Ajker Patrika

তেল নিয়ে ভারত-ইইউ দ্বন্দ্ব

ডয়চে ভেলে
আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ১১: ৫৪
তেল নিয়ে ভারত-ইইউ দ্বন্দ্ব

ত্রিদেশীয় সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ও সুইডেনের পর এবার বেলজিয়ামে পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর। গত মঙ্গলবার ব্রাসেলসে বসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেলের এক অভিযোগের উত্তরে জয়শংকর বলেন, বরেলের ইউরোপীয় কাউন্সিলের রেগুলেশন আরেকবার পড়ে নেওয়া উচিত। 

এর আগে বরেল অভিযোগ করে বলেছিলেন, রাশিয়ার তেল কম দামে কিনে তা ঘুরিয়ে ইউরোপে বিক্রি করছে বেশ কিছু দেশ। ভারত তার একটি। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই বরেলকে রেগুলেশন পড়ার পরামর্শ দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

জয়শংকরের দাবি, রেগুলেশনের ৮৩৩/ ২০১৪ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কোনো দেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনে পরিশোধন করে তা যদি আবার ইউরোপে বিক্রি করে, তাহলে সেই তেল রাশিয়ার বলে গণ্য হবে না। সুতরাং, ভারত আইনবহির্ভূত কোনো কাজ করছে না। এ বিষয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। 

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১১তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ তৈরি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেখানেই এই তৃতীয় দেশের তেল বিক্রির প্রসঙ্গটি উঠেছে। এর আগের নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস কেনার বিষয়ে একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ। কিন্তু অভিযোগ, ভারত, সৌদি আরব ও চীনের মতো কিছু দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। তারা রাশিয়ার কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল কম মূল্যে কিনছে। এরপর তা নিজেদের দেশে পরিশোধন করে ইউরোপে বিক্রি করছে। ফলে ঘুরপথে রাশিয়ার তেল ইউরোপে ঢুকছে। রাশিয়াও নিজের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। 

১১তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজে এই তৃতীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তারই ভিত্তিতে বরেল তার মন্তব্যটি করেছিলেন। মঙ্গলবার সেই মন্তব্যেরই পাল্টা জবাব দিয়েছেন জয়শংকর। 

রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা নিয়ে অবশ্য গত প্রায় এক বছর ধরেই ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ইউরোপীয় দেশগুলো। অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান নিয়েছে, ভারত তখনো রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে গেছে। কম দামে তেল কিনছে। কয়েক মাস আগে দিল্লিতে এসেছিলেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। জয়শংকরের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে তাঁর আলোচনা হয়েছিল। সেখানে ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের বিষয়টিও উঠেছিল। 

বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জয়শংকর বলেছিলেন, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে খুবই কম মূল্যের তেল কেনে। সব মিলিয়ে তা ১২-১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এত নিষেধাজ্ঞার পরেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর চেয়ে অনেক বেশি মূল্যের গ্যাস এবং তেল রাশিয়ার থেকে কিনছে। এ বিষয়ে একটি ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রাশিয়া ফসিল ফুয়েল ট্র্যাকার নামক ওই ওয়েবসাইটে কোন দেশ রাশিয়ার থেকে কত মূল্যের তেল এবং গ্যাস কিনছে, তা নথিভুক্ত করা আছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এই প্রতিবেদন লেখার সময় রাশিয়া ফসিল ফুয়েল ট্র্যাকারের হিসাব বলছে, এত নিষেধাজ্ঞার পরেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার কাছ থেকে ৮৮ মিলিয়ন ইউরোর তেল, ৬২ মিলিয়ন ইউরোর গ্যাস এবং তিন মিলিয়ন ইউরোর কয়লা কিনছে। তেল, গ্যাস এবং কয়লা মিলিয়ে চীন কিনেছে প্রায় ৮১ মিলিয়ন ইউরোর প্রাকৃতিক সম্পদ। ভারত কয়লা আর তেল কিনেছে প্রায় ২৯ মিলিয়ন ইউরোর। 

ব্রাসেলসে জয়শংকর জানিয়েছেন, যুদ্ধের পর রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বেড়েছে এমন নয়। আগে যে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল, তা-ই বহাল আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিন্টে গ্রাহক কমলেও ডিজিটালে বিপুল মুনাফা করেছে নিউইয়র্ক টাইমস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২৮
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস কোম্পানির অধীনে পরিচালিত হয় বিখ্যাত সংবাদপত্র দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। এই কোম্পানি তাদের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদনে ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন এবং অনলাইন বিজ্ঞাপনে অভূতপূর্ব উল্লম্ফনের খবর জানিয়েছে। গত বুধবার প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির সমন্বিত পরিচালন মুনাফা গত বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে তারা ৪ লাখ ৬০ হাজার ডিজিটাল-অনলি গ্রাহক (যাঁরা শুধু ডিজিটাল কনটেন্ট সাবস্ক্রাইব করেন) যোগ করেছে। বিগত বছরগুলোর মধ্যে তিন মাসে এটি সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এই সাফল্যের মূল কারণ হলো, গ্রাহকদের জন্য একাধিক পণ্যের বান্ডেল সাবস্ক্রিপশন কৌশল। বর্তমানে মোট গ্রাহকের অর্ধেকের বেশি বান্ডেল বা একাধিক পণ্যের সাবস্ক্রিপশন নিয়েছেন।

সব মিলিয়ে নিউজ রিপোর্ট, কুকিং, গেমস, অয়্যারকাটার (Wirecutter) এবং দ্য অ্যাথলেটিকসহ (The Athletic) কোম্পানির মোট গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার।

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মেরিডিথ কপিত লেভিয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে টাইমসের ব্যবহারকারী এবং গভীরভাবে যুক্ত গ্রাহকের সংখ্যা আরও প্রসারিত করার সক্ষমতা আমাদের আছে।’ নিউইয়র্ক টাইমস কোম্পানি ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ ১ কোটি ৫০ লাখ গ্রাহকে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

অর্থ ও রাজস্বের চিত্র

মোট রাজস্ব: মোট রাজস্ব ৯.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ৮ লাখ ডলার

পরিচালন মুনাফা: সমন্বিত পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৩ কোটি ১৪ লাখ ডলার

বিজ্ঞাপন রাজস্ব: বিজ্ঞাপন খাত থেকে আয় এক বছর আগের তুলনায় ২০.৩ শতাংশ বেড়ে ৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার

অ্যাফিলিয়েট ও লাইসেন্সিং আয়: অয়্যারকাটার-এর মতো অ্যাফিলিয়েট রেফারেল এবং লাইসেন্সিং থেকে আয় ৭.৯ শতাংশ বেড়ে ৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।

ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন থেকে গ্রাহক প্রতি গড় রাজস্ব (এআরপিইউ) ৩.৬ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৭৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো, কিছু গ্রাহকের জন্য মূল্য বৃদ্ধি এবং অন্যদের প্রচারমূলক মূল্যের পরিবর্তে উচ্চ ফিতে স্থানান্তরিত হওয়া।

প্রিন্টের পতন ও দ্য অ্যাথলেটিক-এর উত্থান

অন্যদিকে, গ্রাহকেরা অনলাইনে চলে যাওয়ায় প্রিন্ট সাবস্ক্রিপশন ক্রমাগত কমছে। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রিন্ট গ্রাহকসংখ্যা ৫০ হাজার কমে ৫ লাখ ৭০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। প্রিন্ট থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ৩ শতাংশ কমে ১২ কোটি ৭২ লাখ ডলার হয়েছে।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক টাইমস ২০২২ সালে ৫৫০ মিলিয়ন ডলারে দ্য অ্যাথলেটিক কেনে। বছরের পর বছর এটি লোকসানে ছিল। সেটি ২০২৪ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে লাভজনক হতে শুরু করেছে। অবশ্য এই ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে অ্যাথলেটিকের ফলাফল আলাদাভাবে দেখানো হয়নি।

এদিকে কোম্পানির পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে। ৫ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৫৯ কোটি ৬০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সবশেষে সেপ্টেম্বরের শেষে কোম্পানির হাতে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ এবং সহজে কেনাবেচার যোগ্য সিকিউরিটিজ (শেয়ার) ছিল বলে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভালুক ঠেকাতে জাপানে এবার সেনা মোতায়েন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২৪
জাপানে ভালুক আক্রমণের ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। প্রাণহানিও ঘটছে। পরিস্থিতি প্রশমনে সরকার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবি: এএফপি
জাপানে ভালুক আক্রমণের ঘটনা প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠেছে। প্রাণহানিও ঘটছে। পরিস্থিতি প্রশমনে সরকার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবি: এএফপি

জাপানে হঠাৎ বেড়েছে ভালুকের আক্রমণ। দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে সরকার এবার সেনা মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে শিকারি নিয়োগের পরিকল্পনা করছিল দেশটি, যাতে বিপজ্জনক ভালুকগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, জাপানের উত্তরাঞ্চলের পার্বত্য প্রদেশ আকিতায় বেড়ে চলা ভালুক হামলার আতঙ্কে সেনা মোতায়েন করেছে দেশটির সরকার। গত সাত মাসে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিল সরকার।

অক্টোবরের শেষ দিকে জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে জানানো হয়, তার আগের সাত মাসে অন্তত ১২ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে ভালুকের হামলায়। এর জেরে গত বুধবার অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়েন করা হয়। কারণ, সম্প্রতি বাদামি ভালুক ও এশীয় কালো ভালুকের আক্রমণ প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। শীতনিদ্রায় যাওয়ার আগে পর্যাপ্ত খাবারের সন্ধানে থাকা ভালুকগুলো এখন আরও বেপরোয়া। স্কুল, রেলস্টেশন, সুপারমার্কেট এমনকি উষ্ণ প্রস্রবণের পর্যটনকেন্দ্রের কাছেও ভালুকগুলোকে দেখা যাচ্ছে।

ভালুকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আর মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেখানে অভিজ্ঞ শিকারি খুবই কম। সরকার জানায়, বর্তমানে জাপানে ভালুকের সংখ্যা ৫৪ হাজারের বেশি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে, সেনারা ভালুকের দিকে গুলি চালাবে না।

বুধবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও আকিতা প্রশাসনের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সেনারা খাবারসহ বাক্স ফাঁদ বসাবে, স্থানীয় শিকারিদের পরিবহনে সহায়তা করবে এবং মৃত ভালুক সরানোর কাজেও অংশ নেবে। ডেপুটি চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ফুমিতোশি সাতো সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিনই ভালুক আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করছে। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

অভিযান শুরু হয়েছে কাজুনো শহরের বনাঞ্চলে। সম্প্রতি সেখানে একাধিক ভালুক দেখা গেছে ও আহতের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, সাদা হেলমেট, নেট লঞ্চার ও ভালুক প্রতিরোধক স্প্রে হাতে সৈন্যরা একটি বাগানের পাশে ফাঁদ বসিয়েছে। বাগানের মালিক তাকাহিরো ইকেদা জানান, তার প্রায় ২০০টি পাকা আপেল খেয়ে ফেলেছে ভালুক। বলেন, ‘মনটাই ভেঙে গেছে।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বলেন, সেনা মোতায়েনের লক্ষ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবন রক্ষা করা। তবে সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব জাতীয় প্রতিরক্ষা, তাই তারা সীমাহীন সহায়তা দিতে পারবে না।

আকিতা প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার। এখানেই মে মাসের পর থেকে ৫০ জনের বেশি মানুষ ভালুকের আক্রমণের শিকার হয়েছেন, অন্তত ৪ জন মারা গেছেন। বেশির ভাগ হামলাই ঘটেছে আবাসিক এলাকায়। গত সপ্তাহান্তে ইউজাওয়া শহরের এক বয়স্ক নারী মাশরুম তুলতে গিয়ে ভালুকের আক্রমণে নিহত হন। অক্টোবরের শেষ দিকে আকিতা শহরে এক কিষানি খেতে কাজ করার সময় ভালুকের হামলায় প্রাণ হারান। মঙ্গলবার একই শহরে এক সংবাদপত্র সরবরাহকারীকে আক্রমণ করে আহত করেছে ভালুক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের গ্রামীণ অঞ্চলে জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ায় ভালুক সমস্যা আরও বেড়েছে। তারা বলেন, ভালুক বিলুপ্তপ্রায় নয়, বরং সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে শিকার কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন।

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, লাইসেন্সধারী শিকারি ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিয়োগে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করা হবে। তারা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়া বা মানুষের ওপর আক্রমণ করা ভালুক নিয়ন্ত্রণ করবে। একই দিন জাপান সরকার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ভালুকের আক্রমণের ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব দেয়।

সরকার বলছে, ভালুক এখন জননিরাপত্তার জন্য ‘গুরুতর হুমকি’। তাই পুলিশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ভালুক মারার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমান আইনে সৈন্যরা ভালুককে গুলি করতে পারবে না। তারা শিকারিদের সঙ্গে ফাঁদ পেতে বা মৃত ভালুক সরানোর কাজে সাহায্য করবে। আকিতার গভর্নর কেন্তা সুজুকি বলেন, মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করছেন, তাঁরা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

দেশজুড়ে শিকারির সংখ্যা দ্রুত কমছে। অনেকেই বৃদ্ধ, আর ভালুক শিকার এখন আর জনপ্রিয় নয়। ফলে ভালুকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, আর তারা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ে বিচগাছের ফল কমে গেছে। এতে ক্ষুধার্ত ভালুকগুলো গ্রামে ও শহরে ঢুকে খাবার খুঁজছে। অন্যদিকে গ্রামীণ জনসংখ্যা কমে যাওয়াও এর একটি কারণ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার বন্দুক ব্যবহারের নিয়ম শিথিল করেছে, যাতে মানুষ সহজে আবাসিক এলাকায় ভালুককে গুলি করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্যায় ডুবতে পারে দেশ, থাইল্যান্ডজুড়ে সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্যাংককের সামান্য উত্তরে, পাঠুম থানি প্রদেশের সাম কোক জেলার চাও ফ্রায়া নদী সংলগ্ন ওয়াট সালা ডেং নিউয়া জনপদটি এখন পানিতে থইথই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা নৌকোতেই যাতায়াত করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
ব্যাংককের সামান্য উত্তরে, পাঠুম থানি প্রদেশের সাম কোক জেলার চাও ফ্রায়া নদী সংলগ্ন ওয়াট সালা ডেং নিউয়া জনপদটি এখন পানিতে থইথই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা নৌকোতেই যাতায়াত করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় কালমেগির প্রভাবে থাইল্যান্ডজুড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে থাইল্যান্ডের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবারই সারা দেশের বিভিন্ন অংশে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আসন্ন ঝড় কালমেগির প্রভাবে আজ শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ব্যাংককসহ থাইল্যান্ডের ৬৫টি প্রদেশে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে সতর্কবার্তা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। সতর্কবার্তায় রাজধানী ব্যাংকক ছাড়াও দ্রুত বয়ে চলা চাও ফ্রায়া নদীর তীরবর্তী মধ্যাঞ্চলের ১০টি প্রদেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের দুর্যোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন বিভাগ (ডিডিপিএম) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, চাই নাট প্রদেশের চাও ফ্রায়া ব্যারেজের উজানে নদী দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার ৫০ থেকে ৩ হাজার ২৫০ ঘনমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এ পরিস্থিতি সামলাতে রয়্যাল ইরিগেশন ডিপার্টমেন্ট ব্যারেজের পানি নিঃসরণের হার ২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৭০০ ঘনমিটার প্রতি সেকেন্ডে করেছে। তুলনামূলকভাবে, ২০১১ সালের ভয়াবহ বন্যার সময় চাও ফ্রায়া নদীতে প্রবাহের হার ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩ হাজার ৭০৩ ঘনমিটার।

ফলে ব্যারেজের ভাটিতে অবস্থিত নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর পানি ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বাঁধ নেই—সেসব স্থানে প্লাবনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে ডিডিপিএম।

ব্যাংককের পাশাপাশি যেসব প্রদেশে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে, সেগুলো হলো—উথাই থানি, চাই নাট, সিং বুড়ি, আং থং, সুফান বুড়ি, আয়ুত্থয়া, লপ বুড়ি, পাঠুম থানি, সামুত প্রাকান ও ননথাবুরি। সতর্কতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিচু এলাকাগুলো, যেগুলো বাঁধবিহীন।

তবে শুধু রাজধানী ও মধ্যাঞ্চল নয়—পুরো দেশের ৬৫টি প্রদেশেই শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, দুর্বল হয়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় কালমেগি আজ শুক্রবার উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডে প্রবেশ করবে। এই সতর্কতা দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, মধ্যাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিম (আন্দামান উপকূল) অঞ্চলের কয়েকটি প্রদেশকে অন্তর্ভুক্ত করছে।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছে, কালমেগি উপকূলে আছড়ে পড়ার আগে দেশটির মধ্যাঞ্চলে ছয়টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ বিমানবন্দরগুলো হলো—বুয়ন মা থুয়ত, প্লেইকু, তুই হোয়া, চি লাই ফু ক্যাট এবং লিয়েন খুয়ং। এসব বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় শত শত ফ্লাইট বাতিল বা স্থগিত হবে বলে জানায় সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ’ কাজাখস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৯
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাসিম জোমারত তোকায়েভ। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কাসিম জোমারত তোকায়েভ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, মধ্য এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ কাজাখস্তান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। আর এই লক্ষ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য গঠিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডে’ যোগ দিচ্ছে কাজাখস্তান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমারত তোকায়েভের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘শিগগির আমরা একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেব। এই শক্তিশালী জোটে আরও অনেক দেশ যোগ দিতে চাচ্ছে।’

কাজাখ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, বিষয়টি আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আব্রাহাম চুক্তিতে আমাদের যোগদান কাজাখস্তানের বৈদেশিক নীতির স্বাভাবিক ও যৌক্তিক ধারাবাহিকতা—যা সংলাপ, পারস্পরিক সম্মান ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে।’

কাজাখস্তান ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখছে। ফলে এ উদ্যোগটি মূলত প্রতীকী পদক্ষেপ হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার বলেন, বিষয়টি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কের সীমায় আটকে নেই। তিনি বলেন, ‘এটা আরও উন্নত ধরনের সম্পর্ক, যা চুক্তিতে থাকা সব দেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব তৈরি করে। এর মাধ্যমে তারা নানা অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।’

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প কাজাখ প্রেসিডেন্ট তোকায়েভসহ মধ্য এশিয়ার আরও চার দেশের নেতা—কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন রাশিয়ার প্রভাবাধীন ও বর্তমানে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকা এই অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাইছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এখানে উপস্থিত কিছু দেশও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে...আগামী কিছু সময়ের মধ্যে এসব ঘোষণা দেওয়া হবে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ফ্লোরিডায় এক ব্যবসায়ী ফোরামে বলেন, তিনি ওয়াশিংটনে ফিরছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়ার জন্য। যদিও তিনি তখন কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস প্রথম জানায়, দেশটি হলো কাজাখস্তান।

বিষয়টি নিয়ে অবগত আরেক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে কাজাখস্তানের যোগদান আব্রাহাম চুক্তিকে নতুন গতি দেবে, যা গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে স্থবির হয়ে আছে। ট্রাম্প এর আগেও একাধিকবার বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে যেভাবে চুক্তিটি মধ্যস্থ করেছিলেন, সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করতে চান।

এর আগে ২০২০ সালে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। একই বছরের শেষে মরক্কোও চুক্তিতে যোগ দেয়। গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছেন, সৌদি আরবও অবশেষে এই চুক্তিতে যোগ দেবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে রিয়াদ এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তত কোনো রূপরেখা ছাড়া এগোতে রাজি হয়নি।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ১৮ নভেম্বর হোয়াইট হাউস সফর করবেন বলে জানা গেছে। মধ্য এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ, যেমন আজারবাইজান ও উজবেকিস্তান, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাদেরও আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাব্য দেশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই চুক্তিটিকেই ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক নীতি সাফল্য হিসেবে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে কাজাখস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম (৬৯ দশমিক ৩), তারপরে খ্রিষ্টান (১৭ দশমিক ২ শতাংশ)। জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ কোনো ধর্ম মানে না বলে জানিয়েছে এবং ১১ শতাংশ মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। অল্পসংখ্যক মানুষ অন্যান্য ধর্ম অনুসরণ করে এবং একটি ছোট অংশ (২ দশমিক ২৫ শতাংশ) নাস্তিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত