Ajker Patrika

গাজায় হতাহত ২ লক্ষাধিক, ইসরায়েলি জেনারেলের বিস্ফোরক মন্তব্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ০৪
অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি জেনারেল হারজি হালেভি। ছবি: এএফপি
অবসরপ্রাপ্ত ইসরায়েলি জেনারেল হারজি হালেভি। ছবি: এএফপি

গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি সম্প্রতি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজা যুদ্ধে ২ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেছেন, সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি বা তাঁর অধীনস্থরা যেকোনো আইনি পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুরুর প্রথম ১৭ মাস ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) নেতৃত্ব দেওয়ার পর গত মার্চে পদত্যাগ করেন হারজি হালেভি। সম্প্রতি দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি কমিউনিটি সভায় তিনি বলেন, গাজার ২২ লাখ জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও বেশি, অর্থাৎ ‘২ লাখেরও বেশি মানুষ’ নিহত বা আহত হয়েছে। তাঁর এই অনুমান গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের কাছাকাছি, যা এত দিন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হামাসের অপপ্রচার (প্রোপাগান্ডা) বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো এই তথ্যকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫৯ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবারও ইসরায়েলি হামলায়, বিশেষ করে গাজা সিটির আশপাশে, ৪০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। তবে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ফাঁস হওয়া ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা তথ্যে দেখা গেছে, নিহতদের ৮০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছিল, যার মধ্যে ৮১৫ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক ছিল। নিহতদের মধ্যে আবার বেশির ভাগই ছিলেন সামরিক।

হালেভি বলেন, ‘এটি কোনো কোমল যুদ্ধ নয়। আমরা প্রথম মিনিট থেকেই গ্লাভস খুলে ফেলেছি।’ তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, ৭ অক্টোবরের হামলার আগেই ইসরায়েলের আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিল। সাবেক এই কমান্ডার জোর দিয়ে বলেন, আইডিএফ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সীমার মধ্যেই কাজ করে, যদিও তিনি নিজে তাঁর সামরিক সিদ্ধান্তে আইনি পরামর্শের কোনো প্রভাব অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘কেউ আমাকে একবারও বাধা দেয়নি। একবারও না। সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেল (ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি), যার আমাকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই, তিনিও না।’

ওয়াইনেট নিউজ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রেকর্ডিংয়ে হালেভির এই মন্তব্য ছিল না। তবে পত্রিকাটির বরাত দিয়ে আরও বলা হয়েছে, হালেভি মনে করেন, সামরিক আইনজীবীদের মূল কাজ হলো আইডিএফের কর্মকাণ্ডের বৈধতা বিশ্বকে বোঝানো।

হালেভির এই মন্তব্য নিয়ে আইডিএফের কাছে জানতে চেয়েছিল দ্য গার্ডিয়ান, তবে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা কোনো মন্তব্য করেনি। ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল সফার্দ বলেছেন, হালেভির বক্তব্য ‘নিশ্চিত করে যে আইনি উপদেষ্টারা কেবল রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে কাজ করেন।’

গত বুধবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়, হালেভির উত্তরসূরি আইডিএফ চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামির অ্যাডভোকেট জেনারেল তোমের-ইয়েরুশালমির আইনি পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। তোমের-ইয়েরুশালমি বলেছিলেন, আইডিএফের আক্রমণের আগে গাজা সিটির প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া উচিত নয়, যতক্ষণ না তাদের জন্য সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়। গতকাল শুক্রবারের হামলায় নিহত ৪০ ফিলিস্তিনির অনেকেই সম্ভবত সেই সব মানুষ, যারা দক্ষিণে যেতে পারেনি বা তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে যেতে চায়নি, কারণ সেখানেও ইসরায়েলি বোমা হামলার ঝুঁকি ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত