Ajker Patrika

ইসরায়েলের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান

‘৬০০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা জরুরি ছিল, ওদের বারবার নাকবার মুখোমুখি করা হবে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ০৯
আমানের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আহারন হালিভা। ছবি: সংগৃহীত
আমানের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আহারন হালিভা। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের সাবেক সামরিক গোয়েন্দা প্রধান আহারন হালিভা গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ ও ফিলিস্তিনিদের ওপর বারবার নাকবা তথা বিপর্যয় চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভয়ংকর মন্তব্য করেছেন। সম্প্রতি ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২–এর জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান উলপান শিশি-তে তাঁর অডিও রেকর্ডিং সম্প্রচারিত হয়। সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ‘জরুরি।’

লন্ডন থেকে প্রকাশিত ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের খবরে বলা হয়েছে, হালিভা ছিলেন ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা শাখার (আমান) প্রধান। ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।

হামাসের সেই হামলায় অন্তত ১ হাজার ১৯৫ জন নিহত হয়, যদিও প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, ওই দিন ইসরায়েলি সেনারা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে ‘হ্যানিবাল ডাইরেকটিভস।’ এর অর্থ—ওই দিন হামাস যাতে ইসরায়েলিদের বন্দী করে নিয়ে যেতে না পারে, তা ঠেকাতে নিজ জনগণকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ইসরায়েলি সেনাদের।

চ্যানেল-১২ তে সম্প্রচারিত অডিওতে হালিভাকে বলতে শোনা যায়, ‘গাজায় ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার (প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজার) মানুষ মারা গেছে, এ মৃত্যু (ইসরায়েলের জন্য) জরুরি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আবশ্যক।’ তিনি আরও বলেন, ‘৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নিহত প্রতিটি মানুষের জন্য ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মরতে হবে।’

তাঁর ভাষায়, ‘কোনো বিকল্প নেই, ফিলিস্তিনিদের বারবার নাকবার মুখোমুখি হতে হবে। যাতে তারা (ইসরায়েলে হামলার) পরিণতি বোঝে।’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমি প্রতিশোধের কথা বলছি না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা পৌঁছাতে চাই।’ গাজাকে তিনি আখ্যা দেন ‘এক বিকারগ্রস্ত এলাকা’ হিসেবে।

প্রসঙ্গত, নাকবা শব্দটির অর্থ আরবিতে হলো ‘মহাবিপর্যয়’ বা ‘মহাদুর্যোগ।’ ফিলিস্তিনি জনগণের ইতিহাসে এটি এক বিশেষ ঘটনা। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় জায়নবাদী মিলিশিয়ারা পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনিদের গ্রাম, শহর ও ঘরবাড়ি আক্রমণ করে। তখন প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ হয় এবং শরণার্থী হতে বাধ্য হয়। পাশাপাশি প্রায় ৫০০ টির বেশি ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়, যাতে তারা আর ফিরে আসতে না পারে।

এই ঘটনাকেই ফিলিস্তিনিরা ‘নাকবা’ বলে উল্লেখ করেন। তারা প্রতিবছর ১৫ মে তারিখে নাকবা দিবস পালন করেন। কারণ ১৪ মে ১৯৪৮ তারিখে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হওয়ার পরের দিন থেকেই ফিলিস্তিনিদের জন্য শুরু হয় এই মহাদুর্যোগ। সংক্ষেপে, নাকবা মানে হলো ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের ভূমি হারানো, গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুতির সেই ভয়াবহ ইতিহাস, যার প্রভাব এখনো বহমান।

অডিওতে হালিভা আরও চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে পশ্চিম তীরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে যাতে হামাস সেখানে প্রভাব বিস্তার করে। তাঁর মতে, ‘যদি পুরো ফিলিস্তিনি সমাজই অস্থিতিশীল হয়ে যায়, তবে কোনো আলোচনার সুযোগ থাকবে না। তখন আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।’

হালিভা জানান, ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধের পর হামাসকে ভেঙে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকদের সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো ইচ্ছাই ছিল না। তিনি উল্লেখ করেন, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচ চান ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) ভেঙে দিয়ে পশ্চিম তীরেও হামাসকে ক্ষমতায় আনতে, যেমনটা গাজায় হয়েছে।

তাঁর ভাষায়, ‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আছে। কিন্তু হামাস এমন এক সংগঠন, যাদের কোনো বৈধতা নেই। তাই তাদের সঙ্গে অবাধে যুদ্ধ করা যায়, আন্তর্জাতিক সমালোচনা আসে না।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েল তিন ধাপের একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। তবে মার্চে ইসরায়েল কয়েকজন বন্দী জিম্মিকে ফেরত পাওয়ার পর আবারও গাজায় বোমাবর্ষণ শুরু করে এবং আলোচনায় না গিয়েই যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলে। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা, রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

রাশিয়া খুবই বড় শক্তি, চুক্তি ছাড়া ইউক্রেনের কোনো গতি নেই: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত