Ajker Patrika

সংঘবদ্ধ নির্যাতন ‘কার্যত’ ইসরায়েলের রাষ্ট্রনীতি, কুকুর হামলা, যৌন নির্যাতনের চিত্র জাতিসংঘের প্রতিবেদনে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা গত বুধবার ইসরায়েল থেকে ফেরত পাঠানো অজ্ঞাতনামা ফিলিস্তিনিদের দেহাবশেষ ও মরদেহ রেডক্রসের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। ছবি: সংগৃহীত
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা গত বুধবার ইসরায়েল থেকে ফেরত পাঠানো অজ্ঞাতনামা ফিলিস্তিনিদের দেহাবশেষ ও মরদেহ রেডক্রসের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল গত দুই বছরে ‘রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সংঘটিত এবং ব্যাপক নির্যাতনের একপ্রকার বাস্তব নীতি’ অনুসরণ করেছে। জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের ঘটনায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর দায়মুক্তি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক মারধর, কুকুর দিয়ে হামলা, বিদ্যুতায়িত, ওয়াটারবোর্ডিং, দীর্ঘক্ষণ ধরে কষ্টকর অবস্থানে আটকে রাখা এবং যৌন সহিংসতার অভিযোগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনে সই করা দেশগুলোর নিয়মিত মূল্যায়নের অংশ।

এতে বলা হয়, ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনি ব্যক্তিদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণের (যেমন পশুর মতো আচরণ করতে বাধ্য করা বা তাদের ওপর প্রস্রাব করা) শিকার হতে হয়। তাদের নিয়মিতভাবে চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়।

১০ জন স্বাধীন বিশেষজ্ঞের এই কমিটি ইসরায়েলের Unlawful Combatants Law-এর ব্যাপক ব্যবহারে উদ্বেগ জানায়; যা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পুরুষ, নারী ও শিশুকে বিচার ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদে আটক রাখার বৈধতা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বি’ৎসেলেমের সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরের শেষে ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিস ৩ হাজার ৪৭৪ ফিলিস্তিনিকে বিচার ছাড়া আটকে রেখেছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি জানায়, ইসরায়েলে বর্তমানে আটক ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশু আছে; যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি বা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব শিশুকে ‘নিরাপত্তাবন্দী’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে কঠোর সীমাবদ্ধতা, একাকী আটক এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের লঙ্ঘন।

কমিটি ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে, শিশুদের একাকী কারাবন্দী রাখার বিধান যেন বাতিল করা হয়।

১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ নির্যাতনবিরোধী কনভেনশন বাস্তবায়ন তদারকির জন্য গঠিত এই কমিটি আরও বলেছে, দখল করা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি নীতির দৈনন্দিন প্রয়োগ, সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে ‘নির্যাতনের সমতুল্য হতে পারে’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা যুদ্ধ চলাকালে ৭৫ ফিলিস্তিনি বন্দী হেফাজতে মারা গেছেন। মৃত্যুর এই সংখ্যা ‘অস্বাভাবিকভাবে বেশি’ এবং তা শুধু ফিলিস্তিনি আটক ব্যক্তিদের মধ্যেই দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনায় কোনো রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা দায়ী বা জবাবদিহির সম্মুখীন হননি।

ইসরায়েল সরকার বরাবরই নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। জাতিসংঘ কমিটি ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার মন্ত্রণালয় ও কারা প্রশাসনের প্রতিনিধিদের বক্তব্যও শুনেছে, যেখানে তারা দাবি করে, কারাগারের পরিবেশ ‘যথাযথ ও নিয়মিত তদারকির আওতায়’।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...