Ajker Patrika

মিয়ানমারের খনিজ পেতে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনায় ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়ানমারে বিরল খনিজের খনি। ছবি: ডয়েচে ভেলে
মিয়ানমারে বিরল খনিজের খনি। ছবি: ডয়েচে ভেলে

ভারত মিয়ানমারের শক্তিশালী এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সহায়তায় দেশটি থেকে বিরল খনিজ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে অবগত চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীনের কড়া নিয়ন্ত্রণে থাকা এ কৌশলগত সম্পদের বিকল্প উৎস খুঁজছে দিল্লি। ভারতের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের খনিগুলো থেকে বিরল খনিজের নমুনা সংগ্রহ ও পরিবহনের উদ্যোগ নিতে বলেছে। অপর তিনটি সূত্র জানিয়েছে, এসব খনি মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মির (কেআইএ) নিয়ন্ত্রণে।

খবরে বলা হয়েছে, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইআরইএল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিডওয়েস্ট অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস কেআইএ—এর সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল বলে জানান ওই তিন সূত্র। মিডওয়েস্ট অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস গত বছর বিরল খনিজ চুম্বক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য ভারত সরকারের তহবিল পেয়েছে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আশা করছে—নমুনাগুলো দেশে এনে পরীক্ষা করে দেখা হবে, সেগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে ভারী বিরল খনিজ আছে কি না। কাচিনে ভারতীয় কোম্পানিগুলো যেসব খনিজের নমুনা সংগ্রহ করেছে সেগুলো সাধারণত বৈদ্যুতিক যানবাহন ও উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির জন্য চুম্বক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

দুটি সূত্রের দাবি, ভারতের খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গত জুলাইয়ে এই অনুরোধ জানায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে। সে সময় এক অনলাইন বৈঠকে আইআরইএল, মিডওয়েস্ট ও অন্তত আরও একটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কাচিন আর্মির এক কর্মকর্তা জানান, ভারতীয়দের বিশ্লেষণ করতে দেওয়ার জন্য নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে বিদ্রোহীরা। তারা ভারতে খনিজের ব্যাপক রপ্তানি সম্ভব কি না, তা মূল্যায়ন করতেও রাজি হয়েছে।

কেআইএ-এর সঙ্গে ভারতের এই যোগাযোগের খবর প্রথমবারের মতো প্রকাশ করল রয়টার্স। ভারতের পররাষ্ট্র ও খনিজ মন্ত্রণালয় রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি। আইআরইএল ও মিডওয়েস্টের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কেআইএ-র মুখপাত্র ফোন ও বার্তায় সাড়া দেননি।

বিরল খনিজ তুলনামূলক প্রচুর থাকলেও এগুলোকে চুম্বকে রূপান্তরের প্রযুক্তি প্রায় পুরোপুরি চীনের নিয়ন্ত্রণে। চীন এ বছর ভারতসহ বড় বড় অর্থনীতির কাছে প্রক্রিয়াজাত খনিজ রপ্তানি কড়াভাবে সীমিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে কৌশলগত চাপ বজায় রাখতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সরবরাহ নিশ্চিত করতে দিল্লি সক্রিয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ৩১ আগস্ট জানান, চীনে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং-এর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বিরল খনিজ খনন নিয়ে আলোচনা করেছেন। হ্লাইং-এর সেনারা বর্তমানে কেআইএ-এর সঙ্গে কাচিনের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। তবে এই বিষয়ে কোনো চুক্তি প্রকাশ্যে ঘোষণা হয়নি এবং মিয়ানমার সেনা সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য আসেনি।

শিল্পোৎপাদন পর্যায়ে বিরল খনিজকে উচ্চমানের বিশুদ্ধতায় প্রক্রিয়াকরণে ভারতের সক্ষমতা এখনো অত্যন্ত সীমিত। আইআরইএল জাপানি ও কোরিয়ান কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারত্ব খুঁজছে বিরল খনিজ চুম্বক বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য।

কেআইএ-র সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আলোচনায় জড়িত এক ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজে ভারতের আগ্রহ গোপন কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য সরবরাহকারীদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সহযোগিতার মাধ্যমে বিরল খনিজ নিশ্চিত করার পক্ষে।’ তবে সরাসরি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গে কিছু বলেননি।

রয়টার্স আগে জানিয়েছিল, গত ডিসেম্বরে আইআরইএল-এর একটি দল মিয়ানমারের কাচিনে গিয়ে খনিজসম্পদ প্রাপ্যতার বিষয়টি যাচাই করেছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনও মিয়ানমারের বিরল খনিজ আহরণের প্রস্তাব পেয়েছিল, যার মধ্যে ভারতের সহযোগিতার প্রস্তাবও ছিল।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিশ্লেষক অংশুমান চৌধুরী জানান, চীনের কেআইএ-এর সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্ক রয়েছে এবং কেআইএ চীনকেও খনিজ সরবরাহ করে। তিনি বলেন, ‘যদি চীন বিরল খনিজ নিশ্চিত করতে কেআইএ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে, তবে ভারত কেন পিছিয়ে থাকবে? প্রতিযোগিতার বাস্তবতাই এ যোগাযোগকে ব্যাখ্যা করে।’

রয়টার্সকে দেওয়া এক প্রশ্নে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, বেইজিং জানে না কেআইএ ভারতের সঙ্গে কাজ করছে কি না। তবে তিনি বলেন, ‘উত্তর মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চীনের গঠনমূলক ভূমিকাকে প্রশংসা ও ধন্যবাদ জানায়।’

কেআইএ ১৯৬১ সালে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু কাচিন জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত হয়। ধীরে ধীরে এটি দেশের অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করার পর দেশজুড়ে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় কেআইএ চীন-সমর্থিত জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মূল স্তম্ভে পরিণত হয়।

গত বছর কেআইএ জান্তাপন্থী বাহিনীর কাছ থেকে কাচিন অঙ্গরাজ্যের চিপওয়ে-পাংওয়া খনি এলাকা দখল করে, যা বিশ্বে ভারী বিরল খনিজ—ডিসপ্রোসিয়াম ও টার্বিয়ামের—বৃহত্তম সরবরাহকারী। যদিও কেআইএ চীনকে এসব খনিজের সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছে, তবু তাদের সম্পর্ক অচলাবস্থায় পড়েছে জান্তা সেনাদের সঙ্গে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভামো শহরের লড়াই নিয়ে।

চীন জান্তাকে নিজের প্রভাব বলয়ে স্থিতিশীলতার রক্ষক হিসেবে দেখে এবং কেআইএ-কে পিছিয়ে আসার চাপ দিচ্ছে। অন্যদিকে, কেআইএ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। দিল্লির কর্মকর্তারা কেআইএ-এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে বিরল খনিজ সরবরাহপথ তৈরি করতে আগ্রহী। তবে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের কারণে বিপুল পরিমাণ খনিজ ভারতে আনা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ আছে বলে জানান দুই সূত্র।

খনিজ চীনে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী সড়কপথে। আলোচনায় আইআরইএল জড়িত থাকলেও পরিবহনের দায়ভার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়া হোক, এমনটাই চায় সংস্থাটি বলে জানিয়েছেন অবগত তিনটি সূত্র। তবে ভারত ও কেআইএ খনিজ সরবরাহে সমঝোতায় এলেও চীনের সাহায্য ছাড়া সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ বড় চ্যালেঞ্জ হবে, জানান বেলজিয়ামভিত্তিক খনিজ বিশেষজ্ঞ নাবিল মানচেরি।

তিনি বলেন, ‘তাত্ত্বিকভাবে ভারত এ খনিজ পেলে তা আলাদা করে ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরি করতে পারবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য সরবরাহ দিতে এ উৎপাদন সক্ষমতায় পৌঁছাতে সময় লাগবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাদ্দাফির পুত্রকে মুক্ত করতে লেবাননে গেল লিবিয়ার প্রতিনিধি দল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত

মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল গাদ্দাফিকে মুক্ত করতে লেবাননের বৈরুতে পৌঁছেছে লিবিয়ার একটি প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি হানিবালের মুক্তির জন্য ১১ মিলিয়ন ডলারের জামিন দাবি করেছিল লেবাননের আদালত। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা।

লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পুত্র হানিবাল ২০১৫ সাল থেকে কোনো বিচার ছাড়াই লেবাননের কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লেবাননের প্রভাবশালী শিয়া ধর্মীয় নেতা মুসা আল সদরের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য লুকিয়ে রেখেছেন।

মুসা আল সদর ১৯৭৮ সালে গাদ্দাফির আমন্ত্রণে লিবিয়ায় সফরে যান এবং সেখান থেকেই তিনি নিখোঁজ হন। সদর যখন নিখোঁজ হন, হানিবাল তখন মাত্র দুই বছরের শিশু। তাই এই বিষয়ে কোনো তথ্য গোপনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, গত মাসে (অক্টোবর) লেবাননের আদালত হানিবালকে ১১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে হানিবালের আইনজীবীরা তখন দাবি করেন, বিপুল এই অর্থ পরিশোধে তিনি সক্ষম নন। এ ছাড়া আদালতের আদেশ অনুযায়ী, হানিবালকে মুক্তি দেওয়া হলেও লেবানন ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অতীতে তিনি বন্দী অবস্থায় অনশন ধর্মঘটও পালন করেছিলেন।

এদিকে হানিবালের দেশ লিবিয়ান এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হানিবাল হয়তো লেবানন ও লিবিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে ছাড়পত্র পেতে পারেন।

লিবিয়ার প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইব্রাহিম দবাইবাহ। তিনি ত্রিপোলির জাতীয় একতা সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবাইবাহর ভাগনে। মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিবারের সঙ্গে দবাইবাহ পরিবারের একসময় শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।

প্রতিনিধি দলটি লেবাননের প্রেসিডেন্ট সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য ও ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারের যোগাযোগ ও রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ওয়ালিদ এল লাফি সরাসরি হানিবালের মামলার উল্লেখ না করে জানান, তাঁরা দুই দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বিচারিক সম্পর্ক আবারও চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত এবং আশা করি এই সফর শিগগিরই দৃশ্যমান ফলাফল দেবে।’

তিনি জানান, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে লেবাননের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া গেছে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন সহ দেশটির সংসদের স্পিকার নাবিহ বের্রি এই আলোচনার প্রতি ইতিবাচক মনোভব দেখিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নাবিহ বের্রি হলেন ‘আমাল আন্দোলন’ এর নেতা। বহু বছর আগে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ মুসা আল সদরই এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সদরের নিখোঁজ হওয়া এখনো লেবাননে গভীর অনুভূতি জাগায়। সদরের সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গী, শেখ মুহাম্মদ ইয়াকুব ও সাংবাদিক আব্বাস বাদরেদ্দিনও নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাই হানিবালের মুক্তির বিষয়ে সব ধরনের সমাধান ও চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে ইয়াকুবের পরিবার।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় লিবিয়া ত্যাগ করেছিলেন হানিবাল। পরে তিনি তাঁর লেবানিজ স্ত্রী আলিন স্কাফ ও সন্তানদের নিয়ে সিরিয়ায় বসবাস করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় একটি সশস্ত্র গ্রুপ তাঁকে অপহরণ করে লেবানন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। তখন থেকেই তিনি লেবাননের কারাগারে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মামদানিকে ভোট না দিতে নিউইয়র্কের ইহুদিদের প্রতি ট্রাম্পের আহ্বান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ইহুদিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন মামদানিকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ট্রাম্পের মতে, মামদানিকে ভোট দেওয়া মানে ‘বোকামি’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি একজন ইহুদিবিদ্বেষী। এটা জেনেও কোনো ইহুদি ব্যক্তি যদি তাকে ভোট দেয়, তাহলে সে স্বঘোষিত ও প্রমাণিত ইহুদিবিদ্বেষী। সেই সঙ্গে সে একজন বোকা মানুষ!!!’

এর আগে গত রোববার (২ নভেস্বর) মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি নিউইয়র্কে একজন কমিউনিস্ট মেয়র হয়, তাহলে ওখানে অর্থ পাঠানো মানে সেই অর্থের অপচয় করা। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউইয়র্কে অনেক অর্থ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে।’

ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি বিল দে ব্লাসিওকে দেখেছি—কতটা খারাপ মেয়র ছিলেন তিনি। কিন্তু মামদানি দে ব্লাসিওর চেয়ে খারাপ।’

ট্রাম্প নিজে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। যদিও তিনি একজন রিপাবলিকান, সাক্ষাৎকারে কার্যত তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকেই সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কুমোর ভক্ত নই, তবে যদি খারাপ এক ডেমোক্র্যাট আর এক কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’

৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কমিউনিস্ট হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আমি মূলত এক স্ক্যান্ডিনেভীয় রাজনীতিকের মতো; শুধু একটু গা-চামড়ায় বাদামি।’

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উট ও সোনা বিক্রি করে সাম্রাজ্য গড়া দাগোলোর নিয়ন্ত্রণে এখন অর্ধেক সুদান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মোহাম্মদ হামদান দাগোলো। ছবি: বিবিসি
মোহাম্মদ হামদান দাগোলো। ছবি: বিবিসি

সুদানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এক ভয়ংকর নাম—মোহাম্মদ হামদান দাগোলো, যিনি ‘হেমেদতি’ নামে পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বাধীন আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এখন দেশের অর্ধেক ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। সম্প্রতি তারা সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহর দখল করে নিয়েছে। জাতিসংঘ স্বীকৃত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত ১৮ মাস ধরে আরএসএফ-এর অবরোধের কারণে ওই শহরটি এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পড়েছে।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দাগোলো কখনোই সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষিত হননি। তাঁর পরিবার ছিল রিজেইগাত সম্প্রদায়ের মহারিয়া শাখার উট ব্যবসায়ী। ১৯৭৪ বা ১৯৭৫ সালে জন্ম নেওয়া দাগোলো তাই কিশোর বয়সেই স্কুল ছেড়ে উট বিক্রি করে জীবিকা শুরু করেন। পরে তিনি লিবিয়া ও মিসরে উটের ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করেন।

সেই সময়টিতে দারফুর ছিল একটি আইনহীন বিশৃঙ্খল অঞ্চল। আরব মিলিশিয়া জাঞ্জাউইদ গোষ্ঠী এখানকার ফুর জনগোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে প্রায় সময়ই হামলা চালাত।

২০০৩ সালে এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে দারফুরে বিদ্রোহ শুরু হলে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির হামলাকারী জাঞ্জাউইদ বাহিনীকেই রাষ্ট্রীয় সমর্থন দেন। এর ফলে গণহত্যা, ধর্ষণ ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তারা ফুর জনগোষ্ঠীর বিদ্রোহ দমন করে। দাগোলোর নেতৃত্বাধীন একটি ইউনিটও ২০০৪ সালে আদওয়া গ্রামে ১২৬ জনকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এই সংঘাতকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দেয়, যদিও দাগোলো ছিলেন তখন তুলনামূলক নিম্নপদস্থ কমান্ডার।

তবে কৌশলে সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুত ক্ষমতা বাড়াতে শুরু করেন দাগোলো। প্রথমে তিনি সেনাদের বকেয়া বেতন ও ভাইয়ের জন্য পদ দাবি করে বিদ্রোহ করেন। পরে প্রেসিডেন্ট বশির তাঁকে পুরস্কৃত করে শান্ত করেন।

এ অবস্থায় দারফুরের জেবেল আমির সোনার খনি দখল করে পারিবারিক কোম্পানি ‘আল-গুনাইদ’ গড়ে তোলেন দাগোলো। অল্প সময়েই এটি সুদানের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ রপ্তানিকারক হয়ে ওঠে।

২০১৩ সালে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) গঠন করেন তিনি, যা সরাসরি আল-বশিরের অধীনে কাজ করত। পরে এই বাহিনী ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে ভাড়াটে সৈন্য পাঠায়। এর মাধ্যমে দাগোলো আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং স্বর্ণ ও অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হন।

২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট বশিরবিরোধী আন্দোলনের সময় সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে মিলে বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করেন দাগোলো। প্রথমে তাঁকে সংস্কারের প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও অচিরেই তিনি তাঁর নির্মম মুখোশ খুলে ফেলেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে প্রতিবাদীদের ওপর গুলি চালায় দাগোলোর বাহিনী আরএসএফ। এতে শত শত মানুষ নিহত হয় এবং নারীদের ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগও ওঠে।

২০২১ সালে বুরহান ও দাগোলো একসঙ্গে ক্ষমতা দখল করলেও শিগগিরই তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসতে আরএসএফ অস্বীকৃতি জানায়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়, যা এখনো চলছে। এই সংঘাতে রাজধানী খার্তুমসহ দারফুরে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসেবে শুধু দারফুরেই নিহত হয়েছে ১৫ হাজার সাধারণ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র একে গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।

বর্তমানে আরএসএফ উন্নত ড্রোনসহ আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এবং পশ্চিম সুদানের প্রায় সব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। দাগোলো এখন ‘শান্তি ও ঐক্যের সরকার’ নামে এক সমান্তরাল সরকার গঠন করেছেন এবং নিজেকে তার প্রধান ঘোষণা করেছেন।

সুদানের অনেকে মনে করেন, দাগোলো হয়তো একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করছেন, অথবা পুরো দেশ শাসনের স্বপ্ন দেখছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, তিনি এমন এক রাজনৈতিক ছায়াশক্তি হতে চান—যার হাতে থাকবে ব্যবসা, ভাড়াটে বাহিনী ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ—যাতে সরাসরি ক্ষমতায় না থেকেও তিনি পুরো দেশ পরিচালনা করতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শিশুসুলভ চেহারার অভিযোগে বিশ্বজুড়ে ‘সেক্স ডল’ বিক্রি বন্ধ করল শিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত সপ্তাহে ফ্রান্সে শিনের পণ্য বিক্রি বন্ধে বিক্ষোভ হয়। ছবি: সংগৃহীত
গত সপ্তাহে ফ্রান্সে শিনের পণ্য বিক্রি বন্ধে বিক্ষোভ হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স কোম্পানি শিন (Shein) তাদের প্ল্যাটফর্মে সব ধরনের ‘সেক্স ডল’ বিক্রি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি তাদের ওয়েবসাইটে ‘শিশুসুলভ চেহারার’ পণ্য প্রদর্শনের অভিযোগ ওঠার পরই কোম্পানিটি এ সিদ্ধান্ত নিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের শেষের দিকে ফ্রান্সের অলাভজনক সংস্থা কনজ্যুমার ওয়াচডগ প্রথম এই সেক্স ডলগুলো নিয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। কনজ্যুমার ওয়াচডগ জানায়, এসব পণ্যের বিবরণী ও আকৃতি অনেকটা ‘শিশু পর্নোগ্রাফির’ মতো।

এরপর গতকাল সোমবার কোম্পানিটি জানায়, তারা ‘অবৈধ বা অসংগতিপূর্ণ সেক্স ডল বিক্রির সঙ্গে যুক্ত সব বিক্রেতার অ্যাকাউন্ট’ স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে। শিন আরও জানায়, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তারা সাময়িকভাবে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক পণ্যের বিভাগটিও সরিয়ে নিয়েছে।

শিন নিশ্চিত করেছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘সেক্স ডল’ সম্পর্কিত প্রত্যেকটি তালিকা ও ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, তারা এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে বিক্রেতাদের ওপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে।

শিনের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান ডোনাল্ড ট্যাং বলেন, ‘আমরা সব সময় শিশুদের ওপর যেকোনো সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমাদের যেসব পণ্য নিয়ে বিতর্ক, সেগুলো তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের তালিকাভুক্ত পণ্য ছিল। আমরা এই উৎসগুলো খুঁজে বের করছি এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’

প্যারিসের প্রসিকিউটর অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শিনের পাশাপাশি অনলাইন আলি এক্সপ্রেস, তেমু ও উইশের বিরুদ্ধেও তারা শিশুদের মতো দেখতে সেক্স ডল বিক্রির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছে। প্রসিকিউটর অফিস বলেছে, তারা শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফরাসি এক সংস্থার (OFMIN) কাছে এ বিষয়ে তদন্তের ভার দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত