Ajker Patrika

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকে যেভাবে আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করল ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ২৪
ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া নৌবহর। ছবি: এএফপি
ত্রাণ নিয়ে গাজার উদ্দেশে রওনা হওয়া নৌবহর। ছবি: এএফপি

গত ৩১ আগস্ট স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা গাজার উদ্দেশে পাঠানো এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক মানবিক মিশন। এতে রয়েছে ৫০টিরও বেশি জাহাজ এবং অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিদল, যার লক্ষ্য ইসরায়েলের আরোপিত নৌ-অবরোধ চ্যালেঞ্জ করা এবং গাজায় খাদ্য ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।

তবে অর্ধশতাধিক জাহাজের এই বিশাল বহর বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যেখানে অতীতের অনেক মিশন হামলা ও আটকানোর শিকার হয়েছে।

গতকাল বুধবার ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কান জানিয়েছে, ফ্লোটিলার নিয়ন্ত্রণ নিতে ইসরায়েলি সেনারা নৌ কমান্ডো ও যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব জাহাজ টেনে নেওয়া হবে না—এর মধ্যে কিছু জাহাজ সরাসরি ডুবিয়ে দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেছে কান।

ইসরায়েল শত শত কর্মী-অংশগ্রহণকারীকে নৌযানে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এবং পরে আশদোদ বন্দরের মাধ্যমে তাঁদের বহিষ্কার করার পরিকল্পনা করছে।

আন্তর্জাতিক জলসীমা ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ

কোনো উপকূলবর্তী দেশ তার তীর থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল (২২ কিমি) পর্যন্ত পানিসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ভোগ করে—এটি আঞ্চলিক জলসীমা নামে পরিচিত।

এর বাইরে ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০ কিমি) পর্যন্ত অঞ্চলকে বলা হয় এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (ইইজেড)। যেখানে মাছ ধরা, খনিজ আহরণ, জ্বালানি অনুসন্ধান ইত্যাদি বিষয়ে রাষ্ট্রের অধিকার থাকে। তবে অন্যান্য দেশের নৌযান অবাধে চলাচল করতে পারে।

সমুদ্রের প্রায় ৬৪ শতাংশ অঞ্চল আন্তর্জাতিক জলসীমা, যেখানে কোনো রাষ্ট্রের একক নিয়ন্ত্রণ নেই। এই অঞ্চলের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

সমুদ্র আইন কী বলে?

১৯৮২ সালের জাতিসংঘের কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি (UNCLOS) অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক জলসীমায় সব রাষ্ট্রের নৌযান চলাচলের স্বাধীনতা রয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল জলদস্যুতা বা অনুমোদনহীন কর্মকাণ্ড।

আগের ফ্লোটিলায় হামলা

২০১০ সাল থেকে গাজার অবরোধ ভাঙতে একাধিক ফ্রিডম ফ্লোটিলা পাঠানো হয়েছে, যেগুলো সবই আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি বাধার শিকার হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের ৩১ মে। ওই দিন আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাভি মারমারা জাহাজে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি কমান্ডোরা ১০ কর্মীকে হত্যা করেন এবং ১২-১৫ জনকে আহত করেন।

২০২৪ সালে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ঘোষণা দেন, ফ্রিডম ফ্লোটিলার আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবাধ চলাচলের অধিকার রয়েছে এবং ইসরায়েল কোনোভাবেই এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

আন্তর্জাতিক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের (আইটিএফ) মহাসচিব স্টিফেন কটন বলেন, সমুদ্র আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় অহিংস ও মানবিক জাহাজে হামলা বা দখল বেআইনি ও অগ্রহণযোগ্য। এতে শুধু জীবন ঝুঁকিতে পড়ে না, বরং সমুদ্রপথে বৈশ্বিক নিরাপত্তার মূলনীতিও ভেঙে যায়।

কোন কোন আইনে এই মিশন বৈধ

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের মতে, সুমুদ ফ্লোটিলা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত। যেমন—UNCLOS (১৯৮২): আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলে স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়।

সান রেমো ম্যানুয়াল: এমন অবরোধ নিষিদ্ধ করে, যা অনাহার বা অযথা ভোগান্তি সৃষ্টি করে এবং নিরপেক্ষ মানবিক মিশনকে লক্ষ্যবস্তু করা থেকে বিরত থাকতে বলে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ২৭২০ ও ২৭২৮: মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশ ও সব প্রতিবন্ধকতা অপসারণের দাবি জানায়।

জেনোসাইড কনভেনশন: ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের বিপন্ন করার কাজ প্রতিরোধের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে।

চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন: মানবিক সহায়তা অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

রোম স্ট্যাটিউট (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত): যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে অনাহার সৃষ্টি ও মানবিক সহায়তা ব্যাহত করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফ্লোটিলা থেকে আটক ২২৩ জনকে ইউরোপে পাঠাবে ইসরায়েল, জাহাজগুলোর ভাগ্য অনিশ্চিত

২০২৫ সালে বসবাসের জন্য সেরা ৫ দেশ

গাজার জলসীমায় পৌঁছে গেছে ফ্লোটিলার এক জাহাজ, পথে আরও ২৩টি

বাংলাদেশ–নেপালে সহিংস আন্দোলন হলেও পরিবর্তন আসেনি, বিদেশি হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি হয়েছে: আরএসএস প্রধান

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ৩৯ নৌযান আটক করেছে ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত