Ajker Patrika

বিবিসির অনুসন্ধান

রোহিঙ্গাদের আটকের পর সাগরে ফেলে দিচ্ছে ভারত

  • দিল্লি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আন্দামানে।
  • এরপর নৌকায় করে নিয়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছে মিয়ানমারের কাছে সাগরে।
  • বাংলাদেশে যাদের পুশইন করা হচ্ছে, তাদের মধ্যেও রোহিঙ্গা আছে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ২২
মিয়ানমার থেকে ভিডিও কলে বিবিসির সঙ্গে সোয়েদ নূর (মাঝখানে) এবং আরও কয়েকজন শরণার্থী কথা বলেছেন।
মিয়ানমার থেকে ভিডিও কলে বিবিসির সঙ্গে সোয়েদ নূর (মাঝখানে) এবং আরও কয়েকজন শরণার্থী কথা বলেছেন।

নুরুল আমিন সর্বশেষ তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন গত ৯ মে। সংক্ষিপ্ত ছিল সেই কথোপকথন। তবে এই সময় তাঁকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল ভয়ংকর। নুরুল আমিন জানতে পারেন, তাঁর ভাই খায়রুল ও চার আত্মীয় রোহিঙ্গা শরণার্থীকে জোর করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। যদিও বেশ কয়েক বছর আগে এই শরণার্থীরা নিয়ম মেনে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

শুধু নুরুল আমিনের ভাই বা তাঁর চার আত্মীয়কে নয়, ৪০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। বিবিসির এক অনুসন্ধানে এই চিত্র উঠে এসেছে। শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার, দিল্লিতে থাকা তাঁদের আত্মীয়স্বজন এবং এই বিষয়ে যাঁরা তদন্ত করছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের আটক বরে প্রথমে আন্দামান সাগরে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের লাইফ জ্যাকেট পরানো হয়। এরপর তাঁদের সাগরে ফেলে দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা মিয়ানমারে চলে যান।

বিবিসি বলছে, মিয়ানমার ভয়ংকর এক গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে জান্তা সরকারের সঙ্গে লড়াই করছে বিদ্রোহীরা। এই পরিস্থিতিতে ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে এসেছে নির্যাতন।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর ভারতের নির্যাতনের বিষয়ে নতুন প্রতিবেদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। তারাও বলছে, ভারতের রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে। তাদের জোর করে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেককে এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে, বাকিদেরও ফেরত পাঠানো হবে।

এইচআরডব্লিউর ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের মে মাস থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা বা সুরক্ষার কথা চিন্তা না করেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃত আরও কয়েক শ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নির্যাতনও করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, এর সঙ্গে তথ্যসহ ছবি প্রকাশ করেছে বিবিসি। এতে দেখানো হয়েছে, দেশটিতে বৈধভাবে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে এমন রোহিঙ্গাদের প্রথমে দিল্লিতে আটক করা হচ্ছে। এরপর উড়োজাহাজে করে নেওয়া হচ্ছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। এরপর সেখান থেকে নৌকায় করে সাগরে এমন স্থানে নেওয়া হচ্ছে যেখান থেকে মিয়ানমারের উপকূল কাছে। এরপর ওই নৌকা থেকে তাদের জোর করে নামিয়ে দেওয়া হয় সাগরে। যে রোহিঙ্গা এভাবে মিয়ানমারের পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছে, তারা গিয়ে পড়ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের যোগ দিতে হচ্ছে গৃহযুদ্ধে।

যেসব রোহিঙ্গা এভাবে দিল্লি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে বিবিসি। ব্রিটিশ এই গণমাধ্যম বলছে, তিন মাস আগে দিল্লি থেকে যাদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়, তাদের তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে তারা। এই তিনজন জানিয়েছে, তারা বর্তমানে বা তু আর্মির সঙ্গে রয়েছে। মূলত এই বাহিনী একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যারা জান্তা সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই করছে।

মিয়ানমারে যাওয়া ওই তিনজনের একজন সৈয়দ নূর। তিনি ভিডিও কলে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানান, মিয়ানমারে তাঁরা নিরাপদ বোধ করছেন না। একটা যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন তাঁরা। তিনি যখন বিবিসির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তাঁর সঙ্গে আরও ছয়জন রোহিঙ্গা ছিলেন সেখানে।

নূরের মতো আরেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে পৌঁছানোর পর দিল্লিতে তাঁর ভাইকে জানিয়েছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের হাত বেঁধে এবং মুখে কাপড় পেঁচিয়ে নৌকায় তুলেছিল। এরপর তাঁদের সাগরে ফেলে দিয়েছিল।

বিবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় নূর বলেন, ‘কীভাবে মানুষকে সমুদ্রে ছুড়ে ফেলতে পারে? পৃথিবীতে মানবতা বেঁচে আছে, কিন্তু ভারত সরকারের মধ্যে আমি কোনো মানবতা দেখিনি।’

এদিকে জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত থমাস অ্যান্ড্রু বলেন, তাঁরা এমন বেশ কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন। এমন তথ্য থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের আন্দামানে নিয়ে সাগরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব তথ্য জেনেভায় ভারত মিশনে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে তারা কোনো জবাব দেয়নি।

এদিকে এইচআরডব্লিউ বলেছে, গত মে মাসে বিজেপি শাসিত ভারতের রাজ্যগুলো থেকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গা এবং বাংলাভাষী মুসলমানদের বহিষ্কারের জন্য একটি অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানে এমন ১৯২ জনকে পাঠানো হয়েছে, যারা কি না রোহিঙ্গা শরণার্থী ছিল। এই রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) নিবন্ধিত ছিল। এরপরও তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৌকীর-বিপাশা বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন যে কারণে

মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় নিয়ে গায়েব করেন উপদেষ্টা— আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

ফিলিস্তিনকে আজই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে আরও ৬ দেশ, বিরোধিতা ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের

ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনকে মারতে উদ্যত হওয়া সেই চিকিৎসক বরখাস্ত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত