Ajker Patrika

নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আল-আকসায় ঢুকে পড়ল ইসরায়েলিরা, ফিলিস্তিনিদের মারধর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ১৩: ৩১
জেরুজালেম মার্চে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ও কট্টর ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন-গভির। ছবি: এএফপি
জেরুজালেম মার্চে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ও কট্টর ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন-গভির। ছবি: এএফপি

আবারও নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডে প্রবেশ করল ইসরায়েলিরা। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জেরুজালেম দিবস’-এর মিছিল চলাকালীন উগ্রবাদী ইহুদিরা এ কাণ্ড করেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের পর জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে চলে যাওয়ার দিনকে ‘জেরুজালেম দিবস’ হিসেবে উদ্‌যাপন করে কট্টরপন্থী ইহুদিরা।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করে কমপক্ষে ২ হাজার ইসরায়েলি। এর মধ্যে ছিলেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী কট্টর ডানপন্থী নেতা ইতামার বেন-গভিরও। ইসলাম ধর্মে তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত এই মসজিদে উপস্থিত হয়ে সামাজিক মাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। ওই ভিডিওতে তাঁর সঙ্গে ইসরায়েলি পার্লামেন্টের সদস্য ইৎজাক ক্রুজার এবং নেগেভ ও গালিলি অঞ্চলের মন্ত্রী ইৎজাক ভাসেরলফকেও দেখা যায়। ভিডিওতে বেন-গভির বলেন, ‘প্রার্থনা করেছি যেন এই যুদ্ধে আমরা জয়লাভ করতে পারি। পাশাপাশি হামাসের হাতে জিম্মি সবাইকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ফেরত আনা এবং শিন বেতের নতুন প্রধানের সফলতা চেয়েছি।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরাতন জেরুজালেমের মুসলিম কোয়ার্টারের পাশ দিয়ে ‘জেরুজালেম মার্চ’ নামে শোভাযাত্রা করে ইসরায়েলিরা। এ সময় তারা ‘আরব নিপাত যাক’, ‘তোদের বসতি জ্বলুক’—এ ধরনের স্লোগান দেয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে বসবাসকারী দখলদার ইসরায়েলি। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তারা ওই অঞ্চলের অবৈধ বাসিন্দা হিসেবে চিহ্নিত।

এর আগেও পুলিশি নিরাপত্তায় আল-আকসা কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন বেন-গভির। বেন-গভিরের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে উসকানিমূলক আখ্যা দিয়েছে বিভিন্ন মহল।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করলেও, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, ইসলাম ধর্মীয় স্থানগুলোর প্রশাসন মুসলিম কর্তৃপক্ষের অধীনেই থাকবে, যদিও নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে ইসরায়েলের হাতে। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘স্থিতাবস্থার নীতি’। এর আওতায়, আল-আকসা চত্বরে শুধু মুসলিমদেরই প্রার্থনার অনুমতি আছে, সেখানে অমুসলিমদের প্রবেশ সীমিত এবং প্রার্থনা নিষিদ্ধ। এই চত্বরের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে জর্ডান সরকারের নিযুক্ত ইসলামিক ওয়াকফ কাউন্সিলের হাতে। ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ এর তত্ত্বাবধান করে থাকে। এই মসজিদ চত্বরকে ধর্মীয় পবিত্রতা ও মুসলিম অধিকার রক্ষার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যকার শান্তিচুক্তিতেও এই দায়িত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্টও আল-আকসা চত্বরে ইহুদিদের প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিয়েছে। এ ছাড়া, জাতিসংঘসহ অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা পূর্ব জেরুজালেমকে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে এবং সেখানে ইসরায়েলের হস্তক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয়।

গতকালের শোভাযাত্রা থেকে হামলা করা হয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর সদর দপ্তরেও। ইউএনআরডব্লিউএর পশ্চিম তীরের সমন্বয়ক রোলান্ড ফ্রেডরিক বলেন, ‘পুলিশের সামনেই কয়েক ডজন ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী সদর দরজা টপকে ইউএনআরডব্লিউএ কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন পার্লামেন্ট সদস্য ইউলিয়া মালিনভস্কি। ইউএনআরডব্লিউএর ওপর ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের মূল হোতা তিনিই।’

এ ছাড়া, স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের ওপরও আক্রমণ চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলিরা। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে বেশ কয়েকটি ভিডিও—যেগুলোতে দেখা যায়, ইসরায়েলি পতাকা হাতে বেশ কয়েকজন কিশোর ফিলিস্তিনি দোকানিদের হয়রানি করছে। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুরো এলাকায় মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত কয়েক হাজার সশস্ত্র পুলিশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তি আলোচনা ব্যর্থ, পাকিস্তানকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলল তালেবান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ। ছবি: সংগৃহীত
তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ। ছবি: সংগৃহীত

কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তানকে দায়ী করেছে তালেবান সরকার। তবে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ সত্ত্বেও তালেবান জানিয়েছে, আগে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বহাল থাকবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার কোনো সমাধান ছাড়াই তৃতীয় দফা আলোচনা শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ আগে তালেবান দাবি করে, সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত ও আহত হয়েছেন।

দুই দিনব্যাপী আলোচনা ‘সদিচ্ছার সঙ্গে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, দুই দিনের আলোচনা সৎ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হয়েছিল। তালেবান আশা করেছিল, ইসলামাবাদ ‘একটি মৌলিক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য বাস্তবসম্মত এবং বাস্তবায়নযোগ্য দাবি’ পেশ করবে।

কিন্তু তিনি অভিযোগ করেন, আলোচনায় পাকিস্তান তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার দায় সম্পূর্ণভাবে আফগান সরকারের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছে অথচ আফগানিস্তানের নিরাপত্তা কিংবা নিজেদের দায়িত্ব পালনে কোনো সদিচ্ছা দেখায়নি।

মুজাহিদ বলেন, পাকিস্তান আলোচনায় ‘দায়িত্বহীন ও অসহযোগিতামূলক মনোভাব’ দেখিয়েছে, ফলে আলোচনার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তালেবান যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেনি এবং সেটি বহাল থাকবে।

অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকার তালেবানের বিবৃতির তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে শুক্রবার ইসলামাবাদও স্বীকার করে, যে আলোচনা অচলাবস্থায় রয়েছে। তবে কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, ইসলামাবাদ ‘আফগান জনগণ বা প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে তালেবান সরকারের কোনো পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না।’

পাকিস্তানের অভিযোগ, কাবুল সরকার ২০২১ সালের দোহা শান্তি চুক্তিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে—বিশেষত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। ইসলামাবাদের দাবি, আফগানিস্তান পাকিস্তানি তালেবানের (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি) মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা পাকিস্তানে একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।

এসব হামলার জবাবে পাকিস্তান আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে বেশ কিছু বিমান হামলা চালায়। তবে তালেবান পাকিস্তানের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা কোনো দেশকে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে অন্য দেশের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড চালাতে দেব না, তেমনি অন্য কোনো দেশকেও আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা বা নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করতে দেব না।’

জবিউল্লাহ আরও বলেন, পাকিস্তানের জনগণ আমাদের বন্ধু ও ভাই, কিন্তু ‘যেকোনো আগ্রাসনের জবাবে আফগানিস্তান দৃঢ়ভাবে প্রতিরক্ষা করবে।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের প্রথম দিকে শুরু হওয়া লড়াইয়ে আফগান সীমান্ত এলাকায় ৫০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। কাবুলে বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তালেবানের হামলায় তাদের ২৩ জন সেনা নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন। তবে বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচনী সহিংসতার পর তানজানিয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ছড়াছড়ি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৭
তানজানিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামে ২৪০ জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
তানজানিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামে ২৪০ জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনী সহিংসতার পর কমপক্ষে ২৪০ জন বিক্ষোভকারীকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে তানজানিয়ার একটি আদালত।

পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে গত ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সামিয়া সুলুহু হাসান ৯৮ শতাংশ ভোটে জয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে বিরোধী দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়ায় তারা এ নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করে।

ভোটের ফলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে বলা হচ্ছে, শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সহিংসতার ব্যাপ্তি কমিয়ে দেখিয়েছে এবং দাবি করেছে, নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ ছিল।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর বহু মানুষকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে অন্তত ২৪০ জনের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার তানজানিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী দার এস সালামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়। আদালতে তাদের এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন জানাতে বলা হয়নি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিযুক্তরা নির্বাচনে বাধা দেওয়ার উদ্দেশে বিক্ষোভ উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে তানজানিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বদলে সাধারণত তা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত করা হয়।

দেশটিতে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে।

গতকাল যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আফ্রিকার দেশটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জেনিফার জোভিন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শ্যাল থেকে রক্ষা পেতে বিক্ষোভকারীদের গ্যাস মাস্ক কেনার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

অভিযুক্তদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ নভেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘আমি স্কুলে যেতে চাই না’, আত্মহত্যার আগে বলেছিল ৯ বছরের আমাইরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৬
সিসিটিভি ফুটেজে শিশুটিকে রেলিং থেকে ঝাঁপ দিতে দেখা গেছে। ছবি: স্ক্রিনশট
সিসিটিভি ফুটেজে শিশুটিকে রেলিং থেকে ঝাঁপ দিতে দেখা গেছে। ছবি: স্ক্রিনশট

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরে একটি নামকরা স্কুল, নীরজা মোদী স্কুল। সেই স্কুল প্রাঙ্গণেই ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। গত ১ নভেম্বর স্কুলের চার তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আমাইরা মীনা (৯)। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আমাইরার বাবা-মায়ের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাদের কন্যা স্কুলে সহপাঠীদের দ্বারা বুলিং, টিজিং এবং ‘যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ’ মৌখিক হেনস্তার শিকার হচ্ছিল। এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

আমাইরার মা শিবানী মীনা জানিয়েছেন, এক বছর আগে তিনি তাঁর মেয়ের কান্নার একটি হোয়াটসঅ্যাপ অডিও রেকর্ড করেছিলেন। সেই ক্লিপে চতুর্থ শ্রেণির এই খুদে ছাত্রীকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়: ‘আমি স্কুলে যেতে চাই না...আমাকে স্কুলে পাঠিও না।’

মা শিবানী মীনার অভিযোগ, তিনি এই অডিওটি মেয়ের ক্লাস শিক্ষিকাকে পাঠিয়েছিলেন। এরপরেও গত এক বছরে তিনি একবার নয়, বহুবার ক্লাস শিক্ষিকা এবং ক্লাস কোঅর্ডিনেটরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ হয় সেই কথা উড়িয়ে দিত, নয়তো সম্পূর্ণ উপেক্ষা করত।

আমাইরার বাবা বিজয় মীনা বলেন, একটি অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠকের একদল ছেলে আমাইরা ও অন্য এক ছেলেকে লক্ষ্য করে ইশারা করছিল। বিজয় মীনার পেছনে তখন লজ্জায় লুকিয়ে পড়ে আমাইরা। তিনি বিষয়টি শিক্ষিকাকে জানান।

বিজয় মীনা বলেন, ‘শিক্ষিকা আমাকে বলেছিলেন, এটি একটি সহশিক্ষা স্কুল এবং আমাইরার সব বাচ্চার সঙ্গে, এমনকি ছেলেদের সঙ্গেও কথা বলতে শেখা উচিত। আমি তাঁকে বলেছিলাম, ছেলের সঙ্গে কথা বলবে কি না, সেটা আমার মেয়ের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’

তদন্তকারীরা শ্রেণিকক্ষের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন। ফুটেজে দেখা যায়, রেলিং বেয়ে ঝাঁপ দেওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগেও আমাইরা দু’বার তার শিক্ষিকার কাছে গিয়েছিল। কিন্তু সে কী বলেছিল, তা জানা যায়নি, কারণ সিসিটিভি ফুটেজে কোনো শব্দ বা অডিও নেই।

আমাইরার কাকা সাহিল এ বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জবাব চাই। আমরা জানতে চাই, ৫ হাজার শিশু এবং ছয়তলা একটি ভবনে সুরক্ষার জন্য গ্রিল বা জাল ছাড়া স্কুলটি অতিরিক্ত তলা নির্মাণের অনুমতি পেল কীভাবে? এটা তো প্রাথমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কেন সিবিএসই নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও সিসিটিভি ফুটেজে অডিও নেই? এটি জয়পুরের একটি স্বনামধন্য স্কুল। তারা মোটা অঙ্কের ফি নেয়, কিন্তু জবাবদিহি কোথায়?’

জয়পুরের ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ, রাজর্ষি রাজ ভার্মা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, তাঁরা অভিভাবকের বয়ান গ্রহণ করেছেন এবং সব তথ্য যাচাই করছেন। তিনি বলেন, ‘অভিভাবকেরা কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না, কিন্তু এখন তাঁদের উদ্বেগগুলো আমরা নথিভুক্ত করছি এবং তদন্ত করে দেখব।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক), রামনিবাস শর্মা জানিয়েছেন, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁর বিভাগ অভিভাবকদের বয়ান রেকর্ড করবে।

‘খারাপ শব্দ’ ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি সরাসরি তাঁর নজরে আসেনি, তবে কিছু শিশু উল্লেখ করেছে যে আমাইরা সেদিন স্কুলে যেতে চায়নি এবং অন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী খারাপ শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ করেছিল।

স্কুল কর্তৃপক্ষ এই মর্মান্তিক ঘটনা এবং অভিযোগ প্রসঙ্গে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনার পরও হাঙ্গেরিকে কেন ছাড় দিলেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ছবি: সংগৃহীত
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কেনা দেশগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাঝে হাঙ্গেরির প্রতি সদয় হলেন তিনি। আগামী এক বছরের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা থেকে দেশটিকে অব্যাহতি দিয়েছেন তিনি। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা।

এর আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, হাঙ্গেরিকে নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন তিনি।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় থেকে রাশিয়ার সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন তিনি।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসে অরবানকে স্বাগত জানানোর সময় ট্রাম্প বলেন, এই অব্যাহতি বিবেচনাধীন রয়েছে, কারণ অন্যান্য জায়গা থেকে তেল ও গ্যাস সংগ্রহ করা অরবানের জন্য খুবই কঠিন।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম তেল সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করে। যেসব দেশ তাদের কাছ থেকে তেল কিনবে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন ট্রাম্প।

অরবান ও ট্রাম্পের সাক্ষাৎ শেষে হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজিয়ার্তো এক্স-এ লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র বুদাপেস্টকে ‘তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে সম্পূর্ণ ও সীমাহীন ছাড়’ দিয়েছে। তবে পরে এক মার্কিন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, এই ছাড় সময়সীমাবদ্ধ এবং এক বছরের জন্য প্রযোজ্য।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে অরবানের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, তিনি আগেই বলেছিলেন এই নিষেধাজ্ঞা তাঁর দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেবে।

হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ট্রাম্প হাঙ্গেরির অবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখান। তিনি বলেন, দেশটি সমুদ্রবেষ্টিত নয় এবং রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। তবে সে সময় তিনি নির্দিষ্ট কোনো নিশ্চয়তা দেননি।

পরে বিষয়টি স্পষ্ট হয়, ট্রাম্প আসলে এক বছরের জন্য ছাড় অনুমোদন করেছেন। যা তাঁর আগের অবস্থান থেকে পুরোপুরি ভিন্ন। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও তিনি রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস কিনলে নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।

চুক্তির অংশ হিসেবে হাঙ্গেরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েকশ কোটি ডলারের প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে রাজি হয়েছে। তবে এই চুক্তিকে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ ভালোভাবে নেবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, তারা দীর্ঘদিন ধরেই হাঙ্গেরির মস্কো-পন্থী অবস্থানের বিরোধিতা করে আসছে।

ভিক্টর অরবান ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক মিত্র। অভিবাসন ও সামাজিক ইস্যুতে ট্রাম্পের ডানপন্থী জনপ্রিয় বক্তব্যগুলোকেও তিনি প্রায়ই প্রতিধ্বনিত করেন। এই আনুগত্যই সম্ভবত তাঁকে বিশেষ সুবিধা এনে দিয়েছে, বিশেষত এমন সময়ে যখন তিনি আগামী বসন্তে কঠিন নির্বাচনের মুখে।

ট্রাম্প আরও বলেন, হাঙ্গেরি ভৌগোলিক সমস্যার মুখে আছে। তাদের তেল উত্তোলনের জন্য কোনো সমুদ্রপথ নেই। তবে তিনি ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে নিয়ে, যারা সমুদ্রবেষ্টিত না হয়েও এখনো রাশিয়ার পণ্য কিনছে।

শুক্রবার অরবান বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্ক ‘আদর্শিক বা রাজনৈতিক নয়’, বরং ‘ভৌত বাস্তবতা’, কারণ হাঙ্গেরির কোনো বন্দর নেই।

তিনি রাশিয়ান তেল ও গ্যাসের ওপর দেশের নির্ভরশীলতাকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন। একই সঙ্গে এটি তাঁর নির্বাচনী কৌশলেরও অংশ, যেখানে তিনি আগামী এপ্রিলে পুনর্নির্বাচনের আশায় ভোটারদের ‘সস্তা রাশিয়ান জ্বালানি; দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শুক্রবার ট্রাম্প ও অরবান ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা করেন। ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর এটিই ছিল তাঁদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়ও উঠে আসে।

ট্রাম্প বলেন, ‘অরবান পুতিনকে ভালোভাবে বোঝেন, তাঁকে চেনেনও ভালোভাবে। আমার মনে হয় ভিক্টর মনে করছেন, আমরা খুব শিগগিরই এই যুদ্ধের ইতি টানতে পারব।’

এ প্রসঙ্গে অরবান বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তি চায় কেবল তাঁর দেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য সরকারগুলো যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, কারণ তারা মনে করে ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে জয় পেতে পারে। যা আসলে পরিস্থিতি ভুলভাবে বোঝা।’

এরপর ট্রাম্প তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তাহলে আপনি বলবেন, ইউক্রেন এই যুদ্ধ জিততে পারবে না?’ জবাবে অরবান বলেন, ‘জানেন তো, অলৌকিক ঘটনা ঘটতে পারে।’

তেল ও গ্যাস নিষেধাজ্ঞার ইস্যু ছাড়াও হাঙ্গেরির রপ্তানিনির্ভর গাড়ি শিল্প ট্রাম্পের ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে দেশের দুর্বল অর্থনীতি আরও চাপে পড়েছে।

অভিবাসন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ইস্যুতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে প্রায়ই দ্বন্দ্বে জড়ানো অরবানের প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ‘ইউরোপের উচিত এই নেতাকে গভীরভাবে সম্মান করা, কারণ অভিবাসন ইস্যুতে তিনি একদম ঠিক ছিলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত