Ajker Patrika

টিকটক চুক্তি: জিতে যাওয়ার দাবি চীনের, যুক্তরাষ্ট্রের কী লাভ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
টিকটক চুক্তিতে জিতে যাওয়ার দাবি করছে চীন, আর লাভবান হওয়ার আশা যুক্তরাষ্ট্রের। ছবি: সংগৃহীত
টিকটক চুক্তিতে জিতে যাওয়ার দাবি করছে চীন, আর লাভবান হওয়ার আশা যুক্তরাষ্ট্রের। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত টিকটক চুক্তি সম্ভবত ঘনিয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর চীনা সমকক্ষ সি চিনপিং আগামী শুক্রবার এই চুক্তির শর্ত নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে, উভয় পক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তারা একটি ‘ফ্রেমওয়ার্কে’ পৌঁছেছেন। ফ্রেমওয়ার্ক অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের পরিচালনা একটি মার্কিন কনগ্লোমারেটের কাছে বিক্রি হতে পারে।

চুক্তি সম্পন্ন হলে মার্কিন ও চীনা বাণিজ্য আলোচনায় এটি এক বিশেষ ‘নজিরবিহীন অগ্রগতি’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এর ফলে সেই সমস্যার সমাধান হবে, যা বছরের পর বছর খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, চূড়ান্ত চুক্তিতে টিকটকের ১৭ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারীর জন্য কী নিয়ম নীতি নির্ধারিত হতে পারে এবং চীন বিনিময়ে কী পাবে সেই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এই ফ্রেমওয়ার্ক ও সম্ভাব্য চুক্তিকে দুই দেশের জন্যই ‘উইন-উইন’ বলে অভিহিত করছে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি এটি (চুক্তি) করতে চাই শিশুদের কারণে।’ তবে এখনো অনেক বিষয় অজানা। বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, এই চুক্তির আওতায় মার্কিন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নতুন নির্দিষ্ট সংস্করণ দেওয়া হবে, যা চীনের মূল টিকটকের চেয়ে আলাদা হবে। টেক জায়ান্ট ওরাকল এবং বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আন্ড্রিসেন হরোভিৎজ ও সিলভার লেকের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একটি কনগ্লোমারেট এটি কিনে নিতে পারে।

কিন্তু আলোচনার টেবিলে আসলে মূল বিষয়বস্তু কী আছে? মূল বিষয় হলো—টিকটকের অ্যালগরিদম। এই অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীর পছন্দ ও আচরণের ভিত্তিতে কনটেন্ট সাজায়। অনেকে এটিকে ‘সিক্রেট ফর্মুলা বা গোপন সূত্র’ বলেন। এই সিক্রেট ফর্মুলা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটিই অ্যাপের কনটেন্টের ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা ও কোনো কনটেন্টকে দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে নিজেদের অ্যালগরিদম টিকটকের আদলে রি-ক্রিয়েট বা পুনঃসৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে, ইনস্টাগ্রামের রিলস, ইউটিউবের শর্টসের অ্যালগরিদম। তবে এই বিষয়ে ভাইবার ও স্ন্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় কাজ করা বিবিসিকে বলেছেন, ‘সাধারণত, প্রযুক্তি যারা তৈরি করে তারা এটি আরও ভালোভাবে জানে।’

টিকটকের চীনা মালিক বাইটড্যান্স স্বাভাবিকভাবেই এই মূল্যবান সূত্র কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চায়নি এবং এই বিষয়ে বেইজিং প্রতিষ্ঠানটির পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু, অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য যে, চীনের শীর্ষ সাইবার সিকিউরিটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, বেইজিং সম্ভবত বাইটড্যান্সকে মার্কিন কোম্পানিকে অ্যালগরিদম ও অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির লাইসেন্সের অনুমতি দিতে পারে। তবে পুরো প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে স্থানান্তর করা হবে না।

এটি চীনের পূর্বের কঠোর অবস্থান থেকে এক বড় পরিবর্তন। কিন্তু ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ কোকিল জায়দকা বলেছেন, মার্কিন সংস্করণ হয়তো ‘সংক্ষিপ্ত’ সফটওয়্যার ব্যবহার করবে। তিনি আরও বলেন, সীমিত অ্যাক্সেসও প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহারকারীর মনোযোগ আকর্ষণ, মনিটরিং এবং বিজ্ঞাপন লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে সাহায্য করে তা প্রকাশ করতে পারে। তবে এই পরিবর্তনগুলো ব্যবহারকারীর টিকটক অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করবে। ড. জায়দকা বলেন, অ্যাপটি হয়তো কম বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট দেখাবে।

তবে টিকটক চুক্তির আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন অ্যালগরিদম পরিবর্তন হলেও ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা একই থাকবে এবং ‘চীনা বৈশিষ্ট্য’ থাকবে। ট্রাম্পসহ মার্কিন কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্ন যে, টিকটকের ডেটা কে ব্যবহার করছে এবং এটি মার্কিন ব্যবহারকারীদের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে।

জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত এই প্রশ্নগুলো এমন আইন তৈরিতে প্ররোচিত করেছিল যেখানে বলা হয়েছে, টিকটককে মার্কিন পরিচালনার অধীনে হস্তান্তর করতে হবে, আর তা না হলে নিষিদ্ধ করা হবে। তবে ট্রাম্প এরপর মন পরিবর্তন করেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে যুবক ভোট বৃদ্ধি করার জন্য টিকটককে কৃতিত্ব দেন।

কিন্তু টিকটককে এখনো মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সন্তুষ্ট করতে হবে এবং শুরুর দিকের উদ্বেগগুলো দূর করতে হবে। কোনো চুক্তি হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন এবং ওয়াশিংটনে উভয় দলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যেই রয়েছে। মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য জন মুলেনার বলেছেন, তিনি উদ্বিগ্ন যে—চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক এখনো চীনা সরকারের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রাখতে পারে।

আইনজীবী হদেল আব্দেলহাদি বিবিসিকে বলেছেন, ‘সরলভাবে বলতে গেলে—আইন অনুযায়ী টিকটকের পরিচালনা বিদেশি কোনো পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হতে হবে এবং কেবল একটি (মার্কিন) লাইসেন্স সেই মানদণ্ড পূরণ করবে না।’

সাধারণত, এই ধরনের বড় চুক্তি সম্পূর্ণ হতে মাস বা বছর লাগতে পারে এবং অনেক বিষয় সমাধান করা বাকি। প্রথমত, এটি পরিষ্কার নয় যে, মার্কিন মালিকানাধীন টিকটক কীভাবে অন্য বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের টিকটকের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করবে। দ্বিতীয়ত, বাইটড্যান্সকে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চীন সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন, যা চুক্তির ক্ষেত্রে বাড়তি জটিলতা তৈরি করতে পারে। তবে চীনা সরকার এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে।

তৃতীয় যে বিষয়টি জটিলতা তৈরি করতে পারে, সেটি হলো—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিকটকের মার্কিন পরিচালনা কনগ্লোমারেটের অংশীদার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

আমরা জানি ট্রাম্প টিকটক চুক্তি করতে আগ্রহী এবং আমরা জানি, কেন তিনি সেটি করতে চান। এটি তাঁর প্রশাসনের এক বড় জয় হবে। বিশ্বের প্রতি সাতজনে একজন এই অ্যাপ ব্যবহার করে। এই বিষয়ে একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাবেক এক নির্বাহী বলেন, ‘এটিই একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হয়নি, তাই এটি খুব মূল্যবান।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহারকারীর জন্য গড় আয় অন্যান্য দেশের তুলনায় পাঁচ থেকে দশ গুণ বেশি এবং বাইটড্যান্স টিকটক থেকে যা আয় করে তার ৫০ শতাংশই আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম দ্য ইনফরমেশন জানিয়েছে, ধারণা করা হয়—২০২৪ সালে বাইটড্যান্সের বৈশ্বিক রাজস্ব ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে কেবল টিকটকই আয় করেছে ৩০ বিলিয়ন ডলার।

কিন্তু আমরা এখনো জানি না, চীন এই চুক্তি থেকে কী লাভ করবে। লাইসেন্স চুক্তি বাইটড্যান্সকে অ্যালগরিদম গোপন রাখার সুযোগ দেবে—যদি যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে নতুন অ্যাপ চালু করতে চায়। এ ছাড়া, টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে মার্কিন বাজারে থাকতে পারবে। মূল কোম্পানি অ্যাপের সবচেয়ে বড় অংশ, লোগো, ফরম্যাট ও ব্র্যান্ডিংও রাখবে।

বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কেভিন জু বলেছেন, এই চুক্তি একটি ‘টেমপ্লেট’ তৈরি করবে। যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে অন্যান্য চীনা কোম্পানি লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন বাজারে প্রযুক্তির ব্যবসায় করতে পারবে। তিনি যোগ করেন, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ চীনা প্রযুক্তি পণ্য যেমন—ব্যাটারি ও বিরল মাটির উপাদান এখন সহজে মার্কিন বাজারে প্রবাহিত হতে পারে।

চীন এই চুক্তিকে ‘বিজয়’ হিসেবে প্রচার করতে পারে। বলতে পারে যে, তারা নিজের শর্তে চীনা প্রযুক্তি রপ্তানি করছে এবং এটি বেইজিংয়ের জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। চীনে দায়িত্ব পালন করা বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর বার্ট হফম্যান বলেছেন, “চীন আলোচনাকে গভীর, গঠনমূলক ও খোলাখুলি বলে আখ্যায়িত করেছে। এটি দেখায় তারা প্রকৃতপক্ষে খুশি। প্রশ্ন হলো, পূর্ণ চুক্তি কখন হবে?’

এই টিকটক চুক্তি বেইজিংকে কিছুটা সময় দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের বড় রপ্তানি বাজার, আর চীন মার্কিন কৃষি পণ্যের বড় ক্রেতা। উচ্চ শুল্ক উভয় পক্ষকেই ক্ষতি করবে। এ ছাড়া, উভয় পক্ষের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, বিশেষ করে বিরল মাটির জন্য, যেখানে চীনের প্রায় একচেটিয়া অবস্থান।

পরিশেষে, টিকটকে অগ্রগতি চীনের জন্য উন্নতি। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি পেতে পারে, কিন্তু হয়তো ট্রাম্পের ভাবনার মতো বড় জয় হবে না। ড. জায়দকা বলেছেন, ‘চুক্তি কাগজে কার্যকর হতে পারে—কিন্তু বাস্তবে এটি সব সময় এক ধরনের ছায়ার নিচে থাকবে। একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চলা টিকটককে হয়তো মূল অ্যাপের মতোই দেখাবে, কিন্তু ব্যাকএন্ডে এটি ধার করা কোড, সুরক্ষিত ডেটা এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসের ওপর চলবে, যা এক রাতের মধ্যে মুছে যেতে পারে।’

বিবিসি থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ’ কাজাখস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাসিম জোমারত তোকায়েভ। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাসিম জোমারত তোকায়েভ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মধ্য এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কাজাখস্তান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। আর এই লক্ষ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য গঠিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডে’ যোগ দিচ্ছে কাজাখস্তান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প জানিয়েছেন—তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমারত তোকায়েভের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘খুব শিগগিরই আমরা একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেব। এই শক্তিশালী জোটে আরও অনেক দেশ যোগ দিতে চাচ্ছে।’

কাজাখ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, বিষয়টি আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আব্রাহাম চুক্তিতে আমাদের যোগদান কাজাখস্তানের বৈদেশিক নীতির স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ধারাবাহিকতা—যা সংলাপ, পারস্পরিক সম্মান ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে।’

কাজাখস্তান ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখছে। ফলে এ উদ্যোগটি মূলত প্রতীকী পদক্ষেপ হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, বিষয়টি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কের সীমায় আটকে নেই। তিনি বলেন, ‘এটা আরও উন্নত ধরনের সম্পর্ক, যা চুক্তিতে থাকা সব দেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব তৈরি করে। এর মাধ্যমে তারা নানা অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।’

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প কাজাখ প্রেসিডেন্ট তোকায়েভসহ মধ্য এশিয়ার আরও চার দেশের নেতা—কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন রাশিয়ার প্রভাবাধীন ও বর্তমানে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকা এই অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এখানে উপস্থিত কিছু দেশও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে...আগামী কিছু সময়ের মধ্যে এসব ঘোষণা দেওয়া হবে।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ফ্লোরিডায় এক ব্যবসায়ী ফোরামে বলেন, তিনি ওয়াশিংটনে ফিরছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়ার জন্য। যদিও তিনি তখন কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস প্রথম জানায়, দেশটি হলো কাজাখস্তান।

বিষয়টি নিয়ে অবগত আরেক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে কাজাখস্তানের যোগদান আব্রাহাম চুক্তিকে নতুন গতি দেবে, যা গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্থবির হয়ে আছে। ট্রাম্প এর আগেও একাধিকবার বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে যেভাবে চুক্তিটি মধ্যস্থ করেছিলেন, সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করতে চান।

এর আগে, ২০২০ সালে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একই বছরের শেষে মরক্কোও চুক্তিতে যোগ দেয়। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি আরবও অবশেষে এই চুক্তিতে যোগ দেবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে রিয়াদ এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তত কোনো রূপরেখা ছাড়া এগোতে রাজি হয়নি।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আগামী ১৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউস সফর করবেন বলে জানা গেছে। মধ্য এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ—যেমন আজারবাইজান ও উজবেকিস্তান, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে—তাদেরও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাব্য দেশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই চুক্তিটিকেই ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক নীতি সাফল্য হিসেবে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, কাজাখস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম (৬৯ দশমিক ৩), তারপরে খ্রিষ্টান (১৭ দশমিক ২ শতাংশ)। জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ কোনো ধর্ম মানে না বলে জানিয়েছে এবং ১১ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। অল্পসংখ্যক মানুষ অন্যান্য ধর্ম অনুসরণ করে এবং একটি ছোট অংশ (২ দশমিক ২৫ম শতাংশ) নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইরানে ইসরায়েলি শক্তিশালী হামলার পুরো দায়িত্বে ছিলাম আমি: ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি প্রথম ধাপের হামলার দায়িত্ব ছিলেন তিনি নিজেই। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি প্রথম ধাপের হামলার দায়িত্ব ছিলেন তিনি নিজেই। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রথম ধাপের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ইসরায়েল একাই হামলা চালিয়েছিল—যুক্তরাষ্ট্রের আগের এই দাবি অস্বীকার করলেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পুরো বিষয়টির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। খবর আল জাজিরার

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল প্রথমে হামলা করেছিল। সেই হামলা ছিল ভীষণ শক্তিশালী। আমি পুরোপুরি বিষয়টির দায়িত্বে ছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন ইসরায়েল প্রথম ইরানে হামলা চালায়, সেটি ছিল ইসরায়েলের জন্য দারুণ এক দিন। ওই হামলায় যত ক্ষতি হয়েছে, বাকি সব হামলা মিলেও তত হয়নি।’

এই মন্তব্যের সময় ট্রাম্প রিপাবলিকানদের আহ্বান জানান, সিনেটে আইন পাসের নিয়ম পরিবর্তন করে যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে আইন পাস করা যায়, এমন পরিবর্তন আনা হয়। তিনি যুক্তি দেন, দলকে এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ঠিক যেভাবে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানের কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বহু সাধারণ মানুষ নিহত হন। জবাবে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইসরায়েলের দিকে। পরে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্ত হয় এবং ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে।

যুদ্ধের প্রথম দিকেই ওয়াশিংটন জানায়, ইসরায়েল একাই এই হামলা চালিয়েছে। সেই সঙ্গে তেহরানকে সতর্ক করা হয় যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ও আঞ্চলিক স্বার্থের ওপর পাল্টা হামলা না চালায়। সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আজ রাতে ইসরায়েল একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানে কোনো হামলায় অংশ নেয়নি। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা।’

পরে ইরান কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়। এরপর থেকে ট্রাম্প যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে গর্ব করতে থাকেন। তিনি বারবার দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে।’

তবে বৃহস্পতিবার তিনি আরও এগিয়ে বললেন, যুদ্ধের শুরু থেকেই তিনিই পুরো বিষয়টি পরিচালনা করেছেন। অন্যদিকে তেহরান এখনো প্রকাশ্যে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষতির বিস্তারিত দেয়নি। তবে ইরানি কর্মকর্তারা বলছেন, বহু বছরের অর্জিত জ্ঞানের কারণে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনো টিকে আছে। ইরানের মজুত উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও কিছু জানা যায়নি।

ট্রাম্প সব সময় নিজেক ‘শান্তির দূত’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন এবং নতুন যুদ্ধ শুরু না করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালে তার নিজ দলের ভেতরের অনেকেই চাপ দিচ্ছিলেন, যেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে না জড়ায়। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প আবারও বলেছেন, তিনি ইরানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করতে চান, যার মাধ্যমে তেহরান আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে।

দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন এবং বারবার বলেন, তিনি তেহরানের সঙ্গে সমঝোতা চান। তবে বর্তমানে সেই আলোচনায় কোনো গতি নেই। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনে এখন ইরান ইস্যুতে তেমন কোনো তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে ইরানও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান। জুন মাসে দুই দেশের কর্মকর্তাদের এক দফা আলোচনায় বসার কথা ছিল, কিন্তু তার কয়েক দিন আগেই ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান তেহরানে হামলা চালায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোয়াড প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত সুদানের আরএসএফ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) কর্তৃক প্রকাশিত এ ছবিতে সুদানের দারফুর অঞ্চলের তাওইলায় বাস্তুচ্যুত শিশুদের একটি শিবির। ছবি: এনআরসি
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) কর্তৃক প্রকাশিত এ ছবিতে সুদানের দারফুর অঞ্চলের তাওইলায় বাস্তুচ্যুত শিশুদের একটি শিবির। ছবি: এনআরসি

সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত মধ্যস্থতাকারী জোট ‘কোয়াড’ প্রস্তাবিত মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আরএসএফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা শুধু যুদ্ধবিরতিতে নয়, বরং সুদানে শত্রুতার অবসান ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিমালা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত।

আরএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এই চুক্তি বাস্তবায়ন ও অবিলম্বে আলোচনায় বসার অপেক্ষায় আছে, যাতে সুদানের সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান হয় এবং জনগণের দুর্ভোগের ইতি ঘটে। এ ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে, যখন আরএসএফ সম্প্রতি দখল নিয়েছে এল-ফাশের শহরের, যা গত দেড় বছর ধরে অবরুদ্ধ ছিল এবং পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল।

তবে সুদানি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী তখনই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে, যদি আরএসএফ সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক এলাকা থেকে সরে যায় এবং পূর্ববর্তী শান্তিচুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র সমর্পণ করে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকাবিষয়ক উপদেষ্টা মাসাদ বোলস জানান, যুক্তরাষ্ট্র সুদানি সেনাবাহিনী ও আরএসএফ—উভয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে দ্রুত একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা গত প্রায় ১০ দিন ধরে দুই পক্ষের সঙ্গে কাজ করছি, বিস্তারিত চূড়ান্ত করার আশায়।’ বোলসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তিন মাসের মানবিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, এরপর নয় মাসের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও যুক্ত আছে। এই চার দেশকে সম্মিলিতভাবে ‘কোয়াড’ বলা হয়।

দেশটিতে নতুন করে বাস্তুচ্যুত মানুষের ঢল নামায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসক ও ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, অতিরিক্ত মানুষের আগমনে আশ্রয়শিবিরগুলো ভয়াবহ চাপের মুখে পড়েছে।

আজ আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসলামিক রিলিফ এক বিবৃতিতে জানায়, যেসব কমিউনিটি রান্নাঘর ক্ষুধার্ত পরিবারগুলোর শেষ ভরসা, সেগুলো এখন ধসে পড়ার পথে। সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে, সুদানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের ৮৩ শতাংশ পরিবার এখন পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না।

এদিকে গতকাল বুধবার সুদানের ডাক্তার্স নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, এল-ফাশেরের পশ্চিমের বাস্তুচ্যুত শিবিরগুলো—বিশেষত তাওইলা, কুরমা ও গলো এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ এসব এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, এল-ফাশের দখলের পর আরএসএফ ওই অঞ্চলের একটি হাসপাতালে হামলা চালায়, যাতে ৪৫০ জনের বেশি নিহত হয়। এ ছাড়া আরএসএফ বাহিনী ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ও যৌন সহিংসতার ঘটনাও ঘটিয়েছে।

সুদানি সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় ২০২৩ সালে। দুপক্ষই মূলত একসময় মিত্র ছিল, যারা ২০১৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তরপ্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে ছিল। কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলোর দাবি, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এরচেয়ে বহুগুণ বেশি হতে পারে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তথ্যমতে, বর্তমানে ২ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, শুধু এক সপ্তাহেই এল-ফাশের থেকে ৭০ হাজার মানুষ পালিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে পৌঁছেছে নর্দান স্টেটের আল-আফফাদ বাস্তুচ্যুত শিবিরে, যা রাজধানী খার্তুম থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে।

পালিয়ে আসা শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী ওসমান মোহাম্মদ বলেন, ‘এল-ফাশের ছাড়ার পথে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। অনেকে ক্লান্তিতে ও নির্যাতনে মারা গেছেন।’

আরও একজন বাস্তুচ্যুত নারী রাওদা মোহাম্মদ বলেন, এল-ফাশেরে আকাশে সারাক্ষণ ড্রোন ঘোরে। কখন যে হামলা হয়, বুঝতেই পারা যায় না। খাবার বলতে কিছুই ছিল না—মানুষ শুধু বাদাম তেলের অবশিষ্ট অংশ খেয়ে বেঁচে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের ভাষণ ছিঁড়ে ফেলা সেই ন্যান্সি পেলোসি অবসরে যাচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: এএফপি
ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: এএফপি

২০২০ সালে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ডায়াসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন স্পিকারের আসনে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী শক্ত মুখে সেই ভাষণের কপি ছিঁড়ে ফেলেন। দৃশ্যত এতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ঘটনাটি রাজনৈতিক ইতিহাসে এক প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে জায়গা করে নেয়।

ট্রাম্পের ভাষণ ছিঁড়ে ফেলা সেই ন্যান্সি পেলোসি মার্কিন কংগ্রেসের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার। আজ এই ডেমোক্র্যাট নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। চার দশকের বেশি সময়ের রাজনৈতিক জীবন শেষে তিনি কংগ্রেস থেকে বিদায় নিচ্ছেন বলে এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন।

৮৫ বছর বয়সী পেলোসি জানিয়েছেন, তাঁর বর্তমান মেয়াদ (২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত) শেষ হলে তিনি আর নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটছে।

ভিডিওবার্তায় পেলোসি বলেন, ‘আমরা ইতিহাস গড়েছি, অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমরা সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছি আর এখন আমাদের গণতন্ত্রের সক্রিয় অংশীদার হয়ে থাকতে হবে এবং আমেরিকান আদর্শ রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

পেলোসির উত্থান ও ক্ষমতা

১৯৮৭ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো থেকে পেলোসি প্রথমবার কংগ্রেসে নির্বাচিত হন এবং দ্রুতই তিনি ডেমোক্র্যাট পার্টির শীর্ষ সারিতে উঠে আসেন।

২০০৭ সালে পেলোসি ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদের দায়িত্ব পান। তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। পরে দল পুনরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ২০১৯ সালে পেলোসি আবারও স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০২৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, ভাইস প্রেসিডেন্টের পর প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকারক্রমে স্পিকার তৃতীয় স্থানে থাকেন। এ পদে থেকেই পেলোসি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিক প্রেসিডেন্টের নীতি-কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কিংবা বাধা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ বা স্বাস্থ্যসেবা আইন পাসে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময় পেলোসি পরিকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিল পাসেও বড় ভূমিকা রাখেন।

তবে পেলোসি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে। ২০২০ সালে ট্রাম্পের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ শেষে পেলোসি প্রকাশ্যে সেই ভাষণের কপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। এ ঘটনা আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুই দফা অভিশংসনপ্রক্রিয়া (ইমপিচমেন্ট) পরিচালনায়ও পেলোসি ছিলেন অগ্রভাগে। প্রথমবার ২০১৯ সালে ইউক্রেনকে চাপ দেওয়া ও সামরিক সহায়তাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে। দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবনে দাঙ্গা উসকে দেওয়ার অভিযোগে। তবে প্রতিবারই রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ট্রাম্প রক্ষা পান।

বাইডেনের শাসনামলে পেলোসি সংখ্যাগরিষ্ঠ না হয়েও ডেমোক্র্যাটদের বেশ কয়েকটি বড় আইন পাস করাতে সক্ষম হন। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিনিধি পরিষদ দুই বছরের কম সময়ে কোভিড-১৯ ত্রাণ প্যাকেজ, অবকাঠামো খাতে দ্বিদলীয় ব্যয় বিল, বহু ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু ও সামাজিক খরচ কর্মসূচি এবং সমকামী বিবাহ সুরক্ষা আইন পাস করে।

২০২২ সালে নিউইয়র্কের প্রতিনিধি হাকিম জেফ্রিস পেলোসির স্থলাভিষিক্ত হয়ে ডেমোক্র্যাট দলের হাউস নেতা হন। পেলোসি কংগ্রেসের বাইরেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘প্রপোজিশন-৫০’-এর পক্ষে কাজ করেছেন। এর লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে অন্তত পাঁচটি আসন পুনরুদ্ধার করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত