Ajker Patrika

যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ‘অগ্রগতির আশ্বাসের’ পরও গাজায় একদিনে ৭৮ জনকে হত্যা

অনলাইন ডেস্ক
গাজায় ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের শিকার এক ফিলিস্তিনির লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যান্যরা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি হত্যাকাণ্ডের শিকার এক ফিলিস্তিনির লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যান্যরা। ছবি: আনাদোলু

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বুধবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গাজা যুদ্ধবিরতি পরিস্থিতির অগ্রগতি হচ্ছে। তবে তাঁর এই অগ্রগতির আশ্বাসের কোনো প্রভাব গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের ওপর ফেলতে পারেনি। তারা গতকাল বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭৮ জনকে হত্যা করেছে।

গাজার চিকিৎসা বিভাগের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গতকাল বুধবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৪ জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের কাছে অপেক্ষা করছিলেন। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধে ‘ব্যাপক অগ্রগতি’ হচ্ছে।

গাজার আল-আওদা ও আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের সূত্রগুলো আল-জাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার ভোরে গাজার কেন্দ্রস্থলের নেৎজারিম জংশনের কাছে ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গত মাসের শেষের দিকে বিতর্কিত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) যেসব ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র চালু করেছে, সেখানে সহিংসতা বাড়ার অংশ হিসেবেই এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সমালোচকেরা এসব কেন্দ্রকে ‘মৃত্যুকূপ’ বা ‘মানব হত্যা কেন্দ্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। জিএইচএফের তীব্র সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা। তাদের অভিযোগ, এই সংগঠন গাজার জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। বরং, ইসরায়েল এই ত্রাণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে তাদের সামরিক অভিযান চালানোর জন্য।

গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলো সাধারণত ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থানের খুব কাছাকাছি স্থাপন করা হয়। সেখানে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও স্নাইপার মোতায়েন থাকে। তিনি বলেন, ‘ফলে যখন এসব কেন্দ্রে বিপুল জনতা জড়ো হয়, তখন তারা সহজেই ইসরায়েলি হামলার শিকার হন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব কেন্দ্রে মানুষকে মাত্র ২০ মিনিটের জন্য সুযোগ দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহের। এই সময় শেষ হওয়ার পরই হামলা শুরু হয়ে যায়। এ জন্য এসব কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।’

গত মে মাসের শেষে জিএইচএফ গাজায় প্রবেশ করে। এরপর থেকে সংগঠনটির ওপর হামলার ঘটনাগুলো নিয়ে চাপ বাড়ছে। তবে তারা এসব হামলার দায় স্বীকার করেনি। ইসরায়েল বলেছে, জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রের আশপাশে যারা গুলি বা হামলার শিকার হচ্ছেন, তারা নাকি ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তি’, যারা ইসরায়েলি সেনাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

এদিকে গাজার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশ করতে না পারায় উপত্যকার স্বাস্থ্য ও মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, যেসব হাসপাতাল এখনো কোনোভাবে চালু আছে, সেগুলোও কার্যত ধসে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। কারণ আহতদের সংখ্যা এত বেশি যে, হাসপাতালে আর জায়গা নেই। বিশেষ করে ওয়ার্ড ও আইসিইউগুলো সম্পূর্ণ ভরে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত