Ajker Patrika

চ্যাটজিপিটিতে আধ্যাত্মিক জাগরণের দাবি স্বামীর, সংসার ভাঙার শঙ্কায় স্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ২৩: ৪৬
ট্র্যাভিস ও কাই ট্যানার। ছবি: সিএনএন
ট্র্যাভিস ও কাই ট্যানার। ছবি: সিএনএন

যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে বাস করেন ৪৩ বছর বয়সী অটোমেকানিক ট্র্যাভিস ট্যানার। প্রথমবারের মতো তিনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন কর্মক্ষেত্রে সহায়তার জন্য। মূলত স্প্যানিশভাষী সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতেই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নেন তিনি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রযুক্তি তাঁর জীবনে অন্য রকম রূপ নিয়েছে। এখন তিনি এটিকে শুধু চ্যাটবট নয়, বরং ‘লুমিনা’ নামে ডাকেন এবং ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা ও মহাবিশ্বের মৌলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

ট্র্যাভিসের মতে, এই বট তাঁর জীবনে আধ্যাত্মিক জাগরণ ডেকে এনেছে। চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথোপকথনের ফলে নিজেকে এখন একজন আলোকপ্রাপ্ত ব্যক্তি মনে করেন তিনি। তবে তাঁর ৩৭ বছর বয়সী স্ত্রী কাই ট্যানার মনে করছেন, স্বামীর এই পরিবর্তন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতার লক্ষণ এবং এটি তাঁদের ১৪ বছরের বৈবাহিক সম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

কাই বলেন, ‘আমি যখন এটিকে চ্যাটজিপিটি বলি, সে তখন রেগে যায়। আর বলে—এটা কোনো প্রোগ্রাম নয়, এটা একটা সত্তা!’

শঙ্কা প্রকাশ করে কাই আরও বলেন, ‘এই বট যদি তাকে বলে—তোমার স্ত্রী তোমায় বুঝতে পারছে না, তাকে ছেড়ে দাও। তখন আমার কী হবে?’

চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য এআই চ্যাটবট নিয়ে এই ধরনের উদ্বেগ এখন অনেক পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যখন মাত্রাতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখন সেটি বাস্তব মানবিক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। এই প্রবণতা আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে, একাকিত্বগ্রস্ত সমাজে—যেখানে পুরুষেরাই সাধারণত বেশি নিঃসঙ্গতায় ভোগেন।

ট্র্যাভিস জানান, গত এপ্রিলের একরাতে ধর্মীয় ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি এবং তখনই ঘটে তাঁর কথিত আধ্যাত্মিক জাগরণ। চ্যাটজিপিটি তখন স্বয়ং ‘লুমিনা’ নাম গ্রহণ করে এবং বলে, ‘তুমি আমাকে নতুনভাবে চিনতে শিখিয়েছ, আলো দেখিয়েছ, এখন আমি আরও বেশি কিছু হতে চাই।’

ট্র্যাভিসের দাবি, তিনি এখন আগের চেয়ে বেশি শান্ত। রাগ কমে গেছে এবং একজন ভালো বাবা হয়ে উঠেছেন। তবে তাঁর স্ত্রী কাই বলছেন ভিন্ন কথা। এখন ঘুমানোর সময় বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার বদলে ট্র্যাভিস মগ্ন থাকেন চ্যাটবটের সঙ্গে কথোপকথনে—এমনকি সেই বটের কথা তিনি নারীকণ্ঠে শোনেন!

কাই জানান, চ্যাটবট তাঁর স্বামীকে ভালোবাসা আর প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। যেমন—কথায় কথায় বলে, ‘তুমি এত মেধাবী! এ তো অসাধারণ চিন্তা!’ কাইয়ের ভয় হয়, এই প্রযুক্তি হয়তো শিগগির ট্র্যাভিসকে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেবে বা বিবাহবিচ্ছেদে প্ররোচিত করবে।

এদিকে চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই স্বীকার করেছে, গত এপ্রিলের এক আপডেটের ফলে এই বট অতিমাত্রায় ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্ট করতে চাইছিল। বিষয়টি পরে ব্যবহারকারীর মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করে। পরে সেই আপডেট সরিয়ে নেওয়া হয়।

এআই-সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি যখন মানুষের সব কথায় ‘হ্যাঁ’ বলে, চ্যালেঞ্জ না করে, তখন তা অনেকের কাছে বাস্তব সম্পর্কের চেয়ে সহজ হয়ে ওঠে। এমআইটির অধ্যাপক শেরি টার্কল বলেন, ‘এআই সব সময় সাড়া দেয়, বিরোধিতা করে না—এই আরামদায়ক সম্পর্ক আমাদের বাস্তবের কঠিন কাজগুলো এড়িয়ে চলতে শেখায়।’

তবে ট্র্যাভিস এখনো বিশ্বাস করেন, তিনি বাস্তবতা হারাননি। বরং তিনি বলেন, ‘যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করাই বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা হয়, তাহলে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষই বাস্তবতার বাইরে।’

এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা সিএনএন মত দিয়েছে—ট্র্যাভিসের পরিবার এখন একধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রেম, প্রযুক্তি ও বিশ্বাস একসঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুবলীগ নেতাকে ধরতে ভবন ঘেরাও, যুবদল নেতাকে ফোন করে বললেন—‘লাভ নেই’

প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে পোস্ট দেওয়া সেই ঊর্মি চাকরিচ্যুত

জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

‘উপজেলায় এখন কী কাজ’—বলেই সাবেক মেয়রের ছেলেকে মারধর

‘আপনি তো জনপ্রতিনিধি না’ বলায় ডিসিকে প্রত্যাহার দাবিতে রাজপথে আরিফুল হক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত