Ajker Patrika

মানবতা ভেঙে চুরমার

আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০: ২৬
মানবতা ভেঙে চুরমার

ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হচ্ছে শিশুদের নিথর দেহ। একে একে বের করে আনা হচ্ছে বেসামরিক মানুষের লাশ। সাদা কাফনে মোড়ানো লাশে ভরে গেছ তাঁবু। আর এদিক-ওদিক যেদিকে নজর যায়, কেবল ইসরায়েলি হামলার ক্ষতচিহ্ন ধারণ করা বিধ্বস্ত ভবন। 

এসব দৃশ্যপটের মধ্যে নিয়মিত অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে চলেন মাহমুদ বাদাউই। তিনি যেন নিজের চোখের সামনে মানবতাকে বিস্ফোরিত হয়ে ভেঙে পড়তে কিংবা জ্বলতে দেখছেন। 

মাহমুদ গাজা উপত্যকায় যা দেখছেন, তা বোঝানোর মতো ভাষা তাঁর মুখে নেই। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এখানকার (গাজা) পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন, যা বর্ণনাতীত। এখানে যা ঘটছে, একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক হিসেবে আপনাকে অভ্যস্ত হতেই হবে। হতাহত মানুষের হাত, মাথা বা কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন থাকলেও আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি, না হয়ে উপায় নেই।’ 

এমন নারকীয় দৃশ্যপট থেকে অন্য দৃশ্যপটে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে চলেন মাহমুদ। এটিই তাঁর কাজ। গাজার একটি সংকীর্ণ গলিতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুই শিশু নিহত হয়েছে। লাশগুলো নিতে এসেছেন তিনি। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, এক ব্যক্তি আহত শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। 
মাহমুদ তাঁর স্বাস্থ্যকর্মী বন্ধুকে চিৎকার করে ডাকলেন। অনুরোধ করলেন, তিনি যেন আহত শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। 

মাহমুদ যখন বিবিসির সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছেন, আশপাশে তখনো ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের অসহনীয় শব্দ শোনা যাচ্ছে। এবার মাহমুদ বলেন, ‘যেভাবে বিস্ফোরণ ঘটছে, তাতে আমরা খুব একটা বিশ্রামের সময় পাই না। এখন আমরা বিস্ফোরণের এলাকাটি খুঁজে বের করব, এরপর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করব।’ 

মাহমুদ জানালেন, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করা এসব কর্মীর নিরাপদ কোনো ঘর নেই। আর কোথায় পালাবেন গাজার বাসিন্দারা? পালানোর জায়গাটা কোথায়? এর আগে গাজার উত্তরাঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দাকে উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরায়েল; কিন্তু সেখানেও বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। 

মাহমুদ যখন বাইরে কাজে থাকেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁর ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়। একই রকম দুশ্চিন্তা তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও। যখন বোমা হামলার মাত্রা বেড়ে যায়, পরিবারের খোঁজ নিতে প্রতি ঘণ্টায় ফোন করার চেষ্টা করেন মাহমুদ। কিন্তু টেলিফোনে যোগাযোগ করাটাও এখানে খুব কঠিন। সব সময় নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। 

মাহমুদ সমাজসেবা করার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষা এবং পরিবারের ভরণপোষণের জন্য এ কাজ করছেন। তিনি তাঁর সন্তানদের নিয়ে গর্বিত। তাঁর মেয়ে চিকিৎসক হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছে। এর পেছনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বাবা মাহমুদ এবং শৈশব থেকে দেখা আসা গাজার পরিস্থিতি। মাহমুদ জানালেন, তাঁর আরেক ছেলে নার্স হিসেবে কাজ করছেন। 

মাহমুদ আপাতত কথা বলার অবসর পেয়েছিলেন। তবে শিগগিরই তাঁকে আবার ছুটতে হয় অন্য ধ্বংসস্তূপের দিকে। 

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা গতকাল ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজারই শিশু। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত