Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব: সংঘাতের শঙ্কা বাড়ছে 

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮: ৩০
ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব: সংঘাতের শঙ্কা বাড়ছে 

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলার জেরে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলে হামলার আশঙ্কা জোরদার হয়েছে। এর জেরে ইসরায়েল তার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সব যোদ্ধা ইউনিটের ছুটি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। সেই সঙ্গে জোরদার করেছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। খবর গার্ডিয়ানের।

এ ছাড়া জেরুজালেম পোস্টের গতকাল শুক্রবারের খবরে বলা হয়েছে, হামলার ঝুঁকি থাকায় ২৮টি দেশে দূতাবাস ও কনস্যুলেট সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের ওই হামলায় জাহেদি ছাড়াও নিহত হন অন্তত ১০ জন। তাঁদের মধ্যে ইরানের আরেক জেনারেলসহ ওই বাহিনীর ছয় সদস্য আছেন। জাহেদিকে গতকাল ইরানে সমাধিস্ত করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, তেহরানে এই আইআরজিসি কর্মকর্তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এতে হাজারো মানুষ জড়ো হন। এই অনুষ্ঠানে আইআরজিসির প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি বলেন, এই ঘটনার মূল্য ইসরায়েলকে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইরানের সাহসী লোকজন অবশ্যই ইহুদিবাদী রাষ্ট্রকে শাস্তি দেবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, আল-কুদস দিবস পালন ও আইআরজিসির সদস্যদের হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন তেহরানে। এ সময় তাঁরা ‘আমেরিকা নিপাত যাক’, ইসরায়েল নিপাত যাক’ বলে স্লোগান দেন।

এদিকে সালামির পক্ষ থেকে এই সতর্কবার্তা আসার আগেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরায়েল। মূলত ইরানের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা মোকাবিলায় তেল আবিব ওই পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, সম্ভাব্য এ হামলার পূর্ব সতর্কতা হিসেবে তেল আবিবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আবার খুলে দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এই বাহিনী বিবৃতিতে বলেছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সব যোদ্ধা ইউনিটের ছুটি সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইডিএফ এখন যুদ্ধপরিস্থিতিতে আছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সেনা মোতায়েনের বিষয়টি অব্যাহত মূল্যায়ন কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে।

এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আবদুল্লাহিয়ান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ইসরায়েলের ওই আগ্রাসন সব কূটনৈতিক নিয়মনীতি ও আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ও তাঁর ইহুদিবাদী লক্ষ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন।’

ইরানের হামলার হুমকির প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করা প্রসঙ্গে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো ইয়াদলিন বলেন, ‘ইরান যদি আল কুদস দিবসে হামলা চালায়, তাতে আমি বিস্মিত হব না। আতঙ্কিত হবেন না। আশ্রয়কেন্দ্রে ছোটারও দরকার নেই।’

কনস্যুলেট ও দূতাবাস বন্ধ

এদিকে ইসরায়েলের সূত্রের বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, দেশ ও নিরাপত্তা ইস্যু বিবেচনায় নিয়ে দূতাবাস ও কনস্যুলেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ইসরায়েলের গণমাধ্যমগুলো ভিন্ন কথা বলছে। তাদের খবরে বলা হয়েছে, যেসব কূটনৈতিক মিশন বন্ধ ছিল, সেগুলো আর চালু করা হয়নি।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এই হামলার পরপরই ইসরায়েল গাজায় হামলা চালায়। এই যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট ও দূতাবাস বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে জর্ডানের দূতাবাসও রয়েছে।

এদিকে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তেহরান যেন জিপিএস ব্যবস্থা ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েলি স্থাপনায় হামলা চালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে জিপিএস সেবা বন্ধ করে দিয়েছে তেল আবিব। জিপিএসসংশ্লিষ্ট পরিষেবাগুলো বৃহস্পতিবার ব্যাহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন সাংবাদিক ও তেল আবিবের বাসিন্দারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড আল–শারা এখন ওয়াশিংটনে, আলোচনায় দামেস্ক মার্কিন ঘাঁটি স্থাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: আনাদোলু
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: আনাদোলু

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারা সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা। জানা গেছে, ওয়াশিংটন এই সফরকে আইএসআইএল বা আইএসআইএসের বিরুদ্ধে দামেস্ককে বৈশ্বিক জোটে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ হিসেবে দেখছে।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে পৌঁছান আল-শারা। একই সময় সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সারা দেশে আইএসআইএল সেলের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়। আল-শারার নেতৃত্বে হায়াত তাহরির আল–শাম ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী গত বছর দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। আজ রোববার হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন আল–শারা।

বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার স্বাধীনতার পর ১৯৪৬ সালের পর এটিই কোনো সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম ঘটনা। আল-শারা গত মে মাসে রিয়াদে প্রথমবার ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। গত শুক্রবার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসী নিষেধাজ্ঞা তালিকা’ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া-বিষয়ক বিশেষ দূত টম বারাক চলতি মাসের শুরুতে বলেন, ‘আশা করা যায়’ আল-শারা মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটে যোগদানের এক চুক্তিতে সই করবেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যা সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে ওয়াশিংটন-নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

অন্যদিকে, আল-শারা তাঁর সফরে সিরিয়ার পুনর্গঠনের জন্য অর্থ সাহায্য চাইবেন। টানা ১৩ বছরের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের পর দেশটি এখন ব্যাপক পুনর্নির্মাণ সংকটে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, পুনর্গঠনে অন্তত ২১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার প্রয়োজন, যা তারা ‘সর্বনিম্ন অনুমান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

আল-শারা একসময় আল-কায়েদার সিরিয়ার শাখার নেতৃত্বে ছিলেন। তবে এক দশক আগে তাঁর বিদ্রোহী সংগঠন ওই নেটওয়ার্ক থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পরে আইএসআইএলের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তাঁর সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামকে যুক্তরাষ্ট্র গত জুলাইয়ে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়।

আল-শারার ওয়াশিংটন সফরটি হচ্ছে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তাঁর ঐতিহাসিক সফরের পর। সেসময় তিনিই ছিলেন প্রথম সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, যিনি কয়েক দশক পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ভাষণ দেন। এর ঠিক এক দিন আগে, বৃহস্পতিবার, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এক ভোটে আল-শারার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

শনিবার দামেস্কে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশজুড়ে আইএসআইএল সেলের বিরুদ্ধে অন্তত ৬১টি অভিযান চালানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, এসব অভিযানে অন্তত ৭১ জনকে আটক করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, এই অভিযানগুলো আলেপ্পো, ইদলিব, হামা, হোমস ও দামেস্কের উপকণ্ঠে চালানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে সংস্থাটি জানায়, এই অভিযান চলমান ‘সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় প্রচেষ্টা এবং জননিরাপত্তা রক্ষার অংশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকারি অচলাবস্থা: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১৪০০ ফ্লাইট বাতিল, বিলম্ব কয়েক হাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৯
মার্কিন সরকারের শাটডাউনের কারণে বিমানবন্দরে কর্মীদের বেতন–ভাতা হচ্ছে না ঠিকমতো। আর তাই তারাও কাজে আসতে গড়িমসি করছেন। এ কারণে, বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ছবি: এএফপি
মার্কিন সরকারের শাটডাউনের কারণে বিমানবন্দরে কর্মীদের বেতন–ভাতা হচ্ছে না ঠিকমতো। আর তাই তারাও কাজে আসতে গড়িমসি করছেন। এ কারণে, বিমানবন্দরগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ১ হাজার ৪০০টির বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর আগে মার্কিন ফেডারেল সরকার অচলাবস্থার কারণে বিমান চলাচল সীমিত রাখার নির্দেশ দেয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংস্থা ফ্লাইটওয়্যারের তথ্যে জানা যায়, আরও প্রায় ৬ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। শুক্রবার এই সংখ্যা ছিল ৭ হাজারের বেশি। এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানায়, ৪০টি ব্যস্ত বিমানবন্দরে বিমান চলাচলের সক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে। কারণ, সরকারের অচলাবস্থায় বেতন না পাওয়া আকাশপথ নিয়ন্ত্রকেরা (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার) অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করছেন।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা এখনো কংগ্রেসে বাজেট নিয়ে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা দূর করতে পারছে না। ১ অক্টোবর শুরু হওয়া এই স্থবিরতা চলতে থাকায় রোববার ৩৯তম দিনে পা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম সরকার অচলাবস্থা। দুই দলের সিনেটররা সপ্তাহান্তে ওয়াশিংটনে আলোচনায় বসেছেন। তাঁদের লক্ষ্য সরকার পুনরায় চালুর পথ খোঁজা। কারণ, খাদ্যসহায়তা কমে যাওয়া ও ফ্লাইট বিপর্যয়ে এখন সাধারণ মানুষও প্রভাবিত হচ্ছে।

শনিবার এক বিবৃতিতে আমেরিকান এয়ারলাইনস ওয়াশিংটনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানায়, ‘অচলাবস্থা শেষ করতে দ্রুত সমাধানে পৌঁছান।’

নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছিল সবচেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার সময়। শনিবার বিকেলের হিসাব অনুযায়ী, সেখানে আগমনকারী ফ্লাইট গড়ে চার ঘণ্টার বেশি দেরি করছিল, আর প্রস্থানকারী ফ্লাইটের গড় বিলম্ব ছিল দেড় ঘণ্টা। শনিবার সর্বাধিক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লট/ডগলাস আন্তর্জাতিক, নিউয়ার্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক ও শিকাগোর ও’হেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

এফএএর তথ্যে দেখা গেছে, নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলো গড়ে তিন ঘণ্টা, আটলান্টার হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন বিমানবন্দর থেকে আড়াই ঘণ্টার বেশি এবং লা-গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্বিত হচ্ছিল।

আগামী ২৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকস গিভিং ছুটি। এটি বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত ভ্রমণ মৌসুমগুলোর একটি। এবার শুধু বাণিজ্যিক ফ্লাইটই নয়, প্রাইভেট জেটের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শনিবার এক্সে শেয়ার করা পোস্টে পরিবহন সচিব ডাফি জানান, বড় বিমানবন্দরগুলোতে প্রাইভেট জেটের সংখ্যা কমানো হয়েছে। তাদের এখন ছোট বিমানবন্দর বা রানওয়ে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে নিয়ন্ত্রকেরা বাণিজ্যিক ফ্লাইটে মনোযোগ দিতে পারেন।

তবে সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এফএএ জানিয়েছে, ধীরে ধীরে ফ্লাইট কমানো হবে—শুক্রবার থেকে ৪ শতাংশ, ১১ নভেম্বর ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর থেকে পূর্ণ ১০ শতাংশ কমানো হবে। সংস্থাটি বলেছে, এই সিদ্ধান্ত নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি। কারণ, নিয়ন্ত্রকেরা বেতন ছাড়া কাজ করে অতিরিক্ত চাপের মধ্যে রয়েছেন।

আইনের কারণে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বেতন ছাড়া কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অনেকে অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন বা জীবিকা চালাতে দ্বিতীয় চাকরি করছেন। তাঁরা ১৪ লাখ সরকারি কর্মীর অংশ, যাঁরা কেউ বিনা বেতনে কাজ করছেন, কেউ বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন। বিমান চলাচলে বিপর্যয়ের আরেক কারণ হলো পরিবহন নিরাপত্তা সংস্থার (টিএসএ) ৬৪ হাজার কর্মীর বেশির ভাগই অচলাবস্থার সময় কোনো বেতন পাচ্ছেন না।

এর আগে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আগের সরকার অচলাবস্থায় দেখা গিয়েছিল, টিএসএ কর্মীদের প্রায় ১০ শতাংশ বিনা বেতনে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধন: সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আসছে যেসব পরিবর্তন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৬
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পাকিস্তান সরকার দেশটির সংবিধানে ২৭তম সংশোধনী আনতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এই বিষয়ক বিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে দেশটির বিচারব্যবস্থা ও সামরিক কমান্ড কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আজারবাইজান থেকে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভা বৈঠক পরিচালনা করে ২৭তম সংবিধান সংশোধনী খসড়ায় অনুমোদন দেন। এরপরই বিলটি সিনেটে উত্থাপন করা হয় এবং তা পাঠানো হয় আইন ও বিচারবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে।

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার বিলটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২৭তম সংশোধনী আসলে ২০০৬ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘চার্টার অব ডেমোক্রেসির’ অংশ। কিন্তু ১৮তম সংশোধনীর সময় তা সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি।

সংশোধনী প্রস্তাব অনুযায়ী, সংবিধানের ২৪৩ ধারা, যেখানে বলা হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ও কমান্ড ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে’ এবং ‘সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন রাষ্ট্রপতি’-এ কিছু পরিবর্তন আনা হবে। খসড়া অনুযায়ী, সশস্ত্র বাহিনীর ‘চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি’ (CJCSC) পদটি বাতিল করে নতুন একটি পদ তৈরি করা হবে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস।’

এ ছাড়া বিলটিতে বলা হয়েছে, সেনা কর্মকর্তা বা বিমান ও নৌবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দেওয়া সম্মানসূচক উপাধি; যেমন ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স ও অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট—আজীবন বহাল থাকবে। আইনমন্ত্রী বলেন, এসব উপাধি বাতিল করার ক্ষমতা শুধু পার্লামেন্টের হাতে থাকবে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের সুপারিশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে একজন কর্মকর্তাকে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

সংশোধনীর আরেকটি বড় প্রস্তাব হলো, একটি নতুন আদালত গঠন—ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট। এই আদালত প্রতিষ্ঠিত হলে সুপ্রিম কোর্টের কিছু ক্ষমতা কমে যাবে। খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধানের কিছু বিশেষ এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্ট থেকে সরিয়ে নতুন ফেডারেল সংবিধান আদালতে স্থানান্তর করা হবে।

বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। পাশাপাশি নতুন আদালতে বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে পার্লামেন্টের হাতে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফেডারেল সংবিধান আদালতে দেশের সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এই আদালতের প্রধান বিচারপতির মেয়াদ হবে তিন বছর।

২৭তম সংবিধান সংশোধনীর প্রধান বিষয়গুলো

  • নতুন পদ ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ তৈরি হবে, যা ২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
  • সেনাপ্রধান (Chief of Army Staff) একই সঙ্গে ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
  • ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ারফোর্স, অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট উপাধি আজীবন বহাল থাকবে।
  • প্রধানমন্ত্রী ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেসের’ সুপারিশে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান নিয়োগ দেবেন।
  • নতুন ফেডারেল সংবিধান আদালত গঠন করা হবে।
  • আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
  • বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বাড়বে।
  • ফেডারেল সংবিধান আদালতে বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করবে পার্লামেন্ট।
  • সুপ্রিম কোর্টের কিছু ক্ষমতা নতুন আদালতে স্থানান্তর হবে।
  • ফেডারেল সংবিধান আদালতের প্রধান বিচারপতির মেয়াদ হবে তিন বছর।
  • রাষ্ট্রপতি আজীবনের জন্য ফৌজদারি মামলার দায়মুক্তি পাবেন।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় মরছে মানুষ, নিহত ছাড়াল ৬৯ হাজার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৩
গাজার শাতি শরণার্থীশিবিরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে শিশুরা। ছবি: এএফপি
গাজার শাতি শরণার্থীশিবিরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে শিশুরা। ছবি: এএফপি

হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার প্রায় এক মাস পরও গাজায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে লাশ উদ্ধারের কাজ চলতে থাকায় নতুন করে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ১৬৯ জনে। নতুন করে কিছু লাশ উদ্ধার ও পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় এই সংখ্যা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর গত এক মাসে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। শনিবারও নতুন হত্যাকাণ্ডের খবর মিলেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে ‘হলুদ রেখা’ পেরিয়ে সেনাদের কাছে পৌঁছে যাওয়া এক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

এই ‘হলুদ রেখা’ হচ্ছে সেই সীমারেখা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটতে রাজি হয়েছিল। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও আরেক ফিলিস্তিনি ওই রেখা পেরিয়ে তাদের সেনাদের ওপর ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ তৈরি করায় তাকেও হত্যা করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনারা এখনো সীমারেখার কাছে যাওয়া সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে। পরিবারগুলো এতে হতাহত হচ্ছে। গাজার খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর ফেলে যাওয়া বিস্ফোরক বিস্ফোরিত হয়ে এক ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে নাসের হাসপাতাল।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) রাফাহ সীমান্ত আবার খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে আহত ও অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠানো যায়। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ফিলিস্তিনি রোগী রাফাহ হয়ে মিসর ও অন্যান্য দেশে গেছেন চিকিৎসার জন্য। তবে আরও প্রায় ১৬ হাজার ৫০০ রোগী চিকিৎসার অপেক্ষায় আছে।

সংস্থাটি বলেছে, ‘রাফাহ সীমান্ত গাজার চিকিৎসা সরবরাহ প্রবেশ ও রোগীদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পথ। জরুরি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য মিসর এখনো অন্যতম প্রধান গন্তব্য।’

এদিকে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের অভিযান ও দখলদার ইসরায়েলি বসতকারীদের হামলা অব্যাহত আছে। অভিযোগ উঠেছে, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যেই এসব হামলা চলছে। শনিবার নাবলুসের দক্ষিণে বেইতা শহরে অলিভ তুলতে যাওয়া ফিলিস্তিনি কৃষক, কর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় একদল ইসরায়েলি বসতকারী।

ইসরায়েলি বর্ণবৈষম্যবিরোধী কর্মী জোনাথন পোলাক আল জাজিরাকে বলেন, তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে জলপাই তুলতে গিয়েছিলেন। তখন ডজনখানেক মুখোশধারী ইসরায়েলি বসতকারী লাঠি নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে এসে তাদের দিকে বিশাল পাথর ছুড়ে মারে। পোলাক আরও বলেন, ‘ওরা পাথর ছুড়তে শুরু করলে আমরা প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দিই।’

জোনাথন পোলাক জানান, হামলায় অন্তত ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছে, যাদের চিকিৎসা নিতে হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সাংবাদিক গুরুতরভাবে মার খেয়েছেন, আর ৭০ বছর বয়সী এক কর্মীর গাল ও চোয়ালের হাড় ভেঙে গেছে।

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন জানিয়েছে, হামলায় পাঁচ সাংবাদিক আহত হয়েছেন—রানিন সাওয়াফতে, মোহাম্মদ আল-আত্রাশ, লুয়াই সাঈদ, নাসের ইশতাইয়েহ ও নাঈল বুয়াইতেল। সংগঠনটি হামলাটিকে ‘সাংবাদিকদের হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের দুই কর্মী—একজন সাংবাদিক ও তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই হামলায় আহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত