Ajker Patrika

বিদেশি শিক্ষার্থী ঠেকাতে ট্রাম্প-মিলারের গোপন নীতি, কী হবে ভবিষ্যতে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩: ৪১
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি। ছবি: এএফপি
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি। ছবি: এএফপি

কয়েক মাস ধরে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক নীরব কিন্তু গভীর রূপান্তর ঘটছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘকাল ধরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা যে উন্মুক্ত নীতির চর্চা করে এসেছে, তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ২০২৫ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এই পরিবর্তন শুরু হয়েছিল ক্যাম্পাসগুলোতে ইহুদিবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই এটি এমন এক কৌশলে রূপ নিয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হলো, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাধ্য করা।

এ বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে রয়েছে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সঙ্গে মার্কিন সরকারের একটি বিতর্কিত সমঝোতা। মূলত ৪০ কোটি ডলারের গবেষণা তহবিল আটকে রেখে ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গোপন ধারা মানতে বাধ্য করা হয়। এই ধারায় বলা হয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তার অর্থনৈতিক মডেল পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের টিউশন-ফির নির্ভরতা কমাতে হবে। যদিও এই শিক্ষার্থীরাই সাধারণত অধিক ফি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

এই পরিবর্তনের মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন ট্রাম্পের উপপ্রধান উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার। তাঁর দীর্ঘদিনের অভিবাসনবিরোধী অবস্থান এখন শিক্ষাক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলার ও তাঁর সহযোগীরা এই ধরনের চুক্তি চাপিয়ে দিচ্ছেন, যেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নয়, বরং তাঁদের জাতীয়তা হয়ে উঠছে মূল বিষয়।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির উদাহরণ প্রমাণ করে, এই কৌশল কতটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় তাঁদের ওপর কলাম্বিয়ার মতো কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, যেসব প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক পরিচয়ে দৃঢ়, তারাই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান নিশানা হচ্ছে।

তবে অর্থনৈতিকভাবে এই পদক্ষেপ ভয়াবহ। ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে বিদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার যোগ করেছেন এবং প্রায় ৩ দশমিক ৮ লাখ চাকরি সহায়তা দিয়েছেন। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কম্পিউটার সায়েন্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়গুলোতে ৭০ শতাংশের বেশি স্নাতক শিক্ষার্থী বিদেশি। এই শিক্ষার্থীদের প্রবেশ সীমিত করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকেই বিপন্ন করবে।

শুধু ভর্তির ক্ষেত্রেই নয়, বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাজ করার সুযোগও সংকুচিত করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ওপিটি ও এসটিইএম ওপিটি সুবিধা বাতিলের পরিকল্পনা করছে এবং এইচ-১বি ভিসানীতিতে এমন পরিবর্তন আনার কথা বলছে, যাতে আন্তর্জাতিক স্নাতকেরা বঞ্চিত হন। এমনকি ‘স্থিতি সময়কাল’ নীতিও বাতিল করে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতিতে প্রশাসনিক বাধা সৃষ্টি করার প্রস্তাব এসেছে।

মার্কিন জন্মহার কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে স্থানীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাবে—এমন পূর্বাভাস থাকলেও প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি উল্টো। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি যেখানে উদ্ভাবন, প্রতিযোগিতা ও বৈচিত্র্য বাড়ায়, সেখানে এই নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রকে একধরনের অন্তর্মুখী সমাজে পরিণত করছে।

বলা যায়—ট্রাম্প প্রশাসনের এই কৌশল শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, গোটা মার্কিন শিক্ষাব্যবস্থার উন্মুক্ততা, বৈচিত্র্য ও বিশ্ব নেতৃত্বের ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ করছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি তো রয়েছেই, সবচেয়ে বড় ক্ষতি হতে চলেছে জ্ঞানবিনিময়ের সেই ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের, যা যুক্তরাষ্ট্রকে এত দিন বিশ্বে উচ্চশিক্ষার নেতৃত্ব দিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই জাতীয় সনদ: গণভোটের সময়ে অনড় জামায়াত-এনসিপি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব এহসানুল হক

লন্ডনে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছিলেন রোজিনা

গাজায় অবস্থান পুনরুদ্ধার করছে হামাস, ইসরায়েলপন্থীদের দিচ্ছে শাস্তি

সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিচারের মুখোমুখি হোক—সেনা কর্মকর্তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত