Ajker Patrika

ভারতে সিন্ধু নদের ওপর স্থাপনায় হামলার হুংকার পাকিস্তানের, প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ১২: ২২
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ভারত যদি সিন্ধু নদের পানি সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোনো ধরনের অবকাঠামো তৈরি করে, তবে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এমনকি, ভারত যদি পাকিস্তানে কোনো ধরনের হামলা চালায়, তবে দেশটিতে ইসলামাবাদ পূর্ণ শক্তি নিয়েই হামলা চালাবে, এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারও করতে পারে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির পৃথক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এ ঘটনার পর ভারত ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি (ইন্ডাস ওয়াটারস ট্রিটি বা আইডব্লিউটি) স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা এত দিন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধকালেও বহাল ছিল।

পানি চুক্তি স্থগিত করার জবাবে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে যে, ভারত যদি সিন্ধু নদে কোনো ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলে, তবে তারা তা গুঁড়িয়ে দেবে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘ভারত যদি সিন্ধু নদে কোনো স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করে, তবে আমরা তা ধ্বংস করে দেব। এটা আমাদের কাছে সরাসরি আগ্রাসন হিসেবে বিবেচিত হবে।’

খাজা আসিফ আরও বলেন, ‘আগ্রাসন মানে শুধু গুলি কিংবা কামান দাগা নয়। পানি আটকে দেওয়া বা সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেও মানুষকে অনাহারে বা তৃষ্ণায় মারার পরিস্থিতি তৈরি করা যায়—এটাও একধরনের আগ্রাসন।’

এদিকে, রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ভারত যদি পাকিস্তানের জলাধার বা পানির প্রবাহে হস্তক্ষেপ করে কিংবা দেশটিতে হামলা চালায়, তাহলে পাকিস্তান তাদের পুরো সামরিক ক্ষমতা—যার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রও রয়েছে—ব্যবহার করবে।

রাশিয়ার গণমাধ্যম আরটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খালিদ জামালি বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছু গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে—ভারত পাকিস্তানে সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে। আমাদের ওপর হামলা হলে কিংবা আমাদের পানি বন্ধ করা হলে সেটাকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং আমরা পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেব।’

অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই গতকাল শনিবার পাকিস্তান সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার পাল্লার ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ‘আবদালি’ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এটি প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় ধরনের অস্ত্র বহনে সক্ষম। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল ‘চূড়ান্ত প্রস্তুতি’ নিশ্চিত করা।

ভারত এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘গভীর উসকানি’ হিসেবে দেখছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে। যদিও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। একই দিনে ভারত পাকিস্তান থেকে আসা কিংবা সে দেশের ভেতর দিয়ে আসা সব ধরনের পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ছাড়া ভারতীয় জাহাজগুলো পাকিস্তানের বন্দরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানও ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজ ও আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উভয় দেশই মেরিটাইম বাণিজ্য কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে ডাকে পাঠানো চিঠি ও পার্সেল পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পাঞ্জাব সীমান্তে অবস্থিত আটারি-ওয়াঘা স্থলবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। বিশ্লেষকদের মতে, পরস্পরের প্রতি দেওয়া এসব হুমকি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত