Ajker Patrika

লাদাখ বিক্ষোভের নেতা সোনম ওয়াংচুকের পাকিস্তান সফর ও প্রতিষ্ঠানে বিদেশি অনুদান তদন্তে সিবিআই

কলকাতা প্রতিনিধি  
সোনম ওয়াংচুক। ছবি: পিটিআই
সোনম ওয়াংচুক। ছবি: পিটিআই

লাদাখ বিক্ষোভের নেতা জলবায়ুকর্মী সোনম ওয়াংচুক ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশি অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই মাস আগে হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অল্টারনেটিভস লাদাখের (এইচআইএএল) অর্থায়ন নিয়ে এই তদন্ত শুরু হয়। একই সঙ্গে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সোনম ওয়াংচুকের পাকিস্তান সফরের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সোনম ওয়াংচুক গত ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে আয়োজিত ‘ব্রিথ পাকিস্তান’ জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। ‘ডন মিডিয়া’ আয়োজিত এ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানে পরিবেশ ও জলবায়ু সংকট নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা।

এর আগে গত আগস্টে লাদাখ প্রশাসন সোনমের প্রতিষ্ঠান এইচআইএএলকে বরাদ্দ করা জমি বাতিল করে দেয়, যা একটি বড় বিতর্কের জন্ম দেয়। পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও সাংবিধানিক সুরক্ষার জন্য আন্দোলনরত লাদাখি গোষ্ঠীগুলো কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির ওপর একটি আক্রমণ এবং অধিকারের জন্য লড়াই করা মানুষদের নীরব করে দেওয়ার প্রচেষ্টা বলে আখ্যা দেয়। এ ঘটনা এমন সময়ে ঘটল, যখন সোনম ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে যে তিনি বিক্ষুব্ধ জনতাকে উসকে দিয়েছেন, যার ফলে লাদাখে সহিংসতা হয়েছে।

গতকাল বুধবার লাদাখে সহিংস সংঘর্ষে চারজন নিহত ও অন্তত ৮০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪০ জন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। এ ঘটনার পর সোনম ওয়াংচুক তাঁর ১৫ দিনের অনশন প্রত্যাহার করে নেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনশনকারী ১৫ জনের মধ্যে দুজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে এর প্রতিবাদে লেহ অ্যাপেক্স বডির যুব শাখা বিক্ষোভের ডাক দেয়।

বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদর দপ্তর ও হিল কাউন্সিলে হামলা চালান এবং বিভিন্ন যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।

কেন্দ্রীয় সরকার অভিযোগ করেছে, আন্দোলনকারী সোনম ওয়াংচুকের ‘উসকানিমূলক বক্তব্যের’ কারণেই এই সহিংসতা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সোনম ওয়াংচুক যে দাবিগুলোর জন্য অনশন করছিলেন, সেগুলো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির (এইচপিসি) আলোচনার অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেক নেতা তাঁকে অনশন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করলেও তিনি তা চালিয়ে গেছেন এবং আরব বসন্তের মতো প্রতিবাদ ও নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের উদাহরণ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ভারত সরকার লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি) ও কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (কেডিএ) সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এইচপিসির মাধ্যমে এবং একাধিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি এই আলোচনা প্রক্রিয়ার অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নন এবং তাঁরা আলোচনা বানচাল করার চেষ্টা করছেন।

প্রসঙ্গত, সোনম ওয়াংচুক একজন জলবায়ুকর্মী এবং পেশায় একজন যান্ত্রিক প্রকৌশলী। ২০১৮ সালে তিনি র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৮ সালে তিনি সেকমল (SECMOL–Students’ Educational and Cultural Movement of Ladakh) স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল লাদাখি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস পুনর্গঠন।

রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে লাদাখের লেহতে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি)। এটি বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট। সোনম ওয়াংচুকও দীর্ঘদিন ধরে লাদাখের অধিকার ও উন্নয়নের পক্ষে কাজ করছেন। তিনি এই জোটের একজন সদস্য। ওয়াংচুক অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে একটি অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, যাতে কেন্দ্রের সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনার মাধ্যমে লাদাখের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো পূরণ করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের হাতে ইসরায়েলের ‘কয়েক লাখ পৃষ্ঠার’ গোপন নথি, পারমাণবিক স্থাপনার ছবি প্রকাশ

আ.লীগের অপরাধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত

ভারত–চীন সীমান্তের শীতল লাদাখ জেন–জি আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ কেন

ভারতের কাছে হারের পর বাংলাদেশকে ধুয়ে দিলেন রুবেল

চীনা নেতৃত্বাধীন বৃহত্তম বাণিজ্য জোট আরসিইপিতে যোগ দিতে চায় বাংলাদেশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত