Ajker Patrika

অমানবিক ও দুঃস্বপ্নের রাজ্য—কর্মক্ষেত্রকে এভাবেই দেখছে জেন-জি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বয়স্ক প্রজন্ম সব সময় তরুণ প্রজন্মের কর্মজীবন নিয়ে অভিযোগগুলোকে তুচ্ছ মনে করে এসেছে। আমি যখন কুড়ির কোঠায়, তখন যেন অন্তহীন আলোচনা চলত—আমরা মিলেনিয়ালরা নাকি অলস ও আত্মকেন্দ্রিক; যেমনভাবে আমাদের আগের প্রজন্ম জেনারেশন এক্স ‘অলস’ বলে পরিচিত ছিল।

এখন জেন-জি প্রজন্মকে বলা হচ্ছে ‘চাকরির অযোগ্য’। তারা নাকি শুধু সফলতার জন্য কাজ করতে চায় না বা তারা নাকি ইনফ্লুয়েন্সার হতে চায়। কারণ, ইন্টারনেট নাকি তাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে।

অথচ জেন-জিরা এই গতানুগতিক অপবাদের যোগ্য নয়। কারণ, গত এক দশকে শিক্ষানবিশ স্তরে কোনো চাকরি জোগাড় করা বা তা ধরে রাখা ক্লান্তিকর ও অমানবিক অগ্নিপরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।

নিঃসন্দেহে বর্তমানে চাকরির বাজার বেশ কঠিন। রুজভেল্ট ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল ম্যাডোভিটজ এটিকে ‘ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আপনি যদি সবে কলেজে পড়াশোনা শেষ করে থাকেন, তাহলে আপনি একটি হাইওয়েতে প্রবেশ করতে চাইছেন, কিন্তু কেউই আপনাকে ঢুকতে দিচ্ছে না।’

এর মধ্যে এয়ারবিএনবি ও ইনটুইটের মতো সংস্থাগুলোর নিয়োগকর্তারা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেছেন, তাঁরা যতটা সম্ভব অল্প জনবল নিয়ে থাকতে চান, যতক্ষণ না তা স্বল্পমেয়াদি মুনাফা এনে দেয়।

কিন্তু জেন-জিদের জন্য কর্মজীবন শুধু অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কঠিন হয়ে ওঠেনি; বরং দীর্ঘদিন ধরে এটি এক যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা।

এই বছরের শুরুর দিকে আমার সহকর্মী ডেভিড ব্রুকস এক কলেজ সিনিয়রের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যিনি তরুণ আমেরিকানদের ‘সবচেয়ে বেশি প্রত্যাখ্যাত প্রজন্ম’ হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন এমন এক প্রবল প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, যা এমনকি সুবিধাপ্রাপ্ত কলেজপড়ুয়া তরুণদের জীবনেও চাপ তৈরি করেছে।

চাকরির আবেদন এখন যেহেতু অনলাইনে হয়, তাই আবেদন করার বাধা আগের চেয়ে অনেক কম। ফলে প্রতিটি পদে এখন শত শত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তার ওপর চাকরিপ্রার্থীদের এখন প্রাথমিকভাবে বাছাই করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), যা পুরো প্রক্রিয়াকে আরও বেশি অমানবিক ও গেমের মতো করে তুলেছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র রিচার্ড ইউন আমাকে বলেছেন, তাঁর বন্ধুরা যখন ফাইন্যান্স খাতে একাধিক ইন্টারভিউ দেন, তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করেন—‘কোনো জায়গা থেকে সাড়া পেয়েছ?’ তখন তাঁরা জানান, ২০টি ইন্টারভিউর মধ্যে ১৯টি ছিল বটদের সঙ্গে।

ইউন বলেন, চাকরিপ্রার্থীরা এখন সিভি তৈরি করার সময় এমন কিওয়ার্ড খোঁজেন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পছন্দ হতে পারে, যাতে সেই ডিজিটাল বাছাই প্রক্রিয়া পেরিয়ে কোনো একদিন ইন্টারভিউতে কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়; যা হয়তো চাকরির অফারে গিয়ে গড়াবে কিংবা অন্তত একটা বাস্তব নেটওয়ার্ক তৈরি করবে।

এই পুরো প্রক্রিয়াকে ‘ডিস্টোপিয়ান’ বলেছেন ইউন।

তবে আসল ডিস্টোপিয়া শুরু হয় চাকরি পাওয়ার পর। জেন-জিদের মতে, কর্মক্ষেত্রে এখন আগের মতো পরামর্শ বা দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় না; বরং খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ আর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ বেড়ে গেছে।

ওহাইওর কলম্বাস শহরে বসবাসকারী ২৭ বছর বয়সী স্টিভি স্টিভেন্স জানান, একটি এক্সিবিশন ডিজাইন ও প্রোডাকশন কোম্পানিতে পূর্ণকালীন চাকরি করতেন তিনি। গত জুলাইয়ে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ, সেখানে কাজ করার সময় তাঁর মনে হয়েছে, অতিরিক্ত নজরদারির মধ্যে তিনি রয়েছেন। অথচ প্রয়োজনীয় সহায়তা চাইতে গেলে তা পাওয়ার উপায় নেই।

স্টিভেন্স বলেন, ‘ম্যানেজাররা চায়, তুমি ৪০ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহে ছয়জনের কাজ করে ফেলো। আমার কোম্পানির সুযোগ-সুবিধা ছিল মাঝারি মানের আর পেশাগত উন্নয়ন বা প্রশিক্ষণের কোনো সুযোগই ছিল না বলতে গেলে।’

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মতামত পাতায় লেখাটা লিখেছেন জেসিকা গ্রোস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...