আঞ্চলিক স্বার্থের ওপর পাল্টা হামলা না চালায়। সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আজ রাতে ইসরায়েল একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানে কোনো হামলায় অংশ নেয়নি। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা।’

পরে ইরান কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। এরপর থেকে ট্রাম্প যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে গর্ব করতে থাকেন। তিনি বারবার দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে।’

তবে বৃহস্পতিবার তিনি আরও এগিয়ে বললেন, যুদ্ধের শুরু থেকেই তিনিই পুরো বিষয়টি পরিচালনা করেছেন। অন্যদিকে তেহরান এখনো প্রকাশ্যে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতির বিস্তারিত দেয়নি। তবে ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, বহু বছরের অর্জিত জ্ঞানের কারণে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনো টিকে আছে। ইরানের মজুত উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি।

ট্রাম্প সব সময় নিজেক ‘শান্তির দূত’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন এবং নতুন যুদ্ধ শুরু না করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালে তার নিজ দলের ভেতরের অনেকেই চাপ দিচ্ছিলেন, যেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে না জড়ায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প আবারও বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করতে চান, যার মাধ্যমে তেহরান আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে।

দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন এবং বারবার বলেন, তিনি তেহরানের সঙ্গে সমঝোতা চান। তবে বর্তমানে সেই আলোচনায় কোনো গতি নেই। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনে এখন ইরান ইস্যুতে তেমন কোনো তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান। জুন মাসে দুই দেশের কর্মকর্তাদের এক দফা আলোচনায় বসার কথা ছিল, কিন্তু তার কয়েক দিন আগেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান তেহরানে হামলা চালায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত