Ajker Patrika

গাজায় ২০০ গণমাধ্যমকর্মীকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১: ১৮
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসের আল-নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজ করা পাঁচজন সাংবাদিক। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত সাংবাদিকেরা রয়টার্স, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), আল জাজিরা ও মিডল ইস্ট আইয়ের সঙ্গে কাজ করছিলেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, হামলার ভিডিওচিত্রে দেখা যায়—প্রথম দফা হামলার পর যখন উদ্ধারকর্মীরা আহতদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন, তখনই দ্বিতীয় দফায় নতুন করে হামলা চালানো হয়। এতে শুধু সাংবাদিক নন, চার স্বাস্থ্যকর্মীও প্রাণ হারান বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানম ঘেব্রেইসাস নিশ্চিত করেছেন।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ভুল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, সামরিক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত’ করছে।

এ ঘটনার পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় ২০০। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানিয়েছে, গাজায় চলমান সংঘাত ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাংবাদিকদের জন্য। সিপিজের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে গাজায় যত সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, সারা বিশ্বে গত তিন বছরে তার চেয়েও কম সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে গাজায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। কেবল ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রিত অভিযানে কিছু সাংবাদিক প্রবেশ করলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো মূলত স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর নির্ভর করছে।

ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির বিষয়টি আবারও স্পষ্ট করে দিল। তারা সংঘাতের মাঝেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছিলেন।’ তিনি দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, ‘আরও সাংবাদিক হত্যার মাধ্যমে সেই শেষ কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, যারা দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়া শিশুদের খবর বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল।’ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এ হামলায় ‘মর্মাহত’ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ঘটনাটিকে বলেছেন ‘অসহনীয়।’

এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে গাজার আল-শিফা হাসপাতালের কাছে ইসরায়েলের লক্ষ্যভিত্তিক আরেক হামলায় ছয় সাংবাদিক নিহত হন। তাঁদের মধ্যে চারজন ছিলেন আল জাজিরার সঙ্গে যুক্ত।

হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৫৮ জনের মরদেহ গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মরদেহ আটকা পড়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ২৮ জন খাদ্য সহায়তার কেন্দ্রে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়।

এ ছাড়া, অপুষ্টিজনিত কারণে আরও ১১ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এ নিয়ে অপুষ্টিতে মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০। এর মধ্যে ১১৭ জন শিশু। এদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের গাজায় ইসরায়েল হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৭৪৪ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ এই সংখ্যাকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত