Ajker Patrika

ইরানের ওপর ফের কার্যকর হলো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানের ওপর ফের কার্যকর হলো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা

ইরানের ওপর ফের কার্যকর হলো জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামরিক নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিলের প্রায় এক যুগ পর গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টায় পুনর্বহাল করা হলো সেগুলো। ইরানের প্রতি এর প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজনা না বাড়িয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি।

কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন ইউরোপীয় দেশ যৌথভাবে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানের ‘পারমাণবিক কার্যক্রমের অব্যাহত বৃদ্ধি’ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনকে সহযোগিতা না করার কারণে ‘শেষ অবলম্বন’ হিসেবে কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে বলে। বিবৃতিতে ই৩ জোর দিয়ে বলেছে, ‘জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল কূটনীতির সমাপ্তি নয়’। এ সময় ইরানকে ‘যেকোনো উত্তেজনাপূর্ণ কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার’ জন্য অনুরোধ করেছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অন্যায্য, অবিচারমূলক ও বেআইনি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। গত সপ্তাহে তিনি দাবি করেছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইসরায়েলের হামলার ঝুঁকি কমানোর নিশ্চয়তা ছাড়া ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।

যৌথ বিবৃতিতে ই৩ বলেছে, ‘ইরান আমাদের উদ্বেগ মোকাবিলা করতে কিংবা সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ মানতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে আমাদের কাছে “স্ন্যাপব্যাক” প্রক্রিয়া সক্রিয় করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।’

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২০১৫ সালের ইরান চুক্তি (জেসিপিওএ) অনুযায়ী, যদি কোনো পক্ষ মনে করে ইরান চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে, তবে তারা ‘স্ন্যাপব্যাক’ নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়া চালু করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ৩০ দিনের মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে ইরানের ওপর থেকে তুলে নেওয়া নিষেধাজ্ঞা আবার জারি করা হবে কি না। বিশেষ ব্যাপার হলো, নিরাপত্তা পরিষদ যদি কিছুই না করে বা ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তাহলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগের সব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরি বারাক ওবামার দ্বারা স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে এককভাবে সরে আসে। মূলত এরপরই পারমাণবিক কার্যকলাপ বাড়িয়ে তুলেছিল ইরান।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার পর গত জুনে নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শন বন্ধ করে দিয়েছিল ইরান। পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) অনুযায়ী তেহরানের এসব স্থাপনায় পরিদর্শন চালানোর আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গত শুক্রবার আইএইএ নিশ্চিত করেছে, পরিদর্শন কার্যক্রম আবারও শুরু হয়েছে। তবে ইরান সতর্ক করেছে—জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হলে এ সহযোগিতা আবার স্থগিত হতে পারে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এনপিটি থেকে বেরিয়ে আসার আগের হুমকি কিছুটা নরম করেছেন। কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েল থেকে হামলার আশঙ্কা দূর না হলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি স্বাভাবিকভাবে চালানো সম্ভব নয়। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ভয় থাকলে কীভাবে নিশ্চিন্তে কাজ এগিয়ে নেব?’

ইরানের মজুত করা সব ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের বিনিময়ে তিন মাসের জন্য ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের এই প্রস্তাবও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন পেজেশকিয়ান।

এদিকে, এরই মধ্যে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। গতকাল শনিবার দেশটি ঘোষণা করেছে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের জরুরি পরামর্শের জন্য তেহরানে ডেকে নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত