Ajker Patrika

ভারতে ওয়াক্‌ফ আইন সংশোধনে মুসলিমদের বিরোধিতা কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০০: ০০
ভারতে ওয়াকফ আইন সংশোধন বিল পাসের প্রতিবাদে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
ভারতে ওয়াকফ আইন সংশোধন বিল পাসের প্রতিবাদে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে ওয়াক্‌ফ আইন সংশোধন বিল পাস হওয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মোদি সরকার বলছে, এই সংস্কার দুর্নীতি রোধ ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু মুসলিম সংগঠন ও বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এর আড়ালে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকার খর্ব এবং ঐতিহাসিক সম্পত্তির দখল নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এ নিয়ে বিস্তর এক প্রতিবেদন করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিমদের দান করা কোটি কোটি টাকার ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক সম্পত্তির মালিকানা এবং ব্যবস্থাপনার বিধানে পরিবর্তনে একটি বিল পাস করেছে বিজেপি সরকার। এই সম্পত্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, আশ্রয়কেন্দ্র এবং হাজার হাজার একর জমি। এগুলো ‘ওয়াক্‌ফ’ নামে পরিচিত এবং পরিচালনা করে ওয়াক্‌ফ বোর্ড।

চলতি বছরের আগস্টে বিদ্যমান ওয়াক্‌ফ আইনে ৪০টির বেশি সংশোধনী এনে একটি নতুন বিল পেশ করা হয়। পরে তা পর্যালোচনার জন্য সংসদের যৌথ কমিটির কাছে পাঠানো হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংসদের উভয় কক্ষে সেই কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হলে বিরোধী দলগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তাদের অভিযোগ, প্রতিবেদন থেকে তাদের ভিন্নমতাবলম্বী মন্তব্য বা ‘ডিসেন্ট নোট’ মুছে ফেলা হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তবে প্রতিবাদ থামাতে পারেনি বিজেপি সরকারকে। বিলটি লোকসভায় পাস হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদের উচ্চকক্ষেও পাস হয়ে গেছে। বিলটির আইনে পরিণত হতে এখন শুধু রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর এক দস্তখতের অপেক্ষা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বলছে, ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে এবং মুসলিম সমাজেরই দাবি অনুযায়ী সংস্কার আনতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু একাধিক মুসলিম সংগঠন ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বলছে, এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভারতের সংখ্যালঘুদের অধিকারে হস্তক্ষেপের একটি নতুন কৌশলমাত্র।

ওয়াক্ফ কী

ইসলামি সিলসিলায় ওয়াক্‌ফ হলো ধর্মীয় বা সমাজকল্যাণমূলক দান; যা মুসলিমরা জনগণের কল্যাণে করেন। একবার কোনো সম্পত্তি ওয়াক্‌ফ হিসেবে নির্ধারিত হলে তা বিক্রি করা যায় না, কিংবা অন্য কোনো কাজে ব্যবহারও করা যায় না। এর মানে—ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি আসলে আল্লাহর নামে উৎসর্গীকৃত।

এই সম্পত্তিগুলোর একটা বড় অংশ মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেক সম্পত্তি রয়েছে, যা ফাঁকা পড়ে আছে কিংবা দখল হয়ে গেছে।

ভারতে ওয়াক্‌ফ প্রথার ইতিহাস বহু পুরোনো। ১২ শতকে দিল্লি সালতানাত আমলে মধ্য এশিয়া থেকে আগত মুসলিম শাসকদের হাত ধরেই এই প্রথার সূচনা হয়। বর্তমানে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি ‘ওয়াক্‌ফ আইন, ১৯৯৫’-এর আওতায় পরিচালিত হয়। এই আইনে রাজ্যভিত্তিক ওয়াক্‌ফ বোর্ড গঠনের বিধান রয়েছে, যেখানে সরকার মনোনীত ব্যক্তি, মুসলিম জনপ্রতিনিধি, বার কাউন্সিল সদস্য, ইসলামি চিন্তাবিদ এবং ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওয়াক্‌ফ বোর্ডগুলো ভারতের অন্যতম বৃহৎ ভূমির মালিক। দেশজুড়ে কমপক্ষে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৩৫১টি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ ৪০ হাজার একর। এসবের মোট মূল্য ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন রুপি, যা প্রায় ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১১ দশমিক ২৬ বিলিয়ন পাউন্ড।

ওয়াক্‌ফ আইন সংস্কার কি জরুরি

ভারতে ওয়াক্‌ফ বোর্ডে দুর্নীতি যে রয়েছে, তা অস্বীকার করছেন না মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিরাও। অনেক সময় ওয়াক্‌ফ বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে জমি দখলদারদের সঙ্গে আঁতাত করে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। তবে সমালোচকেরা বলছেন, ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির একটি বড় অংশই দখল করে রেখেছে ব্যক্তি, বেসরকারি সংস্থা এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও; যার দিকে নজর দেওয়া জরুরি।

২০০৬ সালে ভারতের মুসলিমদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা মূল্যায়নের জন্য তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটির প্রতিবেদনেও ওয়াক্‌ফ সংস্কারের সুপারিশ ছিল।

সাচার কমিটি দেখায়, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ওয়াক্‌ফ বোর্ডের রাজস্ব ছিল খুবই কম। কমিটি হিসাব করে জানায়, যদি জমিগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে প্রতিবছর প্রায় ১২ হাজার কোটি রুপি আয় করা সম্ভব। অথচ বর্তমানে বার্ষিক আয় মাত্র ২০০ কোটি রুপির আশপাশে।

কমিটি আরও উল্লেখ করে, ওয়াক্‌ফ-এর রক্ষণাবেক্ষণকারী রাষ্ট্র নিজেই অনেক ক্ষেত্রে এই জমি দখল করে রেখেছে। তারা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শত শত ‘অবৈধ দখলের’ উদাহরণও তালিকাভুক্ত করেছিল।

সরকারি তথ্য বলছে, বর্তমানে অন্তত ৫৮ হাজার ৮৮৯টি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি দখল হয়ে রয়েছে এবং ১৩ হাজারের বেশি সম্পত্তি আদালতে মামলার অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া ৪ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

সরকার বলছে, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবে এবং সাচার কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নেই সহায়তা করবে। সংসদবিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, বর্তমানে মুসলিম সমাজের একটি অভিজাত শ্রেণি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে। সংস্কারের মাধ্যমে এর ভারসাম্য আনা জরুরি।

তাহলে বিতর্ক কোথায়

তবু প্রস্তাবিত এই পরিবর্তনগুলো ঘিরে মুসলিম সমাজে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি হলো মালিকানাসংক্রান্ত বিধান পরিবর্তন। এর ফলে ঐতিহাসিক মসজিদ, দরগাহ ও কবরস্থানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। কারণ, এই সম্পত্তিগুলোর বড় অংশ বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু এদের বেশির ভাগেরই কোনো লিখিত দলিল নেই। অনেক ক্ষেত্রেই মৌখিকভাবে কিংবা প্রমাণ ছাড়া দান করা হয়েছে শত শত বছর আগে।

১৯৫৪ সালের ওয়াক্‌ফ আইনে এ ধরনের সম্পত্তিকে ‘ব্যবহারভিত্তিক ওয়াক্‌ফ’ বা দখলিস্বত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত নতুন আইনে এই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে বিপুলসংখ্যক ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় সম্পত্তির আইনি স্বীকৃতি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

‘শিখওয়ায়ে হিন্দ: দ্য পলিটিক্যাল ফিউচার অব ইন্ডিয়ান মুসলিমস’ বইয়ের লেখক অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, এই ধরনের প্রাচীন ধর্মীয় সম্পত্তির মালিকানা খুঁজে বের করা অত্যন্ত জটিল। কারণ, মোগল আমল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ এবং বর্তমানে যে প্রশাসনিক কাঠামো এসেছে, তাঁর সঙ্গে বারবার পরিবর্তন হয়েছে দস্তাবেজ ও ব্যবস্থাপনার ধরন।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন বলেন, ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তির ইতিহাস কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত ট্র্যাক করা সম্ভব। কিন্তু জনগোষ্ঠীর সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় যেহেতু ধারাবাহিকতা থাকে না, তাই সেগুলোর ইতিহাস খুঁজে বের করা কঠিন।’

আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সংশোধিত আইনে ওয়াক্‌ফ বোর্ডের গঠনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে বোর্ডে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কেউ কেউ বলছেন, সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বোর্ডে সব ধর্মের মানুষ রাখা বাধ্যতামূলক করার আইনি পদক্ষেপ সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে—যদি তা প্রক্রিয়াকে আরও ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলে। তবে অধ্যাপক মুজিবুর মনে করেন, বর্তমানে যেভাবে এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে, তা সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনীতির সুবিধায় করা হচ্ছে।

তাঁর ভাষায়, এখানে শুধু রাষ্ট্রের মাধ্যমে মুসলমানদের সম্পত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং হিন্দু সমাজের মাধ্যমে মুসলিম সমাজের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চোখে পড়ছে।

যেসব পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংশোধনী হলো, ওয়াক্‌ফ বোর্ডের সব সম্পত্তি সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের (ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর) কাছে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা। এরপর জেলা প্রশাসক সরকারকে সুপারিশ করবেন, ওয়াক্‌ফ বোর্ডের দাবি অনুযায়ী সম্পত্তিটি আদৌ ওয়াক্‌ফ কি না।

সমালোচকদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় ওয়াক্‌ফ বোর্ডের ক্ষমতা খর্ব হবে। লোকসভার মুসলিম সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অভিযোগ করেছেন, এই পরিবর্তনের মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিমদের জমির অধিকার কেড়ে নেওয়া।

বর্তমানে প্রচলিত আইনে রাজ্য সরকারকে একজন সার্ভে কমিশনার নিয়োগ দিতে হয়, যিনি রাজ্যে অবস্থিত ওয়াক্‌ফ সম্পত্তিগুলো চিহ্নিত করেন এবং একটি তালিকা তৈরি করেন। এরপর এই তালিকা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয় এবং সরকার থেকে একটি আইনি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যদি এক বছরের মধ্যে কেউ এটি চ্যালেঞ্জ না করে, তাহলে সম্পত্তিটি চূড়ান্তভাবে ওয়াক্‌ফ হিসেবে স্বীকৃত হয়।

কিন্তু প্রস্তাবিত আইন পরিবর্তনের ফলে বহু ওয়াক্‌ফ সম্পত্তির অবস্থান ও মালিকানা পুনরায় প্রমাণ করতে হতে পারে। ওয়াইসি বলেন, অনেকে অবৈধভাবে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। এখন তাদের সুযোগ তৈরি হবে এই দাবি তোলার যে, সম্পত্তিটি আসলে তাদের।

মুসলিম সংগঠনগুলো বলছে, এই প্রক্রিয়ায় বহু ঐতিহাসিক দরগাহ ও মসজিদ হুমকির মুখে পড়বে। তাদের মতে, সংস্কার দরকার, তবে তা করতে হবে সমাজের অনুভূতি ও স্বার্থকে সম্মান জানিয়ে।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, রোগের বিশ্লেষণ হয়তো সঠিক, কিন্তু চিকিৎসা পদ্ধতি ভুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতি: বিবিসির মহাপরিচালক ও হেড অব নিউজের একযোগে পদত্যাগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ভাষণ সম্পাদনা করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে বিবিসির ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। খবর বিবিসির।

ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। ব্রিটিশ আরেক সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

এই ঘটনার পর ব্রিটিশ রাজনীতিকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, ডেভি ও টারনেসের পদত্যাগ বিবিসিতে পরিবর্তনের পথ খুলে দেবে। ট্রাম্প পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে মহাপরিচালক ও বার্তা বিভাগের প্রধানের পদত্যাগের ঘটনা নজিরবিহীন।

রোববার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টিম ডেভি বলেন, ‘সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সব সময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। বর্তমান বিতর্কই আমার পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে তা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। বিবিসি সামগ্রিকভাবে ভালো করছে, কিন্তু কিছু ভুল হয়েছে, যার দায় আমাকে নিতেই হবে।’

ডেবোরা টারনেস রোববার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, প্যানোরামা বিতর্ক এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, যা বিবিসির ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রতিষ্ঠানে নেতাদের পূর্ণ জবাবদিহি থাকতে হয়। তাই আমি সরে দাঁড়াচ্ছি। কিছু ভুল হয়েছে, তবে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই—বিবিসি নিউজ প্রতিষ্ঠানগতভাবে পক্ষপাতদুষ্ট—এই অভিযোগ সঠিক নয়।’ টারনেস গত তিন বছর ধরে বিবিসির নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

টেলিগ্রাফের প্রকাশিত নথিতে আরও বলা হয়, বিবিসি আরবির ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধসংক্রান্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাতের অভিযোগের বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে ‘পদ্ধতিগত সমস্যা’র কথাও উল্লেখ করা হয়।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ ও ‘প্রচারযন্ত্র।’ সম্প্রতি সম্প্রচারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠার পর তিনি এমন মন্তব্য করেন।

নথি অনুসারে, অনুষ্ঠানটি দুইটি ভিন্ন অংশ জোড়া লাগিয়ে এমনভাবে দেখিয়েছে, যেন ট্রাম্প সমর্থকদের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি দাঙ্গার আগে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং তাঁদের ‘প্রাণপণে লড়তে’ বলছেন। কিন্তু ভাষণের যে অংশে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘শান্তিপূর্ণভাবে ও দেশপ্রেমিকের মতো নিজেদের মত প্রকাশের’ আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছিল। ভাষণের এই দুই অংশ মূলত প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুল্ক থেকে আয়ের ২০০০ ডলার করে জনগণকে দেবেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের সব নাগরিককে ২০০০ ডলার করে ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মূলত তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যে রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তা থেকে অর্জিত অর্থ থেকে এই ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার আবারও আমেরিকান নাগরিকদের ২ হাজার ডলার করে ‘ডিভিডেন্ড’ বা ‘লভ্যাংশ’ দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ অর্থ আসবে এই বছর শুল্ক থেকে সরকারের তোলা বিলিয়ন ডলার রাজস্ব থেকে। বিষয়টি তিনি বহুবার বলেছেন, কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন করেননি।

ট্রাম্প আবারও তাঁর শুল্কনীতি নিয়ে সরব হয়েছেন এমন এক সময়, যখন বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বড় আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে। পাশাপাশি, সাম্প্রতিক নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বড় ধাক্কা লেগেছে। যেখানে ভোটাররা মূল্যস্ফীতির জন্য তাদের দায়ী করেছেন, যা আংশিকভাবে ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কের ফল।

ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমরা ট্রিলিয়ন ডলার আয় করছি এবং শিগগিরই ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ঋণ পরিশোধ শুরু করব। যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড বিনিয়োগ হচ্ছে, নতুন কারখানা গড়ে উঠছে সর্বত্র।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘প্রত্যেকের জন্য অন্তত ২ হাজার ডলারের একটি ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে (অবশ্যই উচ্চ আয়ের মানুষ ছাড়া)।’

এর আগে, এই সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের বেশির ভাগ শুল্ক আইনগতভাবে বৈধ কি না, তা নিয়ে শুনানি হয়। বিচারপতিরা শুনানিতে ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাঁরা ইঙ্গিত দেন, এই শুল্ক আসলে রাজস্ব সংগ্রহের এক প্রকার করের মতো কাজ করেছে—বাণিজ্য ভারসাম্যজনিত কোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে নয়।

যদি আদালত শেষ পর্যন্ত রায় দেয় যে এসব শুল্ক অবৈধ ছিল, তাহলে সরকারকে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ আমদানিকারকদের ফেরত দিতে হতে পারে। রোববার এবিসি নিউজের দিস উইক—অনুষ্ঠানে ট্রেজারি সচিব বা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, শুল্কের উদ্দেশ্য রাজস্ব আদায় নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনা।

ট্রাম্প এই বছর একাধিকবার এমন ‘শুল্ক ডিভিডেন্ড’ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি তিনি নির্দিষ্টভাবে ২ হাজার ডলার পরিমাণের কথাই বলছেন। সুপ্রিম কোর্ট কবে এই শুল্ক মামলার রায় দেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদি আদালত শুল্ক বহাল রাখে, তাহলে নতুন প্রশ্ন উঠবে—এই ডিভিডেন্ড দেওয়ার অনুমোদন আদৌ আছে কি না, কারা এটি পাবেন, আর এতে সরকারের ঋণ পরিশোধের প্রচেষ্টায় কতটা প্রভাব পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৪০ দিন পর মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা অবসানে ঐকমত্য সিনেটে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে ৪০ দিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের শাটডাউন বা অচলাবস্থা শেষ হওয়ার সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। মার্কিন সিনেট রিপাবলিকান পার্টি প্রস্তাবিত একটি বিলের পক্ষে ভোট দিতে যাচ্ছে, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের সরকারি অচলাবস্থা অবসানের পথ খুলে দিতে পারে।

একদল মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট সিনেটরের সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির সমঝোতার পর এই অগ্রগতি এসেছে। শর্ত হলো—রিপাবলিকানরা আগামী ডিসেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি নিয়ে উত্থাপিত বিলে যদি ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে ডেমোক্র্যাটরা এই তহবিলের বিলে ভোট দেবে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত এই তহবিল প্যাকেজে কিছু সরকারি খাত—যেমন খাদ্য সহায়তা ও আইনসভা শাখার অর্থায়ন—চলতি অর্থবছর পর্যন্ত চালু রাখার বিলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই প্যাকেজের পক্ষে আট ডেমোক্র্যাট সিনেটর ভোট দেন।

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মাইক হান্না জানিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটদের সমর্থনের ফলে সিনেট এখন অচলাবস্থা ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পেয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘এটিকে ক্লোচার ভোট বলা হয়। এর মাধ্যমে সিনেট সম্মত হয়েছে তহবিল সংক্রান্ত আলোচনা চালিয়ে যেতে এবং সরকার পুনরায় চালুর জন্য প্রয়োজনীয় বিলগুলো পাসের প্রক্রিয়া শুরু করতে।’

হান্না আরও বলেন, ‘ক্লোচার ভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি একবার ৬০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হয়ে গেলে পরবর্তী সব ভোট সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নেওয়া যায়। অর্থাৎ, সিনেটে এখন বিল ও অর্থায়ন প্রস্তাব পাস হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত।’

তবে এই সংশোধিত প্যাকেজটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস হতে হবে এবং এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের জন্য পাঠাতে হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় কয়েক দিন সময় লাগতে পারে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ফ্লোরিডায় সপ্তাহান্তের ছুটি কাটিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘দেখে মনে হচ্ছে, আমরা সরকার শাটডাউন অবসানের খুব কাছাকাছি।’

বর্তমানে টানা ৪০ দিন ধরে চলা এই অচলাবস্থার কারণে হাজারো ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার সরকারি কর্মচারী কর্মবিরতিতে গেছেন এবং লাখো আমেরিকানের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রুশ হামলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ, ইউক্রেনজুড়ে লোডশেডিং

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা ইউক্রেনার্গো জানিয়েছে, রোববার ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা ইউক্রেনার্গো জানিয়েছে, রোববার ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার ব্যাপক হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ‘শূন্যে’ নেমে এসেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা ইউক্রেনার্গো জানিয়েছে, রোববার ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কো কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বাড়িয়েছে। শুক্র থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা হামলায় শত শত ড্রোন ব্যবহার করা হয়, এতে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে বলে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এই হামলাগুলো দেশটির একাধিক শহরে বিদ্যুৎ, তাপ এবং পানি সরবরাহ ব্যাহত করেছে। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি সেন্টনেনার্গো জানিয়েছে, এতে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ‘শূন্যে’ নেমে গেছে।

ইউক্রেনার্গো বলেছে, মেরামতের কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বিকল্প উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও কিয়েভ, দিনিপ্রোপেত্রভস্ক, দোনেৎস্ক, খারকিভ, পোলতাভা, চেরনিহিভ ও সুমি অঞ্চলে নিয়মিত বিদ্যুৎ-বিভ্রাট চলতে পারে বলে স্থানীয় সময় শনিবার রাতে জানিয়েছেন ইউক্রেনের জ্বালানি উপমন্ত্রী সভিতলানা গ্রিনচুক।

তিনি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল ইউনাইটেড নিউজকে বলেন, ‘শত্রুপক্ষ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে, যেগুলো প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন। রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এত বেশি সরাসরি জ্বালানি স্থাপনায় আঘাতের ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি।’

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা জানিয়েছেন, রাশিয়ার ড্রোন হামলার লক্ষ্য ছিল পশ্চিম ইউক্রেনের দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র। এসব উপকেন্দ্র খমেলনিতস্কি ও রিভনে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে; যেগুলো লুতস্ক শহর থেকে যথাক্রমে ১২০ কিলোমিটার ও ৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

সিবিহা টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউরোপের পারমাণবিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। আমরা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বোর্ড অব গভর্নরসের জরুরি বৈঠক আহ্বানের দাবি জানাই, যাতে এই অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, চীন ও ভারত; যারা ঐতিহ্যগতভাবে রুশ তেলের বড় ক্রেতা, তারা যেন মস্কোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এই আক্রমণ বন্ধে ভূমিকা রাখে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর এমন হামলা ইউক্রেনকে শীতের আগে তীব্র তাপ সরবরাহ সংকটে ফেলতে পারে। প্রায় চার বছর ধরে চলা রুশ আগ্রাসনে দেশটির বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহব্যবস্থা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউক্রেনের জ্বালানি কোম্পানি নাফতোগাজ জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহান্তের হামলা অক্টোবরের শুরু থেকে নবম বৃহৎ গ্যাস অবকাঠামো আক্রমণ।

কিয়েভ স্কুল অব ইকোনমিকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলায় ইউক্রেনের প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের অর্ধেক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

ইউক্রেনের শীর্ষ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ওলেক্সান্দর খারচেঙ্কো বুধবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, যদি কিয়েভের দুটি প্রধান বিদ্যুৎ ও তাপ সরবরাহ কেন্দ্র টানা তিন দিনের বেশি সময় বন্ধ থাকে এবং তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায়, তাহলে রাজধানীতে ‘প্রযুক্তিগত বিপর্যয়’ ঘটবে।

এদিকে রুশ হামলার জবাবে ইউক্রেনও সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার তেল মজুত কেন্দ্র ও শোধনাগারে হামলা জোরদার করেছে। এর মাধ্যমে মস্কোর জ্বালানি রপ্তানি ব্যাহত করা এবং দেশজুড়ে জ্বালানি ঘাটতি সৃষ্টি করাই কিয়েভের লক্ষ্য।

রোববার স্থানীয় সময় ভোরে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রিয়া জানিয়েছে, দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৪৪টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত