Ajker Patrika

এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার ৪ মাস পর বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে মামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ১২ জুন লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয়। ছবি: এএফপি
গত ১২ জুন লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয়। ছবি: এএফপি

গত জুনে ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৬০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনার চার মাস পর নিহত চারজন যাত্রীর পরিবার মার্কিন বিমান নির্মাতা বোয়িং ও যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হানিওয়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার করা এ মামলার নথি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ত্রুটিপূর্ণ ফুয়েল সুইচের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অভিযোগে আরও বলা হয়, নকশাগত ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও বোয়িং ও হানিওয়েল কিছুই করেনি।

প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১ নামের বোয়িং ৭৮৭ বিমানটি আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৬০ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২২৯ জন যাত্রী, ১২ জন কেবিন ক্রু এবং মাটিতে থাকা ১৯ জন ছিলেন।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বিমানের ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ উড্ডয়নের মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিমানটি পর্যাপ্ত ধাক্কা বা থ্রাস্ট হারায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এর আগেই জানিয়েছিল, বোয়িং বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ নিরাপদ। তবে ২০১৮ সালে এফএএ একটি পরামর্শ জারি করে অপারেটরদের সুইচের লকিং মেকানিজম পরীক্ষা করতে বলে, যাতে দুর্ঘটনাবশত জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ না হয়। কিন্তু এটি বাধ্যতামূলক করা হয়নি।

ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১-এর ক্ষেত্রে সুইচটি ‘রান’ থেকে ‘কাট অফ’ বা বন্ধ অবস্থানে চলে যায়, ফলে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে।

তবে প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশের পরই তদন্তে তৈরি হয় নতুন ধাঁধা। উড়োজাহাজ নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ ‘রান’, অর্থাৎ চালু থেকে ‘কাট অফ’ বা বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, ফুয়েল বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সেটা হাতে করতে হবে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিংবা বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে বন্ধ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলো অভিযোগ করেছে, এই সুইচের নকশাগত ত্রুটি ছিল, যা সহজেই দুর্ঘটনাবশত জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে পারে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, হানিওয়েল ও বোয়িং এই অনিবার্য বিপর্যয় ঠেকাতে কী করেছে? কিছুই না।

তাদের দাবি, প্রতিষ্ঠান দুটি এয়ারলাইনগুলোকে কখনো সতর্ক করেনি যে সুইচগুলো পরীক্ষা বা মেরামতের প্রয়োজন, এমনকি প্রতিস্থাপনের জন্য নতুন যন্ত্রাংশও সরবরাহ করেনি। বরং তারা কেবল একটি পরামর্শের আড়ালে বসে ছিল, যেখানে শুধু সুইচ পরীক্ষা করার সুপারিশ করা হয়েছিল।

টেক্সাসভিত্তিক ল্যানিয়ার ল ফার্ম নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষে এ মামলা করেছে। তবে বোয়িং এ মামলার বিষয়ে মন্তব্য না করে ভারতের এএআইবির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের দিকে ইঙ্গিত করেছে। হানিওয়েলের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

উল্লেখ্য, এ দুর্ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে ২০২৬ সালে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত