Ajker Patrika

ইসরায়েলি অবরোধে গাজার ২৭ বছরের যুবকের মৃত্যু, অনাহারে ওজন নেমেছিল ১৫ কেজিতে

অনলাইন ডেস্ক
মৃত্যুর সময় আদেলের শরীর ছিল শীর্ণ, পেট ছিল ভেতরের দিকে ঢোকানো, হাড়গুলো বেরিয়ে এসেছিল আর মুখ ছিল ফ্যাকাশে। ছবি: সংগৃহীত
মৃত্যুর সময় আদেলের শরীর ছিল শীর্ণ, পেট ছিল ভেতরের দিকে ঢোকানো, হাড়গুলো বেরিয়ে এসেছিল আর মুখ ছিল ফ্যাকাশে। ছবি: সংগৃহীত

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে এ সপ্তাহে অপুষ্টিতে মারা গেছেন ২৭ বছর বয়সী আদেল ফাওজি মাদি। তাঁর শরীর এতটাই শুকিয়ে গিয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল, শুধু চামড়া আর হাড় অবশিষ্ট রয়েছে। ইসরায়েলের ভয়াবহ অবরোধ ও এর ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে আরও একটি শিকার হলেন তিনি।

মৃত্যুর সময় আদেলের শরীর ছিল শীর্ণ, পেট ছিল ভেতরের দিকে ঢোকানো, হাড়গুলো বেরিয়ে এসেছিল আর মুখ ছিল ফ্যাকাশে। তাঁর এই দুর্বল দেহ গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর চলা ক্ষুধার যুদ্ধের এক করুণ সাক্ষী। ইসরায়েলের অবিরাম হামলার কারণে সেখানে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

আদেলের চাচাতো ভাই ইসমাইল মাদি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদুলুকে জানান, তাঁর ওজন প্রায় ৫০ কেজি (১১০ পাউন্ড) ছিল, যা কমে মাত্র ১৫ কেজি (৩৩ পাউন্ড) হয়ে গিয়েছিল।

ইসমাইল বলেন, ‘তাঁর হেপাটাইটিস ছিল এবং অপুষ্টি, অবরোধ ও হতাশার কারণে তাঁর স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়ে যায়। আমাদের কাছে কোনো ওষুধ, খাবার বা পরিষ্কার পানি ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি সীমান্তগুলো খোলা থাকত এবং চিকিৎসা পাওয়া যেত, তাহলে আদেলের এমন পরিণতি হতো না। তাঁর ওজন ক্রমাগত কমছিল। কিন্তু আমাদের কিছুই করার ছিল না। কোনো ওষুধ ছিল না, পরিষ্কার পানি ছিল না। আমাদের কোনো আবেদনেই কেউ সাড়া দেয়নি।’

আদেলের পরিবার জানায়, তারা কখনো ভাবেনি যে ২৭ বছর বয়সে আদেল এমন ‘কঙ্কালে’ পরিণত হবেন। তাঁর ওজন হবে মাত্র ১৫ কেজি!

জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গত সপ্তাহে সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলি অবরোধ অব্যাহত থাকায় গাজার এক-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি বেশ কয়েক দিন ধরে খাবার খেতে পাচ্ছে না। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া-বিষয়ক পরিচালক রস স্মিথ বলেন, গাজায় ক্ষুধা ও সংকট চরম হতাশার এক নতুন স্তরে পৌঁছেছে। এক-তৃতীয়াংশ মানুষ টানা কয়েক দিন ধরে খাবার ছাড়া কাটাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫৪ জন ফিলিস্তিনি (যাদের মধ্যে ৮৯টি শিশু) অনাহারে ও অপুষ্টিতে মারা গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় এক নৃশংস আক্রমণ শুরু করে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অবিরাম বোমা হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে।

গত সোমবার ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বিসেলেম ও ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস-ইসরায়েল ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেছে’। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনে পদ্ধতিগত ধ্বংস ও ওই ভূখণ্ডের স্বাস্থ্যসেবা-ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলার কথা উল্লেখ করেছে।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও গণহত্যা মামলার মুখোমুখি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত