Ajker Patrika

মার্কিন শুল্কের ধাক্কা সামলাতে জিনিসপত্রের দাম কমাচ্ছে ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপানো অতিরিক্ত শুল্কে ভারতীয় অর্থনীতি যে বড়সড় চাপে পড়েছে তা আর গোপন নেই। একের পর এক আক্রমণ করে চলেছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জেরে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি, ফলে কার্যত ৫০ শতাংশে পৌঁছে গেছে আমেরিকার শুল্ক-শাস্তি। এর পর থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর বিদেশি বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে, কমেছে রপ্তানি, ধাক্কা খেয়েছে উৎপাদন ও চাহিদা।

পরিস্থিতির কথা ভেবে ভারতের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) এর কাঠামোতে বড় রদবদল আসতে চলেছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সেই ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জিএসটি কাউন্সিল আগের চার স্তরের কাঠামো তুলে দিয়ে দুই স্তরের নতুন হার নির্ধারণ করেছে যথাক্রমে—৫ ও ১৮ শতাংশ। তবে সিগারেটের মতো ‘ক্ষতিকর’ পণ্যের জন্য আলাদা ৪০ শতাংশ কর থাকবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের বাজারে খাবারদাবার, স্কুলের সরঞ্জাম, বিমা এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য সস্তা হবে। বিশেষ করে এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎসব মৌসুমে কম দামে পাওয়া যাবে। অন্যদিকে আমদানি করা মদ ও বিলাসবহুল গাড়ি আরও দামি হবে। ঘোষণাটির পরই ভারতের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই করছাড় সরকারের জন্য প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবুও ভোক্তা খরচ বাড়ার কারণে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। কোটাক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রীপাল শাহের মতে, ‘ভোক্তা ব্যয় ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ। তাই করছাড় সরাসরি চাহিদা বাড়াবে, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বিক্রি বাড়বে এবং করপোরেট আয়ে সুফল মিলতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও এটি সহায়ক হতে পারে।’

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, ভারতের নতুন কর হার কার্যকর হবে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে। এই সময়টিতেই ভারতে উৎসব মৌসুম শুরু হবে এবং বাজারে বিক্রি বেড়ে যাবে। এর আগে চলতি বাজেটে সরকার ১২ বিলিয়ন ডলারের আয়কর ছাড় দিয়েছিল এবং সম্প্রতি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ঋণের সুদের হার কমিয়েছে।

এদিকে রাজ্য সরকারগুলো, যারা জিএসটি-এর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, তারা রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা করছে। তবে অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে এবং সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই করছাড় যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্কের আঘাত সামাল দিতেও ভূমিকা রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার কারণে সাধারণ ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে এবং নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে।

২০১৭ সালে চালু হওয়া জিএসটি ভারতের করব্যবস্থায় ঐক্য এনেছিল। তবে জটিল কাঠামো ও নানা ছাড়ের কারণে সমালোচিত ছিল। এবারের সংস্কারে সেই জটিলতা কমবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন—এই সংস্কার কৃষক, নারী, যুবক, মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সুবিধা বয়ে আনবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত