আজকের পত্রিকা ডেস্ক
অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত টিকটক চুক্তি সম্ভবত ঘনিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর চীনা সমকক্ষ সি চিনপিং আগামী শুক্রবার এই চুক্তির শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে, উভয় পক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা একটি ‘ফ্রেমওয়ার্কে’ পৌঁছেছেন। ফ্রেমওয়ার্ক অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের পরিচালনা একটি মার্কিন কনগ্লোমারেটের কাছে বিক্রি হতে পারে।
চুক্তি সম্পন্ন হলে মার্কিন ও চীনা বাণিজ্য আলোচনায় এটি এক বিশেষ ‘নজিরবিহীন অগ্রগতি’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এর ফলে সেই সমস্যার সমাধান হবে, যা বছরের পর বছর খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, চূড়ান্ত চুক্তিতে টিকটকের ১৭ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারীর জন্য কী নিয়ম নীতি নির্ধারিত হতে পারে এবং চীন বিনিময়ে কী পাবে সেই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই ফ্রেমওয়ার্ক ও সম্ভাব্য চুক্তিকে দুই দেশের জন্যই ‘উইন-উইন’ বলে অভিহিত করছে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি এটি (চুক্তি) করতে চাই শিশুদের কারণে।’ তবে এখনো অনেক বিষয় অজানা। বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, এই চুক্তির আওতায় মার্কিন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নতুন নির্দিষ্ট সংস্করণ দেওয়া হবে, যা চীনের মূল টিকটকের চেয়ে আলাদা হবে। টেক জায়ান্ট ওরাকল এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আন্ড্রিসেন হরোভিৎজ ও সিলভার লেকের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনগ্লোমারেট এটি কিনে নিতে পারে।
কিন্তু আলোচনার টেবিলে আসলে মূল বিষয়বস্তু কী আছে? মূল বিষয় হলো—টিকটকের অ্যালগরিদম। এই অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর পছন্দ ও আচরণের ভিত্তিতে কনটেন্ট সাজায়। অনেকে এটিকে ‘সিক্রেট ফর্মুলা বা গোপন সূত্র’ বলেন। এই সিক্রেট ফর্মুলা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটিই অ্যাপের কনটেন্টের ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা ও কোনো কনটেন্টকে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে নিজেদের অ্যালগরিদম টিকটকের আদলে রি-ক্রিয়েট বা পুনঃসৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে, ইনস্টাগ্রামের রিলস, ইউটিউবের শর্টসের অ্যালগরিদম। তবে এই বিষয়ে ভাইবার ও স্ন্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ করা বিবিসিকে বলেছেন, ‘সাধারণত, প্রযুক্তি যারা তৈরি করে তারা এটি আরও ভালোভাবে জানে।’
টিকটকের চীনা মালিক বাইটড্যান্স স্বাভাবিকভাবেই এই মূল্যবান সূত্র কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চায়নি এবং এই বিষয়ে বেইজিং প্রতিষ্ঠানটির পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য যে, চীনের শীর্ষ সাইবার সিকিউরিটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, বেইজিং সম্ভবত বাইটড্যান্সকে মার্কিন কোম্পানিকে অ্যালগরিদম ও অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির লাইসেন্সের অনুমতি দিতে পারে। তবে পুরো প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে স্থানান্তর করা হবে না।
এটি চীনের পূর্বের কঠোর অবস্থান থেকে এক বড় পরিবর্তন। কিন্তু ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ কোকিল জায়দকা বলেছেন, মার্কিন সংস্করণ হয়তো ‘সংক্ষিপ্ত’ সফটওয়্যার ব্যবহার করবে। তিনি আরও বলেন, সীমিত অ্যাক্সেসও প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহারকারীর মনোযোগ আকর্ষণ, মনিটরিং এবং বিজ্ঞাপন লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে সাহায্য করে তা প্রকাশ করতে পারে। তবে এই পরিবর্তনগুলো ব্যবহারকারীর টিকটক অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করবে। ড. জায়দকা বলেন, অ্যাপটি হয়তো কম বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট দেখাবে।
তবে টিকটক চুক্তির আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন অ্যালগরিদম পরিবর্তন হলেও ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা একই থাকবে এবং ‘চীনা বৈশিষ্ট্য’ থাকবে। ট্রাম্পসহ মার্কিন কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্ন যে, টিকটকের ডেটা কে ব্যবহার করছে এবং এটি মার্কিন ব্যবহারকারীদের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে।
জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই প্রশ্নগুলো এমন আইন তৈরিতে প্ররোচিত করেছিল যেখানে বলা হয়েছে, টিকটককে মার্কিন পরিচালনার অধীনে হস্তান্তর করতে হবে, আর তা না হলে নিষিদ্ধ করা হবে। তবে ট্রাম্প এরপর মন পরিবর্তন করেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে যুবক ভোট বৃদ্ধি করার জন্য টিকটককে কৃতিত্ব দেন।
কিন্তু টিকটককে এখনো মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সন্তুষ্ট করতে হবে এবং শুরুর দিকের উদ্বেগগুলো দূর করতে হবে। কোনো চুক্তি হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন এবং ওয়াশিংটনে উভয় দলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যেই রয়েছে। মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য জন মুলেনার বলেছেন, তিনি উদ্বিগ্ন যে—চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক এখনো চীনা সরকারের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রাখতে পারে।
আইনজীবী হদেল আব্দেলহাদি বিবিসিকে বলেছেন, ‘সরলভাবে বলতে গেলে—আইন অনুযায়ী টিকটকের পরিচালনা বিদেশি কোনো পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হতে হবে এবং কেবল একটি (মার্কিন) লাইসেন্স সেই মানদণ্ড পূরণ করবে না।’
সাধারণত, এই ধরনের বড় চুক্তি সম্পূর্ণ হতে মাস বা বছর লাগতে পারে এবং অনেক বিষয় সমাধান করা বাকি। প্রথমত, এটি পরিষ্কার নয় যে, মার্কিন মালিকানাধীন টিকটক কীভাবে অন্য বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের টিকটকের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করবে। দ্বিতীয়ত, বাইটড্যান্সকে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চীন সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন, যা চুক্তির ক্ষেত্রে বাড়তি জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে চীনা সরকার এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে।
তৃতীয় যে বিষয়টি জটিলতা তৈরি করতে পারে, সেটি হলো—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিকটকের মার্কিন পরিচালনা কনগ্লোমারেটের অংশীদার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
আমরা জানি ট্রাম্প টিকটক চুক্তি করতে আগ্রহী এবং আমরা জানি, কেন তিনি সেটি করতে চান। এটি তাঁর প্রশাসনের এক বড় জয় হবে। বিশ্বের প্রতি সাতজনে একজন এই অ্যাপ ব্যবহার করে। এই বিষয়ে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাবেক এক নির্বাহী বলেন, ‘এটিই একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়নি, তাই এটি খুব মূল্যবান।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারকারীর জন্য গড় আয় অন্যান্য দেশের তুলনায় পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি এবং বাইটড্যান্স টিকটক থেকে যা আয় করে তার ৫০ শতাংশই আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনফরমেশন জানিয়েছে, ধারণা করা হয়—২০২৪ সালে বাইটড্যান্সের বৈশ্বিক রাজস্ব ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে কেবল টিকটকই আয় করেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু আমরা এখনো জানি না, চীন এই চুক্তি থেকে কী লাভ করবে। লাইসেন্স চুক্তি বাইটড্যান্সকে অ্যালগরিদম গোপন রাখার সুযোগ দেবে—যদি যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে নতুন অ্যাপ চালু করতে চায়। এ ছাড়া, টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে মার্কিন বাজারে থাকতে পারবে। মূল কোম্পানি অ্যাপের সবচেয়ে বড় অংশ, লোগো, ফরম্যাট ও ব্র্যান্ডিংও রাখবে।
বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কেভিন জু বলেছেন, এই চুক্তি একটি ‘টেমপ্লেট’ তৈরি করবে। যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে অন্যান্য চীনা কোম্পানি লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন বাজারে প্রযুক্তির ব্যবসায় করতে পারবে। তিনি যোগ করেন, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ চীনা প্রযুক্তি পণ্য যেমন—ব্যাটারি ও বিরল মাটির উপাদান এখন সহজে মার্কিন বাজারে প্রবাহিত হতে পারে।
চীন এই চুক্তিকে ‘বিজয়’ হিসেবে প্রচার করতে পারে। বলতে পারে যে, তারা নিজের শর্তে চীনা প্রযুক্তি রপ্তানি করছে এবং এটি বেইজিংয়ের জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। চীনে দায়িত্ব পালন করা বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর বার্ট হফম্যান বলেছেন, “চীন আলোচনাকে গভীর, গঠনমূলক ও খোলাখুলি বলে আখ্যায়িত করেছে। এটি দেখায় তারা প্রকৃতপক্ষে খুশি। প্রশ্ন হলো, পূর্ণ চুক্তি কখন হবে?’
এই টিকটক চুক্তি বেইজিংকে কিছুটা সময় দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের বড় রপ্তানি বাজার, আর চীন মার্কিন কৃষি পণ্যের বড় ক্রেতা। উচ্চ শুল্ক উভয় পক্ষকেই ক্ষতি করবে। এ ছাড়া, উভয় পক্ষের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, বিশেষ করে বিরল মাটির জন্য, যেখানে চীনের প্রায় একচেটিয়া অবস্থান।
পরিশেষে, টিকটকে অগ্রগতি চীনের জন্য উন্নতি। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি পেতে পারে, কিন্তু হয়তো ট্রাম্পের ভাবনার মতো বড় জয় হবে না। ড. জায়দকা বলেছেন, ‘চুক্তি কাগজে কার্যকর হতে পারে—কিন্তু বাস্তবে এটি সব সময় এক ধরনের ছায়ার নিচে থাকবে। একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চলা টিকটককে হয়তো মূল অ্যাপের মতোই দেখাবে, কিন্তু ব্যাকএন্ডে এটি ধার করা কোড, সুরক্ষিত ডেটা এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসের ওপর চলবে, যা এক রাতের মধ্যে মুছে যেতে পারে।’
বিবিসি থেকে অনূদিত
অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত টিকটক চুক্তি সম্ভবত ঘনিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর চীনা সমকক্ষ সি চিনপিং আগামী শুক্রবার এই চুক্তির শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে, উভয় পক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা একটি ‘ফ্রেমওয়ার্কে’ পৌঁছেছেন। ফ্রেমওয়ার্ক অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের পরিচালনা একটি মার্কিন কনগ্লোমারেটের কাছে বিক্রি হতে পারে।
চুক্তি সম্পন্ন হলে মার্কিন ও চীনা বাণিজ্য আলোচনায় এটি এক বিশেষ ‘নজিরবিহীন অগ্রগতি’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এর ফলে সেই সমস্যার সমাধান হবে, যা বছরের পর বছর খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, চূড়ান্ত চুক্তিতে টিকটকের ১৭ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারীর জন্য কী নিয়ম নীতি নির্ধারিত হতে পারে এবং চীন বিনিময়ে কী পাবে সেই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই ফ্রেমওয়ার্ক ও সম্ভাব্য চুক্তিকে দুই দেশের জন্যই ‘উইন-উইন’ বলে অভিহিত করছে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি এটি (চুক্তি) করতে চাই শিশুদের কারণে।’ তবে এখনো অনেক বিষয় অজানা। বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, এই চুক্তির আওতায় মার্কিন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নতুন নির্দিষ্ট সংস্করণ দেওয়া হবে, যা চীনের মূল টিকটকের চেয়ে আলাদা হবে। টেক জায়ান্ট ওরাকল এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আন্ড্রিসেন হরোভিৎজ ও সিলভার লেকের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনগ্লোমারেট এটি কিনে নিতে পারে।
কিন্তু আলোচনার টেবিলে আসলে মূল বিষয়বস্তু কী আছে? মূল বিষয় হলো—টিকটকের অ্যালগরিদম। এই অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর পছন্দ ও আচরণের ভিত্তিতে কনটেন্ট সাজায়। অনেকে এটিকে ‘সিক্রেট ফর্মুলা বা গোপন সূত্র’ বলেন। এই সিক্রেট ফর্মুলা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটিই অ্যাপের কনটেন্টের ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা ও কোনো কনটেন্টকে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে নিজেদের অ্যালগরিদম টিকটকের আদলে রি-ক্রিয়েট বা পুনঃসৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে, ইনস্টাগ্রামের রিলস, ইউটিউবের শর্টসের অ্যালগরিদম। তবে এই বিষয়ে ভাইবার ও স্ন্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ করা বিবিসিকে বলেছেন, ‘সাধারণত, প্রযুক্তি যারা তৈরি করে তারা এটি আরও ভালোভাবে জানে।’
টিকটকের চীনা মালিক বাইটড্যান্স স্বাভাবিকভাবেই এই মূল্যবান সূত্র কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চায়নি এবং এই বিষয়ে বেইজিং প্রতিষ্ঠানটির পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য যে, চীনের শীর্ষ সাইবার সিকিউরিটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, বেইজিং সম্ভবত বাইটড্যান্সকে মার্কিন কোম্পানিকে অ্যালগরিদম ও অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির লাইসেন্সের অনুমতি দিতে পারে। তবে পুরো প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে স্থানান্তর করা হবে না।
এটি চীনের পূর্বের কঠোর অবস্থান থেকে এক বড় পরিবর্তন। কিন্তু ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ কোকিল জায়দকা বলেছেন, মার্কিন সংস্করণ হয়তো ‘সংক্ষিপ্ত’ সফটওয়্যার ব্যবহার করবে। তিনি আরও বলেন, সীমিত অ্যাক্সেসও প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহারকারীর মনোযোগ আকর্ষণ, মনিটরিং এবং বিজ্ঞাপন লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে সাহায্য করে তা প্রকাশ করতে পারে। তবে এই পরিবর্তনগুলো ব্যবহারকারীর টিকটক অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করবে। ড. জায়দকা বলেন, অ্যাপটি হয়তো কম বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট দেখাবে।
তবে টিকটক চুক্তির আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন অ্যালগরিদম পরিবর্তন হলেও ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা একই থাকবে এবং ‘চীনা বৈশিষ্ট্য’ থাকবে। ট্রাম্পসহ মার্কিন কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্ন যে, টিকটকের ডেটা কে ব্যবহার করছে এবং এটি মার্কিন ব্যবহারকারীদের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে।
জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই প্রশ্নগুলো এমন আইন তৈরিতে প্ররোচিত করেছিল যেখানে বলা হয়েছে, টিকটককে মার্কিন পরিচালনার অধীনে হস্তান্তর করতে হবে, আর তা না হলে নিষিদ্ধ করা হবে। তবে ট্রাম্প এরপর মন পরিবর্তন করেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে যুবক ভোট বৃদ্ধি করার জন্য টিকটককে কৃতিত্ব দেন।
কিন্তু টিকটককে এখনো মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সন্তুষ্ট করতে হবে এবং শুরুর দিকের উদ্বেগগুলো দূর করতে হবে। কোনো চুক্তি হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন এবং ওয়াশিংটনে উভয় দলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যেই রয়েছে। মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য জন মুলেনার বলেছেন, তিনি উদ্বিগ্ন যে—চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক এখনো চীনা সরকারের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রাখতে পারে।
আইনজীবী হদেল আব্দেলহাদি বিবিসিকে বলেছেন, ‘সরলভাবে বলতে গেলে—আইন অনুযায়ী টিকটকের পরিচালনা বিদেশি কোনো পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হতে হবে এবং কেবল একটি (মার্কিন) লাইসেন্স সেই মানদণ্ড পূরণ করবে না।’
সাধারণত, এই ধরনের বড় চুক্তি সম্পূর্ণ হতে মাস বা বছর লাগতে পারে এবং অনেক বিষয় সমাধান করা বাকি। প্রথমত, এটি পরিষ্কার নয় যে, মার্কিন মালিকানাধীন টিকটক কীভাবে অন্য বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের টিকটকের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করবে। দ্বিতীয়ত, বাইটড্যান্সকে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চীন সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন, যা চুক্তির ক্ষেত্রে বাড়তি জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে চীনা সরকার এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে।
তৃতীয় যে বিষয়টি জটিলতা তৈরি করতে পারে, সেটি হলো—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিকটকের মার্কিন পরিচালনা কনগ্লোমারেটের অংশীদার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
আমরা জানি ট্রাম্প টিকটক চুক্তি করতে আগ্রহী এবং আমরা জানি, কেন তিনি সেটি করতে চান। এটি তাঁর প্রশাসনের এক বড় জয় হবে। বিশ্বের প্রতি সাতজনে একজন এই অ্যাপ ব্যবহার করে। এই বিষয়ে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাবেক এক নির্বাহী বলেন, ‘এটিই একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়নি, তাই এটি খুব মূল্যবান।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারকারীর জন্য গড় আয় অন্যান্য দেশের তুলনায় পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি এবং বাইটড্যান্স টিকটক থেকে যা আয় করে তার ৫০ শতাংশই আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনফরমেশন জানিয়েছে, ধারণা করা হয়—২০২৪ সালে বাইটড্যান্সের বৈশ্বিক রাজস্ব ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে কেবল টিকটকই আয় করেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু আমরা এখনো জানি না, চীন এই চুক্তি থেকে কী লাভ করবে। লাইসেন্স চুক্তি বাইটড্যান্সকে অ্যালগরিদম গোপন রাখার সুযোগ দেবে—যদি যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে নতুন অ্যাপ চালু করতে চায়। এ ছাড়া, টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে মার্কিন বাজারে থাকতে পারবে। মূল কোম্পানি অ্যাপের সবচেয়ে বড় অংশ, লোগো, ফরম্যাট ও ব্র্যান্ডিংও রাখবে।
বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কেভিন জু বলেছেন, এই চুক্তি একটি ‘টেমপ্লেট’ তৈরি করবে। যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে অন্যান্য চীনা কোম্পানি লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন বাজারে প্রযুক্তির ব্যবসায় করতে পারবে। তিনি যোগ করেন, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ চীনা প্রযুক্তি পণ্য যেমন—ব্যাটারি ও বিরল মাটির উপাদান এখন সহজে মার্কিন বাজারে প্রবাহিত হতে পারে।
চীন এই চুক্তিকে ‘বিজয়’ হিসেবে প্রচার করতে পারে। বলতে পারে যে, তারা নিজের শর্তে চীনা প্রযুক্তি রপ্তানি করছে এবং এটি বেইজিংয়ের জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। চীনে দায়িত্ব পালন করা বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর বার্ট হফম্যান বলেছেন, “চীন আলোচনাকে গভীর, গঠনমূলক ও খোলাখুলি বলে আখ্যায়িত করেছে। এটি দেখায় তারা প্রকৃতপক্ষে খুশি। প্রশ্ন হলো, পূর্ণ চুক্তি কখন হবে?’
এই টিকটক চুক্তি বেইজিংকে কিছুটা সময় দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের বড় রপ্তানি বাজার, আর চীন মার্কিন কৃষি পণ্যের বড় ক্রেতা। উচ্চ শুল্ক উভয় পক্ষকেই ক্ষতি করবে। এ ছাড়া, উভয় পক্ষের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, বিশেষ করে বিরল মাটির জন্য, যেখানে চীনের প্রায় একচেটিয়া অবস্থান।
পরিশেষে, টিকটকে অগ্রগতি চীনের জন্য উন্নতি। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি পেতে পারে, কিন্তু হয়তো ট্রাম্পের ভাবনার মতো বড় জয় হবে না। ড. জায়দকা বলেছেন, ‘চুক্তি কাগজে কার্যকর হতে পারে—কিন্তু বাস্তবে এটি সব সময় এক ধরনের ছায়ার নিচে থাকবে। একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চলা টিকটককে হয়তো মূল অ্যাপের মতোই দেখাবে, কিন্তু ব্যাকএন্ডে এটি ধার করা কোড, সুরক্ষিত ডেটা এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসের ওপর চলবে, যা এক রাতের মধ্যে মুছে যেতে পারে।’
বিবিসি থেকে অনূদিত
আজ রোববারের এ সফর ২০১৯ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের কোনো দলের চীনে প্রথম সফর। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আনুষ্ঠানিক সফর বন্ধ হয়ে যায় এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে মতবিরোধের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক দ্রুত খারাপ হতে থাকে।
১৫ মিনিট আগেএবার বিক্ষোভে উত্তাল ফিলিপাইন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে কোটি ডলারের দুর্নীতির প্রতিবাদে আজ রোববার রাজধানী ম্যানিলায় রাস্তায় নেমে এসেছে হাজার হাজার ক্ষুব্ধ জনতা।
৪০ মিনিট আগেপেন্টাগনের অনুমোদন ছাড়া কোনো সামরিক তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না সাংবাদিকেরা। সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে একটি মেমো পাঠিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল। ওই মেমোতে আরও জানানো হয়েছে, যারা এই শর্ত মানবে না, তারা পেন্টাগনের সংবাদ কভারের অধিকার হারাবে।
৪ ঘণ্টা আগেভারতেও নেপালের মতো জেন-জি আন্দোলন দানা বাঁধতে পারে। গতকাল শনিবার এক অনুষ্ঠানে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক দল ভারত রাষ্ট্র সমিতির কার্য নির্বাহী সভাপতি কে টি রামা রাও। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে ভারতেও নেপালের মতো প্রতিবাদ দেখা দিতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে