আজকের পত্রিকা ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংঘাত অবসানের জন্য একটি বিশদ ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পরপরই এটি প্রকাশিত হয়। ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সোমবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি টানার ‘খুব কাছাকাছি’ পৌঁছে গেছেন তিনি। ট্রাম্প হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য তিনি ‘সবুজ সংকেত’ দেবেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে আরব নেতাদের কাছে এই পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া (তখন ২১ দফা) প্রথম শেয়ার করা হয়েছিল। সোমবার একজন শীর্ষ কাতারি ও শীর্ষ মিসরীয় কর্মকর্তা পরিবর্তিত ২০ দফা পরিকল্পনাটি হামাসের আলোচকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
ট্রাম্পের প্রকাশিত এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, উভয় পক্ষ সম্মত হলেই যুদ্ধ ‘অবিলম্বে শেষ হবে’। তবে জিম্মি মুক্তি ও সেনা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত ও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন:
সময়সীমা পরিবর্তন: প্রাথমিক খসড়ায় জিম্মি মুক্তির সময়সীমা ৪৮ ঘণ্টা থাকলেও চূড়ান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের জনসমক্ষে চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে থাকা জীবিত ও প্রয়াত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।
সেনা প্রত্যাহার: জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনী ‘সম্মত স্থানে প্রত্যাহার করে নেবে’। এই সময়ে বিমান হামলা, গোলাবর্ষণসহ সমস্ত সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে এবং সম্পূর্ণ ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র স্থগিত থাকবে।
বন্দিবিনিময়: জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ গত ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পরে আটক ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের দেহাবশেষ মুক্তির বিনিময়ে প্রতিটির জন্য ১৫ জন মৃত ফিলিস্তিনি গাজাবাসীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হবে।
গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও নিরাপত্তাকাঠামো
প্রস্তাবে গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ও সুরক্ষার জন্য দুটি প্রধান স্তর ও একটি নতুন নিরাপত্তাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে:
টেকনোক্র্যাটিক কমিটি: গাজায় দৈনন্দিন পরিষেবা পরিচালনার জন্য একটি ‘টেকনোক্র্যাটিক, রাজনীতিমুক্ত ফিলিস্তিনি কমিটি’ গঠিত হবে। এই কমিটিতে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
বোর্ড অব পিস: এই প্রশাসনিক কমিটি একটি নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’-এর তত্ত্বাবধানে কাজ করবে, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংস্থা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের ‘সংস্কার কর্মসূচি’ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত গাজা পুনর্গঠন ও অর্থায়নের কাঠামো নির্ধারণ করবে।
এদিকে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন জানালেও গাজার ভবিষ্যৎ শাসন নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, গাজাকে এমন একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, যা হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) কারও দ্বারাই পরিচালিত হবে না।
আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ)
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র আরব এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) তৈরি করবে, যা গাজায় দ্রুত মোতায়েন করা হবে। এই বাহিনী ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে এবং এ বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকা জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে পরামর্শ করবে। এটিই গাজার দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমাধান হবে।
ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার: প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা ‘দখল বা সংযুক্ত করবে না’। আইএসএফ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা আনলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) ধাপে ধাপে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে নিরাপত্তার জন্য একটি ‘নিরাপত্তা পরিধির উপস্থিতি’ থাকবে।
মানবিক সহায়তা ও রাজনৈতিক দিক
মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি: হামাস চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলেও ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় মানবিক সহায়তার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে, যার বিতরণে জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাধ্যতামূলক বিতাড়ন নয়: এই পরিকল্পনা স্পষ্ট করে যে, ‘কাউকে গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না’ এবং যারা গাজা ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক, তারা স্বাধীনভাবে যেতে ও ফিরে আসতে পারবে। এই অবস্থান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পূর্ববর্তী জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাবের বিপরীতে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন: গাজাকে পুনর্গঠিত করতে এবং চাঙা করতে একটি ‘ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ তৈরি করা হবে, যা মধ্যপ্রাচ্যের সফল আধুনিক শহর গঠনে সহায়তা করা বিশেষজ্ঞদের প্যানেল দ্বারা পরিচালিত হবে।
হামাস সদস্যদের ভাগ্য: যে সমস্ত হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অস্ত্র সমর্পণের প্রতিশ্রুতি দেবে, তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে যারা গাজা ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক, তাদের ‘গ্রহণকারী দেশে’ নিরাপদ যাত্রার ব্যবস্থা করা হবে।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা: এই মার্কিন পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে, যা ‘ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে কি না, তা বলা হয়নি।
হামাস যদি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে এবং দখলকৃত অঞ্চলগুলো পর্যায়ক্রমে অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে এবং বর্ধিত মানবিক সহায়তা চালু থাকবে।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফা:
১. গাজা হবে একটি চরমপন্থামুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল, যা তার প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।
২. গাজার জনগণের উপকারের জন্য গাজা পুনর্গঠন করা হবে, যাদের যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
৩. যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তাহলে যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হবে। জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনী সম্মত লাইনে প্রত্যাহার করে নেবে। এই সময়ে আকাশ ও আর্টিলারি বোমাবর্ষণসহ সমস্ত সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে এবং সম্পূর্ণ ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র স্থগিত থাকবে।
৪. ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
৫. একবার সমস্ত জিম্মি মুক্তি পেলে ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরে আটক ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে ওই সময়ে আটক সব নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষ মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ১৫ জন প্রয়াত গাজাবাসীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করবে।
৬. একবার সমস্ত জিম্মি ফিরিয়ে দেওয়া হলে যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং তাদের অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার প্রতিশ্রুতি দেবে, তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। যেসব হামাস সদস্য গাজা ছাড়তে ইচ্ছুক, তাদের গ্রহণকারী দেশগুলোতে নিরাপদে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
৭. এই চুক্তি গৃহীত হওয়ার পরে অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় পূর্ণ সহায়তা পাঠানো হবে। ন্যূনতম সহায়তার পরিমাণ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫-এর মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, যার মধ্যে অবকাঠামোর পুনর্বাসন (পানি, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন), হাসপাতাল ও বেকারির পুনর্বাসন এবং ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও রাস্তা খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রবেশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৮. গাজা উপত্যকায় বিতরণ এবং ত্রাণ সহায়তার প্রবেশ জাতিসংঘ এবং তার সংস্থাগুলো এবং রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্য কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উভয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই অগ্রসর হবে, যা কোনো পক্ষের সঙ্গেই কোনোভাবে যুক্ত নয়। রাফা ক্রসিং উভয় দিকে খোলার বিষয়টি ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫-এর চুক্তির অধীনে বাস্তবায়িত একই ব্যবস্থার অধীন হবে।
৯. গাজা একটি টেকনোক্র্যাটিক, রাজনীতিমুক্ত ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে, যা গাজার জনগণের জন্য জনসেবা এবং পৌরসভার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবে। এই কমিটি যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গঠিত হবে, এবং এটি একটি নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা, ‘বোর্ড অব পিস’,-এর তত্ত্বাবধানে থাকবে, যার নেতৃত্বে এবং সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প। অন্যান্য সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও অন্তর্ভুক্ত। এই সংস্থাটি গাজার পুনর্গঠনের জন্য কাঠামো তৈরি করবে এবং অর্থায়ন পরিচালনা করবে যতক্ষণ না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন করে এবং যতক্ষণ না তারা নিরাপদে ও কার্যকরভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিতে পারে। এই সংস্থাটি আধুনিক ও দক্ষ শাসন ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আহ্বান করবে যা গাজার জনগণের সেবা করে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সহায়ক।
১০. গাজাকে পুনর্গঠন ও চাঙা করার জন্য একটি ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সমৃদ্ধ আধুনিক চিত্তাকর্ষক শহর গঠনে সহায়তা করা বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেলকে ঐক্যবদ্ধ করে এটি করা হবে।
১১. অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার সহ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে।
১২. কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না, এবং যারা যেতে ইচ্ছুক তারা স্বাধীনভাবে তা করতে পারবে এবং ফিরতেও পারবে। আমরা জনগণকে থাকতে উৎসাহিত করব এবং তাদের একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেব।
১৩. হামাস এবং অন্য দলগুলো প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ বা কোনো প্রকারেই গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা না রাখতে সম্মত হবে। সমস্ত সামরিক, সন্ত্রাসী, এবং আক্রমণাত্মক অবকাঠামো, যার মধ্যে সুড়ঙ্গ এবং অস্ত্র উৎপাদন সুবিধাগুলো অন্তর্ভুক্ত, ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ করা হবে না। স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গাজার নিরস্ত্রীকরণের একটি প্রক্রিয়া থাকবে। নতুন গাজা একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তুলতে এবং তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।
১৪. আঞ্চলিক অংশীদারদের দ্বারা একটি গ্যারান্টি প্রদান করা হবে যে হামাস এবং অন্য দলগুলো তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে এবং নতুন গাজা তার প্রতিবেশী বা তার জনগণের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।
১৫. গাজায় অবিলম্বে মোতায়েন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরব এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইসএফ) তৈরি করবে। আইএসএফ গাজায় যাচাইকৃত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা দেবে, এবং এই ক্ষেত্রে ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকা জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে পরামর্শ করবে। এই বাহিনীটি হবে দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমাধান।
১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না। আইসএফ নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে সঙ্গে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত মানদণ্ড, মাইলফলক এবং সময়সীমার ভিত্তিতে প্রত্যাহার করবে। কার্যত, আইডিএফ দখলকৃত গাজার ভূখণ্ডকে আইএসএফ-এর কাছে ক্রমান্বয়ে হস্তান্তর করবে, যতক্ষণ না তারা গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, তবে একটি নিরাপত্তা পরিধির উপস্থিতি থাকবে যা গাজা কোনো পুনরুত্থিত সন্ত্রাসী হুমকি থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত বজায় থাকবে।
১৭. হামাস এই প্রস্তাবে বিলম্ব করলে বা প্রত্যাখ্যান করলে, ওপরের বিষয়গুলো, বর্ধিত সহায়তা কার্যক্রম-সহ, আইডিএফ থেকে আইএসএফ-এর কাছে হস্তান্তর করা সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চলগুলোতে এগিয়ে চলবে।
১৮. শান্তি থেকে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যেতে পারে তার ওপর জোর দিয়ে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার চেষ্টা করার জন্য সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে।
১৯. গাজার পুনর্গঠন অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং যখন পিএ সংস্কার কর্মসূচি বিশ্বস্ততার সঙ্গে পরিচালিত হবে, তখন ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের একটি বিশ্বাসযোগ্য পথের জন্য শর্তাবলি তৈরি হতে পারে, যাকে আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে স্বীকৃতি দিই।
২০. শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিগন্তে সম্মত হওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ চলবে।
গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশগুলোর জোরালো সমর্থন
আটটি আরব বা মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা ‘গাজা যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ভূমিকা এবং তার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়’। দেশগুলো ‘চুক্তিটি চূড়ান্ত করা এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং দলগুলির সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলকভাবে যুক্ত হতে তাদের প্রস্তুতি নিশ্চিত করেছে’।
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে: মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তান। এর মধ্যে সৌদি আরব ও কাতার সংঘাতের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বে জনসংখ্যায় বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া গাজায় ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বাহিনীর অংশ হিসেবে সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তান এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ট্রাম্পের ‘আন্তরিক ও দৃঢ় প্রচেষ্টাকে’ স্বাগত জানিয়ে দ্রুত সমর্থন জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ও গাজাবাসীর প্রতিক্রিয়া
হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও, গাজায় হামাসের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ এই পরিকল্পনাকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আগ্রাসনের একটি রেসিপি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, এর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘যা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করতে পারেনি, তা যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
গাজার সাধারণ বাসিন্দারাও পরিকল্পনাটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে জিম্মি মুক্তির একটি কৌশল বলে মনে করছেন।
ইউরোপীয় মিত্র ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় শক্তিগুলোও হামাসকে অবিলম্বে এই পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় ট্রাম্পের ‘যুদ্ধ শেষ করা, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।’ এই পরিকল্পনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি এই পরিকল্পনাকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলে প্রশংসা করেছেন।
ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ট্রাম্পের ‘গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রতিশ্রুতিকে’ স্বাগত জানিয়ে হামাসকে ‘অবিলম্বে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া এবং এই পরিকল্পনা অনুসরণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
অন্যান্য ইইউ সদস্য: ইইউ প্রধান আন্তোনিও কস্তা সব পক্ষকে ‘শান্তির একটি প্রকৃত সুযোগ দিতে এই মুহূর্তটি কাজে লাগানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানি এই পরিকল্পনাকে ‘ভয়াবহ সংঘাতের অবসানের একটি অনন্য সুযোগ’ এবং ইতালি ‘এই সুযোগটি কাজে লাগানোর’ জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
স্পেন: এমনকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও শান্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকেই ‘একমাত্র সম্ভব’ পথ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান
ভারত: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের ‘ব্যাপক পরিকল্পনা ঘোষণার’ প্রশংসা করে এটিকে ‘ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের পাশাপাশি বৃহত্তর পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের একটি কার্যকর পথ’ বলে অভিহিত করেছেন।
অস্ট্রেলিয়া: প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসকে ‘অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংঘাত অবসানের জন্য একটি বিশদ ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পরপরই এটি প্রকাশিত হয়। ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সোমবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি টানার ‘খুব কাছাকাছি’ পৌঁছে গেছেন তিনি। ট্রাম্প হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য তিনি ‘সবুজ সংকেত’ দেবেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে আরব নেতাদের কাছে এই পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া (তখন ২১ দফা) প্রথম শেয়ার করা হয়েছিল। সোমবার একজন শীর্ষ কাতারি ও শীর্ষ মিসরীয় কর্মকর্তা পরিবর্তিত ২০ দফা পরিকল্পনাটি হামাসের আলোচকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
ট্রাম্পের প্রকাশিত এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, উভয় পক্ষ সম্মত হলেই যুদ্ধ ‘অবিলম্বে শেষ হবে’। তবে জিম্মি মুক্তি ও সেনা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত ও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন:
সময়সীমা পরিবর্তন: প্রাথমিক খসড়ায় জিম্মি মুক্তির সময়সীমা ৪৮ ঘণ্টা থাকলেও চূড়ান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের জনসমক্ষে চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে থাকা জীবিত ও প্রয়াত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।
সেনা প্রত্যাহার: জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনী ‘সম্মত স্থানে প্রত্যাহার করে নেবে’। এই সময়ে বিমান হামলা, গোলাবর্ষণসহ সমস্ত সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে এবং সম্পূর্ণ ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র স্থগিত থাকবে।
বন্দিবিনিময়: জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ গত ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পরে আটক ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের দেহাবশেষ মুক্তির বিনিময়ে প্রতিটির জন্য ১৫ জন মৃত ফিলিস্তিনি গাজাবাসীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হবে।
গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও নিরাপত্তাকাঠামো
প্রস্তাবে গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ও সুরক্ষার জন্য দুটি প্রধান স্তর ও একটি নতুন নিরাপত্তাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে:
টেকনোক্র্যাটিক কমিটি: গাজায় দৈনন্দিন পরিষেবা পরিচালনার জন্য একটি ‘টেকনোক্র্যাটিক, রাজনীতিমুক্ত ফিলিস্তিনি কমিটি’ গঠিত হবে। এই কমিটিতে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
বোর্ড অব পিস: এই প্রশাসনিক কমিটি একটি নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’-এর তত্ত্বাবধানে কাজ করবে, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংস্থা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের ‘সংস্কার কর্মসূচি’ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত গাজা পুনর্গঠন ও অর্থায়নের কাঠামো নির্ধারণ করবে।
এদিকে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন জানালেও গাজার ভবিষ্যৎ শাসন নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, গাজাকে এমন একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, যা হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) কারও দ্বারাই পরিচালিত হবে না।
আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ)
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র আরব এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) তৈরি করবে, যা গাজায় দ্রুত মোতায়েন করা হবে। এই বাহিনী ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে এবং এ বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকা জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে পরামর্শ করবে। এটিই গাজার দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমাধান হবে।
ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার: প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা ‘দখল বা সংযুক্ত করবে না’। আইএসএফ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা আনলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) ধাপে ধাপে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে নিরাপত্তার জন্য একটি ‘নিরাপত্তা পরিধির উপস্থিতি’ থাকবে।
মানবিক সহায়তা ও রাজনৈতিক দিক
মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি: হামাস চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলেও ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় মানবিক সহায়তার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে, যার বিতরণে জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাধ্যতামূলক বিতাড়ন নয়: এই পরিকল্পনা স্পষ্ট করে যে, ‘কাউকে গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না’ এবং যারা গাজা ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক, তারা স্বাধীনভাবে যেতে ও ফিরে আসতে পারবে। এই অবস্থান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পূর্ববর্তী জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাবের বিপরীতে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন: গাজাকে পুনর্গঠিত করতে এবং চাঙা করতে একটি ‘ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ তৈরি করা হবে, যা মধ্যপ্রাচ্যের সফল আধুনিক শহর গঠনে সহায়তা করা বিশেষজ্ঞদের প্যানেল দ্বারা পরিচালিত হবে।
হামাস সদস্যদের ভাগ্য: যে সমস্ত হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অস্ত্র সমর্পণের প্রতিশ্রুতি দেবে, তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে যারা গাজা ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক, তাদের ‘গ্রহণকারী দেশে’ নিরাপদ যাত্রার ব্যবস্থা করা হবে।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা: এই মার্কিন পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে, যা ‘ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে কি না, তা বলা হয়নি।
হামাস যদি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে এবং দখলকৃত অঞ্চলগুলো পর্যায়ক্রমে অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে এবং বর্ধিত মানবিক সহায়তা চালু থাকবে।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফা:
১. গাজা হবে একটি চরমপন্থামুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল, যা তার প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।
২. গাজার জনগণের উপকারের জন্য গাজা পুনর্গঠন করা হবে, যাদের যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
৩. যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তাহলে যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হবে। জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনী সম্মত লাইনে প্রত্যাহার করে নেবে। এই সময়ে আকাশ ও আর্টিলারি বোমাবর্ষণসহ সমস্ত সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে এবং সম্পূর্ণ ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র স্থগিত থাকবে।
৪. ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
৫. একবার সমস্ত জিম্মি মুক্তি পেলে ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরে আটক ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে ওই সময়ে আটক সব নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষ মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ১৫ জন প্রয়াত গাজাবাসীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করবে।
৬. একবার সমস্ত জিম্মি ফিরিয়ে দেওয়া হলে যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং তাদের অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার প্রতিশ্রুতি দেবে, তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। যেসব হামাস সদস্য গাজা ছাড়তে ইচ্ছুক, তাদের গ্রহণকারী দেশগুলোতে নিরাপদে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
৭. এই চুক্তি গৃহীত হওয়ার পরে অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় পূর্ণ সহায়তা পাঠানো হবে। ন্যূনতম সহায়তার পরিমাণ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫-এর মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, যার মধ্যে অবকাঠামোর পুনর্বাসন (পানি, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন), হাসপাতাল ও বেকারির পুনর্বাসন এবং ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও রাস্তা খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রবেশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৮. গাজা উপত্যকায় বিতরণ এবং ত্রাণ সহায়তার প্রবেশ জাতিসংঘ এবং তার সংস্থাগুলো এবং রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্য কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উভয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই অগ্রসর হবে, যা কোনো পক্ষের সঙ্গেই কোনোভাবে যুক্ত নয়। রাফা ক্রসিং উভয় দিকে খোলার বিষয়টি ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫-এর চুক্তির অধীনে বাস্তবায়িত একই ব্যবস্থার অধীন হবে।
৯. গাজা একটি টেকনোক্র্যাটিক, রাজনীতিমুক্ত ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে, যা গাজার জনগণের জন্য জনসেবা এবং পৌরসভার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবে। এই কমিটি যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গঠিত হবে, এবং এটি একটি নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা, ‘বোর্ড অব পিস’,-এর তত্ত্বাবধানে থাকবে, যার নেতৃত্বে এবং সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প। অন্যান্য সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও অন্তর্ভুক্ত। এই সংস্থাটি গাজার পুনর্গঠনের জন্য কাঠামো তৈরি করবে এবং অর্থায়ন পরিচালনা করবে যতক্ষণ না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন করে এবং যতক্ষণ না তারা নিরাপদে ও কার্যকরভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিতে পারে। এই সংস্থাটি আধুনিক ও দক্ষ শাসন ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আহ্বান করবে যা গাজার জনগণের সেবা করে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সহায়ক।
১০. গাজাকে পুনর্গঠন ও চাঙা করার জন্য একটি ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সমৃদ্ধ আধুনিক চিত্তাকর্ষক শহর গঠনে সহায়তা করা বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেলকে ঐক্যবদ্ধ করে এটি করা হবে।
১১. অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার সহ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে।
১২. কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না, এবং যারা যেতে ইচ্ছুক তারা স্বাধীনভাবে তা করতে পারবে এবং ফিরতেও পারবে। আমরা জনগণকে থাকতে উৎসাহিত করব এবং তাদের একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেব।
১৩. হামাস এবং অন্য দলগুলো প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ বা কোনো প্রকারেই গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা না রাখতে সম্মত হবে। সমস্ত সামরিক, সন্ত্রাসী, এবং আক্রমণাত্মক অবকাঠামো, যার মধ্যে সুড়ঙ্গ এবং অস্ত্র উৎপাদন সুবিধাগুলো অন্তর্ভুক্ত, ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ করা হবে না। স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গাজার নিরস্ত্রীকরণের একটি প্রক্রিয়া থাকবে। নতুন গাজা একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তুলতে এবং তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।
১৪. আঞ্চলিক অংশীদারদের দ্বারা একটি গ্যারান্টি প্রদান করা হবে যে হামাস এবং অন্য দলগুলো তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে এবং নতুন গাজা তার প্রতিবেশী বা তার জনগণের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।
১৫. গাজায় অবিলম্বে মোতায়েন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরব এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইসএফ) তৈরি করবে। আইএসএফ গাজায় যাচাইকৃত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা দেবে, এবং এই ক্ষেত্রে ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকা জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে পরামর্শ করবে। এই বাহিনীটি হবে দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমাধান।
১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না। আইসএফ নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে সঙ্গে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত মানদণ্ড, মাইলফলক এবং সময়সীমার ভিত্তিতে প্রত্যাহার করবে। কার্যত, আইডিএফ দখলকৃত গাজার ভূখণ্ডকে আইএসএফ-এর কাছে ক্রমান্বয়ে হস্তান্তর করবে, যতক্ষণ না তারা গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, তবে একটি নিরাপত্তা পরিধির উপস্থিতি থাকবে যা গাজা কোনো পুনরুত্থিত সন্ত্রাসী হুমকি থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত বজায় থাকবে।
১৭. হামাস এই প্রস্তাবে বিলম্ব করলে বা প্রত্যাখ্যান করলে, ওপরের বিষয়গুলো, বর্ধিত সহায়তা কার্যক্রম-সহ, আইডিএফ থেকে আইএসএফ-এর কাছে হস্তান্তর করা সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চলগুলোতে এগিয়ে চলবে।
১৮. শান্তি থেকে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যেতে পারে তার ওপর জোর দিয়ে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার চেষ্টা করার জন্য সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে।
১৯. গাজার পুনর্গঠন অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং যখন পিএ সংস্কার কর্মসূচি বিশ্বস্ততার সঙ্গে পরিচালিত হবে, তখন ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের একটি বিশ্বাসযোগ্য পথের জন্য শর্তাবলি তৈরি হতে পারে, যাকে আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে স্বীকৃতি দিই।
২০. শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিগন্তে সম্মত হওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ চলবে।
গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশগুলোর জোরালো সমর্থন
আটটি আরব বা মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা ‘গাজা যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ভূমিকা এবং তার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়’। দেশগুলো ‘চুক্তিটি চূড়ান্ত করা এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং দলগুলির সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলকভাবে যুক্ত হতে তাদের প্রস্তুতি নিশ্চিত করেছে’।
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে: মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তান। এর মধ্যে সৌদি আরব ও কাতার সংঘাতের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বে জনসংখ্যায় বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া গাজায় ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বাহিনীর অংশ হিসেবে সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তান এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ট্রাম্পের ‘আন্তরিক ও দৃঢ় প্রচেষ্টাকে’ স্বাগত জানিয়ে দ্রুত সমর্থন জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ও গাজাবাসীর প্রতিক্রিয়া
হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও, গাজায় হামাসের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ এই পরিকল্পনাকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আগ্রাসনের একটি রেসিপি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, এর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘যা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করতে পারেনি, তা যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
গাজার সাধারণ বাসিন্দারাও পরিকল্পনাটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে জিম্মি মুক্তির একটি কৌশল বলে মনে করছেন।
ইউরোপীয় মিত্র ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
ইউরোপীয় শক্তিগুলোও হামাসকে অবিলম্বে এই পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্য: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় ট্রাম্পের ‘যুদ্ধ শেষ করা, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।’ এই পরিকল্পনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি এই পরিকল্পনাকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলে প্রশংসা করেছেন।
ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ট্রাম্পের ‘গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রতিশ্রুতিকে’ স্বাগত জানিয়ে হামাসকে ‘অবিলম্বে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া এবং এই পরিকল্পনা অনুসরণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
অন্যান্য ইইউ সদস্য: ইইউ প্রধান আন্তোনিও কস্তা সব পক্ষকে ‘শান্তির একটি প্রকৃত সুযোগ দিতে এই মুহূর্তটি কাজে লাগানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানি এই পরিকল্পনাকে ‘ভয়াবহ সংঘাতের অবসানের একটি অনন্য সুযোগ’ এবং ইতালি ‘এই সুযোগটি কাজে লাগানোর’ জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
স্পেন: এমনকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও শান্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকেই ‘একমাত্র সম্ভব’ পথ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান
ভারত: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের ‘ব্যাপক পরিকল্পনা ঘোষণার’ প্রশংসা করে এটিকে ‘ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের পাশাপাশি বৃহত্তর পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের একটি কার্যকর পথ’ বলে অভিহিত করেছেন।
অস্ট্রেলিয়া: প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসকে ‘অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
লন্ডনের ঐতিহাসিক ট্যাভিস্টক স্কোয়ারে স্থাপিত মহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ভাস্কর্যে আপত্তিকর গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। ভাস্কর্যের ভিত্তির দেয়ালে আপত্তিকর কথাও লেখা হয়েছে। ইংরেজিতে গান্ধী, নরেন্দ্র মোদি এবং হিন্দুস্তানিদের সন্ত্রাসী বলা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপকভাবে বিতাড়নের পর তাদের গ্রাম ও মসজিদ পুড়িয়ে দিয়ে জমি দখল করে ঘাঁটি নির্মাণ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এই তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘ-সমর্থিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে।
১৩ ঘণ্টা আগেব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শবানা মাহমুদ নতুন অভিবাসন নীতি ঘোষণা করেছেন, যেখানে অভিবাসীদের জন্য স্থায়ীভাবে দেশে থাকার নিয়ম কঠোর করা হবে। লেবার পার্টির লিভারপুল সম্মেলনে তিনি নিজেকে ‘কঠোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়ে জানান—
১৩ ঘণ্টা আগেতামিলনাড়ুর কারুর জেলায় অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ থালাপতি বিজয়ের সমাবেশে পদদলিত হয়ে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর পুলিশ টিভিকের (তামিলাগা ভেটরি কাজাগম) কারুর পশ্চিম জেলার সম্পাদক মাথিয়াঝাগানকে গ্রেপ্তার করেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষার অভাব ও ত্রুটিকে দায়ী করে...
১৪ ঘণ্টা আগে