Ajker Patrika

ইসরায়েল-হামাস রাজি হলেও গাজা যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত
এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার কিছু অংশে ইসরায়েল ও হামাস রাজি হলেও যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আজ রোববার এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, গাজার জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কারা কতটা আন্তরিক, তা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে বোঝা যাবে।

প্রসঙ্গত একজন ইসরায়েলি মুখপাত্র জানিয়েছেন, আলোচনার জন্য ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল আজ রাতে মিসরে পৌঁছাবে। এরপর এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরুর দ্বিতীয় বার্ষিকীর এক দিন আগে অর্থাৎ আগামীকাল সোমবার জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। অন্যদিকে হামাসের নির্বাসিত গাজা নেতা খলিল আল-হায়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলও আজ মিসরের কায়রোতে পৌঁছাবে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিরাও আলোচনায় যোগ দেবেন। এটি এখন পর্যন্ত যুদ্ধ থামানোর সবচেয়ে অগ্রসর উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে রুবিও এই আলোচনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ইসরায়েল ও হামাস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় রাজি হয়েছে। তবে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কারা কতটা আন্তরিক, তা এই আলোচনার মধ্য দিয়ে বোঝা যাবে।

গত শুক্রবার হামাস ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবের কয়েকটি অংশে সম্মতি জানায়। এর মধ্যে রয়েছে—যুদ্ধের অবসান, ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি। এতে ট্রাম্প সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে হামাস এখনো কয়েকটি বিষয় নিয়ে আরও আলোচনার প্রস্তাব রেখেছে, বিশেষ করে, তারা নিরস্ত্র হতে রাজি কি না—যা ইসরায়েলের প্রধান দাবি।

এদিকে গাজার মানুষ ট্রাম্পের পরিকল্পনা থেকে শান্তির আশা দেখলেও আজও ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়নি। গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিমান ও ট্যাংক হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ গাজায় সাহায্য নিতে যাওয়া চারজন এবং দুপুরে গাজা সিটিতে বিমান হামলায় আরও পাঁচজন নিহত হয়।

গাজার তুফাহ এলাকায় গতকাল শনিবারের এক বিমান হামলায় নিজের ছয় বছর বয়সী ছেলে আমিরকে হারানো শাদি মানসুর বলেন, ‘ও কি যোদ্ধা ছিল? কাউকে প্রতিরোধ করতে গিয়েছিল? ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্যই হলো আমাদের শিশুদের হত্যা করা।’

ইসরায়েলি বাহিনী শহর ছেড়ে যাওয়া বাসিন্দাদের এখনই গাজায় ফিরে না আসার জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে। তারা বলছে, গাজা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি যুদ্ধক্ষেত্র’।

হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গতকাল ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, ‘ইসরায়েল গাজায় হামলা বন্ধে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছে। এখন হামাস নিশ্চিত করলে যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’

গাজার মধ্যাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা আহমেদ আসাদ বলেন, ‘ট্রাম্পের পরিকল্পনার খবর শুনে আশা পেয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে কিছুই বদলায়নি। আমরা জানি না কী করব—রাস্তায় থাকব, নাকি অন্য কোথাও যাব?’

এদিকে ট্রাম্পের এমন উদ্যোগে ইসরায়েলেও শান্তির আশা তৈরি হয়েছে। ইসরায়েলি শেকেলের (মুদ্রা) মান তিন বছরের সর্বোচ্চে উঠেছে। তেল আবিবের শেয়ারবাজারও ইতিহাসের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।

তেল আবিবের বাসিন্দা গিল শেলি বলেন, ‘অনেক দিন পর প্রথমবার আমি সত্যিই আশাবাদী। ট্রাম্প আমাদের মধ্যে নতুন করে আশা জাগিয়েছেন।’

কিন্তু ইসরায়েলের রাজনীতিতে এখন তীব্র চাপ। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একদিকে যুদ্ধবিরতির দাবিতে জিম্মি পরিবার ও যুদ্ধ ক্লান্ত জনতার চাপের মুখে, অন্যদিকে তাঁর জোটের চরম ডানপন্থী মন্ত্রীদের চাপে আছেন, যাঁরা যুদ্ধ বন্ধে রাজি নন।

অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ এক্সে লিখেছেন, ‘গাজায় হামলা বন্ধ করা ভয়াবহ ভুল হবে।’ স্মোত্রিচ ও নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভি হুমকিও দিয়েছেন—গাজা যুদ্ধ শেষ হলে তাঁ সরকার ভেঙে দেবেন।

তবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ (ইয়েশ আতিদ পার্টি) জানিয়েছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা সফল করতে ‘রাজনৈতিক সহায়তা’ দেওয়া হবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা কোনোভাবেই এই চুক্তিকে নস্যাৎ হতে দেব না।’

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, জীবিত ও মৃত—সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। ইসরায়েল জানিয়েছে, এখনো ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে, তাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক। এর পাশাপাশি ২৫১ জনকে অপহরণও করে হামাস। এর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

এ যুদ্ধ ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করে ফেলেছে। একই সঙ্গে ইসরায়েল হামাস ছাড়াও ইরানের আঞ্চলিক মিত্র হিজবুল্লাহ ও ইরানের উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের টার্গেট করে হত্যা করেছে। আজ হিজবুল্লাহ জানায়, তারা ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার বিষয়ে হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে একমত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৭৯৩ মণ্ডপে অসুরের মুখে দাড়ি, দায়ীদের শনাক্ত করা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড করল বিটকয়েন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ৫০০ টাকা, প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক

ইউরোপের সুন্দর দেশ এস্তোনিয়ায় স্থায়ী বসবাসের আবেদন করবেন যেভাবে

কোরআন অবমাননার অভিযোগে নর্থ সাউথে ছাত্রকে সহপাঠীদের পিটুনি, মধ্যরাতে উদ্ধার করল পুলিশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত