Ajker Patrika

হিজবুল্লাহ হামলায় অংশ নিলে ইসরায়েল বিপাকে পড়বে: ইসরায়েলি গণমাধ্যম

আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১৫: ২৮
হিজবুল্লাহ হামলায় অংশ নিলে ইসরায়েল বিপাকে পড়বে: ইসরায়েলি গণমাধ্যম

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হারেতজের সাংবাদিক জিডিওন লেভি বলেছেন, লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী হিজবুল্লাহ হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ইসরায়েল বিপাকে পড়বে। ইসরায়েলি স্থাপনা লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর হামলার প্রতিক্রিয়ায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে তিনি এ কথা বলেন।  

জিডিওন লেভি বলেন, ‘আমরা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হব, যদি ইসরায়েলকে দুটি ফ্রন্টে লড়াই করতে হয়। এবং সম্ভবত তিনটি, যদি অধিকৃত পশ্চিম তীরও দৃশ্যপটে চলে আসে। এটি একটি নতুন “খেলা” এবং ইসরায়েল এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে, যা এর আগে কখনো হয়নি।’

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলিদের কাছে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে গাজা উপত্যকায় হামলা চালালে এবং কোনো স্থল আক্রমণ শুরু করার অর্থ এই সংঘর্ষ অন্য দিকে মোড় নেবে।

হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে বার্তা পাঠাতেই শেবা ফার্মে হামলা চালিয়েছে। এলাকাটিকে লেবানন অধিকৃত হিসেবে গণ্য করে। তাই হিজবুল্লাহও লেবানন সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কিছু করছে না।

লেবাননে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে সমালোচিত হিজবুল্লাহ। কিন্তু হিজবুল্লাহ সীমানা অতিক্রম না করে হামলার জন্য এই অঞ্চলকেই বেছে নিয়েছে। 

আল জাজিরা বলছে, গত কয়েক বছর ধরে হিজবুল্লাহ অস্ত্র মজুত করে চলেছে। তাদের কাছে ইতিমধ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো দিয়ে ইসরায়েলের যেকোনো স্থানে হামলা চালানো সম্ভব। 

আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হিজবুল্লাহর কয়েক হাজার সেনা রয়েছে। যাদের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব সেনা বেশ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। হিজবুল্লাহর শক্তি সম্পর্কে ইসরায়েলিদের সতর্ক করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে এটি আঞ্চলিক সংঘর্ষের দিকে গড়াতে পারে।  

এর আগে গতকাল শনিবার আকস্মিকভাবে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে এই গ্রুপ। গতকাল ভোর থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে সমন্বিত হামলা করে তারা। 

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে দেশটির সেনাদের ট্যাংকের দখল নেয় ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি এরপর আজ রোববার ইসরায়েলে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। জবাবে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও। ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, লেবাননের ওই এলাকা থেকে তাদের একটি সেনা স্থাপনা লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছিল। তারাও লেবাননে গোলাবর্ষণ করেছে।

ইসরায়েলি সেনাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, লেবাননের যে জায়গা থেকে গুলি চালানো হয়েছিল, সেখানে আঘাত শুরু করেছে ইসরায়েলি আর্টিলারি। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বিবৃতিতে বলা হয়নি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তাদের একটি ড্রোন লেবাননের সীমান্তবর্তী মাউন্ট ডভ এলাকায় ‘একটি হিজবুল্লাহ অবকাঠামোয়’ আঘাত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স প্ল্যাটফর্মে তারা এ কথা বলে।

নিরাপত্তা বাহিনীর তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননের ভূখণ্ড থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভোরে ইসরায়েল অধিকৃত শেবা ফার্মে ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।

এক বিবৃতিতে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলার দায় স্বীকার করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাডার সাইট, জিবদিন ও রুওয়াইসাত আল-আলমে ব্যাপক আর্টিলারি শেল ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। আমরা অধিকৃত লেবানিজ শেবা ফার্ম এলাকায় তিনটি ইসরায়েলি স্থাপনায় হামলা করেছি।’ 

হামাসের কাশেম ব্রিগেড বলছে, তাদের সেনারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে বিভিন্ন শহরে তাদের গোলাগুলি চলছে। ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের অফাকিম, সেদরত, ইয়েদ মোরদেশাই, কফার আজ্জা, বে’এরি ও কিসসুফিম শহরে হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হচ্ছে।  

এদিকে ইসরায়েল দাবি করছে, তারা হামাসের গোয়েন্দাপ্রধানের বাসভবনে হামলা করতে সক্ষম হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, গাজা উপত্যকায় তারা হামাসের গোয়েন্দাপ্রধানের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনারা দাবি করে, বাড়িটি হামাসের সদস্যরা ব্যবহার করতেন।  

আল জাজিরার তথ্যমতে, হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। হামাসের হামলার পর গাজায় পাল্টা বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে এ পর্যন্ত আড়াই শর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। দেড় হাজারের বেশি আহত হয়েছে। 

টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক সেনা জড়ো করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তের অন্তত ২২টি পয়েন্ট দিয়ে দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে পড়েন হামাসের যোদ্ধারা। গাজা সীমান্ত থেকে ১৫ মাইল দূরের শহরেও পৌঁছে যান তাঁরা। কিছু কিছু জায়গায় কয়েক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়েছেন হামাস সদস্যরা। ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে রাতেও তাঁদের লড়াই চলছিল।

এদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতার বিষয়ে আজ রোববার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। স্থানীয় সময় বেলা ৩টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে এক বিবৃতিতে বলা হয়। 

বড় সংঘাত এড়াতে মধ্যপ্রাচ্যে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘শুধু আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত এড়িয়ে শান্তি ফেরানো যেতে পারে।’ 

হামাসের এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে প্রতিরক্ষা সমর্থনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণের সঙ্গে আছি। এই হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণ হারানোর জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি।’ 

হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জাচি হানেগবির সঙ্গে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা জেক সুলিভান। 

ন্যাটোর মুখপাত্র ডিলান হোয়াইট বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে আছি। মুক্ত সমাজ গঠনে সন্ত্রাসবাদ প্রধান হুমকি। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’ 

ইসরায়েলে হামাসের এই হামলায় ফ্রান্স, জার্মানি ও ভারত নিন্দা জানিয়েছে বলে এএফপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালে তৃতীয় টার্মিনাল চালুতে বাধা, রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে টানাপোড়েন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে এবি ব্যাংক

রাশিয়া খুবই বড় শক্তি, চুক্তি ছাড়া ইউক্রেনের কোনো গতি নেই: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত