Ajker Patrika

গাজা দখলের ইসরায়েলি পরিকল্পনার নিন্দায় জাতিসংঘ

অনলাইন ডেস্ক
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। যদিও, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি—এটিই নাকি গাজা যুদ্ধ বন্ধের সবচেয়ে সেরা উপায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্যমতে, এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার অভিযান খুব দ্রুত এগোবে এবং গাজাকে হামাসমুক্ত করা হবে। গাজার সাধারণ মানুষেরা নয়, শুধুমাত্র হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলিরাই গাজায় অনাহারে রয়েছে—সংবাদ সম্মেলনে এমন নির্লজ্জ দাবিও করেন তিনি।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সদস্যরা গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন বাড়ানোর পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, এই পরিকল্পনা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে কোনো ভূমিকা রাখবে না। বরং, পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এখনো হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের অনেকেই বেঁচে আছেন। কিন্তু যুদ্ধের মাত্রা বাড়লে তাদের জীবন নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হবে।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো গাজা সিটি দখলের এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে বলছে, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করছে। এই পরিকল্পনা থেকে ইসরায়েলকে সরে আসার দাবি জানিয়েছে ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়াও। গাজায় চলমান আগ্রাসনকে অঞ্চলটির বাসিন্দাদের জন্য সমষ্টিগত সাজা বা কালেকটিভ পানিশমেন্ট আখ্যা দিয়েছে চীন। কালেকটিভ পানিশমেন্ট বা সমষ্টিগত শাস্তি বলতে বোঝায়—কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট কয়েকজনের অপরাধের জন্য একই গোষ্ঠী/সম্প্রদায়ভুক্ত সব মানুষকে একসঙ্গে শাস্তি দেওয়া। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইনে, এ ধরনের শাস্তি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কারণ এতে বেসামরিক জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা সতর্ক করে বলেন, যদি এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হয়, তবে তা গাজায় আরেকটি বিপর্যয় ডেকে আনবে, যা পুরো অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এবং আরও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের কর্মকর্তা রমেশ রাজসিংহম বলেন, ‘গাজায় ক্ষুধার সংকট বা দুর্ভিক্ষ আর আসন্ন নয়, বরং এটি স্রেফ অনাহার।’

বরাবরের মতোই ইসরায়েলের পক্ষে সাফাই গেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিনিধি ডরথি শিয়া বৈঠকে বলেন, জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠক সেই প্রচেষ্টাগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। হামাস যদি জিম্মিদের ছেড়ে দিত, তাহলে যুদ্ধ আজই শেষ হতে পারত।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠকের সুযোগ নিয়ে বাকিরা ইসরায়েলকে অহেতুক গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। তার ভাষ্য— ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে এটি একটি ডাহা মিথ্যা।

পরে রোববার নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, গাজা প্ল্যান নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহু প্রশাসনের এই পরিকল্পনার কড়া বিরোধিতা করছে ইসরায়েলিরাই। ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন স্থানে এই পরিকল্পনার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে এসেছেন হাজার হাজার ইসরায়েলি। তাদের ভাষ্য—এই পরিকল্পনা কোনোভাবেই জিম্মিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারবে না, বরং, তাদের জীবনকে আরও সংকটে ফেলবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, আইডিএফকে গাজা সিটিতে থাকা হামাসের অবশিষ্ট দুটি ঘাঁটি এবং আল-মাওয়াসি এলাকার একটি কেন্দ্রীয় অংশ ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানান, গাজায় ত্রাণ বিতরণ বাড়ানোর জন্য একটি তিন দফা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য নিরাপদ করিডোর তৈরি, ইসরায়েলি বাহিনী ও অন্যান্য অংশীদারদের মাধ্যমে আকাশপথে ত্রাণ ফেলা আরও বাড়ানো, এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত নিরাপদ বিতরণ কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, মে মাসের শেষের দিকে জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে ১ হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নেতানিয়াহুর সাফাই—হামাস ত্রাণবাহী ট্রাকে লুটতরাজ চালানোর চেষ্টা করলেই আইডিএফ হামলা চালিয়েছে। জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোর কাছে নিহতদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন হামাসের গুলিতেই ফিলিস্তিনিরা নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে হামাসের পক্ষ থেকেই প্রচুর গুলিবর্ষণ হয়েছে।’

গাজায় এখনো যে ২০ ইসরায়েলি জিম্মি জীবিত রয়েছেন তাদের প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যদি কিছুই না করি, তবে তাদের মুক্ত করতে পারব না।’ তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে বলেন, তারা হামাসের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়েছে। গাজার অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের যে ছবিগুলো বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছে, নেতানিয়াহু সেগুলোকে ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফেল করায় বকা খেয়ে বাড়ি ছাড়ে বাংলাদেশি কিশোরী, ভারতে ৩ মাসে ২০০ লোকের ধর্ষণ

খালার সঙ্গে শত্রুতা মুহাম্মদ ইউনূসের, আমি ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’: টিউলিপ সিদ্দিক

‘কাল দেখা হইবে, ভালো থাকিস’—ছেলেকে বলেছিলেন গণপিটুনিতে নিহত প্রদীপ

দেখো, ওর থেকে আরও ৫ লাখ নিতে পারো কি না—মেসেঞ্জার কলে এনসিপি নেতা নিজাম

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত