Ajker Patrika

পাঁচ সাংবাদিক হত্যাকে ‘দুঃখজনক ভুল’ বললেন নেতানিয়াহু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১০: ৫০
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরও একটি রক্তক্ষয়ী দিন দেখল গাজাবাসী। গতকাল সোমবার উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি নৃশংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি, গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৮০ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে পাঁচ সাংবাদিক।

কাতারি সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল খান ইউনুসের নাসের হাসপাতাল লক্ষ্য করে টানা দুই বার হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। প্রথম হামলাটি চালানো হয় হাসপাতালের একটি ওপর তলায়, যেখানে অপারেশন থিয়েটার এবং চিকিৎসকদের আবাসিক কক্ষ ছিল। এ হামলায় দুজন নিহত হন। এরপরই উদ্ধারকর্মী ও সাংবাদিকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), রয়টার্স, আল জাজিরা এবং যুক্তরাজ্য থেকে পরিচালিত মিডল ইস্ট আই-এর সাংবাদিকেরা।

ঠিক সেই মুহূর্তেই দ্বিতীয় দফা হামলা চালানো হয় হাসপাতালের বাইরের সিঁড়িতে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিকেরা লাইভ সম্প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই ভয়াবহ বিস্ফোরণে তাঁরা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে আছেন ৩৩ বছর বয়সী এপি-র ভিজ্যুয়াল সাংবাদিক মারিয়াম দাগ্গা, যিনি যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় স্বাস্থ্যখাতে মানবিক বিপর্যয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করে আসছিলেন। অল গাদ টেলিভিশনের প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, সাংবাদিক ও উদ্ধারকর্মীরা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছেন—এক মুহূর্তের মধ্যে ধোঁয়া ও আগুনের লেলিহান শিখায় ছেয়ে যায় আকাশ।

হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় ঘটনাটিকে ‘দুঃখজনক ভুল’ আখ্যা দিয়ে তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে। তবে কীভাবে এই ‘ভুল’ ঘটল তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলছে, সেনারা ভেবেছিল ছাদের ওপরে হামাসের নজরদারি ক্যামেরা স্থাপন করা আছে এবং সেটি লক্ষ্য করেই দুটি গোলা নিক্ষেপ করা হয়। অথচ দীর্ঘদিন ধরেই ওই স্থানে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা লাইভ টেলিভিশন সম্প্রচারের জন্য ক্যামেরা বসিয়ে আসছিলেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফ্রিন দাবি করেন, ‘আমরা কখনো সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করি না। হামাস বরাবরই বেসামরিক জনগণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।’ তবে ওই হামলার সময় সেখানে কোনো হামাস সদস্য ছিল কি না, তা তিনি স্পষ্টভাবে জানাতে পারেননি।

হামলায় নিজস্ব সাংবাদিক নিহত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি ও রয়টার্স যৌথ বিবৃতিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা ক্ষুব্ধ ও শোকাহত। এই হাসপাতালে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকেরা তাঁদের পেশাগত কর্তব্যে নিয়োজিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হাসপাতাল নিরাপদ স্থান। সেখানে হামলা চালানো মানবিক আইন লঙ্ঘন।’

তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের স্বাধীন প্রবেশাধিকার দেয়নি। কেবল সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে সীমিত সফরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে হামলাগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব মূলত স্থানীয় সাংবাদিকদের কাঁধেই পড়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জাহের আল-ওয়াহেইদি জানান, প্রথম হামলায় হাসপাতালের একাংশ ধ্বংস হয়ে যায়। দ্বিতীয় হামলায় সিঁড়ি ও আশপাশে থাকা মানুষজন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। নিহত ২০ জনের পাশাপাশি প্রায় ৮০ জন আহত হয়েছেন, যাঁদের অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত গাজায় চলমান যুদ্ধে দেড় হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ১৮৯ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) জানিয়েছে, এর মধ্যে অনেক সাংবাদিক সরাসরি টার্গেট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত