Ajker Patrika

ত্রাণের গাড়ি ঘিরে ধরল ক্ষুধার্ত গাজাবাসী, আইডিএফের গুলিতে গেল আরও ৬৭ প্রাণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় প্রবেশের পর জাতিসংঘের ২৫টি ত্রাণের গাড়ি ঘিরে ফেলে ‘ক্ষুধার্ত গাজাবাসী’। ছবি: সংগৃহীত
গাজায় প্রবেশের পর জাতিসংঘের ২৫টি ত্রাণের গাড়ি ঘিরে ফেলে ‘ক্ষুধার্ত গাজাবাসী’। ছবি: সংগৃহীত

গাজা উপত্যকার উত্তরে জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর (আইডিএফ) গুলিতে অন্তত ৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাসচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছে আরও অনেক। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ রোববারের (২০ জুলাই) এই হতাহতের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। এর আগে গতকাল শনিবারও একইভাবে নিহত হয়েছিল ৩৬ জন।

এ ছাড়া দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণসহায়তা কেন্দ্রেও ছয়জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৫০ জন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা আজ উত্তর গাজায় হাজারো মানুষের ভিড় লক্ষ্য করে ‘সতর্কতামূলক গুলি’ চালিয়েছে। কারণ, ওই ভিড়কে তারা তাৎক্ষণিক হুমকি মনে করেছিল। তাদের দাবি, হতাহতের সংখ্যা সম্ভবত ‘বেশি করে বলা হয়েছে’ এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে লক্ষ্য করে গুলি করেনি।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, গাজায় প্রবেশের পর তাদের ২৫টি খাদ্যবাহী ট্রাকের বহর ‘ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ের মুখে পড়ে’। এরপরেই সেখানে গুলি ছোড়া হয়। ডব্লিউএফপির বিবৃতিতে বলা হয়, সহায়তা চাওয়া বেসামরিকদের ওপর হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বিমান হামলা ও গুলিতে মোট ৮৮ জন নিহত হয়েছে।

এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দেইর আল-বালাহর কিছু আবাসিক এলাকায় লিফলেটের মাধ্যমে মানুষকে এলাকা ছেড়ে যেতে বলে। এরপরই সেখানে তিনটি বাড়িতে বিমান হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হাজার হাজার গাজাবাসী, যারা আগে থেকেই বাস্তুচ্যুত হয়ে দেইর আল-বালাহতে আশ্রয় নিয়েছিল, তারা ফের ঘরছাড়া হতে বাধ্য হচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, তারা এখনো ওই এলাকায় প্রবেশ করেনি। কারণ, তারা ধারণা করছে, হামাস সেখানে জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছে। তাই সেখানে অভিযান চালানো হতে পারে।

তবে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা এই পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের ফলে কি আমাদের প্রিয়জনদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে না? কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারবে?’

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ক্ষুধা, দুর্বলতা ও অবসাদে হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঢল নেমেছে। দেহ শুকিয়ে যাওয়া শত শত মানুষ ক্ষুধায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। জাতিসংঘও জানিয়েছে, গাজায় মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে, জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধায় মারা গেছে ১৮ জন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের সময় অন্তত ৭১ জন শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে এবং ৬০ হাজারেরও বেশি শিশু এখনো অপুষ্টিতে ভুগছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ময়দার মতো জরুরি খাদ্যপণ্যও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খাবারের দাম এত বেড়ে গেছে যে, অধিকাংশ মানুষ তা কিনতে পারছেন না।

রয়টার্সের সঙ্গে চ্যাট অ্যাপে কথা বলা কয়েকজন বলেন, তাঁরা গত ২৪ ঘণ্টায় এক বেলাও খেতে পারেননি।

জিয়াদ নামের এক নার্স বলেন, ‘ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে আমার পাঁচ সন্তানকে এক টুকরো রুটিও দিতে পারি না। যারা বোমায় মারা যাচ্ছে না, তারা মারা যাবে ক্ষুধায়। আমরা এখনই যুদ্ধবিরতি চাই—অন্তত দুই মাসের জন্য হলেও।’

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, তাদের হাতে তিন মাসের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অবশ্য বলছে, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সর্বোচ্চ গুরুত্বের বিষয়। তারা আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছে।

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কোথায়?

দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের পরোক্ষ আলোচনা চলছে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিবিনিময় নিয়ে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির লক্ষণ নেই। এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। প্রথমে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর পাল্টা অভিযানে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে। প্রায় পুরো গাজা উপত্যকার জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং গাজাকে এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নজিরবিহীন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘অপমানিত বোধ’, মাউশির মহাপরিচালক চাইলেন অব্যাহতি

অস্বাভাবিক আচরণ করছে পাখিরা—বিজ্ঞানীদের সতর্কতা

একটি বিশ্বমোড়লসহ তিন পরাশক্তি বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে: সালাহউদ্দিন

জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চালুর নির্দেশ

ভরি ২ লাখ ছাড়ানোর পরদিন ফের বাড়ল সোনার দাম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত