Ajker Patrika

ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ: তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

আপডেট : ১৯ মে ২০২৩, ১৮: ০৯
ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ: তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগে তিন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত বছর ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় তিন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁরা জড়িত ছিলেন। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া তিন ব্যক্তি হলেন মাজিদ কাজেমি (৩০), সালেহ মিরহাশেমি (৩৬) ও সাঈদ ইয়াকুব (৩৭)।
এই তিনজনকে বিক্ষোভ চলাকালে গত বছর ১৬ নভেম্বর ইরানের কেন্দ্রীয় শহর ইসফাহান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় সংঘর্ষ চলাকালে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এর আগে গত জানুয়ারিতে ইরানের একটি আদালত কাজেমি এবং অন্য দুই ব্যক্তিকে ‘ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতা’–এর জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন। নভেম্বরে ইসফাহানে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন ওই আদালত। বিবিসি বলছে, এটি একটি অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জাতীয় নিরাপত্তার অভিযোগ। চার দিন বিচারকাজ চলার পর তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। গত সপ্তাহে ইরানের সুপ্রিম কোর্ট এই রায় বহাল রেখেছেন বলে দাবি করে ইরানের বিচার বিভাগ।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তাঁরা অন্যায় বিচারের শিকার হয়েছেন এবং তাঁদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে দেশটিতে আরও চার বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। আরও ডজনখানেককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

‘সঠিক উপায়ে’ হিজাব না পরার অভিযোগে আটক এক তরুণীর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় গত বছর ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল কুর্দিস্তান প্রদেশ থেকে রাজধানী তেহরানে আসেন। ‘অসভ্য’ পোশাক পরার অভিযোগে ইরানের নীতি পুলিশ মাশাকে আটক করে। পরে পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। তখন ইরানের কর্তৃপক্ষ দাবি করে, আটককেন্দ্রে অবস্থানের সময় তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মাশা আমিনি। ছবি: টুইটারমাশার মৃত্যুর পর ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নাগরিকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা মাশা আমিনির মৃত্যুর ন্যায়বিচার দাবি করেন। তাঁরা ইরানের কর্তৃপক্ষ ও নীতি পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে কিছু নারী জনসমক্ষে চুল কেটে ও হিজাব পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান। একপর্যায়ে এই বিক্ষোভ সংঘাতে রূপ নেয়। 

ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, মাশার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটির অন্তত ৫০টি শহরে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সহিংস বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আটক করা হয় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে।

এক সূত্রের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, আজ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া তিনজনকে গুম করা হয়েছিল। এরপর তাঁদের নির্যাতন করা হয়েছিল এবং তাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলার ভিত্তি তৈরি করা হয়। এমনকি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা কাজেমিকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। কাজেমিকে তাঁর ভাইকে নির্যাতন করার একটি ভিডিও দেখানো হয়েছিল। তাঁর ভাইদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। 

ইরানের ডাস্টগার্ড কারাগারে এই তিনজনকে আটক রাখা হয়। কারাগার থেকে পাঠানো এক অডিও বার্তায় কাজেমিকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমি ঈশ্বরের শপথ করে বলছি আমি নির্দোষ। আমার কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে মারতে থাকেন এবং নির্দেশ দিতে থাকেন আমি যেন বলি যে এই অস্ত্রটি আমার। আমি তাদের বলি, তারা যা চায় আমি তা-ই বলব। শুধু দয়া করে আমার পরিবারকে যেন ছেড়ে দেয়।’ 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ইন ইরানের (সিএইচআরআই) মতে, তাঁদের যথাযথভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। প্রসিকিউটররা জোরপূর্বক ‘স্বীকারোক্তি’ আদায় করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি ‘পরিষ্কার’ ছিল না; যা প্রমাণ করে যে এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

‘বেয়াদবি ছুটায় দেব’: সরি বলতে অসুবিধা নেই, বললেন সেই জামায়াত নেতা

শাহজালাল বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের সামনে কোমরপানি

ইসরায়েলের হামলার কী জবাব হবে—আরব-ইসলামিক সম্মেলন ডাকল কাতার

তিন ভোটে দায়িত্ব পালনকারীদের ‘যথাসম্ভব’ দূরে রাখতে হবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত