Ajker Patrika

পিছিয়ে পড়ল বোয়িং ৭৩৭, বিক্রিতে ইতিহাস গড়ল এয়ারবাস এ৩২০

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এয়ারবাস এ৩২০ (ওপরে) ও বোয়িং ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজ। ছবি: সংগৃহীত
এয়ারবাস এ৩২০ (ওপরে) ও বোয়িং ৭৩৭ মডেলের উড়োজাহাজ। ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপীয় বিমান নির্মাতা সংস্থা ‘এয়ারবাস’ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তাদের জনপ্রিয় এ৩২০ সিরিজের বিমান এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া জেটলাইনার। এত দিন পর্যন্ত এই রেকর্ডটি ধরে রেখেছিল বোয়িং-৭৩৭, যা কয়েক দশক ধরে বাণিজ্যিক বিমান পরিবহনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত ছিল।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিমান-তথ্য পরামর্শ সংস্থা ‘সিরিয়াম’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সোমবার রাতে (৬ অক্টোবর) সৌদি আরবের বিমান সংস্থা ‘ফ্লাইনাস’-এর কাছে একটি নতুন এ৩২০ উড়োজাহাজ সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে এয়ারবাসের মোট ডেলিভারি সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২৬০ টি। এর মাধ্যমে তারা বোয়িং ৭৩৭-এর পুরোনো রেকর্ডকে পেছনে ফেলে দেয়। এয়ারবাসের এ৩২০ মডেলটি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক সেবা শুরু করেছিল ১৯৮৮ সালে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে এয়ারবাস কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বিমান সরবরাহ বিশ্লেষক রব মরিস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এয়ারবাস ও বোয়িং—এই দুই নির্মাতা সংস্থা মিলে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি সরু-দেহ জেট সরবরাহ করেছে। এই বিমানগুলো মূলত বড় বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনের জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরে স্বল্প খরচের বিমান সংস্থাগুলোর কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ৯ / ১১-পরবর্তী সময়ে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় বোয়িং যখন উৎপাদন কমায়, তখন এয়ারবাস এই বাজারকে আগ্রাসীভাবে দখল করে নেয়।

বর্তমানে বার্ষিক মোট বিমান সরবরাহের হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান নির্মাতা সংস্থাও এখন এয়ারবাস। সংস্থাটির এ৩২০ সিরিজের নতুন রেকর্ড মূলত গত চার দশকের ট্রান্স আটলান্টিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক ঐতিহাসিক অধ্যায়।

দীর্ঘ প্রতিদ্বন্দ্বিতার পটভূমি

এয়ারবাস এ৩২০ সিরিজের সূচনা হয় ১৯৮৪ সালে। সে সময় সংস্থাটি আর এক দশক টিকবে কি না—এমন সন্দেহও করেছিলেন অনেকে। এর আগে দুটি প্রশস্ত-দেহ বিমান বাজারে এনেছিল এয়ারবাস, কিন্তু তা খুব বেশি লাভজনক হয়নি। তবুও ফ্রান্সের টুলুজে এয়ারবাসের প্রকৌশলীরা নতুন প্রযুক্তি—‘ফ্লাই-বাই-ওয়্যার’ কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে বড় এক ঝুঁকি নেন। প্রথমদিকে এই প্রযুক্তি কিছু এয়ারলাইনের বিরোধিতার মুখে পড়লেও পরবর্তীতে এটি বিশ্বজুড়ে আধুনিক বিমানে প্রচলিত প্রযুক্তি হয়ে ওঠে। বর্তমানে এয়ারবাস যুক্তরাষ্ট্র ও চীনে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে।

এদিকে বোয়িং ৭৩৭ প্রথম চালু হয় ১৯৬০-এর দশকে এবং বছরের পর বছর সরু-দেহ বিমানের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এই মডেলটি। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে দুটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সংস্থাটি মারাত্মক সংকটে পড়ে এবং পিছিয়ে পড়তে শুরু করে। বর্তমানে তারা ধীরে ধীরে উৎপাদন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এয়ারবাস ও বোয়িং উভয় সংস্থা পরবর্তী দশকে নতুন মডেল আনতে পারে। তবে চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগে অনুষ্ঠিত আইএসটিএটি বিমান সম্মেলনে উভয় সংস্থাই জানিয়েছে, আপাতত তারা তাদের মডেলগুলোতে কোনো নতুনত্ব আনবে না—ইঞ্জিন প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত